রোশনারা-টিউলিপের সাথে জয়ের দৌড়ে রূপা হক এগিয়ে

সেলিম আহমেদ
Published : 18 April 2015, 05:59 PM
Updated : 18 April 2015, 05:59 PM

এবারের ব্রিটেনের নির্বাচনে বাংলাদেশী প্রার্থীরা  প্রায় তারকাখ্যাতি নিয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের রোশনারা ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ইতোমধ্যেই নাম লিখিয়েছেন, সুনামের সাথেও তিনি গত পার্লামেন্টে কাজও করেছেন। এবারও তিনি প্রার্থী। জয় অনেকটাই নিশ্চিত ধরে নেয়া যায়- রোশনারার কাজ, কর্ম ও জনপ্রিয়তার নিরিখে। এদিকে উদীয়মান দুই তারকা রাজনীতিক হিসেবে হ্যাম্পষ্ট্যাড-কিলবার্ন আসনে টিউলিপ সিদ্দিকী যেমন জনপ্রিয়তা ও ভোটারদের পছন্দের তালিকায় এগিয়ে, তেমনি ইলিং সেন্ট্রাল ও এক্টন আসনে ডঃ রূপা হকও এগিয়ে ( ইউগভ, মরিস পুল)।

প্রসঙ্গ ইলিং সেন্ট্রাল- একটন আসনঃ-

ইলিং  সেন্ট্রাল এবং একটন আসনে গত পার্লামেন্টে  এমপি ছিলেন কনজারভেটিভ দলের অ্যাঞ্জি  ব্রে।  তিনি ভোট পেয়েছিলেন ৩৮ পার্সেন্ট, বিগত সময়ের তুলনায় তিনি ৬.৮% ভোটার আকর্ষন করতে পেরেছিলেন। অ্যাঞ্জি ব্রে ১৭,৯৪৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিপরীতে লেবার দলের প্রার্থী  বাজাম মাহফুজ পেয়েছিলেন ১৪,২২৮ ভোট, অর্থাৎ  ৩০.১ পার্সেন্ট ভোট তিনি পেয়েছিলেন এবং ঐ সময় লেবারের ভোট -৩.২ কমেছিলো। আর লিবারেলের জন বল পেয়েছিলেন ১৩,০৪১ ভোট, অর্থাৎ  ২৭.৬% তিনি পেয়েছিলেন। লিবারেলেরও ভোট কমেছিলো -৩.০ ( সূত্রঃ ইলেকশন কমিশন )। মোট ভোটের হিসেব করলে দেখা যায়, গত পার্লামেন্টে  কনজারভেটি স্যুইং ভোটারদের আকর্ষন করেছিল এবং এই স্যুইং ভোটের ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলো। ডঃ রূপা হক এবং লেবার টিম এই স্যুইং ভোটারদের নিজেদের ক্যাম্পে নিয়ে আসার টার্গেট নিয়ে ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও বিগত হিসেবে আনুপাতিক হার খুব একটা বিরাট ব্যবধান ছিলোনা, কিন্তু এই অল্প ব্যবধান সামলে জয় ছিনিয়ে নেয়াটাও দুঃসাধ্য এক কাজ। 

তবে রূপা তার জয়ের ব্যাপারে খুবই আশাবাদী এবং দিন রাত ক্যাম্পেইন করে যাচ্ছেন। ইলিং সেন্ট্রাল একটন আসনের প্রতিটি ঘরের দরজায় রূপা নক করছেন। কোন দরজাই তিনি আনটাচ রাখতে চাননা। জনমত জরিপেও দেখা গেছে রূপার পাল্লা ভারী, এখনো তিনি কনজারভেটিভের প্রার্থীর চেয়ে এগিয়ে। গার্ডিয়ানে তিনি তার এক সাক্ষাৎকারে তার সংসদীয় আসন থেকে জয়ের ব্যাপারে তীব্র আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। লেবার দলের কেন্দ্রীয় অফিসে বিএমই যে তিনটি সিট নিয়ে জয়ের হিসেব নিকেশ চলছে, রূপার সিট তার অন্যতম।

একজন রূপা হক-

রুপা পুরো নাম রুপা আশা হক, পেশায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সোসিওলজির শিক্ষক। শিক্ষকতা করছেন লন্ডনের কিংস্টন ইউনিভার্সিটিতে একজন সিনিয়র লেকচারার হিসেবে। এর আগে তিনি ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেছেন।পিএইচডি করেছেন কালচারাল স্টাডিজের উপর।

রুপা হক ২০০৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে কনজারভেটিভের সেইফ সিট বাকিংহাম শায়ারের চিজহাম-আমেরশাম সিটে শেরিল গিলানের সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করে হেরে যান। ২০১০ সালে তিনি লন্ডন বারা অব ইলিং এর ডেপুটি মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মেম্বার পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন।

রুপা হকেরা তিন বোন। সকলেই কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। তার বড় বোন নোরা হক একজন আর্কিট্যাক্ট। ছোট বোন কনি হক বিবিসির বিখ্যাত প্রোগ্রাম ব্লু পিটারের একজন জনপ্রিয় এংকর।

রুপার মা বাবা ১৯৬০ সালের দিকে সিলেট থেকে এসে ব্রিটেনে এসে বসবাস শুরু করেন। তার বাবা মসদূল আবেদিল হক ব্রিটেনে আসার পর ইষ্ট লন্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেন। একসময় সহোতে তিনি রেস্টুরেন্ট ব্যবসাও খুলেছিলেন।

রূপা হক এবং বাংলাদেশ-

রূপা বললেন, তিনি ভালোবাসেন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণকে। বাংলাদেশের জনগণ খুব অতিথি পরায়ন এবং সহজ ও সিম্পল। বাংলাদেশের জনগণের এই সহজাত গুণটি তার অসম্ভব ভালোলাগে। রূপা বললেন, বাংলাদেশের জনগন সহজেই কাউকে আপন করে নেন। নিজ দেশের জনগণের এই স্বভাবজাত সুন্দর গুণটি অকপটে বললেন বেশ গর্বের সাথে।

আমার ধারনা ছিলো, রূপা হয়তো বাংলা খুব একটা বলতে পারবেননা। আমার সে ধারনাকে ভুল প্রমাণিত করে তিনি বাংলা ভাষায় শুরুই শুধু করলেননা, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মহান শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা দিয়েই তিনি বলতে লাগলেন। তিনি হেসে বললেন, তিনি এখনো শিখছেন।

রূপা বললেন, বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে "ওয়ান অব দ্য গ্রেট নেশন হো ফাউট ফর দেয়ার মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ" এমন দেশ বিশ্বের আর কোথাও কি খুঁজে পাওয়া যাবে ?

এবং রূপা হক-

রূপা জানালেন ২০১০ সালে তিনি লন্ডন বারা অব ইলিং এর ডেপুটি মেয়রের দায়িত্ব সফলতার সাথে পালন করেছেন।তিনি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মেম্বার পদেও প্রতিদ্বন্ধিতা করেছিলেন।

রূপা জানালেন তার বর্তমান সংসদীয় আসন হলো ইলিং সেন্ট্রাল ও একটন। রুপার মতে এই আসন বর্তমানে লেবার দলের উইনিং সিট, যে কারণে সবাই মিলে সহযোগিতা করলে এ আসনে তিনি জয়ী হবেন বলেই দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করলেন।

জানতে চাইলে তিনি জানালেন, ২০০৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে কনজারভেটিভের সেইফ সিট বাকিংহাম শায়ারের চিজহাম-আমেরশাম সিটে শেরিল গিলানের সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করে হেরে গিয়েছিলেন। একেতো তিনি ঐ সময় ছিলেন নবাগতা, তাছাড়া ঐ আসন ছিলো কনজারভেটিভের।

রূপা জানালেন তিনি পুরোদমে ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রচুর সাড়াও পাচ্ছেন।তার আসনের সকল এথনিক মাইনোরটি সহ বাংলাদেশীদের কাছে রূপা এপিল করেছেন তাকে ব্রিটেনের সংসদে পাঠানোর জন্য সকলে মিলে সহযোগিতা করার জন্যে। তিনি আরো বললেন, আমি জানি, ব্রিটেনে বসবাস করলেও বাংলাদেশীরা দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও মতাদর্শের অনুসারী হয়ে কাজ করছেন। সেজন্যে তিনি সকল দল মত নির্বিশেষে বাংলাদেশী  প্রার্থীকে জয়ী করার জন্য সহযোগিতার আহ্বান জানান।

রূপা জানালেন, বাংলাদেশীদের জব, বাসস্থানের উন্নয়ন, আধুনিক স্বাস্থ্য সেবার আরো সুযোগ গ্রহণ, মেইন ষ্ট্রীম জব মার্কেট ও রাজনীতি ও প্রফেশনে আরো অধিকহারে সুযোগ গ্রহনের পাশাপাশি সমস্যা চিহ্নিত করে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

আবারো বাংলাদেশ প্রসঙ্গ-

আবারো বাংলাদেশ নিয়ে কথা- রূপা জানালেন, বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন ও সক্ষমতা নিয়ে তিনি প্রচন্ড আশাবাদী। বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে বিরাট অগ্রগতি সাধন করেছে। তারপরেও তিনি মনে করেন, এ ক্ষেত্রে আরো উন্নতি করার যথেষ্ট স্কোপ রয়েছে। বাংলাদেশকে সেটা কাজে লাগাতে হবে।

কিংস্টন ইউনিভার্সিটির সোসিওলজির এই অধ্যাপক ডঃ রূপা হক বাংলাদেশ, বাংলাদেশের জনগণ, জীবন মান উন্নয়ন নিয়ে অনেক আশাবাদ ব্যক্ত করার সাথে উচ্ছ্বাসা প্রকাশ করেন।

রুপা অধ্যাপনার পাশাপাশি লেখালেখির সাথেও জড়িত। তার প্রকাশিত দুটি বই সুধী সমাজের ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে।২০০৬ সালে তার প্রকাশিত বই বিয়ন্ড কালচার সুব্রামনিয়া– ২০০৭ সালে ফিলিপস আব্রাহাম মেমোরিয়াল ট্র্যাস্ট প্রাইজের জন্য শর্ট লিষ্টেড হয়। বিয়ন্ড সুব্রামনিয়া রুপার এক অনবদ্য কাজ, যা তাকে গার্ডিয়ান সহ প্রভাবশালী মিডিয়ায় খ্যাতি এনে দিয়েছে।

ফিরে আসার সময় ইমেইল দিয়ে সরাসরি যোগাযোগ রাখার অনুরোধ করলেন। শেষ পর্বে যখন জিজ্ঞেস করলাম এনি আদার ম্যাসেজ, রুপা বললেন তার এবারকার সিট লেবার দলের উইনিং সিট, তিনি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী এবং সকলের দোয়া প্রার্থী।

ভিডিও লিঙ্ক 

রোশনারা-টিউলিপকে নিয়ে আমার নির্বাচনী মূল্যায়ন- পড়তে ক্লিক করুন

(গত সংখ্যায় ছিলো রোশনারা-টিউলিপকে নিয়ে, এ সংখ্যায় রূপা হককে নিয়ে,

আগামীতে থাকছে বিএমই এমপি প্রার্থীদের ও তাদের আসন নিয়ে প্রতিবেদন)।

13rd April 2015, London