প্রিয় সাজেদা চৌধুরী, বিশ্বব্যাংক নয়, বলুন আমরা আর দুর্নীতি করব না, দুর্নীতিকে আশ্রয় দেব না

সেলিম আহমেদ
Published : 6 July 2012, 06:17 AM
Updated : 6 July 2012, 06:17 AM

সাজেদা চৌধুরী বলুন আমরা আর দূর্নীতি,সন্ত্রাস প্রশ্রয় দেবো না-

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ,ইউ,কে থেকে-

গতকাল দৈনিক আমাদের সময়,বাংলা নিউজ সহ দেশের প্রায় সকল সংবাদ মিডিয়ায় জাতীয় সংসদের উপ-নেত্রী, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর নেত্রী বেগম সাজেদা চৌধুরীর বিশ্বব্যাংকের তোয়াক্কা না করে পদ্মাসেতু করার বক্তব্য বেশ ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে।

সাজেদা চৌধুরী এক সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করেছিলেন, এই সংসদের আগেও ছিলেন আওয়ামী লীগের দলীয় সাংসদ,বর্তমানে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর পরেই সাংসদ সাজেদা চৌধুরীর স্থান।আজীবন আওয়ামী লীগের বেশ নামী-দামী এই নেত্রী,বক্তৃতা-বিবৃতিতেও সমান পারদর্শী। বেশ কয়েকবার জেল-জুলুমও খেটেছেন। বক্তৃতার মাঠে কণ্ঠ অত্যন্ত ভরাট,অনেক সময় মাইক ছাড়াই সভা-মঞ্চ থেকে সাজেদা চৌধুরীর বক্তব্য দর্শক-শ্রোতা মণ্ডলী বেশ পরিষ্কারভাবেই উপভোগ করতে পারেন।

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নানান দূর্নীতির দায়ে সাজেদা চৌধুরী দূষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন,এ জন্য তার দীর্ঘ-মেয়াদী সাজাও হয়েছিলো।তার সুযোগ্য পুত্র অনেকটাও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে দলীয় রাষ্ট্রপতির কল্যাণে আইনের হাত থেকে রক্ষা করেছেন বা ক্ষমা প্রাপ্তির সুযোগ লাভ করেছেন বলে বাজারে প্রচলিত রয়েছে।

০২)

বাংলাদেশের সবচাইতে বৃহত্তম সেতু প্রকল্প এই আলোচিত পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক এবং এডিবি কর্তৃক ঋণ-দান নানান অবস্থার পর, বহুল আলোচিত আবুল হোসেন এবং সাকো ইন্টারন্যাশনালের দূর্নীতির অভিযোগের কারণে সুষ্ঠু সুরাহা না হওয়া তো বিশ্বব্যাংক যখন ঋণ প্রদান স্থগিত ঘোষণা করে,পরবর্তীতে এডিবি ও তাদের অনুসরণ করে,অথচ সরকার, আওয়ামী লীগ এবং সাজেদা চৌধুরীদের যেন এখনো জনগণকে বেকুব বানানোর হীণ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।কখনোবা বিশ্বব্যাংক নিজেই দুর্নীতিগ্রস্ত, কখনো বিরোধীদলের ঘাড়ে দোষ চাপানো,কখনো ইউনূস ইস্যুতে বিশ্বব্যাংকের মোড়ল আমেরিকা নাখোশ,আর এখন সাজেদা চৌধুরী দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বিশ্বব্যাংকের তোয়াক্কা না করার ঘোষণা দিয়েছেন।

সরকারের এবং তার টিম ও নের্তৃবৃন্দের বক্তৃতা-বিবৃতির যেখানে হওয়ার কথা ছিলো মার্জিত, শালীনতাপূর্ণ এবং অত্যন্ত গঠনমূলক, সেখানে আমরা দেখতেছি,যারা দেশ ও জাতিকে নেত্রীত্ব দিয়ে চলেছেন,তাদের বক্তব্য-বিবৃতি বড় শিশুসুলভ,অরাজনৈতিক এবং কখনো-কখনো অতি বাগাড়ম্বরপূর্ণ।

বিশ্বব্যাংকের এবং পরে এডিবির ঋণ-প্রদান স্থগিতের পরে,সরকারের যেখানে উচিৎ হলো, উদ্ভূত দায়-দায়িত্ব স্বীকার করে নিয়ে সমগ্র বিষয়টি গভীরভাবে পর্যালোচনা করে অত্যন্ত দক্ষতা ও নের্তৃত্ব সুলভ কৌশলী ভূমিকা নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত পুনর্মূল্যায়নের লক্ষ্যে সঠিক ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা,সেখানে আমরা লক্ষ্য করে চলেছি, একদিকে বিশ্বব্যাংকের সাথে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার বৈঠকের তোড়জোড় যেমন চলছে,একইভাবে সংসদে এবং বাইরে নানা অনুষ্ঠানে স্বয়ং সরকার প্রধান এবং সংসদ উপনেতার বিশ্বব্যাংক বিরোধী বক্তব্য পরিস্থিতিকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে আরো ঘোলাটে করে তুলার হীন রাজনৈতিক এই অপ-কৌশল হিতে বিপরীত হতে বাধ্য।

০৩)

আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা এবং সংসদের উপ-নেতা হিসেবে সাজেদা চৌধুরী যদি সাহস করে বলতেন,বিশ্বব্যাংকের সাহায্য যেমন চাইনা,একইভাবে এখন থেকে আমরা আওয়ামী লীগ দলীয় ভাবে আর কাউকে দূর্নীতি, সন্ত্রাস, কালোটাকা, পেশী-শক্তির রাজনীতি করতে দেবো না, নিজেরাও যেমন করবো না, অন্য কাউকেও করতে দেবো না। তাহলেই কেবল দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় এবং দলীয় ও জোটগতভাবে একটা স্বচ্ছ, ক্লিয়ার ম্যাসেজ যেমন পৌছাতে সক্ষম হতো,একইভাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশ এবং দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগেরও ইমেজ ধীরে-ধীরে বাড়তো।

অর্থমন্ত্রীর প্রেস কনফারেন্স এর বক্তব্যের পরে এবং ইআরডির দাতাদের সাথে জরুরী বৈঠকের মুহূর্তে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এই ধরনের একটা স্বচ্ছ গ্রীণ সিগন্যাল দেওয়া বিশেষ জরুরী,বিশেষ করে বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত পু্নর্বিবেচনার ক্ষেত্রে।তা না করে সাজেদা চৌধুরী উল্টো পল্টনের সেই অতীত বক্তব্যের স্টাইলে ভাঙ্গা রেকর্ড বাজিয়ে চলেছেন,শুধু কি তা আরো একধাপ এগিয়ে যুদ্ধংদেহী মনোভাব প্রকাশ করেছেন, যা দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতার কাছ থেকে কাম্য নয়।

০৪)

সাজেদা চৌধুরী আপনি,ইউরোপ,আমেরিকা ও অন্যান্যদেশের নির্বাচনের কথা বলেছেন,সেইভাবে নির্বাচন করার আগ্রহও প্রকাশ করেছেন।ভালো কথা,আমরা চাই বাংলাদেশের সকল নির্বাচন স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হউক।

কিন্তু মাননীয় নেত্রী বলবেন কি,বাংলাদেরশের বিরাজমান বাস্তবতা,রাজনৈতিক সংস্কৃতি, আর বর্তমান আধা-স্বাধীন এবং পর্যাপ্ত লোকবলহীন,অর্থনৈতিক ভাবে সরকারের উপর নির্ভরশীল এক নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে কি আদৌ ইউরোপ,আমেরিকা কিংবা ভারতের মতো দেশের মতো নির্বাচন কমিশনের ন্যায় নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব? সেটা আপনি যেমন ভালো করে জানেন,দেশের আপামর জনগণও তা ভালো করেই অবগত।

আপনাদের তো নির্বাচনী ইশতেহারের অঙ্গীকার ছিলো স্বাধীন নিরপেক্ষ এবং প্রশাসনিক, সাংবিধানিকভাবে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠণ বা ঢেলে সাজানোর।নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর থেকে এই তিন বছরের মধ্যে একটিবারের জন্যও তো আপনারা এখনো কোন দৃশ্যমান কাজ করছেন বলেতো শুনিনি, দেখা তো সুদৃঢ় পরাহত।নির্বাচনের সময় ইউরোপ,আমেরিকায় আপনাদের সরকারের মতো নির্বাচন কমিশন নির্বাহী বিভাগের অধীন থাকেনা,প্রশাসনিকভাবে সংকটপূর্ণ থাকেনা,আপনাদের মতো খবরদারীর সর্বপ্রকারের বাইরে থাকে,সেজন্য ইউরোপ,আমেরিকায় স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে, জনমতেরও সঠিক প্রতিফলন হয়ে থাকে।তবে কি নির্বাচন কমিশনকে আপনাদের তথাকথিত অন্তর্বর্তী সরকারের অধীন রেখে নির্বাচন করতে চান?আপনার বক্তব্যে এবং আপনাদের কর্মকাণ্ডে তো তাই প্রতীয়মান হচ্ছে।

০৫)

সাজেদা চৌধুরী, একটি কথা আপনি ভালো করে উল্লেখ করেছেন,আমি বলবো তাও আংশিক সত্য বলেছেন,জাতির পিতার আদর্শ এবং ছাত্রলীগের গৌরব গাথার কথা।কিন্তু আপনি বলেননি,আপনারা এবং আমরা সকলেই আজ জাতির পিতার আদর্শ থেকে সরে এসেছি, সেই জন্যই আওয়ামী লীগের আজ এতো অধঃপতন।জাতির রন্ধ্রে-রন্ধ্রে এতো দূর্নীতি,এটা আজ আমাদের কালচারে পরিণত হয়ে গেছে,এক্ষেত্রে অন্যদের সাথে আপনারাও সমানভাবে দৌড়ে চলেছেন।

আর ছাত্রলীগ আজ তার অতীত ঐতিহ্য থেকে অনেক দূরে সরে এসে এখন দলীয় ক্যাডার আর টেন্ডারবাজী,সন্ত্রাস আর দূর্বৃত্তায়নের রাজনীতিতে সিদ্ধহস্ত।যদি সাহস করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে এই সব অন্যায়-অত্যাচার আর অবিচারের বিরুদ্দ্বে ছাত্রলীগকে উদ্বুদ্ধ করতে পারতেন, তবে ছাত্র সমাজ এবং জাতি অনেক উপকৃত হতো।

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ
Salim932@googlemail
tweet@salim1689
6th july 2012.UK