
১.
আজ আঠারো দলীয় জোটের গণসমাবেশ। ১২ মার্চের সমাবেশ থেকে আজকের কর্মসূচী ঘোষনা করা হয়েছিল। ১২ মার্চ কে কেন্দ্র করে বিরোধী দলের বিশাল গর্জন ছিল। বারবার বলা হয়েছিল তাদের ধারাবাহিক ‘কঠোর’ কর্মসূচীর কথা। অন্যদিকে সরকারের ভীতসন্ত্রস্থ অগণতান্ত্রিক আচরনের প্রেক্ষাপটে সাধারন মানুষ ভেবেছিল আবার হয়তো রাজনৈতিক সংঘাত নতুন গতি পেল। কিন্তু ১২ মার্চের বিশাল সমাবেশ থেকে আঠারো দলীয় জোট নামক অশ্ব ১০ জুনের আল্টিমেটাম আর ১১ জুনের গণসমাবেশের প্যাকেজ ডিম্ব ব্যতীত আর কিছুই প্রসব করতে পারে নাই।
২.
বাংলাদেশের গত দুই দশকের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পর্যালোচনায় দেখা যায় যে কোন রাজনৈতিক দলেরই ধারাবাহিক দীর্ঘ মেয়াদী আন্দোলনের সক্ষমতা নাই। সরকারের মেয়াদ শেষ হবার তিনমাস বাকী থাকতে কঠোর কর্মসূচী দিয়ে জনজীবন বির্পযস্ত করে তোলা হয়। সরকার তার মেয়াদের শেষ তিনমাস রাজনৈতিক অস্থিরতা মোকাবেলায় আর ক্ষমতায় পূণরায় আসীন হবার লজ্জাজনক কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়ে জনসমর্থন হারায়। দীর্ঘ মেয়াদী রাজনৈতিক আন্দোলন করতে না পারার একমাত্র কারণ জনদাবীর প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর অবমূল্যায়ন।
৩.
বর্তমান সরকারের শাসনামলে লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী শেয়ার বাজারে তাদের পূঁজি হারিয়েছে। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সংখ্যা অনেক বেশী। মাননীয় অর্থমন্ত্রী নিশ্চিন্তে বিনিয়োগকারীদের পূঁজি বাজারে বিনিয়োগ করতে বলেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি ইউটার্ন নেন। কুইক রেন্টাল পদ্ধতির বিদ্যুত যে সমস্যার সমাধান অপেক্ষা ফায়দা হাসিলের মাধ্যম তা অনুধাবন করবার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন ছিলনা। বিদ্যুত উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহীর ঘড়ির কাটা আগানো বাড়ানো থেকে দেশদ্রোহী মেথড পর্যন্ত বিভিন্ন ইলাহী কান্ডে জনগন ত্যক্ত বিরক্ত। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি, বিডিআর হত্যাকান্ডের তদন্ত ও বিচারসহ একাধিক বিষয়ে জনমনে ক্ষোভ আছে। এছাড়া দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক গতি এবং জীবনযাত্রার অসহনীয় চাপে জনজীবন জর্জরিত। অথচ বিরোধী দল তথা সাবেক চারদলীয় জোট তথা বর্তমান আঠারো দলীয় জোট এইসকল জনসম্পৃক্ত কোন বিষয় নিয়ে আন্দোলন করে নাই। এই ইস্যুগুলো পরবর্তী নির্বাচনী ভাষণে ব্যবহারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও আন্দোলনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ এইসকল অরাজকতার কুশীলবদের অনেকেই বিরোধীদলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত।
৪।
আঠারো দলীয় জোটের আজকের সমাবেশ হতে যে দলীয় কর্মীরা বিশাল কিছু আশা করছেন তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। কারণ আজকের সমাবেশ হতে 12 মার্চের সমাবেশের মতই একটি প্যাকেজ অশ্বডিম্ব প্রসব করা হবে। কারন সরকারের মেয়াদ আরো দেড় বছর বাকী থাকাকালীন সময়ে জনসম্পৃক্ততাহীন আঠারোদলীয় জোটের অশ্বডিম্ব প্রসব করা ব্যতীত আর কোন কিছু করার ক্ষমতা নাই। সমাবেশ দমনের নামে সরকার এবং পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা আপনাদের অশ্বডিম্ব প্রসবক একটি ভিন্নমাত্রা দিয়েছে। দেশের সাধারন জনগনের উপর প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের একটি এবং তার নেতৃত্বাধীন আরো সতেরটি দলের সম্মিলিত প্রভাব কতটা ক্ষুদ্র তা সহজেই অনুমেয়। বিএনপি তথা চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকাকালে একই দৃশ্য দেখা গেছে চৌদ্দদলীয় জোটের বেলায়। চারদলীয় জোটের শেষ লগ্নে লগি বৈঠার মত কর্মসূচী দিয়ে ভীতি তৈরী করা ব্যতীত চৌদ্দদলীয় জোটের অন্যপথ খোলা ছিলনা।
৫.
আঠারো দলীয় নেত্রী, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে আপনি রাজনীতিতে এসেছেন এবং আপনার একটি আপোষহীন চরিত্র সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু নব্বই পরবর্তী দুই দশকে আপনি আপোষের সাথে বসবাস করছেন। আপনি কি আপোষের বৃত্ত ভেঙে আজ আজ দৃঢ় কন্ঠে উচ্চারণ করতে পারবেন যে, আপনি ক্ষমতায় গেলে আপনার পুত্রদের দূর্ণীতির বিচার করবেন! আপনি কি আজ জামাত’কে ওয়ালাইকুম আসসসালাম বলতে পারবেন! আপনি কি দৃঢ় কন্ঠে সাহস নিয়ে বলতে পারবেন যে, বিএনপি’র সতেরোটা লেজের প্রয়োজন নাই। যদি দলকে জনসম্পৃক্ত করা যায় তবে বিএনপি এককভাবেই আন্দোলন করবার ক্ষমতা রাখে! আপনি কি আপনার দলের বোরখা পরা নেতাদের তিরস্কার করতে পারবেন! যদি না পারেন তবে এই জৈস্ঠ মাসের গরমে দলীয় কর্মীদের কষ্ট দেয়া থেকে নীরব থাকা কি উত্তম নয়!
৬.
চৌদ্দদলীয় জোট এবং সাবেক চারদলীয় (নব্য আঠারোদলীয়) জোটের চক্রে আটকে গেছে জনগন। সাধারন জনতা (যারা কোন দলের অন্ধ অনুগত বা সুবিধাভোগী কর্মী নয়) এই চক্র থেকে মুক্তি চায়। এই মুক্তি চাওয়ার আহ্বান আর দাবী সঞ্চারিত হচ্ছে জন থেকে জনে, নতুন প্রজন্মে।
এই পোস্টটির সাথে সহমত পোষণ করলে লিখাটি শেয়ার করুন।
ফেসবুক আইডি Abu Sayeed Ahamed
হৃদয়ে বাংলাদেশ বলেছেনঃ
অশ্বডিম্বের ব্যপারে আপনার সাথে সম্পূর্ণ একমত। কিন্তু অমিতশালী সরকার, যারা কিনা রাষ্ট্রীয় সমস্ত ক্ষেত্রে তাদের প্রশ্নাতীত নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে, তারা এই বেতো-খোঁড়া-জীর্ন অশ্বকে এতো ভয় পেয়ে যা খুশি তা করছে কেন? জনগন কি দেখছেনা?
আবু সাঈদ আহমেদ বলেছেনঃ
ধন্যবাদ হৃদয়ে বাংলাদেশ।
একদিন তাহাদের অশ্বডিম্ব প্রসবে বাঁধা সৃষ্টি করিয়াছিল আজকের ডিম্ববতি অশ্ব। সুতরাং প্রতিশোধ লইতেই ডিম্ব প্রসবে বাধা সৃষ্টি করা হইতেছে। বিরোধী দলের এই ধরনে কর্মসূচীতে সরকারের অঘোষিত হরতাল মেথড আরো দেখিতে হইবে। সরকার বদলাইবে কিন্তু মেথড বদলাইবেনা, মেথড আরো পুষ্ট হইবে।
সতত শুভ কামনা আপনার জন্য, সকলের জন্য।
জাহেদ-উর-রহমান বলেছেনঃ
সাঈদ ভাই, চমৎকার লিখেছেন। আর আপনার পোষ্টের শেষ অনুচ্ছেদটি বলেছে আসল কথা। আমিও দৃঢ়ভাবে মনে করি এই দুই জোটের বাইরে নতুন কোন রাজনৈতিক শক্তি তৈরি করা না গেলে, এবং সেটাকে ক্ষমতায় আনা না গেলে আমাদের, সাধারণ মানুষের কল্যানের কোন পথ নেই।
প্রসঙ্গতঃ বিএনপির ১২ মার্চের মহাসমাবেশের পর আওয়ামী লীগের ১৪ মার্চের মহাসমাবেশ নিয়ে আমি একটা পোষ্ট লিখেছিলাম, সেটা এখানে যুক্ত করার লোভ সাম্লাতে পারলাম না –
অতঃপর জনগনের ‘ডিম্বপ্রাপ্তি’ হাসিনার পক্ষ হইতেও
আবু সাঈদ আহমেদ বলেছেনঃ
ধন্যবাদ জাহেদ ভাই।
আপনার পোস্টটি পূর্বেই পড়েছি। বৃত্ত ভাঙতে গিয়ে বারবার বৃত্তের কাছে আর ফিরে আসা নয়, বৃত্ত ভেঙে নতুন বৃত্ত তৈরী করা ব্যতীত মুক্তির পথ খোলা নাই।
সতত শুভ কামনা আপনার জন্য, সকলের জন্য।
murad বলেছেনঃ
গত ৪১ বৎসর ধরিয়া ১ দল ১১ দল ১৪ দল ৪ দল আর ১৮ দল সব দল মিলিয়াতো শুধু অশ্ব ডিম্বই প্রসব করিলো। তাহাদের কর্মকান্ডে জনগণের কাছে মুরগীর ডিম্ব, হাসের ডিম্ব কিংবা বাস্তব যে কোনো ডিম্বই এখন অশ্ব ডিম্ব সমতুল্য!!!!!
আবু সাঈদ আহমেদ বলেছেনঃ
ধন্যবাদ মুরাদ ভাই।
ডিম্বকে অনেক তাও দেয়া হইয়াছে, এইবার ডিম্ব ভাঙিয়া পরীক্ষা করিয়া দেখা কর্তব্য যে এই ডিম্ব গ্রহনযোগ্য, ব্যবহারযোগ্য ও স্বাস্থ্য সম্মত কিনা।
সতত শুভ কামনা আপনার জন্য, সকলের জন্য।
শাহরিয়ান আহমেদ বলেছেনঃ
সাঈদ ভাই, অনর্থরে নিয়া অর্থবহ লিখা লিখিয়া কোনও লাভ নাই। যাদেরকে উপদেশ দিবেন তাদের কী উপদেষ্টার অভাব আছে? শুভকামনা আপনার জন্য।
আবু সাঈদ আহমেদ বলেছেনঃ
ধন্যবাদ।
ভাই, ইহা উপদেশ নহে। ইহা সাধারন মানুষের সাধারন কথা। এই সাধারন মানুষ একত্রিত হইলে আবার অসাধারন হইয়া উঠিতে পারে- এই দেশের ইতিহাস তাহাই বলে।
সতত শুভ কামনা আপনার জন্য, সকলের জন্য।
কাজী বলেছেনঃ
বিএনপি একই 33+ শতাংশ ভোট পাবার মত “দল”, তাদের কেন 17 টা লেজ নিয়ে ঘোরা লাগে? বিএনপির দিকে তাকিয়ে অছি কবে মহাসমাবেশ করে ঘোষণা দিবে যে তারা জামাত এর সঙ্গত্যাগ করছে এবং যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার করবে।
একই প্রত্যাশা আওয়ামিলীগের প্রতি, যারা একই 33+ শতাংশ ভোট পাবার মত “লীগ”, কবে এরশাদ আর খুচরা দলগুলো ছেড়ে মহাজোট এর জট থেকে বের হয়ে আসবে।
আমরা জনগণ নাকি এই দেশের মালিক। পুলিশ যখন মার দেয, তখন এই মালিকই মার খাই, রাস্তা আটকালে আমরা আটকাই, হরতাল দিলে আমরা ভূগী। তারপরও দোষ তো আমাদেরই, ভোট আমাদের, আমরা ভোট দেই কার কাছে মার খেতে চাই।
গণতন্ত্র হল আমাদের অধিকার, আমরা নির্বাচন করে বলে দেব কারা আমাদের আগামী বছরগুলো মার দেবে। “ডেমোক্রেসি ইজ আওয়ার ফ্রীডম টু ইলেক্ট আওয়ার ওন ডিকটেটর”।
আবু সাঈদ আহমেদ বলেছেনঃ
৯০এর সামরিক স্বৈরাচার পতনের পর হতে আমরা পাচ্ছি নির্বাচিত দলীয় ও পারিবারিক স্বৈরাচার সরকার। মোটাদাগে তাদের মধ্যে সামরিক আর দলীয় শব্দটা ছাড়া আর কোন পার্থক্য বের করা কঠিন। গণতন্ত্র যেন বিকশিত হয়, গণতান্ত্রিক ধারায় দেশ যেন উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যায় তার জন্য সামরিক স্বৈরাচার সরকার পতনের পরে গণতান্ত্রিক সরকার ছিল এই দেশের সাধারন মানুষের দাবী। কিন্তু নাকের বদলে নরুন পাওয়ার মত সামরিক স্বৈরাচারের বদলে পাওয়া গেল দলীয় স্বৈরাচারের। স্বৈরাচারের পতন ঘটে- এটাই বাস্তব, স্বৈরাচারের পতন ঘটানো যায়- এটাই সত্য।
সতত শুভ কামনা আপনার জন্য, সকলের জন্য।
haider বলেছেনঃ
[ইংরেজি ও রোমান হরফে লেখা মন্তব্য প্রকাশ করা হয় না। বাংলায় মন্তব্য করুন। নাম বাংলায় লিখুন : ব্লগ টিম]
আবু সাঈদ আহমেদ বলেছেনঃ
ধন্যবাদ।
সতত শুভ কামনা আপনার জন্য, সকলের জন্য।
পাগল মন বলেছেনঃ
রাজনৈতিক মতামত দিতে পারছিনা বলে দুঃক্ষিত সাঈদ ভাই I আপনার সব লিখাই তথ্য ভিত্তিক , অনেক ভাল লিখেন আপনি I অনেক চেষ্টা করেও আপনাদের মত লিখতে পারিনা I শুভ কামনা আপনার জন্য I
আবু সাঈদ আহমেদ বলেছেনঃ
ধন্যবাদ পাগল মন শুভ কামনার জন্য।
আপনি যে লিখতে পারেননা এই বিষয়ে আপনার স্বীকারোক্তিতে অবাক হই নাই..” পাগল মন..মন রে…মন কেন এত কথা বলে….”
সতত শুভ কামনা আপনার জন্য, সকলের জন্য।
মাকসুদ বলেছেনঃ
মুরগি ক্ষুদ্রপ্রানী হইয়াও উহার ডিমের দাম যেভাবে লাফাইয়া লাফাইয়া বাড়িতেছে, তাহা দেখিয়া নিশ্চয় ১৮ দলের নেতাদের খেয়াল হইয়াছে অশ্বডিম্ব প্রসব করার, যদি ইহার যথার্থ মূল্য পান?
আর জনগনের কথা বলছেন… সনাতন গণতন্ত্রে এই প্রানীর আবার দাম আছে নাকি ?? পঞ্চবার্ষিকী রাজনৈতিক পরিকল্পনায় এই প্রানীকে একবার মনে করলেই ইহার জন্ম ধন্য হইয়া যায় বৈকি…
Mirza বলেছেনঃ
আবু সাঈদ বিপ্লব এর পর পর প্রতিবিপ্লব এটাই সাভাবিক নিয়ম, কিনুতু আমরা সেটা পাইনি যার ফলাফল আজকের এই রাজতন্ত্র এবং ৪১ বছরে জনগণের প্রাপ্তি = অশ্বের ডিম্ব, তবে আপনাকে ধন্যবাদ সবসময় সুদর লেখার জন্য,
হৃদয়ে বাংলাদেশ বলেছেনঃ
সবাই জেনে রাখুন, পাগল মন লিখতে পারেনা। খামাখা আপনারা হুমড়ি খেয়ে তার ব্লগে ঝাপিয়ে পড়বেন না!