রাষ্ট্র ও সরকারকে অরাজকতা থেকে সরে এসে গণতান্ত্রিক আচরণ করতে হবে

সেলিম আহমেদ
Published : 17 July 2012, 04:46 AM
Updated : 17 July 2012, 04:46 AM

বিশ্বখ্যাত বিবিসি সাংবাদিক জন সিম্পসন সব সময় ভালোবাসেন ওয়ার ক্রাইম সংবাদ এর ভিতরকার অন্তর্নিহিত সংবাদের তথ্য ও তথ্যাবলী খুব দক্ষ ও নিখুতভাবে বিশ্লেষণ করতে, বলা যায় অনেকটা ঝুকি নিয়ে তিনি সংবাদ বিশ্লেষণ করে চলেন। ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়ায় ন্যাটো বা জোট বাহিনী আক্রমণের শুরুতে যখন জন সিম্পসন সংবাদ পরিবেশন করতে যান, তখনি বিশ্বের তাবৎ লোকের ধারণা হয়ে যায়, সমরিক একশন অত্যাসন্ন।নট কোয়াইট ওয়ার্ল্ড এন্ড নামে তার ট্রাভেলার্স টেইলস বলে সুন্দর একটি সংবাদ ও তথ্য নির্ভর বই আছে, যেখানে এক পর্যায়ে তিনি একটি কবিতা বেশ সুন্দর ভাবে ঝুকি পূর্ণ ফ্লাইটে থেকেও আওড়িয়েছেন, পাঠকদের সুবিধার্থে তা এখানে তুলে ধরলাম,আর তা হলো-

" I am an air man,I am an air man
And I fly,fly,fly,fly,fly
Up in the sky, ever so high
The birdies cannot catch me
No matter how they try.."
(Page no 148)

আমাদের চার পাশে, সমাজে ও রাষ্ট্রে প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া ক্রমবর্ধমান বৈপিরীত্য এবং অসঙ্গতি দেখে আমার তাই সিম্পসনের ঐ উড়ে যাওয়ার এয়ারম্যানের কথাই মনে পড়ছে, যাকে কোন পাখীও ধরতে ব্যর্থ হয়।হবেইতো, রাষ্ট্র এবং তার অধিকর্তারা যদি প্রতিনিয়ত ধুর্ততার আশ্রয় নিয়ে চলে আর বলে আমি দেশ বাসীকে এতো-এতো উন্নতির শিখরে নিয়ে চলেছি, তাহলেতো আমজনতা সেই সরকারকে ঐ পাখীর মতো ধরতে না পারার গল্পে বোধ হয়ে আত্নতৃপ্তি করেই চলবে ছাড়া আর কিইবা করতে পারে।

প্রিয় পাঠক,গণতান্ত্রিক সরকার ব্যাবস্থা ও গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মানের নিয়ত অঙ্গীকার করে ক্ষমতায় বসেই আমাদের সরকারগুলো অগণতান্ত্রিক কর্মকান্ডে এতো অব্যস্থ হয়ে পড়ে কিংবা প্রশাসন যন্ত্রকে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক লেবাসে অগণতান্ত্রিক নব্য স্বৈরাচারী কায়দায় চালানোর ও প্রাক্টিসে অব্যস্থ করে তোলে যে, রাষ্ট্র ও সরকার হয়ে পড়ে গণ দূশমনে, জনগণ ক্রমাগত ভয়ে উৎকণ্ঠিত হতে থাকে,সকারের নানাবিধ এজেন্সী ও প্রতিষ্টানের ও সরকারী দলের তান্ডবের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে, ভীত-সন্ত্রস্থ হয়ে পথ খোজে ফিরে।এই কী ছিলো আমাদের সেলিম-দেলোয়ার-তিতাস-ময়েজউদ্দীন-মুনীর-তপন-শাজাহান সিরাজ-ডাঃ মিলন আজ তাজুলের বুকের তাজা রক্তের অক্ষরে লেখা বড় বেশী দামে পাওয়া আমাদের এই গণতন্ত্র ? তাদের আহত-ক্ষত-বিক্ষত পরিবারও আজ ভয়ে মুখ লুকিয়ে থাকে।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকার ও তার প্রশাসন যেখানে জনগণের সেবক হওয়ার কথা, সেখানে আমাদের এখানে হয় তার উল্টো।আর প্রধানমন্ত্রী থেকে সরকারের সকল মন্ত্রী মহোদয় আর তার সরকারী দলের নেতা ও দলীয় ক্যাডাররা জোরে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন, জনগণের সেবা করে- করে তারা চলেছেন।যদি তাই হবে,পুলিশ কেন এতো মারমুখী হবে?গণতান্ত্রিক সরকারের পুলিশ প্রশাসনতো হবে জনগণের বন্ধু।তা না হয়ে তারা প্রভু হয়ে বসে আছে, যেন জনমনে ভীতি ছড়ানোই তাদের কাজ।একজন সাধারণ পুলিশের কর্মকর্তা কি করে সাহস করে একজন ম্যাজিষ্ট্রেটকে হুমকী প্রদর্শন করতে ?, ট্রান্সফার করে দেবার প্রশাসনিক খুটির জোর প্রকাশ করে? বড় অবাক হয়ে যাই, যখন দেখী পুলিশের কর্মকর্তা হয়ে সাংবাদিকের গলার কলার চেপে ধরে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে?পিঠিয়ে আহত করে?যখন-তখন ঘরে কিংবা বাইরে থেকে সরকারের বিশেষবাহিনীর নাম করে যে কাউকে সে হউক ছাত্র, ব্যাবসায়ী, রাজনীতিবিদ, যেই হউক,তাকে ধরে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।পরিবারের লোকজন শত চেষ্টা করেও প্রশাসনের ধর্ণা দিয়েও তার আর কোন হদীস পাননা,যা কিনা পরবর্তীতে বিভিন্ন খালে,কিনারে,বেড়ী বাধে তার খন্ড,বিখন্ড,গলিত লাশ পাওয়ার নজীর যেন আজ অনেকের কাছে এ এক গা-সওয়া হয়ে গেছে।এই কী আমাদের গণতন্ত্র? এটাতো আইনের শাসনের স্বাক্ষর বহন করেনা।প্রতি নিয়ত মানুষ খুন হচ্ছে, গুম হচ্ছে আর সরকার তার কোন কূল-কিনারা করতে পারছেনা,তাতো গণতান্ত্রিক শাসনের কথা হতে পারেনা।

সব কটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আজ বড় আশান্ত, পড়া-লেখার পরিবেশ বিঘ্নিত,বুয়েট আজ এক ব্যাক্তির পদত্যাগের দাবীতে উত্থাল,জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় আবারো উত্তপ্ত হতে চলেছে,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকালও সরকারী ছাত্র সংগঠণের দুই গ্রুপের মারামারীতে এক ছাত্র নিহত হয়েছে।মাসে পর মাস,বছরের পর বছর এভাবে একটি দেশের উচ্চ শিক্ষার অঙ্গনে এইরকম অরাজক ও অশান্ত পরিবেশ চলতে পারেনা।সরকারী ছাত্র সংগঠণের ও সরকারী গ্রুপের এতো বেপরোয়া কর্মকান্ড গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে চলতে দেওয়া যায়না।এখানে সরকার তার দায়-দায়িত্ব এড়াতে পারেনা।সরকারের আস্কারা পেয়েই এরা একের পর এক বেপরোয়া হয়ে উঠে শিক্ষাঙ্গনকে করে তুলছে অশান্ত।এখনি তা রুখতে হবে? জাতি হিসেবে আর কতো অরাজকতা আমরা বয়ে চলবো? সরকার কি একটূ গণতান্ত্রিক আচরণের চর্চা করবে ও অন্যদেরকে তাই করতে উৎসাহিত করবে?

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ
Salim932@googlemail.com
17th July 2012.uk