চা, চা-খানা ও একালের বাঙালি

ফাতিহুল কাদির সম্রাট
Published : 22 May 2014, 08:47 AM
Updated : 22 May 2014, 08:47 AM

সব্যসাচী লেখক অন্নদাশঙ্কর রায় তাঁর 'পথে প্রবাসে' ভ্রমণ কাহিনিতে ফরাসি জাতির কাফেসংস্কৃতির মাহাত্ম্য তুলে ধরতে গিয়ে বাঙালির চা-খানা বা চায়ের দোকান আর একে ঘিরে জমে উঠা আড্ডা নিয়ে বেশ উচ্চাশা ব্যক্ত করেছিলেন। তিনি দেখিয়েছেন, ফ্রান্সের সর্বত্র, বিশেষ করে রাজধানী প্যারিসের অলিতে-গলিতে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য কাফে। কাফে হলো চা-কফির দোকান। অতি সস্তায় চা-কফি গিলতে গিলতে সেখানে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দেওয়া যায় প্রাণখুলে। লেখকের মতে, ফ্রান্সের আধুনিক ইতিহাস নির্মিত হয়েছে তার কাফেগুলোতে। কাফে হচ্ছে ফরাসি সভ্যতার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। কাফের আড্ডা থেকেই বেরিয়ে এসেছে নতু নতুন মতাদর্শ, চিন্তাধারা, উদ্ভাবন-সুত্র আর জন্ম হয়েছে শিল্পীসাহিত্যিকের। শহুরে বাঙালির দোকানে দোকানে চায়ের কাপে ঝড় তোলা দেখে লেখক বেশ আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল, চা-খানার আড্ডাকে আশ্রয় করেই বাঙালির বুদ্ধিবৃত্তিক মুক্তির পথ খুলে যাবে, সাংস্কৃতিক চেতনা ও সুরুচির বিকাশ ঘটবে। লেখকের আশা, "আমাদের দেশের চায়ের দোকানগুলোতে তর্কসভা বসেÑসেগুলোই আমাদের ভাবিযুগের কাফে। তাই থেকে আমাদের ভাবি সাহিত্যিকদের উদ্ভব হবে, ভাবি রাষ্ট্রনেতাদের অভ্যুত্থান ঘটবে। ব্যয়সাধ্য ক্লাব যে আমাদের মাটিতে শেকড় গেড়ে আমাদের বট-অশ্বত্থের মতো দীর্ঘজীবী হবে এমন মনে হয় না। এই চায়ের আড্ডাগুলোর সঙ্গে পাঠাগার জুড়ে দিলে ওগুলোই হবে জনসাধারণের বিশ্রাম, আমোদ ও শিক্ষার স্থান।"

পানীয় হিসেবে চায়ের অবস্থান সারা দুনিয়ায় এক নম্বরে। কিন্তু ভারতবর্ষের মানুষকে চায়ে অভ্যস্ত করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে ব্রিটিশ-ভারতীয় চা-বোর্ডকে। গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে ব্যাপক প্রচারণা ও বিপণন কৌশলের ফলস্বরূপ শহুরে মানুষের মাঝে চা পানের অভ্যাস গড়ে উঠে। বাজারে-গলিতে চা-খানা বসতে থাকে। বাঙালির চা-সংস্কৃতিও খুব বেশি দিনের নয়। বাংলার গণমানুষের কাছে চা-কে জনপ্রিয় করে তোলার জন্যে কত চেষ্টাই না সরকার আর বহুজাতিক কোম্পানিগুলো করেছে। মাগনা চা খেতেও রাজি হত না ঘোল-ঝোলে অভ্যস্ত বাঙালি। প্রথম দিকে গরম চায়ে চুমুক দিয়ে জিহ্বা আর তালু ঝলসানো বাঙালির সংখ্যা কম ছিলো না। তবে ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে শহুরে মানুষের কাছে পানীয় হিসেবে চা জনপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে কলকাতায় চায়ের দোকানে লোকজনের আনাগোনা দেখা যায়।

বাঙালির চা-পান নিয়ে অনেক মজার গল্প জানা যায়। ১৯৩২ সালে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম সিরাজগঞ্জে এসেছিলেন মুসলমান যুবসমাজের এক সংবর্ধনায় যোগ দিতে। প্রিয় কবিকে চা-এ আপ্যায়িত করতে প্রাণান্ত চেষ্টা করেছিল এক পরিবার। কবিকে চা দেওয়া হয়েছিল বদনায় করে, আর চা রান্না করা হয়েছিল ডালের চেয়ে বেশি হলুদ-মরিচ-মশলা দিয়ে। নজরুল নাকি অম্লান বদনে সে চা পান করে আতিথেয়তার সম্মান দিয়েছিলেন।

একসময় চা ছিল কেবল শহুরে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের খাদ্যোপকরণের উদাহরণ। এটা তাদের জীবন-সংস্কৃতিরও অংশ ছিল। মাত্র দুই-তিন যুগ আগেও গ্রামের দু-চারটা শিক্ষিত বা অভিজাত পরিবারে ব্যক্তিবিশেষের চা-পানের অভ্যাস ছিল , কিন্তু তা বিলাসিতা বা অপচয় হিসেবেই গণ্য হতো। শহর, রেল স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, হাট-বাজার, গঞ্জ প্রভৃতি স্থানে চায়ের দোকান ছিল বটে, তবে সংখ্যায় এখনকার মতো এতো বেশি ছিল না। মফঃস্বলের হাট-বাজারে চায়ের দোকানে যাতায়াতকারীদের একটা শ্রেণিপরিচয় ছিল, ছিল স্বাতন্ত্র্যচেতনা ও সাংস্কৃতিক সচেতনতা। চায়ের দোকানের আলাপ-আলোচনায় রুচির পরিচয় ছিল, ছিল যুক্তি ও মুক্তবুদ্ধির ছোঁয়া। আলোচনার বিষয়বস্তুতে দেশকাল, রাজনীতি, সমকালের সংস্কৃতি প্রভৃতি প্রাধান্য পেত। স্থানীয় শহরগুলোতে বিশেষ কোনো চা-খানার চায়ের সুনাম থাকত, লোকজন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসত সেখানে, চায়ের সাথে চলত আড্ডা-আলোচনা। চায়ের দোকানিরাও সহনশীলতায় দেখত খদ্দেরদের। নিরবিচ্ছন্ন আড্ডায় বাধা দিত না তারা। চায়ের দোকানকে ঘিরে গড়ে উঠা আড্ডায় রাজনৈতিক ও সাস্কৃতিক কর্মীদের সরব উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যযোগ্য। নেতৃত্ব সৃষ্টি, কর্মপন্থা নির্ধারণ, শিল্পীসাহিত্যিকের জন্ম Ñপ্রভৃতি ক্ষেত্রে চায়ের দোকানের ভূমিকা সত্যি অনস্বীকার্য। চায়ের আড্ডায় নিজের লেখা কবিতা বন্ধুদের শুনিয়ে কাঙালের মতো প্রশংসাপ্রার্থী হয় নি কয়জন কবি? দেশের ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে নানা আন্দোলন-সংগ্রামে চা-খানাই ছিল মিলনকেন্দ্র। বহু মত ও পথের সম্মিলনে পারস্পরিক সমঝোতা ও সহাবস্থানের চেতনার জাগরণে চা-দোকানগুলোর ভূমিকা অনস্বীকার্য। বাংলাদেশের ছাত্র-আন্দোলনের সাথেও চায়ের দোকান আর আড্ডা অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে রয়েছে। আমরা ছাত্রজীবনেও দেখেছি নানা ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা পরস্পরের বিরুদ্ধে মিছিল শেষে ঘর্মাক্ত শরীরে হলের বা বিশ্ববিদ্যালযের রাস্তার পাশের চায়ের দোকানগুলোতে এক সাথে বসে আড্ডায় মেতে উঠেছে। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে তারা নিজেদের বিভেদ ভুলে গেছে। গড়ে উঠেছে সৌহার্দ্য ও সহাবস্থানের চেতনা। কাজেই অন্নদাশঙ্কর রায়ের চা-খানার আড্ডাকেন্দ্রিক প্রত্যাশা যে মোটেই অবান্তর ছিল না, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক বাস্তবতায় বলতে হয়, তাঁর প্রত্যাশার গুড়ে বালি পড়েছে।

নগরায়ন, শহুরে জীবনচেতনা ও জীবনোপকরণের প্রসারে বাঙালির সনাতন খাদ্যাভ্যাস ও সাংস্কৃতিক চেতনায় পরিবর্তন এসেছে অবশ্যম্ভাবীভাবে। চা আর এখন শহুরে মানুষের পানীয় বা রুচির প্রমাণ নয়। চায়ের প্রাপ্যতা এখন অতি সুলভ। যত্রতত্র চা-খানা। ঘরে ঘরে এখন চা-খোর।

সময়ের ধারায় পরিবর্তন এসছে আমাদের রুচি, অর্থনৈতিক কর্মকা- ও রাজনৈতিক চেতনায়ও। বলা বাহুল্য, জীবনবোধ, রুচি ও সাংস্কৃতিক চেতনার এ পরির্তন অনিবার্যভাবে নেতিবাচক। রাজনৈতিক কর্মকা- ও পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রটি আরও বেশি নেতিবাচক। চায়ের দোকানে ভিন্ন মতের মানুষের মাঝে প্রাণখোলা বিতর্ক আজকের দিনে একেবারে অকল্পনীয়। অধিকাংশ চায়ের দোকানে কিংবা খাবার হোটেলের দেয়ালে দেয়ালে সাঁটানো থাকে, "এখানে রাজনৈতিক আলাপ নিষিদ্ধ।" আরও লেখা থাকে, "অযথা সময় নষ্ট করবেন না।" দোকানিদের বাণিজ্যিক মনোবৃত্তির চরম প্রকাশে চা খেয়েই চম্পট দিতে হয় খদ্দেরকে। তবে ছাত্র বা যুবশ্রেণিকে দোকানিরা পেশির ভয়ে সেভাবে তাড়াতে পারে না। তাদের বিনে পয়সায় চায়ের সাথে টা-টাও তারা দিতে কার্পণ্য করে না। তাদের আড্ডায় আগের সেই প্রাণখোলা ভাব, যুক্তির তুবড়ি, ভিন্নমতের সরব উপস্থাপনা, সর্বোপরি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এখন অভাবনীয়। দুটি ভিন্ন মতের বা পরস্পরবিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের একই চা-খানায় দল বেঁধে ঢোকার দৃশ্য দেখা তো রীতিমতো সৌভাগ্যের ব্যাপার। আজকালকার তরুণ শ্রেণি তো চায়ের দোকানে ঢোকাটাকেই হীন চোখে দেখে। ফাস্ট ফুডের দোকানের আলো-আঁধারি ছাড়া তাদের যেন ভালো লাগে না। এখন খাবার হোটেলে কিংবা চায়ের দোকানের টেবিলে বা বেঞ্চিতে একসাথে কয়েকজন তরুণ বসলে তাদের আলাপের বিষয়বস্তু এমন থাকে যে, তারা কথা বলে ফিসফিসিয়ে। তাদের দেখা যায় মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট বা ল্যাপটপের পর্দায় চোখ রেখে চোখাচোখি করতে, বিকৃত হাসিতে মজতে। অনেককে দেখা যায় চায়ের সাথে নানা অপদ্রব্য মিশিয়ে গিলতে, লালচে চোখ নিয়ে ঝিমাতে। এটা গেল গঞ্জ ও শহরের কথা। গ্রামের চিত্রটা একটু ভিন্ন।
বছর পনের আগের কথা। দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে একটা বিষয় লক্ষ করি যে, পথপার্শে¦ চায়ের দোকান বাড়ছে। গ্রামীণ বাজারের প্রায় সব ছোট মুদির দোকানে যুক্ত হচ্ছে চায়ের আয়োজন। লক্ষ করলাম, চায়ের দোকানে, খাবার হোটেলে ও মুদির দোকানে টেলিভিশন যুক্ত হচ্ছে। সারাদিন চলে টেলিভিশন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রামীণ অর্থনীতি ও অর্থনৈতিক কর্মকাকাণ্ডের ক্ষেত্রে পরিবর্তন লক্ষ্যযোগ্য। ঐতিহ্যবাহী হাটগুলো ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে। মানুষ আর হাটবারের জন্যে কেনাবেচা ফেলে রাখে না। যা-কিছু বিক্রির তা ক্রেতারা কিনে নিয়ে যাচ্ছে বাড়ি থেকে। ধান, চাল, পাট, সবজি, মুরগি, ডিমÑ সবকিছু। দু-এক মাইল দূরত্বের মধ্যে একাধিক রাস্তার মিলনস্থলে বা

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে, গড়ে উঠেছে ছোট ছোট বাজার। এসব বাজারে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় চা-বিস্কুটের দোকান। একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামের এ বাজারগুলোর চা-দোকানেরও অনিবার্য অঙ্গ ডিশ সংযোগ সংবলিত টেলিভিশন। সামনে বসানো থাকে বেঞ্চির সারি। প্রতিটি দোকানে সারাদিন বসা থাকে দর্শক-খদ্দের। উচ্চ স্বরে বাজে টেলিভিশন।

আমার বাড়ির পাশে তিন রাস্তার মোড়ে, কিছুদিন আগ পর্যন্ত যেখানে ছিল ঝোপ-জঙ্গল, সেখানে বসেছে বাজার। বিকেলে স্থানীয় মানুষ তাদের উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী নিয়ে হাজির হয়। গাছের লাউটা থেকে পুকুরের মাছটা পর্যন্ত। বোঝা যায়, স্থানীয় বাজারব্যবস্থার এক নতুন ধারা অর্থনৈতিক কর্মকা-ে নতুন মাত্রা যোগ করেছে গ্রামীণ জীবনে। সেখানেও দেখলাম একই দৃশ্য। চায়ের দোকান, টেলিভিশন, দর্শক-খরিদ্দারের অবিরাম উপস্থিতি। বিকেলে বাজার বসে, কিন্তু সারাদিন সরগরম থাকে চায়ের দোকান। গভীর রাত পর্যন্ত তা থাকে অব্যাহত। যারা জীবনে চা পানের বিলাসিতা দেখানোর কথা ভাবতো না, তারাই গিলে যাচ্ছে চা আর চা। আঙুলের ফাঁকে বিড়ি কিংবা কম দামের সিগারেট থেকে অবিরাম উড়ছে ধোঁয়া। টেলিভিশনের পর্দায় নিষ্পলক দৃষ্টি সবার। অনেক দরকারি কাজও করা হয়ে উঠে না কারো কারো। টেলিভিশনে সবচেয়ে বেশি চলে ভারতীয় 'স্টার জলসা' আর 'জী বাংলা'। স্থানীয় ক্যাবল অপারেটরদের পরিচালিত ভিডিও চ্যানেলও বেশ খদ্দের টানে। অশ্লীল সিনেমা আর রগরগে মিউজিক ভিডিও চালানো হয় দিনরাত। এগুলো দেখছে বাবা-ছেলে-নাতি-পুতি একসাথে বসে। চিরন্তন মূল্যবোধ, নৈতিকতা আর ছোট-বড়র সমীহ-সম্মানের ব্যাপারগুলো কেমন জানি উপেক্ষিত হচ্ছে। গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলোর নাম পর্যন্ত উঠতি ছেলেরা এখন জানে না। স্কুল-মাদ্রাসার মাঠগুলোতে বিকেল বেলা আর দুরন্ত ছেলেদের কলরব শোনা যায় না। গ্রামের মানুষের অবসরকেন্দ্র এখন ঘরের নিরিবিলি কোণ নয়, ঐ চায়ের দোকান। অনেকে মাঠ থেকে সোজা চলে যায় বাজারে। ভারতীয় সিরিয়ালের নেশাও দেখলাম পেয়ে বসেছে অনেককে ছেলে-বুড়োকে। ক্রিকেট খেলা চললে শিক্ষার্থীদের ক্লাস ফাঁকি দেওয়ার দৃশ্যও চোখে পড়বে।

বাজারের কোণে যে ওষুধের দোকান, তার বেচাবিক্রি খারাপ নয়। দোকানের মালিক, মাস কয়েকের ট্রেনিং নিয়ে যে ছেলেটি ডাক্তার নাম ধারণ করেছেÑ সে জানায়, সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় এন্টাসিড আর রেনিটিডিন গ্রুপের গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বা বড়ি। আর বিক্রি হয় ব্যথার বড়ি। ক্রেতারা নিজেরাই নিজেদের ওষুধ প্রেসক্রাইব করে। সারাদিন চা খেলে আর বিড়ি-সিগারেট ফুঁকলে, অনেক সময় আবার খালি পেটে, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ না হলে চলবে কেন। গ্রামের খেটেখাওয়া মানুষের রোগ হিসেবে গ্যাস্ট্রিক বেমানান। কিন্তু আজ প্রায় সবার পেটে গ্যাস্ট্রিক। গ্যাস্ট্রিক বা আলসারের ক্ষতের ব্যথা সারাতে অবাধে ব্যথার ওষুধ, বিশেষ করে ব্যথা নিরাময়ের বড়ির ব্যবহার কী ভয়ঙ্কর স্বাস্থ্যগত বিপর্যয় বয়ে আনতে পারে, তা ভাবতে গিয়ে বিচলিত হতে হয়। শারীরিক স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য বা সাস্কৃতিক রুচির বিপর্যয়ের বিষয়টিও উপেক্ষা করার মতো নয়। এটা একটি গ্রাম বা একটি এলাকার চিত্র নয়, গোটা পল্লিবাংলার চিত্র। গ্রামীণ জীবনধারা আর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য চুলায় দিতে চায়ের চুলাগুলো কী ভূমিকা রাখছে তা নিয়ে আগামীতে নয়, এখনই ভাবতে হবে। অন্নদাশঙ্কর রায় বাঙালির জাতীয় উন্নতির ক্ষেত্রে চায়ের দোকান আর চায়ের কাপে ঝড়-তোলা আড্ডার ভূমিকা নিয়ে ছিলেন খুব আশাবাদী। এজন্যে তিনি চায়ের দোকানের সাথে জুড়ে দিতে বলেছিলেন লাইব্রেরি। আজ আমাদেও চায়ের দোকানে আমরা যুক্ত করে নিয়েছি টেলিভিশন। পার্থক্য এটুকুই।

এক সময় বাঙালিকে বিনে পয়সায় চা খাইয়েও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো সুবিধা করতে পারে নি। অথচ আজ চা আর চা-খানাই মানুষকে খেতে বসেছে। কী নিদারুণ বৈপরীত্য আর বাস্তবতা।