সংখ্যালঘু, ইসলাম এবং কিছু ছোট্ট প্রশ্ন

গোলাম রসুল খান (মুহতাসিম)
Published : 11 August 2014, 12:16 PM
Updated : 11 August 2014, 12:16 PM

আমার জন্ম মফস্বলে, যদিও মফস্বল কিন্তু আমাদের এলাকায় ৪৭'র দেশভাগের অনেক আগে থেকেই পুরো সিলেটের ভূমি রেজিস্ট্রির জন্য একমাত্র সাবরেজিষ্ট্রি অফিস, ডাক বাংলো, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলসহ বিভিন্ন ধরণের গুরত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ছিল। নিকটেই এ অঞ্চলের সর্বোচ্চ পর্বত শ্রেণি কৈলাশটিলা এবং বৈঞ্বব ধর্মের প্রবর্তক শ্রী চৈতন্য দেব (নিমাই সন্ন্যাসী) এর বাড়ী ও মন্দির হওয়ায় ইসলাম ও সনাতন ধর্মের মানুষের নিকট এই এলাকার প্রতি আলাদা একটা টান আজও বিদ্যমান।
এখানে হিন্দু-মুসলমান উভয় শ্রেণির লোকজন ঈদ উল ফিতর, ঈদ উল আযহা কিংবা দুর্গা পূজায় একে অপরের সাথে আনন্দে শরীক হয়, তখন উৎসবগুলো একটি নির্দিষ্ট ধর্মের জন্য নয়, হয়ে যায় সার্বজনীন। আমার প্রিয় শিক্ষিকা একজন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, প্রিয় শিক্ষক সনাতন হিন্দু, স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার অনেকগুলো ভালো বন্ধু আছে যারা হিন্দু।
আচ্ছা এই যে, এত্তগুলো ভিন্ন ধর্মের মানুষের সংস্পর্শ পেয়ে আমি আজকের এই আমি হয়েছি তাতে কি আমি আমার জাত ধর্ম বিসর্জন দিয়ে দিয়েছি? আমি কি হিন্দু হয়ে গেছি? অথবা আমার বন্ধুরা হিন্দু থেকে মুসলমান হয়ে গেছে? এই সবগুলো প্রশ্নের উত্তর হল "না"। কারণ আমি কিংবা আমার বন্ধুরা যে সম্পর্কে জড়িয়েছি সেটা আত্মিক সম্পর্কের, আমার ভিন্ন ধর্মী শিক্ষকদের কাছ থেকে আমি জ্ঞানের দীক্ষা লাভ করেছি। আমার ধর্ম আমাকে মহান হওয়ার শিক্ষা দিয়েছে, ধর্মান্ধ হওয়ার নির্দেশ দেয়নি।

আমার ধর্মগ্রন্থে আল্লাহই নির্দেশ দিয়েছেন, "এবং আমি তাঁর ইবাদতকারী না যার ইবাদত তোমরা কর। এবং তোমরা তাঁর ইবাদতকারী নও যার ইবাদত আমি করি। আমার ধর্ম আমার, তোমাদের ধর্ম তোমাদের।

ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) অমুসলিমদের অধিকার রক্ষার জন্য কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। অমুসলিমদের অধিকার রক্ষা সম্পর্কিত অসংখ্য হাদিস বর্ণনা করেছেন। বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণে দ্বর্থ্যহীন কন্ঠে বলেছেন, "খবরদার খবরদার, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না। তোমার ধর্মকে অন্যের উপর জোর করে চাপাবে না"।

যার জন্য এই বিশ্ব সৃজন হল তিনি যখন এমন ঘোষণা দিলেন তখন আমাদের দেশে বার বার একটি গোষ্ঠী (যারা নিজেদের মুসলমান পরিচয় দেয়) এদেশের মাটির সন্তান হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বী (যাদের অনেক কুশিক্ষিত বলে সংখ্যালঘু!) মানুষের উপর আক্রমণ করে ধর্ষণ-অগ্নিকান্ড লুটপাট করে অমুসলিমদের অধিকার ক্ষুন্ন করে কোন ধর্মের বলে? তারা কি আসলেই মুসলমান, যদি মুসলমান হয় তবে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের নির্দেশ কিভাবে তারা অমান্য করে? তবে কি তারা আল্লাহর শরীয়তের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে চায়??

**আসলে এই ধর্মান্ধরা ধর্মের কোন কিছু জানে না, যা জানে সেটা রাজাকার সাঈদী টাইপ লোকের ইসলামের অপব্যাখ্যার ক্যাসেট কিংবা সম্মেলন থেকে যা শুনেছে সেই পর্যন্তই। এরা নিজেরা জানেনা কাদের কেন মারছে, কিসের জন্য মারছে! তারা জানেনা যে বেহেশতের স্বপ্ন দেখেতে দেখতে তারা নিজেদের জন্য দোযখ নির্ধারিত করছে।

বাংলাদেশে এইসব সংখ্যায় অল্প মানুষদের নিয়ে বিভিন্ন দল অন্য রকম রাজনীতির খেলা খেলে। অ্যান্টি আওয়ামীলীগ লোকেদের মনে একটা ধারনা হয়ে গেছে যে, সংখ্যালঘু লোকেরা বরাবর আওয়ামীলীগকেই ভোট দেয়, তাই তাদের কতল কর। ইচ্ছেমত ধর্ষন করো। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামাত জোটের জয়লাভের পরদিনই আওয়ামীলীগ প্রার্থীকে ভোট দেওয়ায় হিন্দু পাড়ায় যে তান্ডবলীলা চালিয়েছিল শিবিরের পোলাপান তা আজও ইতিহাসের কলংকিত অধ্যায়।

*১০ বছরের বালিকা মেয়ে পূর্ণিমার উপর উন্মত্ত পশুর মত ঝাঁপিয়ে পড়েছিল জামাতে ইসলামের ছেলেরা। মেয়ের সতীত্ব বাঁচাতে ব্যর্থ হয়ে পূর্ণিমার মা জামাতি কুকুরদের কাতর কন্ঠে অনুরোধ করেছিলেন, "বাবারা, আমার মেয়ে খুব ছোট। তোমরা একজন একজন করে আসো। সবাই একসাথে আসলে সইতে পারবে না।"
এই যে, বাংলাদেশ এটি কিন্তু ধর্মের ভিত্তিতে স্বাধীন হয়নি, কোন নির্দিষ্ট ধর্মের লোকেরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেনি, সকল ধর্মের লোকেরাই এদেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে। একজন মুসলমানের এদেশে বেসবাসের যে অধিকার আছে একজন অমুসলিমের ও সেই সমান অধিকার আছে। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার।

বাংলার হিন্দু বাংলার ক্রীশ্চান
বাংলার বৌদ্ধ বাংলার মুসলমান
আমরা সবাই বাঙালি।

হিন্দু-বৌদ্ধ-ক্রীশ্চানরা সংখ্যালঘু নয়। জামাতে ইসলাম , মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী লোকেরাই সংখ্যালঘু। এদেশের হিন্দু-বৌদ্ধ-ক্রীশ্চানসহ সকল ধর্মের লোকের অধিকার রক্ষা করা আমাদের সকলের পবিত্র দায়িত্ব।

হিন্দু বিশ্বজিৎ হত্যায় সমালোচনার ফেনা তুলা সেইসব ছুশীল আসিফ নজরুল, পিয়াস করিমদের আজকে নিশ্চুপ থাকার মানে কি? তালাত মাহমুদের উত্তরাধিকারী এইসব দালাল লোকদের সকল পদবী কেড়ে নিয়ে থাপ্পর দিয়ে এদেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়া দরকার।

আসুন প্রিয় বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা থেকে রক্ষা করি। দেশটাতো আমাদের সবার। আমরা হার মানবনা। বাংলাদেশ কোনদিন হারবে না। জয় বাংলা বলেই আমরা সকল প্রেতাত্মাদের তাড়াবো। আমাদের জন্মভূমি আর ধর্ষিত হবেনা।…