সম্প্রতি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী তনুকে ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে সারা দেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে নানা বয়স-পেশার মানুষ এতে শামিল হচ্ছেন। সবার একটাই দাবী এর বিচার চাই।
উপরোক্ত সমস্যাটি এদেশে নতুন নয়। ধর্ষণ একটি জঘন্য অপরাধ হলেও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ২০১৫ সালের ৩১শে ডিসেম্বরে দেয়া রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৫ সালে ১৯২ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং ৪৪৩৬জন নারী নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। শুধুমাত্র এই রিপোর্টের দিকে তাকালেই আমরা বুঝতে পারি দেশে কি ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। এই রিপোর্টের বাইরে আরো অসংখ্য ধর্ষণ-নির্যাতনের ঘটনা আছে যেগুলো সামাজিক সম্মানহানির ভয়ে কিংবা প্রাণনাশের হুমকিতে পত্র-পত্রিকা-প্রচারে আসে না। ১৯৭১সালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী আমাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিল এবং আমাদের আড়াই লক্ষেরও বেশি মা-বোনকে তারা ধর্ষণ করেছিল। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর স্বাধীন দেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনার মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষত গত বছর বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখে আমাদের স্বাধীকার আন্দোলনের সূতিকাগার টিএসসি (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) এলাকায় প্রকাশ্যে নারী নির্যাতন এবং সম্প্রতি কুমিলস্না ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ভেতর কলেজ ছাত্রী তনু’কে ধর্ষণ করে হত্যা আমাদেরকে নতুন করে ভাবাচ্ছে। একটি স্বাধীন ও অসাম্প্রদায়িক দেশে নারীর উপর এত নিপীড়ন আমাদের জন্য যথেষ্ঠ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।<br>প্রথমত ধর্ষণ হল, ‘‘কোন ব্যক্তির (পুরুষ/মহিলা অথবা শিশু) বিনা সম্মতিতে কিংবা জোরপূর্বকভাবে কোন রকম শারিরীক নির্যাতন অথবা যৌন মিলনকে ধর্ষণ বলে।’’ আমাদের দেশে নারী ও শিশুরাই বেশি ধর্ষণের শিকার হয়ে থাকেন। এবার আমরা দেখব ধর্ষণের কারণ কি। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখি এই ভারতবর্ষে ধর্ষণের ইতিহাস বেশ প্রাচীন। রাজা, জমিদার,শক্তিশালী সামমত্ম প্রভু থেকে প্রভাবশালীদের হাতে নারীদের ধর্ষণ ছিল বহুল প্রচলিত। তবে সাম্প্রতিকালে আমাদের বাংলাদেশে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ধর্ষণের কারণ হিসেবে যেগুলো দায়ী ধরা হয়, সেগুলো হলঃ ১। বিকৃত যৌন লিপ্সা। ২। অশ্লীল ফটোচিত্র,ভিডিও,চটি বই। ৩। মাদক ও সঙ্গীদের প্রভাব। ৪। আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব। ৫। ক্রোধ/পূর্ব শত্রুতা। ৬। মানসিক অসুস্থতা ও কৌতুহল। আমাদের দেশে ধর্ষণ মূলত উপরোক্ত কারণসমূহে ঘটে থাকে। বিকৃত যৌন লিপ্সা চারিতার্থ করতে নারীকে ধর্ষণ করা হয়। আবার অশস্নীল ফটোচিত্র, ভিডিও, যৌন সুড়সুড়িমূলক বই-প্রকাশনা এবং বিভিন্ন অশ্লীল গল্প সংবলিত ওয়েবসাইটের প্রভাবে কিশোর-তরুণরা ধর্ষণের মত অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে, কিংবা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ধর্ষণের মাধ্যমে প্রতিশোধ নেয়ার ঘটনাও ঘটে থাকে । তবে বর্তমানে ধর্ষণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে বিদেশী আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব এবং আমাদের দেশের বিচারহীনতা। বিভিন্ন বিদেশী চ্যানেলে প্রচারিত অশ্লীল ও যৌন উদ্দীপনামূলক অনুষ্ঠান তরুণ প্রজন্মকে যৌনতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এবার আসা যাক ধর্ষণের শাস্তি কি কিংবা বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে। আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলে(অথবা শহরে) ধর্ষণ সংগঠিত হওয়ার সাথে সাথে গ্রাম্য মাতববররা সালিশে সমাধানের নামে নাটক করে এবং যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধর্ষক প্রভাবশালী বা প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য হয় তাই ধর্ষককে বাঁচানোর চেষ্ঠা করা হয় এবং এ ক্ষেত্রে ১৫-২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে ধর্ষিতা এবং তার পরিবারের মুখ বন্ধ রাখার চেষ্ঠা করা হয়। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে ধর্ষিতাকে উল্টো দোষী সাব্যস্ত করে অপমান কিংবা একঘরী করার মত ঘটনাও ঘটে থাকে। আবার কোন বাছ বিচার না করে ঘটনা প্রকাশ না করে চুপ থাকার কিংবা প্রাণনাশের ভয় দেখিয়ে ভিকটিমের মুখ বন্ধ রাখার অনেক নজির আছে। এবার আসা যাক মামলা-থানা-পুলিশ নিয়ে। ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর যখন ধর্ষিতা বা তার পক্ষে কেউ মামলা করতে যায় তখন প্রায় ক্ষেত্রে থানার সংশিস্নষ্ট কর্মকর্তা মামলা নিতে রাজি হন না এবং সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তির পরামর্শ দেন। লজ্জ্বাজনক হলেও সত্য যে, এদেশে ধর্ষণের মামলা করতে গিয়ে পুুলিশের হাতে আবার ধর্ষিত হওয়ার নজিরও আছে। অবশ্য এই চিত্রের বাইরে ব্যতিক্রম আছে। অনেক থানায় মামলার সাথে সাথে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করার অনেক উদাহরণ আছে। মামলার পর আসে বিচার ব্যবস্থার কথা। তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে এসেও আমাদের দেশের আদালতের বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হয় ব্রিটিশ এবং পাকিসত্মান আমলে প্রণীত আইন অনুযায়ী। ফলে এতে বিচার প্রক্রিয়ায় যেমন জটিলতার সৃষ্ঠি হয় তেমনি তার অনেক ত্রম্নটি থাকে। কথায় আছে, ‘‘আকাশের যত তারা , আইনের তত ধারা’’। বাংলাদেশে নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণের বিচার করা হত ১৯৯৫ সনে প্রণীত আইন অনুযায়ী। আইনটি হল,‘‘ ধর্ষণের শাস্তি সংক্রান্ত ৬(২) ধারা অনুসারে, যদি কোন ব্যক্তি ধর্ষণ করে কোন শিশু অথবা নারীর মৃত্যু ঘটান, তাহলে ওই ব্যক্তি মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হবেন। ৬ (৩) ও ৬ (৪) অনযায়ী , যদি একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোন শিশুকে বা নারীকে ধর্ষণ করেন অথবা ধর্ষণ করে হত্যা করেন অথবা ধর্ষণের পর ওই নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে তবে ওইসব ব্যক্তি মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হবেন। ’’ এই আইনটি ২০০০ সনে সংশোধন করে আগে যেখানে মৃত্যুদন্ড ছিল সেখানে মৃত্যুদন্ডের পাশাপাশি মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জ্বীবন কারাদন্ডের বিধান করা হয় ( ২০০০ এর ৯ (২) ধারা)। এই সংশোধন যথেষ্ঠ বিতর্কের সৃষ্ঠি করে এবং এর মাধ্যমে পরোক্ষভাবে ধর্ষণকে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে বলে মনে করা হয়। প্রধান বিচারপতি এস.কে সিনহা একটি মামলার রায় দিতে গিয়ে এই আইনটি যথেষ্ঠ ত্রুটিপূর্ণ বলে মত দিয়েছেন। আইনের যখন এই অবস্থা তখন প্রভাবশালী ধর্ষকরা আইনের ফাক গলিয়ে সহজেই বেরিয়ে আসে আর ধর্ষণের শিকার মেয়েটি অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে। মাঝে মধ্যে এরকমও হয় যে, ধর্ষক জামিনে মুক্তি পেয়ে পুনরায় ভিকটিমকে কিংবা ভিকটিমের পরিবারের অন্য কোন নারী সদস্যকে ধর্ষণ করে।
এবার আসা যাক ধর্ষণের প্রতিকার নিয়ে। আমাদের দেশের কিছু কিছু মানুষের মনে একটা অসুস্থ ধারণা আছে যে, তারা মনে করেন নারীর পোশাক বা স্বল্পবসন ই ধর্ষণের জন্য দায়ী এবং এতে ধর্ষকের কোন দোষ নেই। উলেস্নখ্য যে, ধর্মীয় বিচারে নারী পুরুষ উভয়ের জন্য পর্দার বিধান অবশ্য পালনীয় করা হলেও কিছু মানুষ নারীর উপর শুধু এটাকে চাপিয়ে দেয়। কিন্তু ৬ মাস বয়সী কন্যা শিশু থেকে শুরম্ন করে ৬৫ বছরের বৃদ্ধা কিংবা ৭ বছর বয়সী মাদ্রাসা ছাত্র যখন ধর্ষণের শিকার হন তখন এইসব যুক্তির অসাড়তা প্রমাণ হয় এবং ওইসব ব্যক্তিরাও যে পরোক্ষভাবে ধর্ষকের ভুমিকা পালন করেন সেটা প্রমাণিত হয়। আসলে ধর্ষণের সমস্যাটি মনসত্মাত্ত্বিক। মানসিক বিকারগ্রসত্মতা থেকে এটি সৃষ্ঠি হয়। ধর্মীয় মূল্যবোধ, পারিবারিক সুশিক্ষা, নারীর প্রতি ইতিবাচক দৃষ্ঠিভঙ্গি,মাদক ও অসৎ সঙ্গ ত্যাগ,অশস্নীল ফটোচিত্র-গল্প-ভিডিও-ওয়েবসাইট বর্জন এবং সামাজিক সচেতনতাই পারে ধর্ষণকে প্রতিরোধ করতে। পাশাপাশি আকাশ সংস্কৃতি বিশেষত বিভিন্ন বিদেশী চ্যানেলে প্রদর্শিত কুরুচিপূর্ণ-যৌন সুড়সুড়িমূলক অনুষ্ঠান আমাদের দেশে সম্প্রচার বন্ধ করে দেশীয় সংস্কৃতির সাথ সামঞ্জস্য অনুষ্ঠান প্রচার করতে হবে এবং ধর্ষণের সর্বোচ্চ এবং একমাত্র শাসিত্ম হিসেবে মৃত্যুদন্ডের বিধান করতে হবে। নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণ যাতে না ঘটে সেজন্য টেলিভিশন-রেডিও, পত্র-পত্রিকা এবং সামাজিক মাধ্যমে সরকারী-বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালাতে হবে। স্কুল-কলেজে পড়ুয়া ছেলে-মেয়েদের হাতে মোবাইল-ট্যাব তুলে দেয়ার ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে এবং সেগুলোর অপব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করতে হবে, পাশাপাশি নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে। আরেকটা ব্যাপার না বললেই নয়, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যৌন মিলনে, কিংবা বিয়ের আগে কোন রকম যৌন সম্পর্কে জড়ানোর ব্যাপারে সবাইকে বিশেষ করে আমাদের তরম্নণ প্রজন্মকে সাবধান হতে হবে। কারণ এগুলো কখনোই ভালো ফল বয়ে আনে না।
পরিশেষে একটা কথাই বলব, নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণ রোধে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সেই সাথে পুরষতান্ত্রিক এই সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে তার সম্মান আদায় করে নিতে হবে। আমরা মুখে যতই প্রগতিশীলতার কথা বলি না কেন, নারীদের সম্পর্কে আজোও আমাদের দৃষ্ঠিভঙ্গি সেই মধ্যযুগীয় আমলের মত। যতদিন নারীরা তাদের অধিকার সচেতন না হচ্ছেন, ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতনের বিরম্নদ্ধে রম্নখে না দাঁড়াচ্ছেন ততদিন ধর্ষণ বাড়তেই থাকবে। যে সমাজে ধর্ষকে বীর হিসেবে বিবেচনা করা হয় সেই সমাজে নারীকে বেগম রোকেয়া, ইলা মিত্র আর প্রীতিলতার চেতনায় উদ্ভাসিত হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আত্মহত্যার মত কাপুরোষিত উপায়ে সমাধান না খুঁজে প্রতিবাদী হতে হবে। একটু প্রতিবাদ করে দেখুন , আপনি/আপনারা একা নন,এই প্রজন্ম পাশে এসে দাঁড়াবে। ধর্ষকের শাসিত্মর পাশাপাশি তার পরিবারকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হোক, ধর্ষিতার নয় ধর্ষকের ছবি ছড়িয়ে দেয়া হোক সর্বত্র। ৩০ লক্ষ শহিদের উৎসর্গিত ভূমি ধর্ষক মুক্ত হোক। সুন্দর সমতার বাংলাদেশ গড়ে উঠুক।
মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেছেনঃ
জনাব মুহতাসিম মাহমুদ,
বেশ আশা নিয়ে আপনার নিবন্ধখানা পড়া শুরু করেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পড়ে বেশ আশাহত হলাম। ভেবেছিলাম পুরাতন ব্লগার। প্রায় পাঁচ বছর থেকে ব্লগিং করছেন। তাই ধর্ষণ সমস্যার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে তার মতের একটা পরিপক্কতা পাব। একই সাথে আমার তাত্তিকজ্ঞান ও বাস্তব অনুশীলনের অভিজ্ঞতায় কিছুটা হলেও জ্ঞানের আবরণ পড়বে। কিন্তু সেটা আর হল কই।
সহব্লগারদের লেখার নির্দয় সমালোচনা করতে আমার ভাল লাগে না। শুনেছি রোম্যান্টিক কবি কিটস এর সমালোচকগণ তার এতই সমালোচনা করেছিলেন যে বেচারা ইংল্যান্ড থেকে পালিয়ে ইটালি গিয়েছিলেন। সত্যমিথ্যা সাহিত্যিকগণ বলতে পারবেন। আমি তো সাহিত্যিক নই। তাই শোনা কথায় কোন রকম কোণাকাঞ্চি মারি, আর কি।
এ জন্য সহব্লগারের নির্দয় সমালোচনা করলে যদি আবার তিনি বঙ্গদেশ ছেড়ে কোন রঙ্গ দেশে চলে যান। তাহলে তো একজন সহব্লগারের দেশান্তরী হওয়ার শোকও সামলাতে হবে।
প্রথমেই আসা যাক তার ধর্ষণের সংজ্ঞা নিয়ে। তার মতে, কোন ব্যক্তির( পুরুষ / মহিলা অথবা শিশু) বিনা সম্মতিতে কিংবা জোরপূর্বকভাবে কোন রকম শারীরিক নির্যাতন অথবা যৌন মিলনকে ধর্ষণ বলে’। জোরপূর্বক বিনা সম্মতিতে যৌন মিলন অবশ্যই ধর্ষণ। কিন্তু এটাই শুধু নয়, এর মাঝে আরো বিষয় জড়িত আছে। পিনাল কোডের ৩৭৫ ধারাটি পড়লে তিনি এ সম্পর্কে আরো জানতে পারবেন। তার জন্য আমি লিংকটিই দিচ্ছি, পুরো ধারাটি তুলে দিচ্ছি না।(http://bdlaws.minlaw.gov.bd/sections_detail.php?id=11§ions_id=3231)কিন্তু কোন ব্যক্তিকে তাও আবার পুরুষ, মহিলা কিংবা শিশুকে শারীরিক নির্যাতন করলে সেটা কিভাবে ধর্ষণের পর্যায়ে পড়বে সেটা আমার মাথায় ঢুকল না। তিনি এ সংজ্ঞাটা আবার কোটেশনের মধ্যেও রেখেছেন, মানে কোন স্থান থেকে কোট করেছেন। কিন্তু তার সূত্র উল্লেখ করেন নি। তাই তার ধর্ষণের সংজ্ঞাটি না হয়েছে আইনে নির্দেশিত সংজ্ঞা, না হয়েছে অপরাধ বিজ্ঞান কিংবা সামাজিক বিজ্ঞানের সংজ্ঞা। তাই আইন বা অপরাধ বিজ্ঞানের বিচারে লেখককে একজন অতি অপক্ক রচনাকারী বলা ছাড়া উপায় দেখছি না।
বর্তমানে প্রচলিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনটি সম্পূর্ণরূপে ২০০০ সালে প্রণীত একটি আইন যা ২০০৩ সালে সংশোধন করা হয়েছে।(http://bdlaws.minlaw.gov.bd/bangla_all_sections.php?id=835) ১৯৯৫ সালে প্রণীত একই ধরনের একটি আইনে ধর্ষণের মাধ্যমে হত্যার একমাত্র শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু পৃথিবীর কোন দেশেই অপরাধের একমাত্র শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড তো নয়ই বরং কোন অপরাধের জন্য একমাত্র শাস্তি হিসেবে কোন কিছুরই অস্তিত্ব নেই। কারণ আইন যদি কোন অপরাধের জন্য একমাত্র শাস্তি নির্ধারণ করে দেয় তাহলে বিচারকদের স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা বারিত হয়। কোন মানুষ কি পরিস্থিতিতে কোন অপরাধ করে, কিংবা প্রসিকিউশন পক্ষ অপরাধীর বিচার কিভাবে কোন স্কেলের কোন স্থান পর্যন্ত প্রমাণ করতে পারল তার উপর নির্ভর করে অপরাধীর শাস্তিদানের বিষয়টি। যদি একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হয়, তাহলে বিচারকের মনে সামান্য সন্দেহ দেখা দিলে বিচারক তাকে কোন লঘু শাস্তি দিতে পারেন না, তাই তাকে আসামীকে সন্দেহ হলেও হয় মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে, নয়তো সামান্য সন্দেহের জন্য তাকে সম্পূর্ণরূপে খালাস দিতে হবে। তাই এই বিধান যেমন আসামীকে ন্যায় বিচার দিতে পারে না, তেমনি ভিকটিমকেও ন্যায় বিচার দিতে পারে না। এরই প্রেক্ষিতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (ব্লাস্ট) আদালতে রিট করলে আদালত একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নির্ধারণ করাকে বাতিল ঘোষণা করে।
আমি ভেবে অবাক হচ্ছি যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন/২০০০( সংশোধিত২০০৩) আইনটির নানা অসঙ্গতির কথা আপনি বর্তমান প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার মুখ দিয়ে বলিয়েছে। কিন্তু এটা হয়তো আপনি জানেন না যে ১৯৯৫ সালের সেই আইনর(যেটা ২০০০ সালের আইনে বাতিল করা হয়ছে) একমাত্র শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডকে বাতিল ঘোষণার যে বেঞ্চ ছিল, বর্তমানের প্রধান বিচারপতি সেই বেঞ্চের অন্যতম বিচাপতি ছিলেন।(http://www.ntvbd.com/bangladesh/7960/)
তাই এ বিষয়টি উচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে মীমাংসিত। এখন সেই মীমাংসিত বিষয়ে সরকার কা সংসদকে আবার একটা আইন তৈরি করতে বলে লেখক হয় মহামান্য হাইকোর্টকে অবমানা করছেন, নয়তো আইন-বিজ্ঞানের ব্যাপারে তার অসীম অজ্ঞতা প্রকাশ করছেন।
আপনি বললেন, ধর্ষণের মামলাগুলোর বিচার ১৯৯৫ সালের আইনানুসারে হয়, কোথায় সে আইন? ২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মাধ্যমে ঐ আইনকে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। তাই আইনের ইতিহাসেও তার অজ্ঞতা রয়েছে বলে মনে হয়।
এবার আসি ধর্ষণের কারণগুলোর ব্যাপারে। লেখক এখানে ৬টি কারণ উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এসব কারণ যে কোনটাই মূল কারণ নয়, সেটা হয়তো বা তিনি বুঝতে পারছেন না। ধর্ষণের প্রথম কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন, বিকৃত যৌন লিপ্সা। কিন্তু বিকৃত যৌন লিপ্সার জন্য কয়টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বা ঘটে সেটা কিন্তু লেখক বলেননি কিংবা বলতেও পারবেন না। আর বিকৃত যৌন লিপ্সাটা কি সেটাও মনে হয়, তিনি সংজ্ঞায়িত করতে পারবেন না। তিনি না পারলেও আমি পারব না। যদি পর্নোগ্রাফিতে যা দেখানো হয়, তার সবই বিকৃত যৌন লিপ্সা হয়, তাহলে তো বাৎসায়নের কামসূত্র সভ্য জগতে টিকে থাকতে পারত না। আকাশ সংস্কৃতিকে কোন প্রকার বাছ বিচার ছাড়াই দোষারোপ করা হয়। এ সংস্কৃতি কোন দিকটা খারাপ আর কোন দিকটা ভাল সেটাও কিন্তু অনেকে জানে না। কেবল টেলিভিশনে যা প্রচারিত হয়, তাই যদি অপসংস্কৃতি হত, তাহলে আমাদের দেশে কেন, পৃথিবীর কোন দেশই অন্যদেশের কোন চ্যানেল দেখত না।
আমি মাঠ পর্যায়ে কাজ করার সময় অন্তত কয়েক হাজার ধর্ষণ মামলার তদন্ত তদারক করেছি। কিন্তু এসব ধর্ষণের সামান্য কয়েকটিই ছিল প্রকৃত ধর্ষণ। আর এ ধর্ষণের কারণ হিসেবে অপরাধীর বিকৃত যৌন লিপ্সা, অশ্লীল চিত্র বা ভিডিও চিত্র দেখা, কিংবা মাদকাসক্ততার কোন আলামত পাইনি। বরং প্রকৃত ধর্ষণ ঘটনাগুলো অপরাধীর তাৎক্ষণিক যৌন তাড়না মেটানোর মাধ্যম হিসেবেই পেয়েছি।
ধর্ষণ অবশ্যই মানুষের একটি স্বাভাবিক আচরণের অস্বাভাবিক বা বেআইনি বহিঃপ্রকাশ মাত্র। অনুকুল পরিবেশে সেই আচরণ অপরাধে রূপ নেয়। উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা প্রেম ভালবাসায় মত্ত হলে তার থেকেও ধর্ষণের অপরাধ সংঘটিত হতে পারে। এটা প্রেমিক যেমন নিজেই সম্পাদন করতে পারেন, তেমনি তার দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে তৃতীয় পক্ষও তা সম্পাদন করতে পারে। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে ধর্ষণের ঘটনাগুলোর অধিকাংশই সংঘটিত হয় অন্তরঙ্গ কিংবা নিকটাত্মীয়দের মাঝেই। অপরিচিত ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণের ঘটনার হার অতি সামান্য।
হ্যাঁ, মানসিক বৈকল্যের জন্য ধর্ষণ হতে পারে। রুশ সিরিয়াল কিলার চিকাটিলোর ঘটনা প্রবাহ তার মানসিক বৈকল্যের জন্যই সংঘটিত হয়েছিল। ( এ বিষয়য়ে বিস্তারিত পড়ার জন্য নিম্ন লিখিত লিঙ্কে গিয়ে আমার নিবন্ধগুলো পড়া যেতে পারে।( http://blog.bdnews24.com/?)কিন্তু এ ধরণের সিরিয়াল কিলার একমাত্র রসু খাঁ ভিন্ন আর কোন বাংলাদেশির মধ্যে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি।
তাই বলব, ধর্ষণের কারণগুলো নির্ধারণের ব্যাপারেও লেখক সঠিক বিজ্ঞতা প্রদর্শন করতে পারেননি।
ধর্ষণের ঘটনা থানায় গেলে মামলা গ্রহণ না করে বিষয়টি মীমাংসা করার পরমর্শ দেয়ার বিষয়টি লেখকের অনেকটাই উচ্চমার্গের কল্পনাজাত। থানায় মামলা নিতে অস্বীকার করার অভিযোগ, ইতিহাস ও সত্যতা রয়েছে। কিন্তু গড় পড়তা ধর্ষণের মামলা নিতে অস্বীকার করার ঘটনা পূর্বসংস্কার প্রসূত। প্রতিপক্ষকে হয়রানি করা, রাজনৈতিক কিংবা অন্য কোন সংশ্লিষ্টতা থাকলে থানা বিষয়টি প্রথমে খতিয়ে দেখার চেষ্টা করে। কিন্তু ধর্ষণের ঘটনা চেপে যাবার ঘটনা পত্রিকার পাতায় যতটা দেখা যায়, বাস্তকে কিন্তু তা হয় না। বরং ভূয়া ধর্ষণ কিংবা প্রতিপক্ষকে হয়রানি করার মিথ্যা কিংবা অর্ধসত্য ঘটনাগুলোই প্রচার মাধ্যমে আসে বেশি। যদি কোন প্রকৃত ধর্ষণের ঘটনা চাপা পড়ে তবে সেটা থানায় আসা এমনকি পরিবার বা ক্ষুদ্রতর সমাজে জানাজানি হওয়ার আগেই ঘটে থাকে। একথা স্বীকার করার কোন উপায় নেই যে বাংলাদেশে সংঘটিত অপরাধগুলোর সামান্য অংশই পুলিশের কাছে আসে। আর ধর্ষণের ঘটনাগুলোর অধিকাংশই তো নিকটাত্মীয় কিংবা পূর্ব পরিচিতদের মধ্যে সংঘটিত হয়। তাই এগুলো গোড়াতেই চেপে যাওয়ার চেষ্টা ভালভাবেই সফল হয়। এর পরেও যেগুলো থানার গোড়া পর্যন্ত আসে, সেগুলো চেপে যাওয়ার মতো দুঃসাহস থানার অফিসারগণ অন্তত এখন আর দেখান না। দেখাতে পারেন না।
তবে শেষ দিকে লেখক একটি দামি কথা বলেছেন যদিও তার মূল উপপাদ্যটা তিনি হয়তো বুঝতে পারেননি। তিনি বলেছেন, যে সমাজে ধর্ষককে বীর হিসেবে বিবেচনা করা হয় —–। হ্যাঁ, এটাকেই বলা হয়, ধর্ষণ-সংস্কৃতি বা Rape Culture. https://en.wikipedia.org/wiki/Rape_culture আমাদের সমাজে ধর্ষণ সংস্কৃতির একটা আবহ আছে। এ সংস্কৃতি অনুসারে ভিকটিমকেই ধর্ষিতা হবার জন্য দোষারোপ করা হয়, ধর্ষককে পাওয়া না গেলেও কিংবা তাকে সুকৌশলে বাঁচিয়ে দিয়ে ধর্ষিতার বিচার করার চেষ্টা করা হয়, দেশের গ্রামাঞ্চলের অনেক জায়গায়। ধর্ষক গ্রেফতার হয়ে সাজা ভোগ করলেও তার সামাজিক মর্যাদা বা প্রতিপত্তির কোন হানি হয় না। কিন্তু কোন মেয়ে ধর্ষিতা হলে সমাজ তাকে আর গ্রহণ করে না। ধর্ষিতা নারীকে তাই হয় মর্যাদাহীনভাবে সংসারে বেঁচে থাকতে হয়, নয়তো আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয়।
সব শেষে লেখককে এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত পড়াশোনা ও উপলব্ধির জন্য আবহব্বান জানাব। হয়তো পূনর্বার তিনি রচনাটির ত্রুটিগুলো সংশোধন করে নিতে পারবেন।
জনাব মুহতাসিম মাহমুদ,
বেশ আশা নিয়ে আপনার নিবন্ধখানা পড়া শুরু করেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পড়ে বেশ আশাহত হলাম। ভেবেছিলাম পুরাতন ব্লগার। প্রায় পাঁচ বছর থেকে ব্লগিং করছেন। তাই ধর্ষণ সমস্যার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে তার মতের একটা পরিপক্কতা পাব। একই সাথে আমার তাত্তিকজ্ঞান ও বাস্তব অনুশীলনের অভিজ্ঞতায় কিছুটা হলেও জ্ঞানের আবরণ পড়বে। কিন্তু সেটা আর হল কই।
সহব্লগারদের লেখার নির্দয় সমালোচনা করতে আমার ভাল লাগে না। শুনেছি রোম্যান্টিক কবি কিটস এর সমালোচকগণ তার এতই সমালোচনা করেছিলেন যে বেচারা ইংল্যান্ড থেকে পালিয়ে ইটালি গিয়েছিলেন। সত্যমিথ্যা সাহিত্যিকগণ বলতে পারবেন। আমি তো সাহিত্যিক নই। তাই শোনা কথায় কোন রকম কোণাকাঞ্চি মারি, আর কি।
এ জন্য সহব্লগারের নির্দয় সমালোচনা করলে যদি আবার তিনি বঙ্গদেশ ছেড়ে কোন রঙ্গ দেশে চলে যান। তাহলে তো একজন সহব্লগারের দেশান্তরী হওয়ার শোকও সামলাতে হবে।
প্রথমেই আসা যাক তার ধর্ষণের সংজ্ঞা নিয়ে। তার মতে, কোন ব্যক্তির( পুরুষ / মহিলা অথবা শিশু) বিনা সম্মতিতে কিংবা জোরপূর্বকভাবে কোন রকম শারীরিক নির্যাতন অথবা যৌন মিলনকে ধর্ষণ বলে’। জোরপূর্বক বিনা সম্মতিতে যৌন মিলন অবশ্যই ধর্ষণ। কিন্তু এটাই শুধু নয়, এর মাঝে আরো বিষয় জড়িত আছে। পিনাল কোডের ৩৭৫ ধারাটি পড়লে তিনি এ সম্পর্কে আরো জানতে পারবেন। তার জন্য আমি লিংকটিই দিচ্ছি, পুরো ধারাটি তুলে দিচ্ছি না।(http://bdlaws.minlaw.gov.bd/sections_detail.php?id=11§ions_id=3231
কিন্তু কোন ব্যক্তিকে তাও আবার পুরুষ, মহিলা কিংবা শিশুকে শারীরিক নির্যাতন করলে সেটা কিভাবে ধর্ষণের পর্যায়ে পড়বে সেটা আমার মাথায় ঢুকল না। তিনি এ সংজ্ঞাটা আবার কোটেশনের মধ্যেও রেখেছেন, মানে কোন স্থান থেকে কোট করেছেন। কিন্তু তার সূত্র উল্লেখ করেন নি। তাই তার ধর্ষণের সংজ্ঞাটি না হয়েছে আইনে নির্দেশিত সংজ্ঞা, না হয়েছে অপরাধ বিজ্ঞান কিংবা সামাজিক বিজ্ঞানের সংজ্ঞা। তাই আইন বা অপরাধ বিজ্ঞানের বিচারে লেখককে একজন অতি অপক্ক রচনাকারী বলা ছাড়া উপায় দেখছি না।
বর্তমানে প্রচলিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনটি সম্পূর্ণরূপে ২০০০ সালে প্রণীত একটি আইন যা ২০০৩ সালে সংশোধন করা হয়েছে।http://bdlaws.minlaw.gov.bd/bangla_all_sections.php?id=835 ১৯৯৫ সালে প্রণীত একই ধরনের একটি আইনে ধর্ষণের মাধ্যমে হত্যার একমাত্র শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু পৃথিবীর কোন দেশেই অপরাধের একমাত্র শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড তো নয়ই বরং কোন অপরাধের জন্য একমাত্র শাস্তি হিসেবে কোন কিছুরই অস্তিত্ব নেই। কারণ আইন যদি কোন অপরাধের জন্য একমাত্র শাস্তি নির্ধারণ করে দেয় তাহলে বিচারকদের স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা বারিত হয়। কোন মানুষ কি পরিস্থিতিতে কোন অপরাধ করে, কিংবা প্রসিকিউশন পক্ষ অপরাধীর বিচার কিভাবে কোন স্কেলের কোন স্থান পর্যন্ত প্রমাণ করতে পারল তার উপর নির্ভর করে অপরাধীর শাস্তিদানের বিষয়টি। যদি একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হয়, তাহলে বিচারকের মনে সামান্য সন্দেহ দেখা দিলে বিচারক তাকে কোন লঘু শাস্তি দিতে পারেন না, তাই তাকে আসামীকে সন্দেহ হলেও হয় মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে, নয়তো সামান্য সন্দেহের জন্য তাকে সম্পূর্ণরূপে খালাস দিতে হবে। তাই এই বিধান যেমন আসামীকে ন্যায় বিচার দিতে পারে না, তেমনি ভিকটিমকেও ন্যায় বিচার দিতে পারে না। এরই প্রেক্ষিতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (ব্লাস্ট) আদালতে রিট করলে আদালত একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নির্ধারণ করাকে বাতিল ঘোষণা করে।
আমি ভেবে অবাক হচ্ছি যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন/২০০০( সংশোধিত২০০৩) আইনটির নানা অসঙ্গতির কথা আপনি বর্তমান প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার মুখ দিয়ে বলিয়েছে। কিন্তু এটা হয়তো আপনি জানেন না যে ১৯৯৫ সালের সেই আইনর(যেটা ২০০০ সালের আইনে বাতিল করা হয়ছে) একমাত্র শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডকে বাতিল ঘোষণার যে বেঞ্চ ছিল, বর্তমানের প্রধান বিচারপতি সেই বেঞ্চের অন্যতম বিচাপতি ছিলেন।
তাই এ বিষয়টি উচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে মীমাংসিত। এখন সেই মীমাংসিত বিষয়ে সরকার কা সংসদকে আবার একটা আইন তৈরি করতে বলে লেখক হয় মহামান্য হাইকোর্টকে অবমানা করছেন, নয়তো আইন-বিজ্ঞানের ব্যাপারে তার অসীম অজ্ঞতা প্রকাশ করছেন।
আপনি বললেন, ধর্ষণের মামলাগুলোর বিচার ১৯৯৫ সালের আইনানুসারে হয়, কোথায় সে আইন? ২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মাধ্যমে ঐ আইনকে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। তাই আইনের ইতিহাসেও তার অজ্ঞতা রয়েছে বলে মনে হয়।
এবার আসি ধর্ষণের কারণগুলোর ব্যাপারে। লেখক এখানে ৬টি কারণ উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এসব কারণ যে কোনটাই মূল কারণ নয়, সেটা হয়তো বা তিনি বুঝতে পারছেন না। ধর্ষণের প্রথম কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন, বিকৃত যৌন লিপ্সা। কিন্তু বিকৃত যৌন লিপ্সার জন্য কয়টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বা ঘটে সেটা কিন্তু লেখক বলেননি কিংবা বলতেও পারবেন না। আর বিকৃত যৌন লিপ্সাটা কি সেটাও মনে হয়, তিনি সংজ্ঞায়িত করতে পারবেন না। তিনি না পারলেও আমি পারব না। যদি পর্নোগ্রাফিতে যা দেখানো হয়, তার সবই বিকৃত যৌন লিপ্সা হয়, তাহলে তো বাৎসায়নের কামসূত্র সভ্য জগতে টিকে থাকতে পারত না। আকাশ সংস্কৃতিকে কোন প্রকার বাছ বিচার ছাড়াই দোষারোপ করা হয়। এ সংস্কৃতি কোন দিকটা খারাপ আর কোন দিকটা ভাল সেটাও কিন্তু অনেকে জানে না। কেবল টেলিভিশনে যা প্রচারিত হয়, তাই যদি অপসংস্কৃতি হত, তাহলে আমাদের দেশে কেন, পৃথিবীর কোন দেশই অন্যদেশের কোন চ্যানেল দেখত না।
আমি মাঠ পর্যায়ে কাজ করার সময় অন্তত কয়েক হাজার ধর্ষণ মামলার তদন্ত তদারক করেছি। কিন্তু এসব ধর্ষণের সামান্য কয়েকটিই ছিল প্রকৃত ধর্ষণ। আর এ ধর্ষণের কারণ হিসেবে অপরাধীর বিকৃত যৌন লিপ্সা, অশ্লীল চিত্র বা ভিডিও চিত্র দেখা, কিংবা মাদকাসক্ততার কোন আলামত পাইনি। বরং প্রকৃত ধর্ষণ ঘটনাগুলো অপরাধীর তাৎক্ষণিক যৌন তাড়না মেটানোর মাধ্যম হিসেবেই পেয়েছি।
ধর্ষণ অবশ্যই মানুষের একটি স্বাভাবিক আচরণের অস্বাভাবিক বা বেআইনি বহিঃপ্রকাশ মাত্র। অনুকুল পরিবেশে সেই আচরণ অপরাধে রূপ নেয়। উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা প্রেম ভালবাসায় মত্ত হলে তার থেকেও ধর্ষণের অপরাধ সংঘটিত হতে পারে। এটা প্রেমিক যেমন নিজেই সম্পাদন করতে পারেন, তেমনি তার দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে তৃতীয় পক্ষও তা সম্পাদন করতে পারে। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে ধর্ষণের ঘটনাগুলোর অধিকাংশই সংঘটিত হয় অন্তরঙ্গ কিংবা নিকটাত্মীয়দের মাঝেই। অপরিচিত ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণের ঘটনার হার অতি সামান্য।
হ্যাঁ, মানসিক বৈকল্যের জন্য ধর্ষণ হতে পারে। রুশ সিরিয়াল কিলার চিকাটিলোর ঘটনা প্রবাহ তার মানসিক বৈকল্যের জন্যই সংঘটিত হয়েছিল। ( এ বিষয়য়ে বিস্তারিত পড়ার জন্য নিম্ন লিখিত লিঙ্কে গিয়ে আমার নিবন্ধগুলো পড়া যেতে পারে।) http://blog.bdnews24.com/?s=%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%B6+%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B2+%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B0+%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%9F%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A7%8B&bs=0কিন্তু এ ধরণের সিরিয়াল কিলার একমাত্র রসু খাঁ ভিন্ন আর কোন বাংলাদেশির মধ্যে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি।
তাই বলব, ধর্ষণের কারণগুলো নির্ধারণের ব্যাপারেও লেখক সঠিক বিজ্ঞতা প্রদর্শন করতে পারেননি।
ধর্ষণের ঘটনা থানায় গেলে মামলা গ্রহণ না করে বিষয়টি মীমাংসা করার পরমর্শ দেয়ার বিষয়টি লেখকের অনেকটাই উচ্চমার্গের কল্পনাজাত। থানায় মামলা নিতে অস্বীকার করার অভিযোগ, ইতিহাস ও সত্যতা রয়েছে। কিন্তু গড় পড়তা ধর্ষণের মামলা নিতে অস্বীকার করার ঘটনা পূর্বসংস্কার প্রসূত। প্রতিপক্ষকে হয়রানি করা, রাজনৈতিক কিংবা অন্য কোন সংশ্লিষ্টতা থাকলে থানা বিষয়টি প্রথমে খতিয়ে দেখার চেষ্টা করে। কিন্তু ধর্ষণের ঘটনা চেপে যাবার ঘটনা পত্রিকার পাতায় যতটা দেখা যায়, বাস্তকে কিন্তু তা হয় না। বরং ভূয়া ধর্ষণ কিংবা প্রতিপক্ষকে হয়রানি করার মিথ্যা কিংবা অর্ধসত্য ঘটনাগুলোই প্রচার মাধ্যমে আসে বেশি। যদি কোন প্রকৃত ধর্ষণের ঘটনা চাপা পড়ে তবে সেটা থানায় আসা এমনকি পরিবার বা ক্ষুদ্রতর সমাজে জানাজানি হওয়ার আগেই ঘটে থাকে। একথা স্বীকার করার কোন উপায় নেই যে বাংলাদেশে সংঘটিত অপরাধগুলোর সামান্য অংশই পুলিশের কাছে আসে। আর ধর্ষণের ঘটনাগুলোর অধিকাংশই তো নিকটাত্মীয় কিংবা পূর্ব পরিচিতদের মধ্যে সংঘটিত হয়। তাই এগুলো গোড়াতেই চেপে যাওয়ার চেষ্টা ভালভাবেই সফল হয়। এর পরেও যেগুলো থানার গোড়া পর্যন্ত আসে, সেগুলো চেপে যাওয়ার মতো দুঃসাহস থানার অফিসারগণ অন্তত এখন আর দেখান না। দেখাতে পারেন না।
তবে শেষ দিকে লেখক একটি দামি কথা বলেছেন যদিও তার মূল উপপাদ্যটা তিনি হয়তো বুঝতে পারেননি। তিনি বলেছেন, যে সমাজে ধর্ষককে বীর হিসেবে বিবেচনা করা হয় —–। হ্যাঁ, এটাকেই বলা হয়, ধর্ষণ-সংস্কৃতি বা Rape Culture. https://en.wikipedia.org/wiki/Rape_culture আমাদের সমাজে ধর্ষণ সংস্কৃতির একটা আবহ আছে। এ সংস্কৃতি অনুসারে ভিকটিমকেই ধর্ষিতা হবার জন্য দোষারোপ করা হয়, ধর্ষককে পাওয়া না গেলেও কিংবা তাকে সুকৌশলে বাঁচিয়ে দিয়ে ধর্ষিতার বিচার করার চেষ্টা করা হয়, দেশের গ্রামাঞ্চলের অনেক জায়গায়। ধর্ষক গ্রেফতার হয়ে সাজা ভোগ করলেও তার সামাজিক মর্যাদা বা প্রতিপত্তির কোন হানি হয় না। কিন্তু কোন মেয়ে ধর্ষিতা হলে সমাজ তাকে আর গ্রহণ করে না। ধর্ষিতা নারীকে তাই হয় মর্যাদাহীনভাবে সংসারে বেঁচে থাকতে হয়, নয়তো আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয়।
সব শেষে লেখককে এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত পড়াশোনা ও উপলব্ধির জন্য আবহব্বান জানাব। হয়তো পূনর্বার তিনি রচনাটির ত্রুটিগুলো সংশোধন করে নিতে পারবেন।