আমাদের রাজনৈতিক শিষ্টাচার বনাম ক্ষমতার বড়াই

সারোয়ার ইবনে গিয়াস
Published : 7 Jan 2018, 01:42 AM
Updated : 7 Jan 2018, 01:42 AM

বৃটিশ আমলের আগে আমরা রাজাদের অধীনে পরিচালিত হতাম। মুঘলেরা চৌধুরীদের মাধ্যমে খাজনা নির্ধারণ করতেন আর আমরা খাজনা দিতাম। মূলত প্রত্যক্ষ খাজনার প্রচলন ছিলো। প্রত্যক্ষ শাসন আর প্রত্যক্ষ নির্যাতন ছিলো। একসময় বৃটিশ এলো আর আমাদের গণতন্ত্র (পড়ুন ভোট দেয়া) শেখালো। অথচ, বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবকে যেদিন ইংরেজরা গ্রেফতার করে নিয়ে যায় সেদিনোও রাজায় রাজায় যুদ্ধ বলে আমরা চুপ করে ছিলাম! আহা! আমরা আজন্ম কি তবে শক্তের ভক্ত আর নরমের যম? পাকি শয়তানেরা যদি খুব দূর দেশের না হতো তবে না জানি দালালেরা আরোও কতো কি করতো!

এবার মূল প্রসঙ্গে আসা যাক।

৫ জানুয়ারি 'গণতন্ত্র রক্ষা দিবস' উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীর বনানী মাঠে দলের এক সভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, "বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়া বলেছেন, বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। অপেক্ষা করেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে, নির্বাচনে আসুন। ঠেকানোর সাধ্য থাকলে দেখান। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণ আপনাদের প্রতিহত করবে।"

আমার প্রশ্ন, "ঠেকানোর সাধ্য থাকলে দেখান" জাতীয় কথা একজন এতো বড় মাপের নেতার কাছ থেকে আসার পর কয়েকবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কীভাবে নিবেন? নিশ্চয় ভালোভাবে নয়। আমরা ক্ষমতার এতো বড়াই করি যে, ভুলে যাই আমরা মরণশীল আর আমরা আরোও ভুলে যাই যে, ক্ষমতায় চিরকাল কেউ আসীন থাকেনা বা থাকতে পারেনা। জাতীয় নেতারা যদি এমন বড়াই নিয়ে কথা বলেন তবে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা মারামারি করবেনা তো কুলাকুলি করবে বিরোধীদের সাথে?

তারা বলবে, নেতা বলেছেন "পারলে ঠেকা", সুতরাং পারলে ঠেকা। আমরা ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অনেক কেন্দ্রে স্রেফ কুকুর বিচরণ করতে দেখেছি, যার মানে আওয়ামী লীগ সমর্থকরাও অনেকে যায়নি ভোট দিতে। বিএনপি অংশগ্রহণ না করে অবশ্যই ভুল করেছিলো। আর আওয়ামী লীগ যা করতে পারতো তা হলো, "আপনার অংশ না নিয়ে একটি সুন্দর নির্বাচন হতে জাতিকে বঞ্চিত করেছেন"- জাতীয় কথা বলে বিব্রত করতে পারতো। কিন্তু তারা তা করবেনা; তারা বিএনপি এর কাটা গায়ে নূনের ছিটা দিবে আর আমাদের আবারো হয় বঞ্চিত করবে নয় দেখাবে সহিংসতার সচিত্র প্রতিবেদন। তখন আবারো কোন মায়ের ছেলে অফিস পথে প্রতিপক্ষ ভেবে ভুল করা কোন উগ্র সন্ত্রাসীর হাতে নিহত হবে অথবা ভুল মগজ ধোলাইয়ের স্বীকার কোন মেধাবী চলে যাবে অকালে কিংবা স্রেফ টিকে থাকার লড়াইয়ে প্রাণ বিসর্জন দিবে।

এখনো সময় আছে, চলুন আমরা বদলাই, আমরা কথা প্রয়োগে সাবধান হই। তা না হলে এ জাতি স্রেফ বিচ্ছিন্ন একটি জাতিতে পরিণত হবে। ইতিহাস কখনোই ক্ষমা করবেনা।