“শিক্ষা আইন-২০১৬” এর খসড়া প্রণয়ন ও কিছু ‘অপ্রাসঙ্গিক’ প্রশ্নের অবতারনা

এম.এ.সাঈদ শুভ
Published : 27 Oct 2016, 04:32 PM
Updated : 27 Oct 2016, 04:32 PM
সম্প্রতি "শিক্ষা আইন-২০১৬" এর খসড়া প্রণয়ন করেছে শিক্ষা মন্ত্রনালয়। আইনটির ধারা-৩ এর উপধারা ২ অনুযায়ী, "প্রাথমিক শিক্ষা হইবে প্রথম শ্রেণী হইতে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত।" ধারা ৭ এর উপধারা ১ অনুযায়ী, "মাধ্যমিক শিক্ষার স্তর হইবে নবম হইতে দ্বাদশ বর্ষ পর্যন্ত চার বছর মেয়াদি।" আমার ধারনা, শিক্ষা মন্ত্রনালয় বা শিক্ষাবিদরা হয়তো অনেক ভাবনা চিন্তা করেই এই আইনের খসড়া প্রণয়ন করেছেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়েই হয়তো বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। কিন্তু অামার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা বা অজ্ঞতার কারনে হয়ত এখনো বিষয়গুলো জানা হয় নি! সেই সীমাবদ্ধতা থেকে আমার মনে কয়েকটি প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। হয়তো প্রশ্নগুলো বড্ড 'অপ্রাসঙ্গিক' আবার প্রাসঙ্গিকও হতে পারে। তারপরও প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে ইচ্ছে করছে।
প্রথমত, যেহেতু প্রচলিত প্রাথমিক শিক্ষার স্তর প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত অার মাধ্যমিক শিক্ষার স্তর ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত, সেক্ষেত্রে যদি ধরে নিই বর্তমান প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোই এই আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান করাবে আর মাধ্যমিক স্কুলগুলো অষ্টম থেকে দ্বাদশ বর্ষ পর্যন্ত পাঠদান করাবে। এ অনুযায়ী, সম্পূর্ন নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচীও প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে আমার প্রশ্ন হলো, বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক যাঁরা রয়েছেন তাঁরাই কি থাকবেন না এখানে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদানের জন্য নতুন করে আরো শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে?
আমার জানামতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গাণিতের বা ইংরেজীর অনেক শিক্ষক রয়েছেন যাঁরা ষষ্ঠ, সপ্তম বা অষ্টম শ্রেণীর গণিত বা ইংরেজী পাঠদান করাতে সম্পূর্ন অক্ষম। সেক্ষেত্রে কি হবে? পুরো পাঠ্যসূচী নতুন করে প্রণীত হবে? না কি অন্য কিছু? আবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্ট্যাটাস তখন কি হবে? আর বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যে শিক্ষক স্বল্পতা রয়েছে সেটি রাতারাতি কিভাবে পূরন করা হবে? রাতরাতি হাজার হাজার নিয়োগ প্রদান করে?
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুযায়ী প্রতি ৩০ জন ছাত্রের বিপরীতে ১ জন শিক্ষক থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে যদি গড়ে প্রতিটি স্কুলে যদি ৮০০ জন শিক্ষার্থী থাকে তাহলে প্রায় ২৬ জন করে শিক্ষক লাগবে। এখন অনেক বড় বড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪/৫ জন করে শিক্ষক রয়েছেন। আবার যদি বর্তমানে যাঁরা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন তাঁদের মধ্যে যাঁরা ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীতে পাঠদান করান তাঁদেরকে কি প্রাথমিক স্তরে নামিয়ে আনবেন? আনলে কাদেরকে আনবেন? কিভাবে আনবেন? সেক্ষেত্রে তখন শিক্ষকদের স্ট্যাটাস কি হবে?
দ্বীতিয়ত, নতুন আইন অনুযায়ী মাধ্যমিক পর্যায়ে যাঁরা পাঠদান করান তাঁদেরকে একাদশ-দ্বাদশ বর্ষেও পাঠদান করাতে হবে। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকগনই কি একাদশ-দ্বাদশ স্তরে পাঠদান করাবেন না কি বর্তমান উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষকদের মাধ্যমিকের সাথে একীভূত করা হবে? সেটা যদি করা হয় তাহলে সেক্ষেত্রে ঐ শিক্ষকদের স্ট্যাটাস কি হবে? বর্তমান আইন অনুযায়ী, কলেজগুলোর কি হবে যে কলেজগুলোতে শুধুমাত্র একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো হয়? এই সমস্ত কলেজগুলো কি বিলুপ্ত হয়ে যাবে? বিলুপ্ত হয়ে গেলো ঐ সমস্ত কলেজগুলোর শিক্ষকগন কে কোথায় যাবেন? কিভাবে সমন্বয় করা হবে এ বিশাল কর্মযজ্ঞের?
আমার ধারনা, শিক্ষামন্ত্রনালয় বা এই আইনের খসড়া প্রণয়নের সাথে জড়িত ব্যক্তিগণের কাছে হয়তো এই প্রশ্নগুলোার উত্তর রয়েছে। কিন্তু এই উত্তরগুলো হয়তো এখনো আমাদের কাছে এসে পৌঁছে নি! আমি মনে করি এই প্রশ্নগুলো বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষের। আমার প্রত্যাশা হলো, এই আইন পাশ করার আগেই এই প্রশ্নগুলোসহ আরো প্রাসঙ্গিক অনেক প্রশ্নের উত্তর জনগনকে জানানোর ব্যবস্থা করা গেলে আইনটি কার্যকর করতে সুবিধা হবে। (…চলবে)
এম.এ. সাঈদ শুভ
গবেষক
ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
ইমেইলঃ sayeedlaw@gmail.com