নবী মুহাম্মদকে নিয়ে অশ্লীল লেখা, প্রকাশনী বন্ধ এবং কিছু কথা

গোলাম রসুল খান (মুহতাসিম)
Published : 18 Feb 2016, 07:16 PM
Updated : 18 Feb 2016, 07:16 PM
একুশে বইমেলায় বদ্বীপ প্রকাশনীর একটি স্টল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, এর প্রকাশক ও একটি বইয়ের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এই বিষয়টা নিয়ে তুমুল বাক-বিতন্ডা চলছে। প্রশ্ন হচ্ছে কেন স্টল বন্ধ ও সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতার করা হল। ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে বিশেষত তার চরিত্র নিয়ে অত্যন্ত নোংরা ভাষায় এবং জঘণ্যভাবে উনাকে উপস্থাপন করা হয়েছে, কোন যুক্তি-তর্ক ছাড়া সরাসরি ইসলাম ধর্মকে আক্রমণ করা হয়েছে এবং এর ফলশ্রুতিতে অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে পুলিশ প্রশাসন ও বাংলা একাডেমি এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এটাকে সাধুবাদ জানাই।
অবাক হয়ে লক্ষ করছি যে, বামপন্থী অনেকে সহ সুশীল (এই সুশীল ব্যাপারটা নিয়ে আমার অ্যালার্জি আছে)পরিচয়দানকারী বরেণ্য ব্যক্তি বর্গ তুমুল সমালোচনায় ফেটে পড়েছেন এবং বাংলা একাডেমিসহ পুলিশ প্রশাসন ও সরকারের সমালোচনা করছেন। যারা যারা এই কাজ করছেন তারা যতই মুক্তমনা আর প্রগতিশীলতার পরিচয় দেন না কেন তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার। সাত বছর থেকে ব্লগিং করছি, এই লোকগুলো কারা এবং এরা অতীতে কখন কি করেছে সেটা খুব ভালোভাবে দেখেছি।
বাক স্বাধীনতা সবার আছে। তবে তার মানে এই না যে আপনি সেটা দিয়ে অন্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবেন। একটা বিষয় সব সময় লক্ষ্য করেছি যে, আমাদের দেশের কিছু বামপন্থী এবং মুক্তমনা লোকেরা, এবং নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসী লোকেরা একটা কাজ খুব ভালো পারেন সেটা হল ইসলাম ধর্মকে আঘাত করে লেখা। ইসলামের সাথেই তাদের যত শত্রুতা, এদেশে হিন্দু-বৌদ্ধ-ক্রীশ্চান সব ধর্মের লোকেরা বাস করে। অথচ তাদের লেখায়, রচনায় বার বার ইসলাম ধর্ম, নবী মুহাম্মদ, কোরআন, হাদীস এগুলোকে কটাক্ষ করা হয়েছে, বিদ্রুপ করা হয়েছে। ব-দ্বীপ প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত "ইসলাম বিতর্ক" বইয়ে ঠিক একইভাবে নবী মুহাম্মদের পরিচত্র নিয়ে কালিমা লেপন করা হয়েছে, ইতিহাসকে অস্বীকার করে মিথ্যাচার করা হয়েছে। মুসলমান তো বটেই, নিজ ধর্মে বিশ্বাসী কোন মানুষই এটা সহ্য করার কথা না। যারা এই কাজটি করেছে তারা খুব ভালোভাবে বুঝে শুনেই এই কাজটি করেছে। তাদের প্রকাশিত বইটি সাহিত্য-মান পাওয়ার যোগ্যতা রাখে না। এটি চটি টাইপ প্রকাশনা হতে পারে। যে লোকগুলো বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানদের ধর্মনেতা ও ধর্মকে নিয়ে এমন নোংরামি করার সাহস করেছে তারা হিন্দু-বৌদ্ধদের ধর্ম নিয়ে যে এমন করবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়?
যারা অন্যের ধর্ম নিয়ে, ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে বিদ্রুপ করে-মিথ্যাচার করে তারা প্রগতিশীল হতে পারে না। আপনার বিশ্বাসে যেমন কেউ আঘাত করতে পারে না, তেমনি অন্যের ধর্ম নিয়ে কোন বিদ্রুপ করার অধিকার আপনার নেই। তবে আপনি যদি আলোচিত হতে চান, হেডলাইনে আসতে চান তবে সেটা ভিন্ন কথা।
ব-দ্বীপ প্রকাশনী ৩টি কারণে এই কাজটি করে থাকে পারে।
সেগুলো হলঃ
১। নিজেরা আলোচনায় অর্থাৎ লাইমলাইটে চলে আসা।
২। দেশের ৮৫ ভাগ মানুষের ধর্ম বিশ্বাসে আঘাত করে , তাদের উত্তেজিত করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলা।
৩। অন্য কারো এজেন্ডা বাস্তায়ন করা।
যে কারণেই তারা এই কাজটি করুক না কেন তা তদন্ত করে বের করে এদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সমালোচনা মানে এই না যে আপনি ১০০ কোটি মানুষের বিশ্বাসকে ভুল বলবেন, তাদের ধারণাকে বিনাযুক্তিতে মিথ্যা প্রমাণিত করতে চাইবেন। এদেশে সব ধর্মের মানুষ অত্যন্ত সুন্দর সহাবস্থানের মাধ্যমে বাস করে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ধর্মপ্রাণ এদেশের মানুষ। তাই এদেশের মানুষকে ক্ষেপিয়ে আপনারা কখনোই সফল হবেন না।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় সাহিত্যিক ও প্রযুক্তিবিদ অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল এই বইটি সম্পর্কে একুশে বইমেলায় এসে সাংবাদিকদের বলেন 'প্রথমত আমি কোনো স্টল বন্ধ করার পক্ষে নই। তবে যে বইটির কারণে স্টলটি বন্ধ করা হয়েছে, সেটির কয়েকটি লাইন আমাদের বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পড়ে শুনিয়েছেন। আমি কয়েক লাইন শোনার পর আর সহ্য করতে পারিনি। এত অশ্লীল আর অশালীন লেখা। এই স্টলটিকে আর অন্য দশটি সাধারণ স্টলের সঙ্গে তুলনা করলে চলবে না। তিনি বলেন, আমি মনে করে লেখালেখির সময় কিছুটা সতর্ক থাকতে হবে। যাতে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না আসে। আর যে বইটির বিষয়ে কথা হচ্ছে, আমার অনুরোধ কেউ যেন এই বইটি না পড়ে। (সুত্র: বিডিনিউজ)
সর্বজন শ্রদ্ধেয় জাফর ইকবাল কিংবা আনিসুজাজামান যখন এমন কথা বলেন যে, "আমি কয়েক লাইন শোনার পর আর সহ্য করতে পারিনি। এত অশ্লীল আর অশালীন লেখা।" তখন আমরা অনধাবন করতে পারি কি জঘন্যভাবে ব-দ্বীপ এই কাজটি করেছে।
পরিশেষে সকলের প্রতি অনুরোধ আসুন গঠনমূলক সমালোচনা আর যুক্তির নিরিখে আমরা সামনে এগিয়ে আসি। অন্যের ক্ষতি না করে নিজের কর্মগুণে অন্যকে প্রভাবিত করুন। যেকোন অপপ্রচার আর গুজব থেকে সাবধান থাকুন। সকলের প্রতি শ্রদ্ধাশিল আচরণই পারে সুন্দর দেশটাকে এগিয়ে নিতে।