মিরসরাইয়ে ঈদ ছিল, আনন্দ ছিল না, ছিল শুধু চাপা আর্তনাদ…

সরোজ মেহেদী
Published : 11 Nov 2011, 07:16 PM
Updated : 11 Nov 2011, 07:16 PM

৪৪ টি লাশের উপর দাঁড়িয়ে আনন্দ করা যায় না । যারা আনন্দ করবে তারাতো চলে গেছে তবে ঈদের চাঁদ দেখে উল্লাসে মেতে উঠবে কে ? কুরবানি ঈদে গরুর সাথে খুঁনসুটিতে মাতবে কে , নতুন জামার জন্য বায়না ধরবে কে ? কেউ ধরেনি… এইতো গত ঈদে তারা ছিল, হেসেছিল খেলেছিল আজ নেই। ঘাতক ট্রাক বাঁচতে দিল না তাদের। এই ঈদে পুরো মিরসরাই জুরে ছিল কেমন যেন ভুতুরে পরিবেশ ।

এতগুলো প্রাণ সড়ক দুর্ঘটনায় একসাথে চলে গেল । আমরা কি কখনো ভেবেছি জাতি হিসেবে আমাদের কতটুকু ক্ষতি হয়ে গেল। আমরা কি এ ৪৪ জন থেকে পেতাম না একজন শেরে বাংলা, একজন এমআর খান, একজন রফিকুল হক , একজন এস এম আলী …? আমাদের ভবিষ্যত কেন অকালে ঝরে যাবে। কে জানে কত সম্ভাবনা লুকিয়ে ছিল তাজা প্রাণ এসব শিশুগুলোর মধ্যে…?

মিরসারাই উপজেলার ১১ টি গ্রাম নিয়ে এখন একটি ভুতুরে গ্রাম তৈরি হয়েছে। তাই মায়ানী, মঘাদিয়া আর খৈয়াছরা, সাহেরখালী ইউনিয়নের ১১টি গ্রামে এখন ঈদের আনন্দের বিপরীতে শুধু শোক আর হাহাকার। মিরসারাইয়ের মঘাদিয়া, মায়ানী, সৈদালি, সরকারটোলা, মাষ্টারপাড়া ও আবুতোরাবে ঈদেও দিন দেখা যায় এক ভিন্ন চিত্র। সেখানে নীর্জিব সবাই । ছেলের কথা বলতে গিয়ে কাঁদলেন আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ট শ্রেণীর ছাত্র তোফাজ্জ্বল হোসেনের পিতা জহির আহম্মদ। তোফাজ্জ্বলের প্রিয় রং ছিল লাল। আজ তার বাবার চোখ ও কান্নার পানিতে লাল। নিজেকে সামলাতে পারলেন না এ হতভাগ্য পিতা। বললেন আমার ছেলেটা নাই কিসের ঈদ ? রোকেয়া আক্তার এর একমাত্র সন্তান একাদশ শ্রেণীর ছাত্র ইফতেখার উদ্দিন মাহমুদ । তার দু:খটা তাই বুঝা কঠিন। ছেলের বাবা ছেলের শোকে ভেঙ্গে পড়েছেন বললেন তিনি।ঈদ আর অন্য দশদিন সবই পানসে তার কাছে। তিনি শুধু ছেলের পথ চেয়ে থাকেন যদি কখানো ইফতেখার ফিরে আসে প্রিয় মার কোলে…

পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র সাখাওয়াত হোসেন নয়ন এর মা নাজমা আক্তার । ঈদে আনন্দ করার বয়স নেই তার। নয়ন বেঁচে থাকলে আনন্দ করত। নয়ন নেই তাই আনন্দ নেই। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে এ মা বললেন "আমার নয়ন থাকলে কতো আনন্দ করতো"নবম শ্রেণীর শিক্ষাথী ইমরান হোসেনের পিতা আবুল কাশেম বললেন, প্রতি বছর ঈদ এলে ইমরান নতুন জামা কাপড়ের জন্য বায়না ধরতো। ঈদের এক সপ্তাহ আগে জামা কিনে লুকিয়ে রাখতো। কাউকে দেখাতো না। সে ফিরনি খুব পছন্দ করতো।আজওতো ঘরে ফিরনি হয়, কত স্বজন, কাছেরজন খায়। ফিরনির জন্য নতুন কাপড়ের জন্য বায়না ধরে না শুধু ইমরান।
ঈদতো আনন্দেরই হয়, ঈদ আসে মানুষের মুখে ক্ষাণিক হাসি ফুটানোর জন্য। মুসলিম সমাজে ঈদ হল শ্রেষ্ঠ উৎসব। এ উৎসবে মলিন মিরসরাইয়ের চারটি ইউনিয়ন। ঈদ এসে বাড়িয়ে দিয়ে গেল তাদের দু:খটা।