শেখ হাসিনা এবং সু চি – পার্থ্ক্যটা কোথায়?

সাজ্জাদ রাহমান
Published : 14 Sept 2017, 05:10 AM
Updated : 14 Sept 2017, 05:10 AM

১৬ কোটি বাঙালির আশা-আকাঙ্খার মূর্ত-প্রতীক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আজ বিশ্বের নিপীড়িত, লাঞ্চিত মানবতার ভরসাস্থলে পরিণত হয়েছেন। চীন, রাশিয়া, ভারতের মতো বিশাল রাষ্ট্রগুলোর অধিপতিরা যখন মিয়ানমারের সামরিক জান্তা কর্তৃক  মানবতার বিরুদ্ধে করা অপরাধ সংঘঠিত হওয়া সত্বেও সামান্য ব্যবসায়িক হীন স্বার্থে মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন, তখন বাঙলার এক দুঃখিনী রাজকন্যা তাঁর সৎ বিবেচনাবোধকে কলুষিত হতে দেননি, তার বিবেক কেঁদে উঠেছে নিরন্ন, অসহায়, আর্তপীড়িত লক্ষ-লক্ষ রোহিঙ্গা জনতার আহাজারিতে।


একদা সমগ্র বিশ্বের মানুষ যখন অং সান সুচির কারামুক্তিকে স্বৈরতন্ত্রের বিপক্ষে গণতন্ত্রের মুক্তির প্রতীক বলে ভেবেছিলো, যাকে শান্তিতে নোবেল প্রদান করা হয়েছিলো। বিশ্ব দেখছে, আমাদের সকলকে বোকা বানিয়ে সেই নারী আজ ইতিহাসের জঘন্নতম হত্যাকান্ডে লিপ্ত। যে সেনাতন্ত্রের বিরুদ্ধে তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছিলেন(?), সেই সেনাদের লেলিয়ে দিয়ে তিনি রক্তের হোলিখেলায় মেতে উঠেছেন। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী হায়েনার তাড়নায় প্রাণভয়ে ছুটে আসা সহায় সম্বলহীন রোহিঙ্গাদের বুকে জড়িয়ে ধরছেন। তাদের আশ্রয় দিচ্ছেন, খাবার দিচ্ছেন, চিকিৎসা দিচ্ছেন। জানিনা পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা আর ঘটবে কীনা, এমন নারীর জন্ম হবে কীনা। প্রার্থনা করি যুগে যুগে শেখ হাসিনার জন্ম হোক, আর সু চির মতো নারীদের বিনাশ হোক, মানবতার জয় হোক। অং সান সু চিকে আজ বলতে ইচ্ছে করে- 'চেয়ে দ্যাখ- তুমি একটা দেশ শাসন করছো, আমাদের শেখ হাসিনাও একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী। পরিস্কার একটা রেখা টানলে তুমি, চরমতম বর্বরতার সাক্ষর রেখে যাচ্ছো আর আমাদের নেত্রী শিক্ষা দিচ্ছেন- পরমতম মানবতা, মূল্যবোধ, ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ।

আমাদের দেশেও দুষ্কৃতিকারী আছে, কিন্তু তাই বলে আমরা ২/১ জনের জন্যে পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দেইনা কিংবা দুষ্কৃতিকারী ছাড়া আমাদের গুলিতে একজন সিভিলিয়ান নিহত হয়না। এটাই আমাদের নেত্রীর শিক্ষা। আমাদের দেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলিম কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাস করে, এখানে যখনি কোনো সংখ্যালঘু আক্রান্ত হয়, তখন পুরো প্রশাসন তাদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর তোমরা সংখ্যাগুরু সিভিলিয়ান এবং প্রশাসন মিলে সংখ্যালঘুদের নিধনযজ্ঞে নেমে পড়। তোমার বাবা অং সান তোমাকে গণতন্ত্রের জন্যে লড়াই করতে শিখিয়েছিলেন, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুও তাঁর প্রিয় কন্যাকে শোষিতের পক্ষে দাঁড়ানোর শিক্ষা দিয়েছিলেন। চেয়ে দ্যাখো, কে তার বাবার শিক্ষাটা কাজে লাগাতে পেরেছে। তুমি তোমার দেশের সংখ্যালঘুদের নির্মূল করে সংখ্যাগুরুদের বাহবা কুড়াতে চাও, আর আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে সংখ্যাগুরু কিংবা সংখ্যালঘুর কোনো পার্থক্য বোঝেন না। তিনি বোঝেন মানুষ।

কারণ তোমার বাবা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সেনাবাহিনীর হাতে জীবন দিয়েছিলেন আর তুমি জেল থেকে ছাড়া পেয়েই সেনাদের সাথে আপোষকামিতায় মেতেছো। তুমি রাষ্ট্রপ্রধান পর্যন্ত হতে পারোনি, যার কানাকড়ি ক্ষমতা আছে কীনা এই মুহুর্তে আমাদের যথেষ্ঠ সন্দেহ হচ্ছে। তুমি একজন মানুষ কীনা সে বিষয়েও আমাদের ঘোরতর সন্দেহ! ধিক তোমার মানব জনম। চেয়ে দ্যাখ- তোমাকে একদিন যারা নোবেল দিয়েছিলো তারা আজ দেয়ালে মাথা ঠুকছে। কারণ তোমার কারণে নোবেল নামক বিষয়টির গুরুত্ব আজ ধুলোয় লুন্ঠিত। চেয়ে দ্যাখো তোমার দেশের লাখো অসহায় নর-নারীকে বুকে টেনে নিয়ে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পৃথিবীর তাবৎ মানুষ শেখ হাসিনার স্তবগান করছে, আর তোমার কুশপুত্তলিকায় মিলছে ঘৃণা।

এখনও সময় আছে তোমার নাগরিকদের তুমি স্বসম্মানে ফিরিয়ে নাও, যারা নির্বিবিচারে গণহত্যা, লুন্ঠন, ধর্ষণের সাথে যুক্ত, তাদের বিচার কর। তা নাহলে তোমার জন্যে অপেক্ষা করছে করুণ পরিণতি। যুগে যুগে হিটলার, মুসোলিনি, মেলোসভিসের মতো মানবতার বিরুদ্ধে অপরা্ধীরা রেহাই পায়নি। অং সান সু চি তুমিও রেহাই পাবেনা।

আর আমাদের নেত্রী শুধু বাঙলার ষোলকোটি মানুষের নয়নমনি শুধু নয়, তোমার ১৫ লাখ রোহিঙ্গার বুকে আশার আলো হয়ে দেখা দিয়েছে, জায়গা করে নিয়েছে সমগ্র পৃথিবীর মানবতাপ্রেমী সহস্র-কোটি গণ-মানুষের অন্তরের অন্ত:স্থলে, মানবতার যুগশ্রেষ্ঠ্ প্রতীক এবং পরম শ্রদ্ধার দেবী মূর্তি হয়ে।