এক মেধাবী বীরবিক্রম

গোলাম রসুল খান (মুহতাসিম)
Published : 29 March 2016, 04:51 PM
Updated : 29 March 2016, 04:51 PM
মেট্রিকে মেধা তালিকায় ৩য়। আইএসসিতে স্টার মার্কস। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে ভর্তির সুযোগ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে যাওয়ার বায়না। পরিবার বিশেষত মায়ের শত অনুরোধ, বাবা তুই বিদেশে চলে যা। সেখান থেকে বড় ডিগ্রী নিয়ে ফিরে এসে দেশের জন্য কাজ করবি। তুখোড় বিতার্কিক ছেলেটির উত্তরঃ "মা, আমি হয়তো বিদেশে চলে যাব। সেখানে বড় ইঞ্জিনিয়ার হব। কিন্তু মা, নিজের বিবেকের কাছে কোনদিন বড় হতে পারব না। মায়ের উত্তরঃ পাগল ছেলে। যা তোকে আল্লাহর নামে কোরবানি দিলাম।
মে মাসের শুরুর দিকে তিনি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মেলাঘর চলে যান। ক্র্যাক প্লাটুনের হয়ে ঢাকায় লড়তে থাকেন। প্রতিনিয়িত দৌড়ের উপর রাখেন পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকারদের। ১৯৭১ সালের ২৯ আগস্ট তিনি তাঁর নিজের বাড়িতে কাটান, এবং এই রাতেই বেশকিছু গেরিলা যোদ্ধার সাথে পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী একটি অজ্ঞাত উৎস থেকে তথ্য নিয়ে বেশ কিছুসংখ্যক যোদ্ধাকে গ্রেফতার করেন যার মধ্যে ছিলেন আলতাফ মাহমুদ, আবুল বারাক, আজাদ ও জুয়েল। রুমীর সাথে তার বাবা শরীফ এবং ভাই জামীকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের স্থানে রুমীকে ভাই ও বাবাসহ একঘরে আনলে রুমী সবাইকে তার যুদ্ধে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করতে বলেন। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন যে, পাক বাহিনী তার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সচেতন এবং এর সব দায়-দায়িত্ব তিনি নিজেই নিতে চান। ৩০ আগস্টের পর রুমী ও তার সহযোদ্ধা বদী এবং চুল্লুকে আর দেখা যায়নি। ইয়াহিয়া খান ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালে সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিলে অনেক আত্মীয় তাঁর জন্য আবেদন করতে বলেন। কিন্তু রুমী যে বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ধরা পড়েছে, তাদের কাছেই ক্ষমা চাইতে রুমীর বাবা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী, দেশপ্রেমিক শরীফ ইমাম রাজি ছিলেন না।
২০১৩ সালের ১৭ই জুলাই, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ-এর বিরুদ্ধে গণহত্যা, বুদ্ধিজীবি হত্যার পরিকল্পনা, রুমী হত্যা ও নির্যাতন ইত্যাদিসহ মোট উত্থাপিত ৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫টিতে দোষী প্রমাণিত হয়। এর মাঝে দুটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড আদেশ দেয়া হয়। ২২শে নভেম্বর ২০১৫ তারিখে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর রুমি হত্যার নেপথ্যে থাকা কুখ্যাত এই যুদ্ধাপরাধীকে।
আজ ২৯ শে মার্চ ২০১৬। আমাদের বীর বিক্রম শাফি ইমাম রুমীর ৬৫তম জন্মদিন। মাত্র ২০ বছর বয়সে প্রাণ উৎসর্গকারী এইসব শ্রেষ্ঠ তরুণদের জন্য আজ আমরা এই পতাকা, মানচিত্র, নিজস্ব পরিচয় পেয়েছি। শুভ জন্মদিন রুমি। ভালবাসা, ভালবাসা এবং ভালবাসা।
কিছুটা তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া।