স্বামী নিগমানন্দের আত্মত্যাগ এবং বাঙলাদেশের নদী দূষণ

শনিবারের চিঠি
Published : 16 June 2011, 12:35 PM
Updated : 16 June 2011, 12:35 PM

সমাজ-সভ্যতার সাথে আমাদের জীবন সংসার অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। আমাদের চারপাশের পরিবেশ আমাদের জীবন ধারণের জন্য আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য কিছু উপাদানের মধ্যেই পড়ে। কিন্তু ওই যে, বায়ুর সমুদ্রে থেকে যেমন ভুলে যাই বায়ুর কথা- তেমনি আমরা আমাদের বেঁচে থাকার এই যে সহায়ক পরিবেশ- তার মধ্যে থেকেও ভুলে যাই আমাদের অস্তিত্ব রক্ষাকারী এই পরিবেশকে।

কিন্তু সবাই তো আমাদের মতো নন, কিছু মানুষ আছেন- যাঁরা আত্মবিস্মৃত নন, তাঁরা জানেন বেঁচে থাকার জন্য এই পরিবেশের মূল্য কী। কীভাবে এই পরিবেশ আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে আপন সন্তানের মতোন। কিন্তু মায়ের প্রতি আমরা কেমন আচরণ করি? আমাদের নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য আমরা যারপর নাই ব্যস্ত। নিজের হাতেই ক্রমাগত ধ্বংস করছি নিজেদের বেঁচে থাকার এই পরিবেশ।
ভারতীয় গণমাধ্যমসহ সারা বিশ্বের গণমাধ্যমের আনাচে কানাচে একটি সংবাদ ছড়িয়ে পড়লো। সেটি হলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাবা রামদেবের অনশন। আমি অনশনের বিষয় বা এতদসংক্রান্ত আলোচনায় যেতে চাই না- তবে আমার আলোচনার আলো ফেলতে চাই আরেকটি বিষয়ের উপর, যেখানে সম্প্রতি প্রচার মাধ্যমের আলো পড়েছে।

তিনি স্বামী নিগমানন্দ। গঙ্গা বাঁচানোর জন্য তিনি অনশন করছিলেন। তবে তাঁর জন্য আসমুদ্রহিমাচল গণমাধ্যম দেখা যায় নি। এমনকি গণমাধ্যম যখন তাঁর খবরটা তুলে ধরলো- ততক্ষণে এই মানুষটি বিদায় নিয়ে চলে গেছেন। যোগগুরু রামদেব যে হাসপাতালে ছিলেন স্বামী নিগমানন্দ সেই হাসপাতালেই আইসিইউ তে ছিলেন। তবুও তাঁর জন্য কারো কোনো আগ্রহ চোখে পড়েনি। আমাদের বাঙলাদেশের মিডিয়াতেও যোগগুরুকে নিয়ে অনেক লেখা ছাপা হয়েছে- কিন্তু স্বামী নিগমানন্দকে নিয়ে কোনো লেখা ছাপা হয়নি- অন্তত আমার চোখে পড়েনি। তবে তাঁর মৃত্যুর পর সেই খবরটি মিডিয়া তুলে এনেছে।

স্বামী নিগমানন্দ মূলত অনশন করেছিলেন বেআইনি খনন রোধে এবং গঙ্গা বাঁচানোর লক্ষ্যে। গত সোমবারে দেরাদুনের হিমালয়ান হাসপাতালে অনশন ভাঙেন বাবা রামদেব, আর ওই হাসপাতালে সোমবার দিনই মৃত্যু বরণ করেন স্বামী নিগমানন্দ। হরিদ্বারের এই সাধু একটানা ১৪৪ দিন অনশন করেন। তবে একমাস অনশন চালানোর পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন মাতৃসদনের স্বামী নিগমানন্দ। তারপর তিনি চলে যান কোমায়, এরপর না-ফেরার দেশে। ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে জানা যায় গঙ্গা বাঁচাতে এবং গঙ্গা তীরবর্তী অঞ্চলে পাথর খাদানের ব্যবসা বন্ধ করার জন্য ছিলো তাঁর এই অনশন। ঋষিকেশের অতিরিক্ত জেলাশাসক প্রতাপ শাহ বলেছেন, স্বামী নিগমানন্দ গঙ্গাদূষণ এবং নদীর বুক থেকে পাথর তোলা বন্ধ করার জন্য অনশন করছিলেন। দু-মাসেরও বেশি সময় তিনি অনশন চালান তাঁর নিজের আশ্রমে। হরিদ্বারেরই সাধু স্বামী কৈলাশানন্দ জানিয়েছেন, সরকার পাথর-মাফিয়াদের আড়াল করছে. কোনও প্রচার ছাড়াই এর বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছিলেন নিগমানন্দ. তাঁর অনশন ও মৃত্যু আত্মত্যাগে নয়া নজির গড়লো।

আমি মনে মনে ভাবছিলাম মাত্র ৩৬ বছর বয়সে জীবন ত্যাগ করলেন স্বামী নিগমানন্দ! তাঁর দাবি ছিলো গঙ্গার দূষণ রোধ। এই আত্মত্যাগ কার জন্য? পরিবেশের জন্য। এই পরিবেশে আমি আপনি আমরা সবাই বেঁচে থাকবো। অথচ এই পরিবেশ রক্ষার জন্য আমাদের কী কোনো উদ্যোগ আছে? নেই। একেবারেই নেই। পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রের মতো বাঙলাদেশেও নদী দূষণ হচ্ছে- কেবল হচ্ছে না বাঙলাদেশের নদীগুলো প্রায় মরেই গিয়েছে। এখন আর নদী বলে কোনো কিছু চেনা যায় না। এক সময়ের বুড়িগঙ্গা এখন মৃত আর দূষিত। আমাদের চোখের সামনে কোনো নতুন রাস্তা নেই। বুড়িগঙ্গার সেই নয়নাভিরাম দৃশ্য যারা দেখেছেন তাদের তো এখন আফসোস করা ছাড়া কিছুই বাকি নেই।

কেবল বুড়িগঙ্গাই নয়- বাঙলাদেশের বিভিন্ন নদী এখন মৃতপ্রায়। এই মৃত্যুর জন্যে কারা দায়ি? দায়ি একদল ভূমিদস্যু, যারা নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যে আমাদের পরিবেশকে করছে বিপন্ন, আর বিভিন্ন মেয়াদের বিভিন্ন সরকার তা নিয়ে কেবল প্রেস ব্রিফিং-ই করে গেলো, কোনো সুরাহা হলো না।

নদী বাঁচানোর জন্যে স্বামী নিগমানন্দের যে আত্মত্যাগ তা স্মরণীয়। কিন্তু এখান থেকে আমাদের নিজেদের বিবেক কি জেগে উঠে না? নদী দূষণের হাত থেকে আমাদের বাঙলাদেশের প্রাণপ্রিয় নদীগুলো কী বাঁচানো আমাদের কর্তব্য নয়?

কিছুদিন আগে সাভারের বংশাই নদীর উপর একটি লেখাতে পড়লাম- এই নদী এখন শিল্প বর্জ্য আর অবৈধ দখলদারের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। পরিকল্পিত ভাবে শিল্প বর্জ্যরে দূষণ ও অবৈধ দখলদারদের দৈরাত্ম্যে বংশাই আজ হুমকির মুখে। পরিবেশবিদদের মতে, অপরিকল্পিত শিল্প স্থাপন, শিল্প বর্জ্য ও ভূমিদস্যুদের আগ্রাসনসহ নদী ধ্বংসের নানামুখি কর্মকান্ডে নাব্যতা হারিয়ে যৌবন হারাতে বসেছে বাঙলাদেশের নদীগুলো। বর্তমানে যে কয়টি নদীর জল প্রবাহ রয়েছে তার মধ্যে সাভারের বংশাই নদীর মতো আরও কয়েকটি নদী এখন শিল্প বর্জ্য ও অবৈধ দখলদারের কবলে পড়ে বিলীন হতে চলেছে।

বংশাই নদীর ক্ষেত্রে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আমিন বাজারের তুরাগ নদী থেকে ধামরাই এলাকা জুড়ে বিস্তীর্ণ প্রায় ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ বংশাই নদী এক সময় এ অঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকায় ব্যাপক সহায়তা করে আসছিলো। কিন্তু বিগত দশ বছর যাবত এ অঞ্চলে অপরিকল্পিত শিল্প কারখানা গড়ে উঠায় বংশাইয়ের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিল্প কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য বংশাইয়ে ফেলে নদীর পানিকে দূষিত করছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অবৈধ দখলদাররা নদী দখলের মহা উৎসবে মেতেছে। সরকারি বিধি নিষেধ থাকার পরেও শিল্প মালিকরা তাদের শিল্প বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলে নদীকে দূষিত করছে। সাভারের হেমায়েতপুর এলাকা থেকে সাভার পৌর এলাকা, নয়ারহাট, আশুলিয়া পর্যন্ত প্রায় অর্ধশতাধিক গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা বিষাক্ত বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলছে। এর মধ্যে অল্প কিছু গার্মেন্টস ও ডায়িং ফ্যাক্টরি আছে যেখানে নিজস্ব ডাম্পিং ব্যবস্থাসহ বর্জ্য পরিশোধন ব্যবস্থা রয়েছে।

এখানে বংশাই নদীর তথ্য তুলে ধরা হলেও অধিকাংশ নদীরই একই অবস্থা- বা কোনো কোনোটার অবস্থা এর চেয়েও শোচনীয়। এক সময় বুড়িগঙ্গা নদী ছিল ঢাকার প্রাণ-প্রবাহ। সেই বুড়িগঙ্গা এখন ঢাকার লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য বড়ো হুমকি। কারণ, এটি এখন বাঙলাদেশের সবচেয়ে দূষিত নদীগুলোর মধ্যে অন্যতম। শিল্প ও মানব-বর্জ্য ফেলার অবাধ ক্ষেত্র। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।

বাঙলাদেশের শীর্ষস্থানীয় পরিবেশ বিশেষজ্ঞ জনাব ডক্টর আইনুন নিশাতের একটি সংগৃহীত বক্তব্য এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করছি, বুড়িগঙ্গা নদীর একটা বড়ো অংশই বিলীন হয়ে গেছে অবৈধ জমি-খাদক বা জমিগ্রাসীদের চিরঅতৃপ্ত ক্ষুধার গর্ভে এবং এ নদী কল-কারখানার অপরিশোধিত ও দূষিত তরল বর্জ্য রাখার ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, "বুড়িগঙ্গার পানি এখন এতোটাই দূষিত যে সব মাছ মরে গেছে, ক্রমবর্ধমান নোংরা পদার্থ ও মানব-বর্জ্য এই পানিকে ঘন কালো জেল বা আঠালো কালো পানিতে পরিণত করেছে। এমনকি এই পানি এখন এত দূর্গন্ধময় হয়ে গেছে যে সেখানে নৌকা-ভ্রমণও খুব কঠিন হয়ে পড়েছে"।

বুড়িগঙ্গা নদীর এই অবস্থা বাঙলাদেশের অন্য নদ-নদীগুলোর সাধারণ চিত্রের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। বাঙলাদেশের বুক চিড়ে বয়ে-চলা শত শত নদীর নাব্যতা বজায় রাখা এবং সেগুলোর পানিকে মানুষ, মাছ ও জল-নির্ভর অন্যান্য জীবের জন্য নিরাপদ রাখার সংগ্রাম ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে। বাঙলাদেশের ছোটো-বড়ো ২৩০ টি নদ-নদী এই দরিদ্র দেশের প্রায় ১৫ কোটি মানুষের একটা বড়ো অংশের জীবন ও জীবিকা এবং পরিবহনের মাধ্যম। অথচ এইসব নদ-নদীর অনেকগুলোই পরিবেশ-দূষণ ও জমির অবৈধ দখলদারদের শিকার হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে বা নিঃশেষিত হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। বিশ্বব্যাংকের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঢাকার আশ-পাশের চারটি বড়ো নদী – বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ এবং বালু নদীতে প্রতিদিন সাত হাজার কল-কারখানা থেকে আসা ১৫ লক্ষ ঘন-মিটার বর্জ্য জমছে। অন্যান্য উৎস থেকেও দৈনিক ৫ লাখ ঘন মিটার বর্জ্য জমছে এই চারটি নদীতে। এই নদীগুলোর জমি অবৈধভাবে দখল ও ভরাট করার কাজ অবাধ গতিতে অব্যাহত থাকায় সেগুলোর পানির মুক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এ ছাড়াও ওষুধের বর্জ্য ও যাত্রীদের মানব-বর্জ্য এই নদীগুলোর পানির দূষণকে তীব্রতর করায় সেখানকার পানি মানুষ ও গৃহপালিত পশুরও ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। 'বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাও ও জীবন রক্ষা কর' শীর্ষক প্রচার-অভিযানের অন্যতম খ্যাতনামা কর্মী আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের একটি বক্তব্য তুলে ধরছি। তিনি বলেন, দুঃখজনকভাবে এসব খারাপ কাজই ঘটছে কর্তৃপক্ষের গোচরে বা চোখের সামনেই। বুড়িগঙ্গার পানির দূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ি হলো এ নদীর তীরে অবস্থিত এক ডজন ট্যানারি। অবশ্য সরকার সম্প্রতি ট্যানারিগুলোকে রাজধানীর বাইরে পাঠাবার উদ্যোগ নিয়েছে এবং নদীর জমি অবৈধভাবে দখলকারীদেরকে নদীর অংশ ফিরিয়ে দিতে বলেছে। কিন্তু এসব দখলদাররা রাজনৈতিক প্রভাব ও ঘুষের মাধ্যমে এ ধরনের নির্দেশ অমান্য করছে বলে পরিবেশবাদী গ্রুপগুলো জানিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ খাজা মিন্নাতুল্লাহ বলেছেন, পরিবেশ দূষণের ফলে বুড়িগঙ্গার সমস্ত অক্সিজেন শেষ হয়ে গেছে, ফলে নদীটি মৃত নদীতে পরিণত হয়েছে এবং এটি এখন সেপটিক ট্যাংক বা দূষিত বর্জের আধারে পরিণত হয়েছে। অক্সিজেন না থাকলেও যেসব জীব বাঁচতে পারে সেগুলো ছাড়া কোনো মাছ ও জল-নির্ভর জীব এ নদীতে আর নেই বলে তিনি জানান। এ ছাড়াও ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম ও পারদের মত রাসায়নিক বর্জ্যগুলো নদীর পানি থেকে ভূ-গর্ভস্থ পানিতে প্রবেশ করছে এবং এর ফলে তা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছে। এই দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা না হলে আগামী এক থেকে দুই অথবা বড় জোর তিন বছরের মধ্যেই একটা বড় ধরনের স্বাস্থ্য-সংকট দেখা দেবে বলে বিশ্বব্যাংকের এই বিশেষজ্ঞ জানান। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৫ সালে একটি আইন প্রণয়ন করে যাতে সকল কল-কারখানাকে তরল বর্জ্যগুলো পরিশোধনের যন্ত্র স্থাপন করতে বলা হয়েছে, কিন্তু কল-কারখানার অনেক মালিক খরচ বাঁচানোর জন্য তাদের কারখানায় এ ধরনের যন্ত্র থাকা সত্ত্বেও তা ব্যবহার করেন না বলে বাঙলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের মহাসচিব এম এ মতিন জানান। ডক্টর আইনুন নিশাত বলেন, আমরা চাই নদীগুলো পুরোপুরি সংস্কার করা হোক, সেগুলোর যেসব জমি অবৈধভাবে দখলদারদের কাছে রয়েছে তা ফিরিয়ে আনা হোক এবং পানি বা নদী-পথগুলোর যে কোনো অপব্যবহার রোধ করার জন্য প্রণীত আইনগুলো কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হোক। তিনি বলেন, সিঙ্গাপুর -নদীও নিকট অতীতে বুড়িগঙ্গার মত দূষিত হয়ে পড়েছিল, কিন্তু তারা সেটাকে পরিশুদ্ধ করেছে এবং ঐ নদীকে সম্পদের এক বড়ো উৎসে পরিণত করেছে। তাই বাংলাদেশের পরিবেশবাদীরা বলছেন, তারা এখনও আশাবাদী।

কিন্তু শেষে আমাদের আশার ছলনে ভুলতে হবে না তো! আমাদের তো নানা ভয়, সরকারের তলে তো থাকে আরেক সরকার। সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন জাতীয় সংসদের অধিকাংশ আসনই ব্যবসায়ীদের দখলে। কথা সত্য। তাই দেখা যায় রাজনৈতিক নেতারা আর ফ্লোর পাচ্ছেন না। এখন ব্যবসায়ীরা গদিতে বসে নিজের মতো করে নিজের ইচ্ছা পূরণ। আমাদের নদীমাতৃক বাঙলাদেশের নদীগুলো সব তারা বগলদাবা করে তুলেছেন। এখন আর আমাদের নিঃশ্বাস নেবার জায়গা নেই। আমাদের প্রাণের কথা বলার নদী নেই। সব ধ্বংস হয়ে গেছে বা যাচ্ছে।

স্বামী নিগমানন্দের মতো আমাদেরও কী প্রাণ দিতে হবে নদী বাঁচাতে? আমরা প্রাণ দিলেও কী আমাদের নদীগুলো বাঁচবে? এসব হাজারো প্রশ্ন যখন আমাদের হৃদয়কে বিদীর্ণ করে তুলে- তখনই শুনি দূরে যেনো কারা ডাকে, কে যেনো ডেকে বলে যায়, উপকূলে ঝড় উঠেছে, সবাইকে বিপদ সংকেত জানিয়ে দিন। আমি ভাবি- এ তো প্রকৃতিরই প্রতিশোধ। ঝড় তখন ভূমিদস্যু আর অবৈধ দখলদারদের ঠিকানা জানতে চায়। ওসব নচ্ছাড়দের ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।

আসুন এই ইয়োগাদের ঠিকানা ঝড়কে দিয়ে দিই। তারপর মরুক অসভ্যেরা আর বাঁচুক আমাদের পৃথিবী, আমাদের সবুজ আমাদের প্রাণের পরে চলে যাওয়া স্নিগ্ধ নদীগুলো।