ইংরেজী শেখার অন্তরায়

সোয়াইব সিদ্দিক
Published : 23 Dec 2011, 04:22 PM
Updated : 23 Dec 2011, 04:22 PM

বিশ্বায়নের এ যুগে ইংরেজী শেখার গুরুত্ব বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই । চলমান বিশ্ব পরিস্থিতিই সেটা বলে দেবে । উচ্চশিক্ষা, ব্যবসাবাণিজ্য, চাকুরির বাজার থেকে শুরু করে কূটনীতি এবং দেশচালনা পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই সফল হবার প্রাথমিক পূর্বশর্ত ইংরেজীতে দক্ষতা । বাংলাদেশের বর্তমানে প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক এ ভাষাটি শেখার গুরুত্ব ক্রমেই বাড়ছে । বিবর্তনশীল বিশ্ব এ প্রয়োজন সৃষ্টি করেছে । এদেশে ইংরেজী শেখার হাতেখড়ি হয় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে । ইংরেজীতে প্রাথমিক দক্ষতা এ পর্যায়েই অর্জিত হওয়া উচিত । এমনটা হয় বলেও মনে হওয়া স্বাভাবিক । কিন্তু উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের অনেকে এ ভাষায় যোগাযোগের দক্ষতা অর্জনে ব্যর্থ হন। কিন্তু কেন ? আরও অনেকের মত আমার ধারণা, কারণটা পদ্ধতিগত।

প্রায় সব বাংলা মাধ্যমের স্কুলেই গ্রামারের উপর অত্যধিক গুরুত্ব দেয়া হয় । এই প্রবণতা সম্ভবত দীর্ঘকালব্যাপী চলে আসা ঐতিহ্যের কারেণ। তবে এই প্রবণতা সদ্যপ্রসূত মানবশিশুর মাতৃভাষা শেখার পদ্ধতির বিপরীত । জন্মের পর থেকেই শিশু মাতৃভাষা শেখে পারিপার্শ্বিকতা থেকে । ইংরেজী বিদেশি ভাষা । তবে এটাও সত্য , স্বাভাবিক ঝোকপ্রবণতার বাইরে গিয়ে কিছু শেখা সত্যিই কষ্টকর । এজন্যই প্রাকৃতিক পদ্ধতি এত গুরুত্বপূর্ণ । গ্রামারের প্রয়োজনীয়তা আছে । কিন্তু ইংরেজিতে যোগাযোগের চেয়ে বেশি নয়। কারণ ভাষা থেকেই ব্যাকরণের সৃষ্টি।

দ্বিতীয়ত, স্কুল পর্যায়ে ইংরেজী শেখানো হয় বাংলা দিয়ে । ফলে অবচেতন দক্ষতা তৈরী হয় না । তখন ইংরেজী বুঝতে বাংলার সাহায্য দরকার হয় । শেখার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় । এটি ইংরেজী শেখার পথে বড় অন্তরায় । এছাড়াও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের অভাব বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী । দেশের বেশিরভাগ মানুষ দরিদ্র । এ কারণে টে‡লিভিশন,ইন্টারনেটের মাধ্যমে virtual learning এর সুযোগ নেই। খুব কম বিদ্যালয়েই বিশেষ করে ইংরেজীতে খবরের কাগজ বা পত্রিকা পড়ার সুযোগ আছে । এছাড়া ছাত্রছাত্রীরাও শুধু পাশ করতে যা পড়তে হয় তা মুখস্ত করেই সন্তুষ্ট থাকে । প্রশ্নপদ্ধতির দুর্বলতা এমন করার অবাধ সুযোগ করে দিচ্ছে । অর্থাৎ কোন ভাষা শেখার চারটি উপায় শোনা,বলা,পড়া ও লেখা কোনটিরই সার্থক চর্চা হচ্ছেনা ।

তবে যোগাযোগের উপর গুরুত্ব দিয়ে communicative method এ বই ছাপানো এ পড়ানো হচ্ছে কয়েক বছর থেকে । প্রশ্ন উঠতে পারে,তাহলে অবস্থা একই থাকছে কেন? এখানেও সমস্যাটা পদ্ধতিগত । communicative method শুধু কাগজে কলমেই আছে। বাস্তবে কোন প্রয়োগ নেই। text book প্রতিটি পাঠের শেষে আলোচ্য বিষয় সম্পর্কিত communication based exercise থাকলেও সেগুলো পুরোপুরি অগ্রাহ্য করা হয়। প্রশ্ন প্রণয়নের সাথে এসবের তেমন কোন সম্পর্ক নেই বলে এগুলোর চর্চা ঐচ্ছিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে।

উপরিউক্ত সমস্যাগুলো সমাধানে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাসমূহ নেয়া যেতে পারে:

১.গ্রামারের পাশাপাশি যোগাযোগের উপর গুরুত্ব দেয়া ।
২.প্রশ্ন পদ্ধতিতে যোগাযোগের ব্যবহার বাড়ানো ।
৩.শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের পরস্পরের মধ্যে ইংরেজীতে কথা বলার চর্চা করানো ।
৪.পাঠদানকে আকষর্ণীয় করা ।
৫.আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ।
৬.বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষনের জন্য প্রতিনিধিদল প্রেরণ ।
৭.শ্রেণী বিবেচনা করে যোগাযোগ দক্ষতার উপর পরীক্ষায় নম্বর প্রদান ।
৮.শিক্ষকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা ।
৯,ব্যবস্থাগুলো কাযর্কর হচ্ছে কিনা তা পর্যালোচনার জন্য উচ্চ পর্যায়ের research team গঠন করা ।