অলিম্পিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানকে ঘিরে লন্ডন নগরীতে বসানো হয়েছে মিসাইল: সন্দেহভাজন তিন বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

সেলিম আহমেদ
Published : 18 July 2012, 06:26 PM
Updated : 18 July 2012, 06:26 PM

২৭ জুলাই লন্ডনে অলিম্পিকের বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠান:

গোটা লন্ডন নগরীকে নিরাপত্তার চাদরে মোড়া, বসানো হয়েছে মিসাইল

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ, যুক্তরাজ্য থেকে-

আগামী ২৭-শে জুলাই ২০১২ সারা দুনিয়ার বৃহত্তম নান্দনিক ক্রীড়া উৎসব বিশ্ব অলিম্পিক ও প্যারাঅলিম্পিক-এর শুভ উদ্ভোধন ঘোষণা করা হবে।এই উপলক্ষ্যে সারা বিশ্ব থেকে বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া এথলেটরা লন্ডনে আসা শুরু করেছেন।তাদের আসা-যাওয়া ও লন্ডন অলিম্পিক ভেন্যূর নিরাপত্তা প্রদানের জন্য ব্রিটিশ সরকার নিয়েছে অত্যন্ত কড়াকড়ি ও নজর কাড়া নিশ্চিদ্র এক নিরাপত্তা ব্যাবস্থা।লন্ডন অলিম্পিকের নিরাপত্তার দায়িত্ত্বে নিয়োজিত জি৪এস সিকুউরিটি সংস্থা গত সপ্তাহের শুরুতে পূর্ণ নিরাপত্তার জনবল সরবরাহ করতে ব্যার্থ হলে হোম সেক্রেটারী থেরেসা মে পার্লামেন্টকে অবহিত করে বলেছেন, সরকার বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করে ঘাটতি জনবলের স্থান পূরণ করা হবে।এই লক্ষ্যে সরকার সাড়ে ১৩ হাজারেরও উপরে অধিক সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে, চলছে বিশেষ অভিযান, বিশেষ করে লন্ডন এবং অলিম্পিক ভেন্যূ সংলগ্ন হওয়াতে বাঙ্গালী অধ্যূষিত টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকায় চলছে কমান্ডো ষ্টাইলে অভিযান, শুধু তাই নয় পূর্ব লন্ডনের বাঙ্গালী অধ্যূষিত এলাকার সু-উচ্চ ভবনের ফ্ল্যাটে বসানো হয়েছে বিমান ও ক্ষেপনাস্র বিধবংসী মিসাইল।এই পর্যন্ত সন্ত্রাসী ও আল-কায়েদা লিংক সন্দেহে তিন বাংলাদেশীকে আটক করা হয়েছে।

১৯০৮ ও ১৯৪৮ সালের পর লন্ডন আবার অলিম্পিকের অয়োজক হওয়ার মতো গৌরব লাভ করেছে।এই অলিম্পিকের উদ্ভোধনী অনুষ্টানে যোগ দিতে সারা বিশ্বের দুইশত সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানরা লন্ডনে আসবেন,বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে যোগ দিতে ২৫-শে জুলাই লন্ডনে আসার নির্ধারিত কর্মসূচী রয়েছে।

অলিম্পিকের নিরাপত্তার সবচাইতে বড় হুমকী হিসেবে দেখা হচ্ছে, চরমপন্থী আল-কায়দা নেটওয়ার্ক এর সন্ত্রাসী সংগঠণকে।আর তা প্রতিরোধে আইন-শৃংখলা বাহিনী কয়েক স্তরের প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা গড়ে তুলেছে।আর সেই লক্ষ্যে রাস্তায়-রাস্তায় চেক পোষ্ট, লন্ডন আন্ডার গ্রাউন্ডে অতিরিক্ত চেকিং সিষ্টেম, ইলেক্ট্রনিক ট্রাকিং সিষ্টেম, বাসের পূর্ব-নির্ধারিত রুটগূলোর পরিবর্তন করে নয়া নির্দেশনা ব্যাবস্থা, সেনাবাহিনী মোতায়েন ও বাসার ছাদে মিসাইল স্থাপন ইত্যাদি এই নিরাপত্তার অংশ।বিবিসি টেলিভিশন ও স্কাই নিউজ সূত্রে জানাগেছে, লন্ডনে সেনা মোতায়েনের সংখ্যা আফগানিস্তানে সৈন্য প্রেরণের সংখ্যার চাইতেও অধিক।

লন্ডন অলিম্পিক গেইমের নিরাপত্তা বাজেট ধরা হয়েছে ৫৫৩ মিলিয়ন ষ্টার্লিং পাউন্ড।সেনা সদস্য ও বিশেষ সিকিউরিটি টিম ছাড়াও পুলিশের এক বিশাল ইউনিট ও একইসাথে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে, এছাড়া থাকবে রয়েল নেভি ও সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার ব্রিটেনের কয়েকটি এলাকায় প্রস্তুত থাকবে।

সর্বসাকুল্যে ২৩ হাজার ৭০০ নিরাপত্তা কর্মী লন্ডন অলিম্পিকের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে বলে থেরেসা মে পার্লামেন্টে অবহিত করেছেন।

এদিকে, কমিউনিটি ও টাওয়ার হেমলেটস এর জনসংযোগ বিভাগ ও বিবিসির অনলাইন সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ জুলাই লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের এক বিশেষ টিম ইষ্ট লন্ডনের বাঙ্গালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুই সহোদর জাহাঙ্গীর আলম (২৬), মহিবুর আলম (১৮) এবং আলমগীর আলম (২৪) নামে তিন বাংলাদেশী যুবকদের গ্রেপ্তার করে।অভিযান কালে বিস্ফোরক দিয়ে কমান্ডো স্টাইলে পুলিশ দরজা ভেঙ্গে বাসার ভিতরে ঢুকে এদের ঘুমন্ত অবস্থায় গ্রেপ্তার করে।এর আগে ঐ এলাকা বিপুল সংখ্যক স্পেশাল টিম বাড়ীটি ঘিরে ফেলে।জানা গেছে গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে প্রকৃত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা এর আগে জড়িত থাকার কোন রেকর্ড নেই, ধারণা করা হচ্ছে নিছক সন্দেহের বশবর্তী হয়ে পুলিশ তাদের এরেষ্ট করেছে।গ্রেপ্তারকৃতদের লন্ডনের ওয়েষ্ট মিনিস্টার কোর্টে নেয়া হলে ম্যাজিষ্ট্রেট ১২-ই জুলাই পর্যন্ত তাদের জিজ্ঞাসার জন্য মঞ্জুর করেন।

গ্রেপ্তারকৃত একজন জাহাঙ্গীর আলম ২০০৯ সাল থেকে কমিউনিটি সেইফটি অফিসার হিসেবে কর্মরত বলে লন্ডনের বাংলা প্রেসক্লাব ও টিভি চ্যানেল সাংবাদিকদের সুত্রে জানা গেছে।

অলিম্পিক চলাকালীন সময়ে সমগ্র লন্ডনে অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে মেট্রোপলিটন পুলিশ বেশ কিছু জিনিস বহন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, তাদের মধ্যে রয়েছে, নাইফ,ছুরি, লাঠি-সোঠা,পোষা কুকুর,স্প্রে, আতশবাজী, এলকোহল, শক্ত খোলসের ব্যাগ,ওয়াকিটকি, থ্রি-জি, ওয়াই-ফাই এক্সেস পয়েন্ট প্রভৃতি।

এদিকে সাবেক ইংল্যান্ড ক্যাপ্টেন এবং লিজেন্ডারি ফুটবলার ডেভিড ব্যাকহাম অলিম্পিক টর্চ কারী করতে অপারগতা জানিয়েছেন নিজে থেকে,যদিও এখনো পরিষ্কার নয় কে প্রজ্বলন করবে ইংল্যান্ড এর এই অলিম্পিক মশাল।একদল সাংবাদিক তাদের কলামে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারকে এই মশাল প্রজ্বলনের কথা বলে চলেছেন এই জন্য যে ক্ষমতায় থাকাকালীন বলা যায় টনি ব্লেয়ার একক প্রচেষ্টায় এই অলিম্পিক লন্ডনে আবার নিয়ে আসার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভুমিকা পালন করেছিলেন,আর তাই তারা সেদিক বিবেচনা করে তাকে আইকন হিসেবে দেখছেন।যাই হউক শেষ পর্যন্ত ২৭ জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে, কে হউন এই আই কন তা দেখতে।

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ
Salim932@googlemail.com
18th July 2012.uk