কলম্বাস যখন আমেরিকা পৌছায়নি তখনো এই অঞ্চলে একটি সমৃদ্ধ সভ্যতা বহাল তবিয়তে ছিল। তারও অনেক আগে দিগিজ্বয়ী মহাবীর আলেকজান্ডার যখন এই অঞ্চলে এসেছিলেন তখন গঙ্গারিডই নামে একটি শক্তিশালী জাতির অস্তিত্ব ছিল এই ভূমিতে। প্রচলিত সভ্যতার আলো প্রবেশের অনেক আগেই আমাদের পূর্ব পুরুষরা নিজ নিয়মে প্রতিনিয়ত তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন এই উর্বর ভূমি। তাইতো অত্যন্ত গর্বের সাথে আমরা বলতে পারি হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত আমাদের এই বাঙালি সভ্যতা। আমরা বাঙালি এর চেয়ে গৌরবের পরিচয় কি আর আছে।
সেই চর্যা যুগের আগে থেকেও আমাদের পূর্ব পুরুষদের ধর্মীয় রীতিনীতি পালনের প্রমাণ মেলে। জৈন ধর্ম,বৌদ্ধ ধর্ম, সনাতন আর ইসলাম ধর্মের মিশেলে সমৃদ্ধ আমাদের উৎসব। সারা বছর কোন না কোন ধর্মের উৎসব বিরাজ করে। উৎসবের রঙ্গে রঙ্গিন থাকে আমাদের দেশ। সকল ধর্মের মানুষ অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে নিজ নিজ উৎসব পালন করতে পারে। হ্যাঁ মাঝে মধ্যে কোথাও কোথাও বিঘ্ন ঘটে, অন্ধ ধার্মিকতা আমাদের পাগল করে অন্য ধর্মের উপর আঘাতে প্রলুব্ধ করে। কিন্তু সেই সংখ্যাটা খুব নগণ্য। ঈদ, পূজা-পার্বণের এই দেশে এক ধর্মের উৎসবে অন্য ধর্মের মানুষ অত্যন্ত সাবলীলভাবে অংশ গ্রহণ করে। কারণ আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ধর্ম যার যার, উৎসব আমাদের সবার। তাইতো হোলি উৎসব, রাসলীলা আর ইদের আনন্দে সবাই ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে বাঙালি হয়ে যাই। পহেলা বৈশাখের দিনে অন্তত একবার হলেও প্রাণপণে বাঙালি হওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের আছে রবি ঠাকুর, আছে বিদ্রোহী নজরুল। হাছন রাজা-লালন ফকির আর শত শত আউল-বাউল। আমাদের আছে কৃষ্টি, আমাদের আছে নিজস্ব সংস্কৃতি, আমাদের আছে ৫২, আছে ৭১। কোন বিদেশী সংস্কৃতি আমাদের প্রয়োজন নেই। যেভাবে আমরা অসাম্প্রদায়িকতাকে ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছি, যেভাবে আমরা বাঙালি সংস্কৃতিকে লালন করছি, সেভাবে যদি আমরা এগিয়ে যাই তবে আমরাই হব বিশ্বের রোল মডেল। শুধু দেশকে ভালবাসি, দেশের মানুষকে ভালবাসি, ধর্মকে সঠিকভাবে ধারণ করি, অপ-সংস্কৃতিকে না বলি, তবেই আমরা স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্টা করতে পারব।
মনে রাখতে হবে ধর্ম যার যার। প্রতিটি মানুষের অধিকার আছে তার ধর্ম পালনের। উগ্র আস্তিকতা এবং উগ্র নাস্তিকতা এই দুটি ব্যাপারই ভয়ংকর। নিজ ধর্মকে ভালভাবে জানলেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। আমি যেভাবে আমার ধর্মকে ভালবাসি একজন সনাতনী, কিংবা বৌদ্ধ একইভাবে তার ধর্মকে ভালবাসেন। সকলের ভালবাসায় একটি সুন্দর ফুল এই বাংলাদেশ।
ভালো থাকুন সবাই। ভালো থাকুক প্রিয় বাংলাদেশ।