নোবেল পাইনি তো কি হয়েছে, নোবেল দিবো..

সাজ্জাদ রাহমান
Published : 9 Oct 2017, 07:56 PM
Updated : 9 Oct 2017, 07:56 PM

০৬ অক্টোবর'১৭ তারিখটি ছিলো আমাদের জন্যে একটা গ্রেট আপসেটের দিন। একটা আশায় বুক বেঁধেছিলো বাঙালি জাতি, কিন্তু সেটা পূরণ হয়নি। এই ঘটনায় আমাদের দেশের একটি রাজনৈতিক দল এবং তাদের দোসররা কিন্তু খুব খুশী, তারা পারলে কয়েকশ গরু জবাই দিয়ে জেয়াফত দেয় কিংবা কয়েকশ মন মিষ্টি বিতরণ করে। সংবাদটি শোনার পর যখন হতাশা ব্যক্ত করে ফেসবুকে স্টাটাস লিখি, তখন আমার কয়েকজন বিডি নটোরিয়াস পার্টি সাপোর্টার বন্ধু টিটকেরি না করে ছাড়েনি।

যেহেতু সংবাদমাধ্যমে কাজ করি, খবরটি ৫ তারিখ রাতেই পেয়ে গিয়েছিলাম। আর তখন থেকেই মনটা বিষন্ন। যার কাছ থেকে খবরটা পেলাম, লক্ষ্য করলাম। তাকে বেশ উৎফুল্ল দেখাচ্ছে, রিতিমতো আনন্দে তার দুই চোখ চকচক করছে। আর নিজের অজান্তেই আমার চোখের কোণা ভিজে গেলো, মনে সাহস কমে গেলো, একধরণের হতোদ্যম হয়ে পড়লাম। তাকে কি করে বোঝাবো- শেখ হাসিনা নোবেল পেলে জয় হতো বাঙালির, বাংলাদেশের, আর বিশ্ব মানবতার।

ঘোষণার অনেক আগে থেকে বিভিন্ন অসমর্থিত সূত্রে জানতে পেরেছিলাম- এবার শান্তিতে নোবেল পাওয়ার জন্যে যারা বা যেসকল প্রতিষ্ঠান মনোনীত হয়েছিলো, তার মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জার্মানীর চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মার্কেল এবং পরমাণু অস্ত্র বিরোধী সংগঠন কাই। এর মধ্যে এও শোনা যাচ্ছিলো যে- যৌথভাবে প্রাইজটি পাচ্ছেন শেখ হাসিনা এবং এঞ্জেলা মার্কেল। কিন্তু নোবেল কমিটি সারা বিশ্বের কয়েকশ কোটি মানুষকে হতাশ করে অখ্যাত. অজনপ্রিয় আইক্যানকেই বেছে নিলো। এর পেছনে যুক্তি হিসেবে নোবেল কমিটি কি ব্যাখ্যা দিয়েছেন আমি জানিনা, তবে আগে থেকেই আমার মনে কিছু আশঙ্কা দানা বেঁধে উঠেছিলো।
যার একটি- শেখ হাসিনা একজন মুসলিম দেশের মুসলমান প্রধানমন্ত্রী। নোবেলের ইতিহাসে বরাবরই যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও মুসলিমদের অবহেলা করা হয়েছে, হাতে গোনা কয়েকজন মুসলিম ব্যক্তি এই পুরস্কারটি পেয়েছেন। দ্বিতীয়তঃ তিনি ৩য় বিশ্বের নাগরিক, যাদেরকে সাদা চামড়ার লোকজন বরাবরই হীন চোখে দ্যাখে। চতুর্থতঃ শেখ হাসিনা যাতে পুরস্কারটি না পায়, সে জন্যে আমাদের দেশের একজন নোবেলিস্ট এবং তার চক্রের অপ তদবীর। অনুসন্ধান করলে জানা যাবে ইতোমধ্যেই হাসিনা বিরোধী কয়েক হাজার চিঠি নোবেল দপ্তরে পৌঁছে গেছে। যেমনটি তারা পাঠিয়েছিলো বিশ্বব্যাংকে, পদ্মা সেতুতে আওয়ামীলীগ সরকারকে যেন ঋণ দেওয়া না হয়।

একের একের পর বিভিন্ন বিষয়ে নোবেলের খবর আসছে আর আমরা যখন বুক বেঁধে আছি কখন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হবে, তখন আমাদের দেশে প্রধান বিচারপতির ছুটিকে কেন্দ্র করে বিগ নটোরিয়াস পার্টির কিছু নেতা ও আইনজীবী মিলে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরী করলো, যেন তারা বিশ্বকে বলতে চেয়েছিলো যে- শেখ হাসিনা কোনভাবেই নোবেল পেতে পারেননা, কারণ তিনি দেশের প্রধান বিচারপতিকে প্রতিহিংসা বশতঃ ছুটি নিতে বাধ্য করেছেন, গৃহবন্দী করেছেন এবং জোরপূর্বক বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।

ওইসব নেতাদের হিংসায় আরক্তিম গাল আর সুপ্রীম কোর্ট জুড়ে লাফালাফি করা আইনজীবীদের নেতার মুচকি হাসিই বলে দিচ্ছিলো- এই চোটপাটের পুরোটাই ছিলো উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

তাদের অবস্থা দেখে ছেলেবেলায় গ্রামের বাড়ির উঠোনের একটি পারিবারিক শালিশের কথা মনে পড়ে গেলো। সেদিন, যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ একটা পারিবারিক ঝামেলা নিয়ে বাড়ির মুরুব্বীরা উঠোনে বিচার শালিশে বসেছিলেন। খুব গভীর এবং উদ্বেগপূর্ণ ছিলো সেই আলোচনা। সেখানে বিচারকর্তা ছিলেন আমার বৃদ্ধ দাদা সুলতান আহমেদ হাওলাদার। এক পর্যায়ে দেখা গেলো শালিশ সভার আশে পাশে বাড়ির বাচ্চারা খেলতে গিয়ে এমন শোর চিৎকার আর হট্টগোল শুরু করলো যে, মুরুব্বিরা কেউই কারো কথা শুনতে পাচ্ছিলেননা। এই যখন অবস্থা তখন দাদা রেগে গিয়ে একজনকে ডেকে বললেন, 'এরে.. ওগ্গা চিওন (চিকন) চিবা (বাঁশের কঞ্চি) ল চাই, আর এগুনের হোঁদের (পাছার) উপর কড়াইশ কড়াইশ করি বাড়ি দে।'

সমগ্র জাতি যখন গভীর উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা নিয়ে নরওয়ের অসলোর দিকে তাকিয়ে আছে, তখন বিগ নটোরিয়াস পার্টির এই শোর চিৎকারকে আমার কাছে ওই অপরিনামদর্শী এবং নির্বোধ বাচ্চাদের কথাই মনে করিয়ে দিয়েছিলো। আর ইচ্ছে করছিলো দাদার হুকুম মতো 'চিওন চিবা দি এদের পাছার উপর কড়াইশ কড়াইশ করি বাড়ি দি'।

যে কোনো কারণেই হোক নোবেল পুরস্কার থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু পণ করেছি বাকি জীবনে ওই নোবেলের প্রতি ঘুরেও তাকাবোনা, স্বপ্ন দেখছি নোবেল দেয়ার।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব রাখবো, আসুন এই বছর থেকেই আমরা একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তণ করি, যার শিরোনাম হবে 'বঙ্গবন্ধু এওয়ার্ড।' প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শোষিত-বঞ্চিত সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে যারা বা যেসকল প্রতিষ্ঠান কাজ করবে কিংবা সোচ্চার থাকবে, তারাই এই পুরস্কারে ভূষিত হবে। বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন থেকেই এই পুরস্কার প্রবর্তন করা যেতে পারে। এই নীরিখে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক জুরি বোর্ড গঠন করা যেতে যারা বিশ্বের সেইসব মানবতাবাদী মানুষদের খুঁজে বের করা হবে, যারা আক্ষরিক অর্থেই উপরোক্ত এওয়ার্ড পাওয়ার যোগ্য। জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে সেই পুরস্কার দেয়া হবে এবং প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনোরকম প্রভাব, লবিং, জাত-ধর্ম বিচার করা হবেনা।

আর আমি মনে করি শেখ হাসিনা শান্তিতে নোবেল না পাওয়াতে এক দিক দিয়ে ভালোই হয়েছে, কারণ এখন আর তাঁর কোনো দায় থাকলোনা। এখন থেকে দেশে-বিদেশে যে-ই অশান্তি কিংবা গন্ডোগোল সৃষ্টি করতে চাইবে তাকে 'চিকন চিবা দি কড়াইশ কড়াইশ করে বাড়ি দেওয়া যাবে।'

লেখকঃ গণমাধ্যম কর্মী।