ব্লগার থাবা বাবা হত্যাকাণ্ড: একজন নাস্তিকের মৃত্যুতে একজন আস্তিক বলছি

এহসানুল করিম
Published : 16 Feb 2013, 05:00 AM
Updated : 16 Feb 2013, 05:00 AM

ব্লগার থাবা বাবা, স্থপতি আহমেদ রাজিব হায়দার শোভন এর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি।

কিছুদিন আগে আসিফ মহিউদ্দীনের উপর হামলার পরে বারবার চেয়েছিলাম এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে। আবার আতংকিত ছিলাম ভয়ংকর কিছু না ঘটে যায়- সেই জন্য। সেই ধারাবাহিকতায়ই সম্ভবত খুন হলেন অমিত সম্ভবনাময় ব্লগার থাবা বাবা ওরফে স্থপতি আহমেদ রাজিব হায়দার শোভন। তবে, এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিশাল বিতর্ক তৈরী হবে। কারণ আসিফ মহিউদ্দীনের মতন উনিও ছিলেন নাস্তিক। আমার মতে, নাস্তিকতাও একটা ধর্ম। নাস্তিকতার মূল বিশ্বাস হচ্ছে ধর্মে অবিশ্বাস। কিন্তু ইসলামে অবিশ্বাস মানে কি নাস্তিকতা। আসিফ মহিউদ্দীনের মতন উনিও নাস্তিক নন, ইসলাম বিদ্বেষী মাত্র। তারা নাস্তিক হোক বা ইসলাম বিদ্বেষী হোক- তাদের হামলা করে শায়েস্তা করতে হবে!! তাদের মাথা ফাটিয়ে দিতে হবে!! হত্যা করতে হবে!! কোন যুক্তিতেই এটা সমর্থন করতে পারিনা। একজন মুসলমান হিসাবেই পারিনা।

এই হত্যাকান্ডে সবচাইতে বেশী লাভবান হয়েছে জামাত শিবির। তারা এই হত্যাকান্ড ঘটাতে পারে। ঘটাতে পারে পরিকল্পিতভাবেই। আবার এই হত্যাকান্ডে আরো লাভবান হয়েছে যারা শাহবাগকে মেনে নিতে পারছেনা, যারা চাইছে এবার শাহবাগ ঘরে ফিরে যাক তারা। সুতরাং, এই হত্যাকান্ড তারাও ঘটাতে পারে। আর একটি পক্ষ হল, উগ্র ধর্মান্ধ পক্ষ যারা অনেক আগে থেকেই তার শত্রু। অন্যদিকে, সরকারের আশ্চর্যজনক নীরব ভূমিকার কারনে আজ আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া ছাড়া সাধারন মানুষের দাবী আদায়ের বিকল্প পথ খোলা থাকছেনা। সবমিলিয়ে হিসাব নিকাশে ফায়দা হাসিল করবে তৃতীয় পক্ষ।

এমন ঘটনা আরো ঘটতে পারে। তাই কারা এই ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে সেটা অনুসন্ধান হওয়া প্রয়োজন। টুপি আর পাঞ্জাবী পরলে, দাড়ি রাখলেই রাজাকার বা জামাতের লোক হয় না। অথচ এটা আজ প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। আর এই প্রতিষ্ঠিতকরনে সবচাইতে আন্তরিক ছিল জামাত। কারণ, দাড়ি আর টুপিকে তারা ইসলামের পরিপূরক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে তথাকথিত প্রগতিশীলদের অপার আনুকূল্যে ও কার্যক্রমে। যারা নাস্তিকদের উপর হামলা করছে তাদেরও প্রমাণ করা হবে মুসলমান হিসাবে, মৌলবাদী হিসাবে-এটা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছিনা। কারণ, এর ফলে মুসলমানদের মৌলবাদী হিসাবে চিহ্নিত করা সহজ হবে। এই হামলা আর হত্যার কাজ যারা করছে, তাদের দ্রুত গ্রেফতার দাবী করছি। তারা ইসলামের নামে ইসলামের অবমাননা করছে।

সুতরাং একজন মুসলমান হিসাবে এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নিন। সোচ্চার হন। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের মাধ্যমে ফাঁসির দাবীতে সোচ্চার থাকুন। শাহবাগ আজ সোচ্চার। আপনি নিজেও আজ শাহবাগের অংশ। আপনার সহযোদ্ধার নির্মম হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে নাস্তিকতার আর আস্তিকতার বিভেদ তুলে নীরব থাকবেন না। একজন ব্লগার হিসাবে শুধু নয়, একজন মুসলমান হিসাবে, একজন আস্তিক হিসাবে সোচ্চার হওয়া এবং থাকা আজ সকলের দায়িত্ব।

জয় শাহবাগ…
জয় জনতা…
জয় বাংলা…