বীর প্রতীক নায়েক আব্দুল মালিক

গোলাম রসুল খান (মুহতাসিম)
Published : 10 Dec 2015, 07:23 PM
Updated : 10 Dec 2015, 07:23 PM

আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অসীমসাহসী যোদ্ধা বীরপ্রতীক নায়েক আব্দুল মালিক। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ আব্দুল মালিক কর্মরত ছিলেন পিলখানা ইপিআর ঘাটিতে। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী পিলখানার বাঙালি সৈনিকদের নিরস্ত্র করে হত্যা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে এ খবর পেয়ে আব্দুল মালিক কয়েকজন সহকর্মীকে সাথে নিয়ে পিলখানার দেয়াল টপকিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। ২৫শে মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যার জবাবে দেশপ্রেমিক বাঙালি প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করে। ৫মে মেজর মঞ্জুর'র অধীনস্থ ৮নং সেক্টরের ১নং সাব সেক্টর মুজিবনগরে সম্মুখযুদ্ধে যোগ দেন নায়েক আব্দুল মালিক। বিভিন্ন যুদ্ধে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করতে থাকেন সহযোদ্ধাদের নিয়ে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সারাদিন যুদ্ধ শেষে রাতে ক্যাম্পে ফিরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত অনুষ্ঠান দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করতো মুক্তিযোদ্ধাদের। ২৫শে নভেম্বর রাজাকার ও পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে সম্মুখসমরে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুজিব নগর সাব সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা। যুদ্ধের এক পর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হন নায়েক আব্দুল মালিক। কিন্তু আহত হয়েও তিনি দমে যাননি। এই অবস্থায় দুজন পাকিস্তানী সৈন্যকে গ্রেফতার করে সাব সেক্টর কমান্ডারের কাছে সোপর্দ করেন। চিকিতসার জন্য আব্দুল মালিককে প্রেরণ করা হয় ব্যারাকপুর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। সেখানে চিকিতসাধীন অবস্থায় ১৬ ই ডিসেম্বর নার্সের কাছ থেকে দেশ স্বাধীনের সুখবর পান।

মুজিবনগর যুদ্ধে অসীম সাহসীকতার স্বীকৃতিস্বরুপ ১৯৭২ সালে নায়েক আব্দুল মালিককে বীরপ্রতীক উপাধিতে ভূষিত করা হয়। বীরপ্রতীক তালিকায় তাঁর নাম্বার ২২১।

সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের মরহুম মাজির আলী ও হারি বিবি'র পুত্র আব্দুল মালিক'র জন্ম ১ডিসেম্বর ১৯৫৩ সালে। স্থানীয় ঢাকাদক্ষিণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে মেট্টিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যোগ দেন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস এ (ইপিআর)। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আগের কর্মস্থলে যোগ দেন। সেখান থেকে ১৯৭৮ সালে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করে চলে যান সৌদিআরবে। দীর্ঘ ৩২বছর প্রবাসে থাকার পর ২০১১ সালের ২৫শে নভেম্বর সেনাকুঞ্জে সংবর্ধনায় অংশগ্রহণের জন্য দেশে চলে আসেন। বর্তমানে সিলেট শহরের চৌকিদেখি আম্বরখানা এলাকায় নিজ বাসায় বাস করছেন আব্দুল মালিক। গর্বিত মাতা, স্ত্রী ও কলেজ পড়ুয়া দুই ছেলেকে নিয়ে বেশ সুখেই আছেন আমাদের এই শ্রেষ্ঠ সন্তান। নতুন প্রজন্মের কাছে তাঁর আহবান, "দেশকে যখন আমরা মাতৃভূমি বলে ডাকি, তখন যেন সত্যিই মায়ের মতো ভালবাসি। আমরা যুদ্ধ করে তোমাদের জন্য একটি পতাকা এনেছি। এখন এই পতাকার মর্যাদা তোমরা রক্ষা করো।"

পর্যায়ক্রমে  খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথা তুলে ধরার চেষ্টা করব। আপনাদের সহযোগিতা-পরামর্শ কাম্য।