ঋণ নয় জীবন থেকেই মুক্তি নিলেন দরিদ্র কৃষক সিরাজ মিয়া

সাজ্জাদ রহমান
Published : 19 March 2012, 10:09 AM
Updated : 19 March 2012, 10:09 AM

ঋণ মুক্ত হতে চেয়েছেন সম্ভব হয়নি। ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি না পেয়ে অবশেষে জীবন থেকেই মুক্তি নিতে হয়েছে এক হতভাগ্য দরিদ্র কৃষককে। জীবন যুদ্ধে হেরে গিয়ে আত্মহত্যা করতে হয়েছে এ কৃষককে। লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা চরফলকন গ্রামের দরিদ্র কৃষক সিরাজ মিয়া (৪৫) কৃষি কাজ করে জীবিকা ‍নির্বাহ করতেন। তার কোনো জমি ছিলো না। নিজের জমি না থাকায় অন্যের জমিতে নানান শর্তে দার-দেনা করে ফসল চাষ করতেন। গত কয়েক বছর থেকে প্রতি মৌসুমে তিন একর জমিতে চাষাবাদ করে আসছেন কৃষক সিরাজ মিয়া। শর্ত মতে উৎপাদিত ফসলের অর্ধেক জমির মালিককে দিয়ে বাকি ফসল নিয়ে কোনো মতে সংসার চলছিল তার। কিন্তু পর পর তিন মৌসুম অতিবৃষ্টি কখনো অনাবৃষ্টি ও পোকার আক্রমণে প্রত্যাশিত ফসল ঘরে তোলতে পারেনি কৃষক সিরাজ মিয়া। এতে তাকে অনেক টাকা লোকসান গুনতে হয়ে। ফসল চাষ করতে তাকে ঋণ করতে হয়েছে এনজিও কোডেক, গ্রামীণ ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক ও মহাজনের কাছ থেকে। লক্ষাধিক টাকার ঋণ তার ওপর চেপে বসে। একাধিকবার ফসল হারিয়ে সিরাজ মিয়ার ঋণের বোঝা বেড়ে যায়। ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন কৃষক। এনজিও'র ঋণের কিস্তি দিতে না পারায় কয়েক ‍দিন ধরে তিনি মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। ঋণদাতার চাপ ও অপমানের ভয়ে গত ১৪ মার্চ বুধবার রাতে সবার অজান্তে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন সিরাজ। এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ ১৮ মার্চ রোববারের দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে ।

(নয়াদিগন্ত পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদটির শিরোনামের কিছু অংশ এবং ওই সংবাদ থেকে কিছু তথ্য নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া আমি চরফলকন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এএনএম আশরাফ উদ্দিনের সাথে আলাপ করে আরও প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে এ লেখাটি লিখেছি)।

এমন ঘটনা প্রায়ই আমাদের দেশে ঘটে। কিছু কিছু ঘটনা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। আবার অনেক ঘটনাই অপ্রকাশিত থেকে যায়। এসব ঘটনা সত্যি খুবই কষ্টের। এদেশের দরিদ্র কৃষকরা যারা পরের জমিতে বর্গায় চাষ করে তারা কত কষ্টে আছে তা আর বুঝার বাকি নাই। দ্রব্যমূল্য লাগামহীন বেড়ে চলা। সার কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধি। সহজ শর্তে কৃষি ঋণ না পাওয়া। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলহানি এবং দিন দিন ঋনের বোঝা বাড়তে থাকায় দরিদ্র কৃষকরা হতাশ। আবার কষ্টের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে এদেশের কৃষকরা এখন দিশেহারা। এসব কারণে দরিদ্র কৃষকরা দিন দিন আরও দরিদ্র হচ্ছে। ঋণের চাপে তারা চিরমুক্তির জন্য আত্মহত্যা পথ বেঁচে নিচ্ছে। অথচ এদেশের দরিদ্র মানুষগুলো দুর্বলতাকে পুঁজি করে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রধান দুই দল একাধিক বার ক্ষমতায় এসেছে কিন্তু দরিদ্র মানুষগুলো দরিদ্র রয়ে গেছে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। পরিবর্তন হয়েছে ওদের ভাগ্যের যারা এখন চোখে দেখে না; অসহায়দের কান্না কানে শোনে না। ওরা আবার ক্ষমতায় আসতে চায়। ক্ষমতায় থাকতে চায়।