করোনাভাইরাস: জরুরী অবস্থায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে হাসপাতাল ফার্মাসিস্টের ভূমিকা

মেহেদী হাসান তানভীর
Published : 12 Jan 2012, 11:11 AM
Updated : 13 April 2020, 03:49 PM

করোনাভাইরাস নামের ভয়াবহ ভইরাসটি সারা বিশ্বকে নাকাল করে ছাড়ছে প্রতিটি জনপদ যেন এক একটি মৃত্যপুরী আমেরিকা ও ইউরোপের সকল দেশই এখন করোনাভাইরাসে বিধ্বস্ত প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় জাতি যখন ভুগছে তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমাদের চিকিৎসক, নার্সসহ সকল স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের জীবন বাজি রেখে লড়ে যাচ্ছেন করোনাভাইরাস মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে

জাতির এই দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে বাংলাদেশ ফার্মাসিস্টস ফোরামের উদ্দোগে এ গ্রেড ফার্মাসিস্টদের ভলান্টিয়ার সংগ্রহের কাজ চলছে ফার্মাসিস্টরা দেশের এই বিপদে সরকারের স্বাস্থ্যবিভগকে সহযোগিতা করতে আগ্রহ কারণ ডাক্তার ও নার্সদের পাশাপাশি ফার্মাসিস্ট থাকলে প্রতিটি হাসাপাতালের স্বাস্থ্যসেবা হবে শক্তিশালীআমাদের দেশের ফার্মাসিস্টরা অত্যন্ত দক্ষ ইউরোপ, আমেরিকার দিকে নজর দিলে দেখা যায় তাদের স্বাস্থ্যসেবা ডাক্তার, ফার্মাসিসস্ট ও নার্সদের সমন্বয়ে পরিচালিত হয় বলেই তাদের স্বাস্থ্যসেবা এতোটা উন্নত ও যুগোপযোগী               

হাসপাতালের ফার্মাসিস্টদের মূল কাজ হচ্ছে ওষুধের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা, অবশ্যই ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে। রোগীকে ওষুধের সঠিক ডোজেস ফরম বুঝিয়ে দেওয়া। ওষুধের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা এবং রোগীদের ওষুধের প্রভাব সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া।

হাসপাতালে অবস্থানকৃত রোগীর রোগের অবস্থা যাচাই করা, পূর্ববর্তী রোগের ধরন ও গৃহীত ওষুধ চিহ্নিত করা, লিপিবদ্ধ করা, ওষুধের প্রতি রোগীর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লিপিবদ্ধ করা, একাধিক ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে "ড্রাগ-ড্রাগ ইন্টারেকশন" যাচাই করা, ধারাবাহিক ওষুধ সেবনে রোগের মাত্রা নিরীক্ষা করা, ভিন্ন ভিন্ন বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করাসহ রোগীর আর্থিক ক্রয়ক্ষমতার দিকে লক্ষ্য রেখে সর্বোচ্চ গ্রহণ উপযোগী, নিরাপদ ও কার্যকর ওষুধ নির্বাচন করা, ওষুধের চার্ট পর্যবেক্ষণ করা, হাসপাতালের ফার্মাসিস্টরা এই চার্টগুলি পর্যবেক্ষণ করে এবং প্রতিটি রোগীকে সঠিক ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে কিনা নিশ্চিত করা ও রোগীদের  কাউন্সিল করা। ট্যাবলেট, ইনজেকশন, মলম বা ইনহেলারসহ বিকল্পগুলির সাথে রোগীর জন্য কোন ধরনের ওষুধের প্রয়োজন তা এ জাতীয় তথ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। ওষুধ কীভাবে পরিচালনা করা উচিত তাও জানাতে হবে।

ভর্তি রোগীর ডিসচার্জের কাজটিও হাসপাতাল ফার্মাসিস্টের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফার্মাসিস্ট  ডিসচার্জের সময় পর্যবেক্ষণ করবেন যে রোগী ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন যথাযথ মেনে ওষুধ সেবন করেছেন কিনা, তা দেখে সঠিক  ওষুধের যথাযথ প্রয়োগে একজন হাসপাতাল ফার্মাসিস্ট আবশ্যক।

ওয়ার্ডের বাইরে, জরুরী বিভাগে হাসপাতাল ফার্মাসিস্ট কাজ করতে পারে, তাহলে জরুরী বিভাগে একজন মুমূর্ষু রোগীর ক্ষেত্রে সঠিক ওষুধের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা সম্ভব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুর রহমান বলেন, "এই সঙ্কটের মুহূর্তে ফার্মাসিস্টরা জাতির প্রয়োজন মেটাতে ওষুধ প্রস্তুত ও সরবরাহ অব্যাহত রাখতে কঠোর পরিশ্রম করছেন। তারা সেখানে  ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। অন্যান্য পেশাজীবীর পাশাপাশি তাদের কাজের জন্য প্রশংসা করা উচিত। ফার্মাসিস্টরা কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য চিকিৎসকদের সাথে হাসপাতালে কাজ করার জন্য প্রস্তুত। এই সঙ্কটের মুহুর্তে ফার্মাসিস্টরা এই পরিস্থিতিটি কাটিয়ে উঠতে দুর্দান্ত ভূমিকা নিতে পারে। তারা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবেও কাজ করতে আগ্রহী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল মুহিত তার মতামতে বলেছেন, "গ্র্যাজুয়েট বা আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে জরুরী স্বাস্থ্যসেবায় অন্তর্ভুক্ত করুন। একজন ফার্মাসিস্ট চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার প্রাথমিক জ্ঞানসমূহ সম্পর্কে অবগত। তবুও প্রয়োজনে চিকিৎসকদের দিয়ে গ্র্যাজুয়েট বা আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের ৭ বা ১০ দিনের প্রশিক্ষণ দিয়ে কম ঝুঁকিসম্পন্ন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা বা ওষুধ প্রদান সম্পর্কিত সেবা বা নতুন ওষুধের ট্রায়ালে নিয়োজিত করা উচিত।"

ফার্মেসি কাউন্সিলের সচিব জনাব মুহাম্মদ মাহবুবুল হক বলছেন, "দেশের এই দুর্যোগের মুহূর্তে চিকিৎসকদের সহযোগিতা করতে প্রয়োজনে প্রশিক্ষণ দিয়ে ভলান্টিয়ার স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে ফার্মাসিস্টদের নিযুক্ত করা যেতে পারে।"

তিনি আশা করে বলেন, "ফার্মাসিস্টরা সফলতার সাথেই ডাক্তারদের পাশাপাশি থেকে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করতে সক্ষম হবেন"

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক শেখ ফিরোজ উদ্দিন আহমেদ এর পরামর্শ হচ্ছে,  "দেশের সকল বিশেষায়িত হাসপাতালে দক্ষ ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের চাহিদা অনুযায়ী মানসম্মত ওষুধ প্রস্তুত ও সংমিশ্রণের জন্য বিশেষায়িত টিমে দক্ষ ফার্মাসিস্টের ও অন্তর্ভুক্ত করা একান্ত প্রয়োজন। এ দূর্যোগ-কালিন সময় দেশের হসপিটাল ফার্মেসিগুলোতে গ্ৰ্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের জরুরি ভিত্তিতে নিয়োগ অথবা ভলানটিয়ার হিসেবে কাজে লাগানো প্রয়োজন।"

এছাড়াও ডাক্তার এবং নার্সদের ওষুধের সঠিক ও নিরাপদ ব্যবহারের শিক্ষা দিতে নিয়মিত সেমিনারের আয়োজন করা। হাসপাতাল হতে প্রাপ্ত রোগী এবং তাদের ব্যবহৃত ওষুধের ইতিহাস এবং তাঁদের সবরকমের তথ্য নিয়ে গবেষণাকর্ম চালানো এবং নতুন কোনো ওষুধ প্রয়োগ করা হলে সেটির সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সে ওষুধের কার্যকারিতা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করা। মূল ফার্মেসি হতে হাসপাতালের বিভিন্ন অংশে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা।

তাই সরকারের স্বাস্থ্যবিভাগের নীতিনির্ধারকদের প্রতি আবেদন, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে হাসপাতাল ফার্মাসিস্টদের অন্তত ভলান্টিয়ার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে হলেও করোনাভাইরাসসহ সকল রোগের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ অগ্রগতি অর্জন করুন