ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি: এমএলএম

সৌরভ মৃধা
Published : 7 May 2012, 03:37 PM
Updated : 7 May 2012, 03:37 PM

মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (গখগ) বা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং পদ্ধতি ১৯৪০ সালে ড. কালরেইনবোর্গ কর্তৃক আমেরিকায় উদ্ভাবিত প্রজনন পদ্ধতির অনুকরণে এবং অন্যের কল্যাণ করে নিজের কল্যাণধর্মী পণ্য বিপণনের এক চমৎকার পদ্ধতি। যেমন- দাদা-দাদি থেকে পিতা, নানা-নানি থেকে মাতা, আবার পিতা-মাতা থেকে ছেলে বা মেয়ের জন্ম। উপযুক্ত ছেলেমেয়ে কর্তৃক পিতা-মাতা, দাদা-দাদি ও নানা-নানির ভরণ-পোষণ ও শ্রদ্ধা পাওয়া প্রাকৃতিক অধিকার। অনুরূপভাবে এ পদ্ধতিতে টঢ় ষরহব-উড়হি খরহব থেকে নিয়মতান্ত্রিক অতীত কর্মের ফল পেয়ে থাকেন। দাদা-দাদি, নানা-নানি যেমন তাদের নাতি-নাতনির সাধ্যমতো সেবা করেন, তদ্রূপ টঢ় ষরহব-উড়হি খরহব থেকে কিছু পেতে হলে তাকে ঐবষঢ় করার বর্তমান কাজটুকুও করতে হয়। কারো বা অল্প কর্ম অন্য কারো অধিক কর্মের চেয়ে ফলপ্রদ। এটাকে কর্মবিহীন ফল বলার অবকাশ নেই। আর আল্লাহ তায়ালার প্রজনন পদ্ধতির অনুকরণ দোষণীয় নয়, বরং প্রশংসনীয়; যদি তা অন্য কোনো অবৈধ কর্মের দ্বারা দোষণীয় না হয়_ আল্লাহতায়ালা বলেন- আল্লাহর রঙ আর আল্লাহর রঙের চেয়ে কার রঙ উত্তম? (কোরআন : বাকারা : ১৩৮)। এ পদ্ধতি হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ঘোষণারও অনুরূপ_ যে ব্যক্তি ইসলামে কোনো ভলো ধারা জারি করল, সে তার ফল পাবে এবং ওই ধারায় তার পরে যে বা যারা কর্ম করবে, তার ফলও পাবে (মুসলিম)। অতীত কর্মের ফলে পেনশনের বিধান স্বীকৃত। মৃত্যুর পরও অতীত কর্মের ফল পাওয়া যায়। যেমন হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, মানুষ মারা গেলে তার কর্ম বন্ধ হয়ে যায়; কিন্তু তিনটির (কর্মফল) জারি থাকে_ (তার) চলমান সেবা ও (তার) শিক্ষা দ্বারা যদি উপকার চলতে থাকে এবং সৎ সন্তান যদি তার জন্য দোয়া করে (মুসলিম)।

অতীত সৎকর্মের সুফল বা অসৎকর্মের কুফল পরে বা পরকালে প্রাপ্তির কথা কে না জানে? বড়কে শ্রদ্ধা ও সেবা করা এবং ছোটকে স্নেহ ও কল্যাণ করা তদুপরি উপকারের বিনিময়ে উপকার করা ইসলামের বিধান। হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন_ যে আমাদের বড়কে শ্রদ্ধা করে না এবং আমাদের ছোটকে স্নেহ করে না, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয় (আবু দাউদ)। মহান আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা কল্যাণের প্রতিদান কি কল্যাণ নয়? (কোরআন : আর রহমান : ৬০)। অতীত বিনিয়োগ ও কর্মফল প্রাপ্তি বৈধ বৈ কি? সর্বস্বীকৃত যে, বাড়ি করে ভাড়া পাওয়া, গাছ লাগিয়ে ফল পাওয়া বা পতিত জমি আবাদ করে তার ফল ভোগ করা- অতীত বিনিয়োগ ও কর্মের ফল। হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, কেউ বৃক্ষরোপণ করল, অতঃপর মানুষ বা পাখি তার ফর খেল; এটি তার অনুদান (আহমদ)। কেউ কোনো পতিত জমি আবাদ করল, সেটি তার হবে (আবু দাউদ)। আপসে কারো মাধ্যমে অন্য কারো উপার্জন অবৈধ নয়। হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন- আল্লাহ তোমাদের কাউকে অন্য কারো মাধ্যমে কোনো দিক থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করলে সে যেন তা না ছাড়ে। যতক্ষণ সে তা পরিবর্তন অপছন্দ না করে (ইবনে মাজা)। (অবৈধ না হলে) মুসলমানরা তাদের শর্ত বা চুক্তি মোতাবেক চলতে বাধ্য (আবু দাউদ)। মানুষকে ছেড়ে দাও_
তারা একে অপরের দ্বারা উপার্জন করুক (বায়হাকি)। ইসলামী আইনবিজ্ঞদের জানা বিধি মুআমালাত তথা লেনদেনে বৈধ হওয়া মূল; অর্থাৎ তার বৈধতার জন্য প্রমাণের দরকার নেই বরং অবৈধ বলতে হলে প্রমাণ আবশ্যক।

মোট কথা জুলুম, অত্যাচার, সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, অধিক স্বার্থপরতা, প্রতারণা, অন্যায় দ্বন্দ্ববাজি এবং অহঙ্কার বা শ্রেণীবিদ্বেষ যেমন অন্যায় ও পাশবিকতা, তেমনি একে অপরের সেবা ও কল্যাণ করা ধর্মের মূল বিধান ও মানবিকতা। অন্যকে ঠকিয়ে নিজের অধিক স্বার্থ আদায় যেমন মন্দ কাজ, তদ্রূপ অন্যের কল্যাণ করে নিজের কল্যাণ করা সুবুদ্ধিমান উত্তম মানুষের কাজ। পূর্বসূরিদের কল্যাণ কর্মের ফল যেমন উত্তরসূরিরা ভোগ করে, আবার কল্যাণ প্রাপ্ত উত্তরসূরিদের দ্বারা পূর্বসূরিরা মর্যাদাপ্রাপ্ত ও মূল্যবান হন। ধারাবাহিক বর্ণনাকারীদের কল্যাণে আমরা মহাপবিত্র কোরআন ও হাদিস পেলাম। ধারাবাহিক ছাত্র ও শিষ্যদের কল্যাণে আমরা বিভিন্ন মাজহাবের ইমামরা ও মহাপুরুষদের কল্যাণকর্ম পেলাম। হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন- দীন হচ্ছে (একে অপরের) কল্যাণ করা (মুসলিম)। আল্লাহ বান্দাকে সাহায্য করেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকে (মুসলিম)। উত্তম মানুষ যে, যে মানুষের উপকার করে (ক্ষতি করে না)। স্বজ্ঞানে ক্ষতিকর সুপারিশ করা বা কুপথ দেখানো যেমন অন্যায়, তদ্রূপ কল্যাণকর সুপারিশ করা বা সুপথ পদর্শন উত্তম প্রতিদান পাবার উপযোগী ভালো কাজ।

মহান আল্লাহতায়ালা বলেন_
ভালো সুপারিশকারীর জন্য রয়েছে তার অংশ (কুরআন : নিসা : ৮৫)। হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন_ তোমরা (ভালো) সুপারিশ কর, তার (উত্তম) প্রতিদান পাবে (বুখারি, মুসলিম)।