পার্বত্য শান্তি চুক্তি: সতের বছরের পোস্টমর্টেম

রাহমান নাসির উদ্দিন
Published : 2 Dec 2014, 08:19 AM
Updated : 2 Dec 2014, 08:19 AM

আজ থেকে সতের বছর আগে, ঠিক এইদিনেই, ২ ডিসেম্বর ১৯৯৭ সাল, মহাধুমধাম করে পার্বত্য চুক্তি, যা জনপ্রিয় বয়ানে 'শান্তি চুক্তি' নামে জারি আছে, স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পক্ষে আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এবং পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর পক্ষে পাবর্ত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি বাবু জ্যোতিরিন্দ্রি বোধিপ্রিয়া লারমা উরফে সন্তু লারমা এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। যা দেশ এবং বৈদেশে বেসুমার বাহবা অর্জন করে। নানান বর্ণিল বেলুন উড়িয়ে এবং গুচ্ছ গুচ্ছ শান্তির শ্বেত-কপোত আকাশে উন্মুক্ত করে বেশ স্বাড়ম্বরতার ভেতর দিয়ে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

এ চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারার কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, যিনি বর্তমানেও প্রধানমন্ত্রী, ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার লাভ করেছিলেন। এমনকি নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্যও মনোনীত হয়েছিলেন, যা শেষমেষ আর আগায়নি। আজ ঠিক সতের বছর পরে, পার্বত্য চুক্তি কেন্দ্র করে সামগ্রিক পরিবেশ ও পরিস্থিতি রীতিমতো প্রায় 'উল্টো'। আজ এ চুক্তি স্বাক্ষরের সতের বছর পূর্তি উৎসব হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে, বৃহত্তর চট্টগ্রামে এবং রাজধানী ঢাকায়। তবে, সেটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক এবং দৃষ্টিকটুভাবে একপাক্ষিক; কেননা চুক্তির স্বাক্ষরকারী একটি পক্ষ হিসেবে রাষ্ট্র বেমালুম রিলাকটেন্ট (অনাগ্রহী)।

পাহাড়ি জনগোষ্ঠী বা এ জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি যখন এ দিনটি তাদের দাবি পেশ করবার একটা বাৎসরিক মওকা হিসেবে উদযাপন করছে, রাষ্ট্র তখন নিষ্ঠুরভাবে নির্বিকার। ফলে, পার্বত্য চুক্তির এ দিন আজ আর উৎসবের মেজাজে জারি নেই। দিনটি উদযাপন হয়, কিন্তু সেখানে আনন্দের বেলুন নেই, আছে বিশ্বাসভঙ্গের গভীর হতাশা। সেখানে শান্তির শ্বেত কপোত নেই, আছে তীব্র অসন্তুষ্টির সামষ্টিক দীর্ঘশ্বাস। কিন্তু কেন? এ নিবন্ধে তার যৎসামান্য বিচার-বিশ্লেষণ করবার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে।

পার্বত্য চুক্তি-উত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে, যার অধিকাংশই নন-একাডেমিক এবং এনজিও বা কনসালটেন্সি এজেন্সির বা মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্ট। পার্বত্য চুক্তি নিয়ে এবং চুক্তির পরবর্তীতে পার্বত্য চট্টগ্রামের অবস্থা নিয়ে বস্তা বস্তা লেখালেখি হয়েছে, যার অধিকাংশই বস্তাপঁচা। নানান সেমিনার-সিম্পোজিয়াম-গোলটেবিল টক হয়েছে, সেখানে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য বিস্তর আহাজারি হয়েছে। কিন্তু দৃশ্যত এবং কার্যত সব অরণ্যে রোদন; কেননা কাজের কাজ খুব বেশি কিছু হয়েছে বলে মনে হয় না।

এই জনগোষ্ঠীর জীবনের আদৌ গুণগত পরিবর্তন এসেছে কিনা; আদৌ একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সমতার ভিত্তিতে ইজ্জতের সঙ্গে জীবনযাপন করবার মানসম্মত কোনো ব্যবস্থা এবং পরিস্থিতি পাহাড়ে তৈরি হয়েছে কিনা, সেটা হল মৌলিক জিজ্ঞাসা। ফলে ফি বছর চুক্তির বার্ষিকী উদযাপন এবং চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের তীব্র আহাজারি একটি সাংবাৎসরিক পলিটিক্যাল-রিচ্যুয়ালে পরিণত হয়েছে।

আর পাহাড়ের সঙ্গে কোনো ধরনের সংযোগবিহীন কিছু কিছু বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও সুশীল মেট্রোপলিটন আয়োজনে বসে পার্বত্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের বাৎসরিক বিলাপ করেন। যা হয়তো পাবর্ত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) দাবির তীব্রতায় কিঞ্চিত নোক্তা যুক্ত করে এবং পাহাড়ের জনগোষ্ঠীর জীবনে শান্তি আনয়নের যে আন্দোলন তাতে সামান্য 'তা' দেয় কিন্তু আখেরে মাকাল ফল উৎপাদন করে। কেননা, পাহাড়ের সার্বিক পরিস্থিতি গভীরভাবে উপলব্ধির ব্যর্থতা এবং তাকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করবার অক্ষমতা পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলছে।

এখানে বলে নেওয়া জরুরি যে, আমিও ব্যক্তিগতভাবে পার্বত্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন চাই। আমিও মনে করি, এর যথাযথ বাস্তবায়ন পাহাড়ে পুরোপুরি না হলেও শান্তি আনয়নে যথেষ্ট এবং উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের সঙ্গে আমার দীর্ঘ দিনের, দীর্ঘ বছরের গভীর বৌদ্ধিক-একাডেমিক সম্পৃক্ততার অভিজ্ঞতা থেকে আমি মনে করি, সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে মূল সমস্যা কেবলই চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন নয়; কেননা চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ নয়। চুক্তি বাস্তবায়নের পাশাপাশি, মোটা দাগে চারটি বিষয় অত্যন্তু গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে।

১. পাহাড় এবং পাহাড়ি আদিবাসীদের প্রতি রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি;

২. অতিরিক্ত সেনা-উপস্থিতি এবং পরোক্ষ সেনা-শাসন;

৩. ভূমি-সমস্যার স্থায়ী সমাধান;

৪. বাঙালি-সেটেলারদের সামাজিক ও রাজনৈতিক মনস্তত্ত্ব।

দুই.

বিশ্বখ্যাত নৃবিজ্ঞানী জেমস স্কট তাঁর বিখ্যাত কিতাব The Art of Not Being Governed (Scott, 2009)-এ চমৎকারভাবে দেখিয়েছেন 'সমতল' কীভাবে 'পাহাড়' নির্মাণ করে, শাসন করে এবং শোষণ করে। আধুনিক রাষ্ট্রের ধারণা, আবির্ভাব এবং কার্যকারিতা কীভাবে পাহাড় এবং পাহাড়ের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব হুমকির মুখে ফেলে দেয়। যার ফলশ্রুতিতে পাহাড় সবসময় রাষ্ট্রকে এড়িয়ে চলেছে এবং রাষ্ট্রের 'উন্নয়নের লম্বা হাত' থেকে দূরে থাকতে পালিয়ে বেড়িয়েছে।

স্কট দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার জুমিয়া-অঞ্চলের ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতে তাঁর থিসিস দাঁড় করলেও দক্ষিণ এশিয়ার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে এর অন্যথা হয়নি। তবে, পার্থক্য এতটুকুই যে, এখানে পাহাড় আধুনিক রাষ্ট্রগঠনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে সবসময় সংযুক্ত হতে চেয়েছে, রাষ্ট্র থেকে পালিয়ে বেড়ায়নি। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতীয় উপমহাদেশ যখন ভারত এবং পাকিস্তান দু'টি আলাদা রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়, পাহাড় এবং পাহাড়ের আদিবাসী নেতৃবৃন্দ তখন ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত হতে চেয়েছিল। কিন্তু এই জনগোষ্ঠীর আবেগ এবং আকাঙ্ক্ষায় কোনো ধরনের গুরুত্ব না দিয়ে, দেশবিভাগের সময় পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তানের (পূর্ব পাকিস্তানের) অন্তর্ভূক্ত করা হয়।

১৯৭১ সালে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্ম হলে, পাহাড়ের জনগোষ্ঠী একটি স্বতন্ত্র সত্ত্বা নিয়ে সাংবিধানিক কাঠমোয় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সঙ্গে অন্তর্ভূক্ত হতে চাইল। রাষ্ট্র অতটুকু সামান্য উদারতাও দেখাতে পারেনি। সমস্ত অ-বাঙালিকে অর্থাৎ সাংস্কৃতিকভাবে ভিন্ন জাতিসত্ত্বার মানুষকে সাংবিধানিক কাঠামোর বাইরে রাখা হল।

এরপরের ইতিহাস কারও অজানা নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন হিসেবে উপস্থাপন করা হল যা পৃথিবীর অন্যান্য অনেক দেশের ক্ষেত্রেও আমরা হরহামেশা দেখে থাকি। কেননা, অধিকারবঞ্চিত, রাষ্ট্রযন্ত্র দ্বারা নির্যাতিত এবং ন্যায্য দাবি নিয়ে যখন সাংস্কৃতিকভাবে ভিন্ন জাতিগোষ্ঠী নিজেদের জাতিগত অধিকারের জন্য মুক্তির সংগ্রামে লিপ্ত হয়, রাষ্ট্রের ভাষায় তাঁরা হয়ে উঠে বিচ্ছিন্নতাবাদী।

[বিস্তারিত দেখুন: Appadurai 2006; Spencer 2007]

পার্বত্য চট্টগ্রামকে রাষ্ট্রীয় পলিসির অংশ হিসেবে এক ধরনের সামরিকায়ন করা হল। এক হিসাব অনুযায়ী, সেখানে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রায় এক তৃতীয়াংশ মজুত করা হয়েছিল।

[বিস্তারিত দেখুন: Mohsin, 2002:172]

এই সেনা মোতায়নের পেছনে কথিত শান্তিবাহিনীর কিছু সশস্ত্র কার্যক্রম অজুহাত হিসেবে হাজির করা হয় যা সর্বাংশে সত্য নয় (বিস্তারিত পরের অংশে)। প্রায় চার লক্ষ ভূমিহীন বাঙালি কৃষককে রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামে পুনর্বাসিত করা হল, যারা 'বাঙালি সেটেলা'র হিসেবে পরিচিত। আদিবাসীদের জমি-জল-জঙ্গল হয়ে উঠল বাঙালি সেটেলারদের জীবন ও জীবিকার উৎস। আর তা পরিস্থিতি করে তুলল সংঘাতময়।

আখেরে লাভ হয় রাষ্ট্রের। নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে সেনাবাহিনীর বিরাট বহরকে পার্বত্য চট্টগ্রামে মজুদ রাখার বন্দোবস্ত পাকা হয়। তারপর পার্বত্য চুক্তি এবং চুক্তি-পরবর্তীকালে রাষ্ট্রের ভূমিকা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং (অপ)তৎপরতা, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নেতিবাচক অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে।

অতিসম্প্রতি, যখন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হল, পাহাড়ি জনগোষ্ঠী সমতলের আদিবাসীসহ সংবিধানে নিজেদের 'আদিবাসী' হিসেবে স্বীকৃতি ও অন্তর্ভূক্তি চাইল, কিন্তু রাষ্ট্র এ সামান্য উদারতাটুকু দেখাতে কৃপণতা দেখাল। অধিকন্তু, রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করা হল, বাংলাদেশে কোনো 'আদিবাসী' নেই। সংবিধানে সংযোজিত হল 'ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী'। কোনো জাতি ক্ষুদ্র না বৃহৎ, একবিংশ শতাব্দীতে সেটা আর 'ডেমোগ্রাফিক ফিগার' বা জনগোষ্ঠীর সংখ্যার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় না।

[বিস্তারিত দেখুন: Uddin, 2014]

পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে 'ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী' হিসেবে বিবেচনা করা মূলত রাষ্ট্রের একটি মেজরিটারিয়ান দৃষ্টিভঙ্গি। তাই, এ দৃষ্টিভঙ্গির আদর্শিক, দার্শনিক এবং গুণগত পরিবর্তন ছাড়া, কেবল পার্বত্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন দিয়েই পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।

তিন.

একবিংশ শতাব্দীর রাষ্ট্র-ব্যবস্থাপনায় সেনা-শাসনকে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার একটি বিপ্রতীপ বিন্দুতে প্রতিস্থাপন করে বিবেচনা করা হয়; কেননা সেনা-শাসনের অধীনে মানুষের মৌলিক, মানবিক এবং শাসনতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষিত হয় না। সেটা পরোক্ষ হোক আর প্রত্যক্ষ হোক। ইতিহাসে তার ভুরি ভুরি নজির আছে। বাংলাদেশেও এর অন্যথা হয়নি।

এখানে মনে রাখা জরুরি যে, এদেশের একজন সচেতন এবং সংবেদনশীল নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নানান গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা নিয়ে আমিও প্রীত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কৃতিত্বপূর্ণ ভূমিকায়ও গৌরব বোধ করি। দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। সম্প্রতি রানা প্লাজা ধ্বসের ঘটনায় উদ্ধারকার্যে সেনাবাহিনীর ভূমিকা সেনাবাহিনীর প্রতি আমার ইতিবাচক মনোভঙ্গি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই, আমি কোনো অবস্থাতেই সেনাবাহিনীর বিপক্ষে নই, কিন্তু সেনা-শাসনের বিপক্ষে।

পাবর্ত্য চট্টগ্রামে কার্যত অফিসিয়াল কোনো সেনা-শাসন নেই, কিন্তু মানুষের নিত্যদিনের জীবনে সেনাবাহিনীর অতিরিক্ত উপস্থিতি (excessive presence) এবং পাবর্ত্য চট্টগ্রামে 'সিকিউরিটি'র নামে অতিরিক্ত তল্লাশির ব্যবস্থাপনা মানুষকে এক ধরনের ভয়ের সংস্কৃতির মধ্যে বাস করবার পরিস্থিতি তৈরি করে দিয়েছে।

[দেখুন: রীয়াজ, ২০১৪]

তাই, পার্বত্য চট্টগ্রামে এক ধরনের প্রত্যক্ষ সেনা-শাসন জারি আছে বললে খুব একটা অত্যুক্তি হয় না। তাছাড়া, আমি পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রত্যন্ত গ্রামে-পাড়ায় গবেষণার কাজ করি। সেসব পাড়ায় সাধারণ পাহাড়ি গ্রামবাসীর কাছে মিলিটারি মানে হচ্ছে 'সরকার'। তাই, মিলিটারি কীভাবে মানুষের নিত্যদিনের জীবনে হাজির হয় এবং পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবন কীভাবে রেগুলেট করে, তা পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

[বিস্তারিত দেখুন: রাহমান, ২০১৩]

কেননা, মিলিটারির আচরণ এবং ভূমিকা রাষ্ট্রের চরিত্র রিপ্রেজেন্ট করে। পার্বত্য চট্টগ্রামে মিলিটারি জাতীয় এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষায় যে ভূমিকা রাখছে, তার পাশাপাশি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবনেও এক ধরনের নেতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। ফলে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়।

যেমন, 'ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্কিং গ্রুপ ফর ইনডিজেনাস অ্যাফিয়ার্স' ২০১২ সালে একটি তালিকা প্রকাশ করেছে; সেখানে কীভাবে ২০০৪ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত মিলিটারি কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে তার সবিস্তার বিবরণ আছে। যেমন, মিলিটারি কর্তৃক ১৫ জনকে হত্যা, ৩১ জনকে আহত, ২ জনকে ধর্ষণ, ১৬ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা, ৩২টি লুণ্ঠনের ঘটনা, ৫টি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, ৭টি মন্দির ভাঙচুর, ৪৬৪ জনকে গ্রেপ্তার, ৩৭৪ জনকে টর্চার, ১৫৪ জনকে প্রহার, ১৭টি পবিত্রতানাশের ঘটনা, ৮৫টি নাজেহালের ঘটনা, ২৮৫টি উচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে বলে এ রিপোর্টে প্রকাশ করা হয়েছে।

[IGWIA Report-14, 2012:15]

একথা অপ্রিয় হলেও সত্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে সত্যিকার শান্তি প্রতিষ্ঠায় অতিরিক্ত সেনা-উপস্থিতি একটি বড় সমস্যা। কেননা, মূলত মিলিটারি হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বে দেশে দেশে রাষ্ট্রের এক ধরনের ধ্রুপদী প্রতিনিধি।

[বিস্তারিত দেখুন: Eva, 2013]

কাজেই, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অসংখ্য সেনা ছাউনি বলবৎ রেখে পার্বত্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জিগির তুলে এবং সত্যি সত্যিই পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করেও সত্যিকার শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। হয়তো অনেকে বলবেন, পাবর্ত্য চুক্তি বাস্তবায়িত হলে, চুক্তির শর্তানুযায়ী অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পগুলি স্থায়ীভাবে তুলে নেওয়া হবে। সেটা হলে ভালো, কিন্তু কোনো অবস্থাতেই পরোক্ষ সেনা-শাসন যদি পার্বত্য চট্টগ্রামে জারি থাকে, এ অঞ্চলে কোনোদিনই শান্তি ফিরে আসবে না। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।

চার.

জল-জমি-জঙ্গল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত যা মহাশ্বেতা দেবী তাঁর লেখায় আদিবাসী মানুষের জীবনের প্রাণসঞ্চারণী হিসেবে এ ত্রয়কে বিবেচনা করেছেন।

[দেখুন: মহাশ্বেতা দেবী, ২০০৩ (১৯৭৭)]

শহুরে শিক্ষিত নাগরিক মধ্যবিত্তের যা বিনোদন, তা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবন ও সংস্কৃতি। আর যেহেতু এখনও পাবর্ত্য চট্টগ্রামের অধিকাংশ জনগোষ্ঠীর প্রধান জীবিকা জুম চাষ, সেহেতু ভূমি তার জীবনধারণের অন্যতম উৎস। তাই, পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি-সমস্যা এবং ভূমি-ব্যবস্থাপনা এতদঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে একটি অন্যতম প্রধান অন্তরায়।

১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর থেকেই, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বেশ কয়েক বার পার্বত্য ভূমি কমিশন গঠন করা হয়। হাঁকডাক দিয়ে কাজকর্ম শুরু করা হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে এ পর্যন্ত পাঁচজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়, কিন্তু ভূমি-সমস্যার সমাধান হয়নি। একটি হিসাব মতে, ১৯৯৭ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার আবেদনপত্র জমা দেওয়া হয়েছে কমিশনে, ভূমি-বিরোধ সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। তন্মধ্যে, প্রায় দু'হাজার আবেদন ফয়সালা করবার জন্য নির্ধারণ করা হয়, কিন্তু এখনও পর্যন্ত একটিও ভূমি-বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি।

এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন, ২০০১-এর ১৩ টি সংশোধনীসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি আইন, ২০১১ (সংশোধিত ২০১২) ২০১৩ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে জুলাইয়ের ৩০ তারিখ অনুমোদন করে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যা পরবর্তী পার্লামেন্টের অধিবেশনে তোলার কথা ছিল, কিন্তু অদ্যাবধি তার সুরাহা হয়নি। সরকার এবং পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে জেএসএস, উভয় পক্ষ সম্মত হলেও কেন তা আদৌ আলোর মুখ দেখেনি, তার গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যাও সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি, যা উভয় পক্ষের মধ্যে পারষ্পরিক বিশ্বাস ও আস্থার সংকট আরও তীব্র করেছে।

অন্যদিকে বাঙালি সেটেলাররা এ সংশোধনীর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করায় পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে বিচারপতি জনাব মোহাম্মদ আনোয়ারুল হককে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরের ১৩ তারিখ পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি নিষ্পত্তি কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়, কিন্তু তিনিও একদিন মাত্র অফিস ভিজিট করে সংবাদপত্রে পোজ দিয়ে গায়েব হয়ে বসে আছেন; অন্তত দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম আমার জানামতে শুরু হয়নি।

এ হচ্ছে বিগত সতের বছরের পাবর্ত্য ভূমি কমিশনের কার্যক্রমের সালতামামি। কিন্তু ভূমি-সমস্যার দৃশ্যমান সমাধান এখনও পর্যন্ত হয়নি। এখানে উল্লেখ্য যে, ৯০ হাজারেরও বেশি পাহাড়ি 'অভ্যন্তরীন উদ্বাস্তু' হিসেবে বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অন্যদিকে প্রায় ১২,২২৩ পরিবারের ৬৪,৬১১ পাহাড়ি ভারতের ত্রিপুরা থেকে ফিরে আসা' প্রত্যাগত উদ্বাস্তু' হিসেবে বর্তমানের পার্বত্য চট্টগ্রামে অবস্থান করছে, কিন্তু এখনও নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত।

[Amnesty International Report, 2013]

এত বিপুল সংখ্যক লোককে কীভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে জায়গা করে দেওয়া হবে, সে বিষয়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা নেই কিংবা দৃশ্যমান পরিকল্পনা নেই। অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং সরকারি, বেসরকারিভাবে নানান অজুহাতে ভূমি দখলের মধ্য দিয়ে জুমচাষের জমি ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে; ফলে অসংখ্য পাহাড়ি জুম চাষ করবার জন্য পর্যাপ্ত জমি পাচ্ছেন না।

এ রকম একটি অবস্থায় কেবল পার্বত্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করেই পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরিয়ে আনা যাবে না। পাহাড়ি মানুষজনকে মাথা গুঁজবার জায়গা দিতে হবে; তাদের খেয়ে-পরে বেঁচে থাকবার ব্যবস্থা করে দিতে হবে; তাদের জমি-জল-জঙ্গল তাদেরকে ফিরিয়ে দিতে হবে। অন্যথায়, শান্তি একটি চিরন্তন অশান্তির চাদরে মোড়া থাকবে।

পাঁচ.

পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে বাঙালি সেটেলারদের বিষয়টি সঠিকভাবে হ্যান্ডেল করতে না পারা। পার্বত্য চুক্তির কোন জায়গায়, কোন ধারায় কিংবা উপধারায় সুষ্পষ্টভাবে বাঙালি সেটেলারদের পার্বত্য অঞ্চল থেকে পর্যায়ক্রমে কখন, কোথায় এবং কীভাবে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, তার কথা লেখা নেই। কিন্তু এ বিষয়ে একটি অলিখিত চুক্তি হয়েছে স্বাক্ষরকারী দুই পক্ষের মধ্যে, এ রকম একটি ধারণা এখন মোটামুটি সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু ১৯৭৯-'৮১ সালে পর্যায়ক্রমে ৪ লাখ বাঙালিকে রাষ্ট্রের পলিসির অংশ হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামে অভিবাসন করানো হলেও বিগত তিন দশকেরও বেশি সময় পরে সে সংখ্যা এখন প্রায় দ্বিগুণে পরিণত হয়েছে।

তাছাড়া, ১৯৭৯-'৮১ সালের সেই সেটেলার বাঙালিরা এখন আর অত নিরীহ, অসহায়, গোবেচারা প্রকৃতির নেই। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পার্বত্য অঞ্চলের ভোটের রাজনীতি। যুক্ত হয়েছে আওয়ামী লীগ বনাম বিএনপির ক্ষমতার রাজনীতি। ফলে, বহুমাত্রিক রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত বাঙালি সেটেলাররা নিজেরাই একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক শক্তি হয়ে উঠেছে। গঠন করেছে 'সমঅধিকার আন্দোলন' নামে একটি সংগঠন।

এ সংগঠনকে সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে স্থানীয় সিভিল এবং মিলিটারি প্রশাসন– এ মর্মে নানান অভিযোগ রয়েছে পাহাড়িদের মধ্যে। তাছাড়া, বাঙালি সেটেলারদের অনেকে মনে করেন, 'পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে গোটা পাবর্ত্য চট্টগ্রামকে পাহাড়িদের কাছে যেন লিজ দিয়ে দেওয়া হয়েছে।' অনেক বাঙালি সেটেলার মনে করেন, 'পাহাড়িরা বাংলাদেশের নাগরিকই নন। তারা এসেছে ভারত এবং বার্মা থেকে। তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে বহিরাগত!' এ ধরনের অত্যন্ত নেতিবাচক মনোভাব এবং মনস্তত্ত্ব নিয়ে বাঙালি সেটেলারদের অনেকে পাহাড়িদের বিবেচনা করেন এবং সে মোতাবেক আচরণ করেন।

তাই, বাঙালি-সেটেলারদের সামাজিক ও রাজনৈতিক মনস্তত্ত্বের ইতিবাচক রূপান্তর ছাড়া পাবর্ত্য চট্টগ্রামে সত্যিকার অর্থে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। এখানে মনে রাখা জরুরি যে, পাবর্ত্য অঞ্চলে অনেক বাঙালি, যারা সেটেলার নন, দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন, তাদের অনেকের সঙ্গে অত্যন্ত সুন্দর এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে পাহাড়িদের। অনেকের সঙ্গে রয়েছে নানান ধরনের ব্যবসায়িক এবং যৌথ মালিকানার নানান কার্যক্রম। দীর্ঘদিনের পারষ্পরিক আদান-প্রদানের ভেতর দিয়ে, নানান সামাজিক মিথষ্ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এসব স্থায়ী বাঙালিদের সঙ্গে রয়েছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অত্যন্ত সুন্দর সম্পর্ক।

[বিস্তারিত দেখুন: চৌধুরী, ২০১৪]

সমস্যা রয়ে গেছে সেটেলার-বাঙালিদের মধ্যে, যাদের অনেকেই পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কোনো লেভেলেই কোনো রকম ইন্টোগ্রেশন করবার চেষ্টাই করেননি। অধিকন্তু, পাহাড়িদের জায়গা দখল করা, জমির ফসল চুরি করা, জুমের শস্য লুট করা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করা, পাহাড়ি নারীদের ধর্ষণ, পাহাড়ি গ্রামে অগ্নিসংযোগ এবং খুন করবার মতো অসংখ্য ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ রয়েছে এসব বাঙালি সেটেলারদের। তাই, সেটেলার সমস্যার একটা দীর্ঘমেয়াদি এবং সর্বজনগ্রাহ্য সমাধান ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে কোনোভাবেই স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

শেষের কথা

শুরুর কথাই মূলত শেষের কথা। আর মাঝখানটাই কিছু তথ্য-উপাত্ত, বাস্তবতা এবং কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতার তাত্ত্বিক বয়ান। এটা আমাদের মনে রাখা জরুরি যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস, এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী মানুষের জীবনের ইতিহাস অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার নিত্য সংগ্রামের ইতিহাস।

[দেখুন: Uddin, 2005]

বহু রক্তক্ষরণের পর দীর্ঘ আড়াই যুগের প্রায় যুদ্ধাবস্থা থেকে একটি যৌথ চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের জীবনে একটি শান্তির জীবন যাপন করবার যে আকাঙ্ক্ষা এবং স্বপ্ন জন্ম হয়েছিল আজ থেকে সতের বছর আগে, তা ক্রমান্বয়ে ফেকাসে হয়ে হতাশার দীর্ঘ হাত ধরে বেদনায় 'নীল' (কষ্টের রঙ) হয়ে উঠছে।

সম্প্রতি সরকার এবং জেএসএস-এর মুখোমুখি অবস্থানের কারণে সে 'নীল' কষ্ট আবার 'লাল' হয়ে উঠবার আশংকা তৈরী করছে। সেটা কারও কাম্য নয়। তাই, পাবর্ত্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য দ্রুততম সময়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়াটা জরুরি। আর যদি পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তাবায়ন হয়, তবে উপরোল্লিখিত চারটি প্রধান প্রতিবন্ধবকার বেশ কয়েকটি (মিলিটারি ইস্যু, ভূমি-সমস্যা এবং সেটেলার সমস্যা) বিষয় আপনা আপনিই সুরাহা হয়ে যাবে। এর সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে আরও কিছু মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা আমি নিবন্ধের গতরে সবিস্তারে আলোচনা করেছি।

সবচেয়ে বেশি জরুরি, পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে তাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে আমাদের সামাজিক মনস্তত্ত্ব এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির গুণগত এবং ইতিবাচক পরিবর্তন আনা। এই জনগোষ্ঠীর ন্যায্য অধিকার এবং যথাযথ মর্যাদার বিষয়টি কেবল মেনে নেওয়াই যথেষ্ট নয়, আন্তরিকতার সঙ্গে মনেও নিতে হবে।

তথ্যসূত্র:

১.

Amnest International Report. 2013.Push to the Margin: Indigenous Rights Denied in Bangladesh's Chittagong Hill Tracts. London, UK: Amnesty International.

২.

Appadurai, Arjun (2006). Fears of Small Numbers: An Essay on the Geography of Anger. Durham and London: Duke University Press.

৩.

Eva, Gerharz. 2013. "Beyond and Beneath the Nation-State: Bangladeshi Indigenous People's Activism at the Crossroads."Working Papers in Development Sociology and Social Anthropology, no. 372. Bielefeld: University of Bielefeld.

৪.

International Group of World'sIndigenous Affairs. 2012. Militarization of the Chittagong Hill Tracts, Bangladesh, IGWIA report-14, Netherlands.

৫.

Mohsin, Amena. 2002. The Politics of Nationalism: A Case of the Chittagong Hill Tracts of Bangladesh. Dhaka: the University Press Limited.

৬.

Spencer, Jonathan.2007. Anthropology, Politics and the State: Democracy and Violence in South Asia.Cambridge: Cambridge University Press

৭.

Scott, James. 2009. The Art of Not Being Governed. Yale: Yale University Press

৮.

Uddin, Nasir. 2014. "Beyond Political and Cultural Binary: Understanding Indigenous Activism from Below." Paper presented at a workshop titled Indigenous Activism in Bangladesh: A Critical Perspective organized by the Department of Anthropology, the London School of Economics and Political Sciences, March 18, 2014.

৯.

Uddin, Nasir. 2005. "History is the Story for Existence: A Case Study of Chittagong Hill Tracts." Asian Profile 33, no. 4: 391–412.

১০.

চৌধুরী, মোক্তার আহমেদ, "অন্য'র সাথে পাড়া-বাস: পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি-পাহাড়ি সম্পর্কের স্বরূপ", বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি পত্রিকা, (রিভিউয়াধীন), ২০১৪।

১১.

দেবী, মহাশ্বেতা, "অরণ্যের অধিকার" (১৯৭৭), মহাশ্বেতা দেবী রচনাসমগ্র-০৮, সম্পাদনা: অজয় গুপ্ত, কলকাতা: দে'জ পাবলিশিং, ২০০৩।

১২.

রীয়াজ, আলী, ভয়ের সংস্কৃতি: বাংলাদেশের আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের রাজনৈতিক অর্থনীতি, ঢাকা: প্রথমা, ২০১৪।

১৩.

উদ্দিন, রাহমান নাসির, "পাবর্ত্য শান্তিচুক্তি: দেড় দশকের কীর্তন", দৈনিক ভোরের কাগজ, ২০ মার্চ, ২০১৩।

ড. রাহমান নাসির উদ্দিন: অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।