একটি অতি সাধারন রূপকথা

এহসানুল করিম
Published : 3 April 2012, 05:03 AM
Updated : 3 April 2012, 05:03 AM

একদেশে ছিল এক রাজপুত্র। দেশকে সোনার মত গড়িতে হইবে- এই চিন্তায় তাহার ঘুম আসিতনা। সে আপোষহীন রানীমাতার বড় সন্তান। রানীমাতার পাশাপাশি সেও রাজত্ব পরিচালনায় ভূমিকা রাখিতে শুরু করিল। তখন দুষ্টু লোকেরা বলিল বিকল্প প্রশাসন। তাহারা সেই প্রশাসনের নাম দিল বায়ুভবন।

দেশের উন্নয়নের জন্য নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের চিন্তায় রাজপুত্রের ঘুম আর আসেনা। তাহার দেহ ক্ষীনকায় হইতে শুরু করিয়া দিল। অবশেষে রাজপুত্র এক অপূর্ব সমাধান আবিষ্কার করিতে সক্ষম হইলেন। সেই মহা আবিস্কার বাস্তাবায়নের জন্য সর্বাত্নক মনোনিবেশ করিলেন। মহত কাজ নিজের ঘর হইতেই শুরু করিতে হয়। রাজপুত্র নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের জন্য তাহার বন্ধুদের খাম্বা উৎপাদন ও সরবরাহের কাজে নিযুক্ত করিয়া দিলেন। নিন্দুকেরা বলিল, ইহা স্পষ্টত দূর্নীতি। বিদ্যুত উৎপাদনের নাম নাই, রাজ্যের টাকায় শুধু শুধু খাম্বা কেনা অন্যায়। কিন্তু বাজে লোকের মন্দ কথায় খাম্বা কেনা বন্ধ হইবে কেন! বরঞ্চ বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনায় খাম্বা কেনা অব্যাহত রহিল।

নিয়তি অন্য কথা লিখিয়া রাখিয়াছিল। নিয়তির লিখনে রাজত্বে পরিবর্তন আসিল। রাজপুত্র অপবাদ লইয়া দেশান্তরী হইলেন। নতুন রানীমাতা আসিলেন। রানীমাতা কহিলেন তিনি দ্রুত নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের ব্যবস্থা করিয়া দিবেন। রানীমাতার বুদ্ধি ভান্ডার টেকোমাথার বিদ্যুত এক মহাপণ্ডিত বলিলেন, এখন হইতে সকাল এক ঘন্টা আগে শুরু করিলেই নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ পাওয়া যাইবে। এই নিয়মে এগারোটার সময়ই বারোটা বাজিতে শুরু করিল বটে কিন্তু বিদ্যুত পাওয়া গেল না। মূর্খ জনগন বলিল, পন্ডিতকে ভীমরতিতে ধরিয়াছে। কিন্তু রানীমাতা এই পন্ডিতের উপর পূর্ণ আস্থা রাখিলেন।

রাণীমাতার আস্থার প্রমাণ দিতেই অনেক হিসাব কষিয়া বিদ্যুত পন্ডিত কহিলেন, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের জন্য কুইক রেন্টাল পদ্ধতি হইলো সর্বোত্তম দাওয়াই। রাজ্যের টাকা দিয়া কু্ইক রেন্টাল দাওয়াই কেনা হইতে লাগিল। কিন্তু অসুখ সারিলনা। বাস্তব অবস্থা এতটাই সংগীন হইয়া দাড়াইলো যে, রানীমাতার শুভাকাংখীরা পর্যন্ত প্রকাশ্যে কহিতে লাগিলেন বিদ্যুত উৎপাদন হইতেছে বটে কিন্তু সেই বিদ্যুত কোথায় যাইতেছে! পন্ডিত আর তোষামোদকারীরা কহিতে লাগিল, বিদ্যুত উৎপাদন হইতেছে আর সরকারও বিদ্যুত কিনিতেছে। কিন্তু দেখার মত চোখ না হইলে সেই বিদ্যুত উলঙ্গ রাজার বস্ত্রের মতই দৃশ্যমান হইতেছেনা। ইহা বিদ্যুতের দোষ নহে, ইহা দৃষ্টির রোগ বিশেষ। তবে সাধারন জনতা ভাবিতে লাগিল কুইক রেন্টাল পদ্ধতি বুঝি এক প্রকারের খাম্বা বিশেষ।

নতুন রানীমাতা একা সিংহাসনে বসিয়াছেন। কিন্তু তাহার সাথে অসংখ্য অন্ধ অনুগত পন্ডিতকে সম্পৃক্ত করিয়া লইয়াছেন । রানীমাতার স্বপ্ন আর ইচ্ছা বাস্তবায়নে রানীমাতার পুত্র ও ভগ্নীও চুপ করিয়া বসিয়া থাকিলেন না। রানীমাতার পাশাপাশি রানীমাতার পুত্র ও ভগ্নি রাজত্ব পরিচালনায় ভূমিকা রাখিতে আরম্ভ করিয়া দিলেন। দুষ্টু লোকেরা কহিতে লাগিল টেকো মাথার বিদ্যুত পন্ডিত রানীমাতার ভগ্নি ও পুত্রের যোগসাজশে কুইকরেন্টাল নামক খাম্বা বিশেষের বাণিজ্য বন্টনে লাভবান হইবার কারনেই বিদ্যুতের এই বেহাল দশা। দুষ্টু লোকেরা রানীমাতার ভগ্নির কল্যাণে ফক্কর খান আর আবুল হোসাং নামক দুই উজিরকেও ইতোমধ্যে চিনিতে পারিয়াছিল। তখন দুষ্টু লোকেরা আবার কহিতে শুরু করিল বিকল্প প্রশাসন। তাহারা সেই প্রশাসনের নাম দিল বেহানা ভবন।

দুষ্টু লোকেদের বিশ্বাস করিতে নাই। তাহারা সর্বময় শুধু খাম্বাই দর্শন করে আর যথাস্থানে খাম্বা প্রদানের অশ্লীল ভাবনায় মত্ত থাকে। আশার কথা হইলো, সকলে দুষ্টু লোক নহে। ভালো লোকেরা দুই রানীমাতা আর তাহাদের পুত্র, কণ্যা, ভগ্নিদের দীর্ঘ জীবন কামনা করিয়া থাকে। বিদ্যুতহীন সন্ধ্যায় রমনীরা তেলের কুপি জ্বালাইয়া কাজল বানায়। সেই কাজল দ্বারা ভালো লোকেরা শুধু রানীমাতাদ্বয়কেই নহে, তাহাদের পুত্র-কণ্যা ও ভগ্নিদের কপালেও কাজলের টিপ লাগাইয়া দেয়। যেন কাহারো নজর না লাগে।

অফপিক:
ইহা একটি অতি সাধারন রূপকথামাত্র। আজ সন্ধ্যায় টানা চার ঘন্টা বিদ্যুত ছিলনা। বিদ্যুতের এই চিরন্তন স্বাভাবিক প্রস্থানে গল্পটি আমার চার বছরের পুত্র সন্তানকে আজ শুনাইয়াছি। যেন বড় হইলে এইসব বিষয়ে তাহার বিস্ময় না জন্মে, কোন প্রশ্ন তাহাকে তাড়িত না করে।