মাহে রমজান: তিন বিত্ত ও ঐতিহ্যের সিন্ডিকেট

এহসানুল করিম
Published : 20 July 2012, 03:28 PM
Updated : 20 July 2012, 03:28 PM

১.
আগামীকাল থেকে পবিত্র রমজান শুরু। রমজান সংযমের মাস। কিন্তু এই মাসে সংযম অপেক্ষা অসংযমই বেশী দৃশ্যমান হয়। সংযমের জন্য যখন সংসারের খরচ কম হওয়ার কথা তখন নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত পর্যন্ত ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। নিম্নবিত্তরা সারা বছর অপ্রত্যক্ষভাবে সংযম পালন করেন। তারা রোজার মাসে সাধ্য অনুযায়ী ইফতার ও সেহেরীতে একটু ভালো খাবার খাবেন এবং এই মাসের দুই চারটা দিন খাবার বিষয়ে সামান্য বিলাসিতা করবেন এতে দোষের কিছু দেখিনা।

২.
মধ্যবিত্ত এবং উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেনীর অধিকাংশই যেভাবে রমজান পালন করেন সে বিষয়ে প্রবল একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন আঁকা হয়ে যায়। রোজার মাসে সংযম অপেক্ষা বিলাসিতা আর স্বাস্থ্য রক্ষার (নিয়মিত ডিম, দুধ, কলা, মাখন, হরলীক্স) তালিকার খাদ্য নিশ্চিত করাটাই তাদের কাছে প্রাধান্য পায়। ঢাকা শহরের চক বাজারের ইফতার বাণিজ্যের মূলক্রেতা মধ্যবিত্ত শ্রেনী। রমজান মাসে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো সঠিকভাবে সংযম পালন করলে বিশাল চাঁপ অনুভব করার কথা নয়। অথচ রমজান মাসে খরচের হিসাব মিলাতে হিমশিম খেতেই যেন তারা বেহিসেবী হয়ে উঠেন।

৩.
আমাদের দেশের উচ্চবিত্ত শ্রেনী (অধিকাংশ)সম্পর্কে কিছু না বলাই উত্তম। কারন তারা সংযম পালন করলেও দেদারসে দেশের সবচাইতে দামী ব্রান্ড শপে বা দেশের বাইরে দিল্লী/সিংগাপুরে ঈদ শপিং করেন। ঈদ শপিং-এর বিষয়ে'তো আর সংযম পালন করতে বলা হয় নাই! অন্যদিকে ঘটা করে একদল গরীব মানুষকে জাকাতের নামে একটা করে শাড়ী বা লুঙ্গি দান সঙ্গে নগদ একশো থেকে পাঁচশো টাকা দান করেন। সার্কসে দড়ির উপর দিয়ে হাঁটা দক্ষ কৌশলীর ব্যালেন্সকে হার মানায় উচ্চবিত্তের সংযম আর বিলাসিতার এই দক্ষ ব্যালেন্স।

৪.
পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই প্রধান ধর্মীয় আচার/উৎসব উপলক্ষে জিনিসপত্রের বিশেষত নিত্যপ্রয়োজনীয় ও খাদ্য দ্রব্যের দাম কমে। দোকানে দোকানে চলে মূল্যহ্রাস। আমাদের দেশে পুরো উল্টো অবস্থা। এই দেশে ধর্মীয় আচার/উৎসব উপলক্ষে কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়াই সকল দ্রব্যের দ্রুত দাম বাড়ে। অবশ্য, গত তিন বছর যাবত নতুন একটা রেওয়াজ দাড়িয়েছে। রেওয়াজ অনুযায়ী রমজান মাসের বিশ থেকে পঁচিশ দিন আগে ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যমন্ত্রীকে নিশ্চিত করে দেন যে রমজানে জিনিসপত্রের দাম বাড়বেনা। ব্যবসায়ীরা তাদের ওয়াদা কঠোরভাবে পালন করেন। তাই রমজানে দ্রব্যসামগ্রীর দাম বাড়েনা, রমজানের পনেরো দিন আগে থেকেই দাম বাড়ে বা বাড়তে শুরু করে এবং বৃদ্ধিপ্রাপ্ত মূল্যই রমজানে বহাল থাকে। রোজার মাসে জিনিসপত্রের দাম কোন ছাড়াই বৃদ্ধি পাবে- এই ঘটনাটি রমজান পালনে বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্য হিসাবে বিবেচিত হতে পারে।

৫.
নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর পরিকল্পিত মূল্য বৃদ্ধির জন্য দায়ী করা হয় সিন্ডিকেট নামক দৈত্যকে। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সিন্ডিকেট ভাঙার কথা বলার পরেও জনগন দেখেছে কিভাবে বারবার সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, বিস্তৃত হয়েছে। বর্তমান সরকারের অন্যতম নির্বাচনী ওয়াদা ছিল সিন্ডকেট নির্মূল করা। গত সাড়ে তিন বছরে সিন্ডিকেট নির্মূল হওয়ার বদলে সিন্ডিকেটের মূল আরো শক্তিশালী ও পরিপুষ্ট হয়েছে। সাধারন মানুষ রমজানে সংযম পালন করবে। জিনিসপত্রের দাম বেশী থাকলে সংযম পালন আরো সহজ হবে। সুতরাং নতুন রেওয়াজ অনুযায়ী সিন্ডিকেটের পয়তাল্লিশ দিনের চরম অসংযমে আদতে সাধারন জনতার ইহলৌকিক ও পারলৌকিক উভয় ক্ষেত্রেই মহা ফায়দা। আসুন প্রান খুলে বলি, ধন্যবাদ সিন্ডিকেট।

—————————————————————–
এই পোস্টটির সাথে সহমত পোষন করলে পোস্টটি শেয়ার করুন

লেখকের ফেসবুক আইডি Abu Sayeed Ahamed