এনজিও স্টাইলে চলছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, ছাত্র বিক্ষোভের আশঙ্কা

স্বকৃত রহমান
Published : 3 Oct 2011, 10:03 AM
Updated : 3 Oct 2011, 10:03 AM

এনজিও কোম্পানীর মত অর্থের বিনিময়ে শিক্ষা প্রদান কর্মসূচী পালন করছে দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। গুটি কয়েক প্রতিষ্ঠান ছাড়া অধিকাংশই নিম্ম মানের শিক্ষা দিয়ে আসছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন নেই প্রয়োজনীয় গবেষনাগার, তেমনি নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক। ফলে দেশের এইসব প্রতিষ্ঠান থেকে বের হওয়া হাজার হাজার শিক্ষার্থী কার্যত মেরুদন্ডহীন কর্মীতে পরিনত হচ্ছে। অন্যদিকে কিছু প্রতিষ্ঠান মানসম্পন্ন শিক্ষা দিলেও ছাত্রদের নিকট থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। আবার কিছু প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের সাথে প্রতারনা করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ইন্টারন্যশনাল ইউনিভার্সিটির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন থেকেই চলছে ধুম্রজাল । দারুল ইহসানের রয়েছে চারজন ভিসি, প্রত্যেকেই নিজেকে বৈধ বলে দাবি করেন। ঢাকার বাইরে রয়েছে এর অনুনোমোদিত বাইশটি ক্যাম্পাস। মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে ভর্তি হলেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায়। দারুল ইহসান থেকে বের হয়ে আসা বিবিএ'র এক ছাত্র জহিরুল ইসলাম বাবু জানান, "আমি বাধ্য হয়ে পাঁচ সেমিস্টার পড়াশুনা করার পর অন্য এক ভার্সিটিতে নতুনভাবে ভর্তি হয়েছি। কারন এখানে শিক্ষার না আছে পরিবেশ, না আছে পর্যাপ্ত জনবল। কার্যত অর্থের বিনিময়ে সনদ প্রদানকারি বিশ্ববিদ্যালয় এটি।" অন্যদিকে ঢাকা ইন্টারন্যশনাল ইউনিভার্সিটিতে মালিকানা নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে ধুম্রজাল। মালিকদের ঝামেলায় শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নিম্মমানের শিক্ষা দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিন থেকেই। রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত শান্তা মারিয়াম ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধেও সনদ বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মন্জুরী কমিশনও এ ব্যপারে কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় প্রায় ত্রিশ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সমিতি(সাপুব)'র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সিয়াম সারোয়ার জামিল জানান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকরা সংগঠন করলেও শিক্ষার্থীদের কোন প্রকার ছাত্র সংগঠন করার অধিকার না থাকায় ছাত্রদের প্রতিবাদ করারও কোন উপায় থাকে না। ফলে প্রতি বছর এইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ফি বৃদ্ধি করা হলেও শিক্ষার্থীরা নিরবে মেনে নিতে বাধ্য হয়। তারপরও বিভিন্ন সময়ে বেশকিছু ছাত্র আন্দোলন দানা বেধেছে বিভিন্ন বেসরকারি বিশবিদ্যালয়ে। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ধিত ফি বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে প্রাইমএশিয়া ও ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিতে ছাত্র বিক্ষোভসহ ৪.৫ শতাংশ সরকারি ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যায়ের ছাত্ররা সবচেয়ে বড় আন্দোলন সংঘটিত করেছিল। বিশবিদ্যালয়গুলোতে এখনই নজরদারিতে না আনলে ভবিষ্যতে আবারও ছাত্র বিক্ষোভের আশঙ্কা রয়েছে। অল প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ফোরামের সহ সভাপতি ও ভ্যাট প্রত্যাহার আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক সীমান্ত সরকার জানান, ছাত্রদের সহপাঠ্যক্রম বলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেভাবে কিছুই নেই। নাম মাত্র জাতীয় দিবসগুলো পালিত হয় এখানে। ছাত্রদের সহ পাঠ্যক্রম না থাকায় শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব চিটাগাং-এর ছাত্র রায়হানুল ইসলাম লিংকন জানান, সরকারিভাবে কোন সঠিক নির্দেশনা না থাকায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের কোন সদিচ্ছা না থাকায় আমরা সেভাবে কিছুই করতে পারি না ক্যাম্পাসে। নাম মাত্র বছরে দু-একটা দিবস পালিত হয় কোন রকম।

তবে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ও মান সম্পন্ন শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি সহপাঠ্যক্রমে ছাত্রদের অংশগ্রহনের সুযোগ দিয়ে সুযোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়তেও সহায়তা করছে। মিরপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি)তে ছাত্র সংগঠন করার অধিকার না থাকলেও শিক্ষার্থীরা স্কাউটিংসহ সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের সাথেও যুক্ত হচ্ছে। এআইইউবি ফটোগ্রাফি ক্লাব মাঝে মাঝেই একজিবিশনের আয়োজন করে আসছে। ধানমন্ডির স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সিনে ফোরাম, ইউআইইউ'র সিএসসি ক্লাব, ড্যাফোডিল ও ইউল্যাবের জার্নালিজম ডিপার্টমেন্টের কর্মকান্ডও প্রশংসিত। শুধুমাত্র সরকারি সুষ্ঠু নজরদারি ও সদিচ্ছা থাকলে এইসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবছর প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত লক্ষ লক্ষ সুনাগরিক গড়ে তোলা সম্ভব হতে পারে বলে মনে করেন দেশের বিগজনেরা।