লন্ডনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ১৯৭১ সালের ধর্ষন, হত্যা স্থান না পাওয়ায় স্মারকলিপি পেশ

সেলিম আহমেদ
Published : 14 June 2014, 02:10 PM
Updated : 14 June 2014, 02:10 PM

অ্যাঞ্জেলিনা জোলির গ্লোবাল সামিটে ৭১ মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন নারীদের প্রতি সহিংসতা স্থান পায়নি: আইসিএসএফ উদ্বেগ প্রকাশ

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ-যুক্তরাজ্য থেকে

গত ১০-১২ জুন ২০১৪ বিশ্বখ্যাত সেলেব্রিটি অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ও ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগের দ্বারা আয়োজিত গ্লোবাল সামিট টু এন্ড সেক্সুয়াল ভায়োল্যান্স ইন কনফ্লিক্ট শীর্ষক সামিট হয়ে গেলো লন্ডনের এক্সেল সেন্টারে, যা বিশ্ব মিডিয়ায় শিরোনাম ছিলো।

সামিট যুদ্ধে ও সংঘাতে লিপ্ত দেশ সমূহে নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা এবং যুদ্ধের লিপ্ত দেশের মধ্যে নারীদের নানা যৌন হয়রানি, ধর্ষণ ইত্যাদি বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রীতির প্রটোকল চালু করে নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা ও ক্রীতদাসের সংস্কৃতি বন্ধের ও দায়মুক্তির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে নারীদের প্রতি এই অবমাননা এবং যৌন সহিংসতা বন্ধের আহবান জানানো হয়েছে।

আয়োজকদের মধ্যে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং হলিউড সেলেব্রিটি তারকা জোলি যারা উভয়েই বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় যুদ্ধ বিধবস্থ দেশে নারীদের প্রতি যৌন হয়রানী, ধর্ষণের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন এবং তা বন্ধের লক্ষ্যে উদ্যোগ অব্যাহত রেখে চলেছেন, তারা উভয়েই গ্লোবাল এই সামিটে আহবান জানিয়েছেন, যুদ্ধে আক্রান্ত ও সংঘাতে লিপ্ত দেশ সমূহে নারীদের প্রতি যৌন সহিংসতা বন্ধ এবং যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য বহুল প্রমাণ রয়েছে যৌন সহিংসতার, তাদেরকে নিজ নিজ দেশের মধ্যে কার্যকর আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচারের সম্মুখীন করার।

বিশ্বের ওয়ার জোন এলাকাসমূহে নারীদের প্রতি যৌন হয়রানি বন্ধে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছেও ভূমিকা রাখার এপিল করেছেন।

কিন্তু এতো বড় বিশ্ব কনফারেন্সে এবং সেলেব্রিটি উদ্যোক্তা অ্যাঞ্জেলিনা জোলির প্রচারণা ও বক্তব্যে ১৯৭১ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রায় দুই লক্ষ নারীদের ইজ্জত ও সম্ভ্রম হানি যে পাকিস্তানী নরপিশাচ সৈন্যরা করেছিলো, তা কোনভাবেই উল্লেখিত না হওয়ায় ও রেকর্ডভুক্ত না হওয়ায় আইসিএসএফ তথা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ষ্ট্র্যাটেজী ফোরাম ইউকে উদ্বেগ প্রকাশ করে সামিট উদ্যোক্তাদের স্মরণ করিয়ে  জানিয়েছে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানী সৈন্যরা নিরপরাধ বাঙালি নারীদের ইজ্জত লুণ্ঠন করেছে, যা এই সামিটের উদ্যোক্তাদের দ্বারা এর বিরুদ্ধেও বক্তব্য আসা উচিত ছিলো।

এ সময় সামিট চলাকালীন সময়ে সম্মেলন স্থল এক্সেল সেন্টারের বাইরে লন্ডনের গণ জাগরণ মঞ্চ, ইউকে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, ইউকে জাসদ, বাসদ, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি মানব বন্ধন করে এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সৈন্যদের দ্বারা নিরীহ বাঙালি মা বোনদের ইজ্জত হানির বিরুদ্ধে সামিটও সোচ্চার হয়ে বিশ্বে রিকগনিশন দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তদের গ্লোবাল সহায়তার সাথে দুষীদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবী জানান।

পরে উভয় সংগঠন সমূহের পক্ষ থেকে সম্মেলনের উদ্যোক্তাদের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপিতে বলা হয়- আমরা ন্যায় বিচার চাইছি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় যে সব বাঙালি নারীদের ধর্ষণ, হত্যা, যৌন সহিংসতা করেছে পাষণ্ড পাকিস্তানী সৈন্যরা। আমাদের সেই ভিক্টিম নারীদের পক্ষে ন্যায় বিচার চাইছি। আমরা আরো চাই এই সম্মেলন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যে সব অসহায় নারীদের সম্ভ্রম হানি ঘটানো হয়েছে, সম্মেলন তা বিশ্বের অন্যান্য ওয়ার জোন স্থানে ঘটে যাওয়া যৌন সহিংসতার স্বীকৃতি দেয়া হউক।

আইসিএসএফ বলছে এতো বড় গ্লোবাল সামিটে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় অসহায় নারীদের ইজ্জত লুণ্ঠনের বিষয়ে কোন বক্তব্য না আসাটা হতাশা জনক। আমরা আশা করেছিলাম উদ্যোক্তারা আন্তর্জাতিক যুদ্ধ ও সহিংসতায় লিপ্ত দেশ সমূহের নারীদের কল্যাণে কাজ করছেন, ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের বীরাঙ্গনা সেই সব ইজ্জত হারানো নারীদের নিয়েও  বক্তব্য থাকবে। সেজন্যে আমরা অন্যান্যদের সাথে মিলে এক্সেল সেন্টারে প্রতিবাদ ও মানব বন্ধনে শরীক এবং স্মারকলিপি প্রদানে অংশ গ্রহণ করেছি।

13th June 2014, London.