আমার মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হলো সাধারন কিন্তু অবিশ্বাস্য

সেলিম আনোয়ার
Published : 27 Oct 2012, 06:55 PM
Updated : 27 Oct 2012, 06:55 PM

২৬ অক্টেবর,২০১১ আমার মৃত্যু হয়। আমার লাশটা নিয়ে মহাঝামেলায় কিছু যাত্রি।কোথায় তা পাঠাবে?নাম কি বাড়ি কোথায়?আমি প্রথম শ্রেণীর একজন সরকারী কর্মকর্তা।ব্যচেলর মানুষ।বাবা মার সাথে থাকি।মাঝে মাঝেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরন্তপনা ভর করে।আগে প্রায়ই ৩ নম্বরলোকাল গাড়ীতে উঠে উত্তরা আসতাম।সেদিনও অফিস শেষে বাড়ি ফেরার পালা এক বন্ধু ফোন দিল তার সাথে চা পান করা লাগবে।করলাম।যথারীতি ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের এফ এইচ হল গেট থেকে ৩ নম্বর বাসে উঠলাম জানালার পাশে বসলাম।আমার পাশে আরেকজন লোক বসলো।জানালার পাশে ডাব বিক্রেতা ।ডাব বিক্রি করবে।২ টাই আছে।জোড়া ৬০ টাকা।পাশে বসা লোকটি বললেন চলেন ডাব খাই ।আমি বললাম না খাবনা।উনি বললেন মাত্র ২ টা অছে কম দামেই দিবে।আমি ডাবখুর মানুষ।সুযোগ পেলেই ডাব খাই।মাত্র ৩০ টাকায় দুইটা দিয়ে দিল পাশের লোকটি বারবার বলাতে রাজি হলাম।এক লম্বা চুমুক দিয়ে ডাব খেলাম ।ডাবের পানি কেমন যেন মনে হলো।আমি জ্ঞান হারালাম।আমাকে অচেতন দেখে বাসের লোকজন।একেবারে শেষ মাথায় এসে পকেট থেকে আমার আইডি কার্ড দেখে ফোন করে বাসার লোকজন ডেকে আনে।তারা আমাকে হসপিটালে ভর্তি করে ভাল কোন হাসপাতাল ঝুকি নেয় নাই।আমাকে নেয়া হয় উত্তরার পেসেন্ট কেয়ার হসপিটালের আইসিইউ তে।আমার সেন্স পিরে আসে তিন দিন পর।আমার দ্বিতীয় জন্ম হয়।৩০ অক্টোবর ২০১১।খুব সকালে ।ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে যাই।বেসিন আরশিতে দেখি খুব সুন্দর স্লীম একটা মানুষ।মেদহীন শরীর।দেখে অবাক হয়ে যাই।পরে বুঝতে পারি এটা আমার দ্বিতীয় জন্ম।আমার আম্মুর চোখে আনন্দ অশ্রু।বাবারওঅআমার ছোট বোনটিও দারুণ খুশি।আর আমি বিস্ময়াভূত।আমার প্রথম মৃত্যুর এক বছরে একে একে আমার অনেক প্রিয় হমায়ূন ফরীদি,,হুমায়ূন আহমেদ,,সুনীল গাঙ্গোপাধ্যায় চলে গেলেন উপারে।আমার দ্বিতীয় জন্ম না হলে তাদের বিয়োগে দঃখও পেতাম না, পেতে পারতাম না।যারা সাধারণ মানুষ।ফড়িং এর জীবন যাদের তারা বেঁচে থাকে।জীবনানন্দ দাশ মরে গেলেন,ফরীদিও ,হুমায়ূনও,সুনীল এমনকি যশচোপরাও্ ।আর আমি সামান্য এক যুবক বেঁচে রইলাম।এরপর থেকে আর ডাব খাইনা।মানিব্যাগটা গেছে,হাজার পাঁচেক টাকা ,মোবআইল সেট সব লস্ট।আর চিকিৎসা বাবদ পঞ্চাশ হাজার টাকা।আমার পকেটে আডি কার্ড থাকাতেই আমি জানে বেঁচে যাই।প্রথম শ্রেনীর গেজেটে কর্মকর্তা খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এই পরিচয় বাসের যাত্রিদের দায়িত্ববোধ ও সহানুভূতির জন্ম দেয়।নাহলে আমার অবস্থান হতো আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম।আর আমার দেহটা পাঠানো হতো মর্গে।লাশকাটা ঘরে মেডিকেল ছাত্রছাত্রিরা তা দিয়ে ব্যবহারিক জ্ঞান লাভ করতো।