কিশোরী ফেলানী হত্যা বিএসএফ সদস্যের বিচার চলছে, ১০ জনকে ভৎর্সনা এবং বিএসএফ ক্যাম্পে বাংলাদেশির মৃত্যু

ছায়া
Published : 20 May 2011, 12:14 PM
Updated : 20 May 2011, 12:14 PM

খবর দুটি আজকের।
কিশোরী ফেলানী খাতুনকে হত্যার দায়ে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) জওয়ান অমিয় ঘোষকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে 'অনিচ্ছাকৃত নরহত্যার' অভিযোগ এনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

ফেলানীকে গুলি চালাতে প্রত্যক্ষভাবে ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগে হাবিলদার মুলিন্দর সিংয়ের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি এখনো চাকরিতে বহাল আছেন। তা ছাড়া এ ঘটনায় আগামী ছয় মাসের মধ্যে বিএসএফ আইনে জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্স কোর্ট (জিএসএফসি) গঠন করে মূল অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে। বিএসএফের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের বিশেষ মহাপরিচালক প্রণয় শাহি গতকাল প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

গত ৭ জানুয়ারি ভোরে ১৪ বছরের ফেলানী পশ্চিমবঙ্গের দিনহাটা থানার চৌধুরীহাট সীমান্ত ফাঁড়িসংলগ্ন কাঁটাতারের বেড়া টপকানোর সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। এ ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। তখন ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে বাংলাদেশ ফেলানী হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানায়।

বিএসএফের বিশেষ মহাপরিচালক প্রণয় শাহি বলেন, 'ফেলানী হত্যাকাণ্ড দুর্ভাগ্যজনক। আমরা এ জন্য অত্যন্ত দুঃখিত। তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমাদের পুরোপুরি সহানুভূতি রয়েছে।'

ভারতীয় সরকারি সূত্র জানিয়েছে, এ ঘটনায় দুবার তদন্ত হয়েছে। ৮ ফেব্রুয়ারি বিএসএফের একজন উপ-অধিনায়কের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি এ বিষয়ে সাফাই প্রতিবেদন দিয়েছিল। অমিয় ঘোষ তদন্ত কমিটিকে বলেছেন, ঘটনার সময় সীমান্ত অতিক্রমকারীরা বেআইনিভাবে সশস্ত্র ছিল। তিনি আত্মরক্ষায় বাধ্য হয়ে গুলি করেন। আর সেটা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে ফেলানীকে বিদ্ধ করে। প্রথম তদন্ত প্রতিবেদনে অমিয়র এ বক্তব্য গ্রহণযোগ্যতা পায়। হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিএসএফের টহলরত দলটি অভিযোগ থেকে পুরোপুরি রেহাই পায়।

দিল্লিতে বিএসএফের মহাপরিচালক এ তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন। সূত্রমতে, মাত্র চার দিনের ব্যবধানে ১২ ফেব্রুয়ারি একজন ডিআইজির নেতৃত্বে দ্বিতীয় কোর্ট অব ইনকোয়ারি গঠিত হয়। এ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, 'ওই সময় যারা সীমান্ত অতিক্রম করছিল, তাদের কারও কাছে কোনো হাতিয়ার ছিল না। সুতরাং বাধ্য হয়ে গুলি চালানোর দাবি অবান্তর।'

গতকাল টেলিফোনে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, 'তখন ফজরের আজান হচ্ছিল। দালালদের কথায় আমরা আজান শেষে ১০ মিনিট পর রওনা দিই। বিএসএফের টহলরত দলটি আমাদের প্রায় সামনাসামনি থাকা অবস্থায় গুলি করে। তাদের সঙ্গে কোনো কথাবার্তা হয়নি। আমরা সাকল্যে ছয়জন সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছিলাম।'

অমিয় ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি চালিয়েছেন, কিন্তু ফেলানীকে হত্যার উদ্দেশ্যে নয়। বিএসএফ আইনে দোষী সাব্যস্ত হলে অমিয়র সাত বছরের জেল হতে পারে।

বিএসএফের বিশেষ মহাপরিচালক বলেন, এ ঘটনায় বিএসএফের বিভিন্ন স্তরের অন্তত ১০ জন সদস্যকে ইতিমধ্যে ভর্ৎসনা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে প্লাটুন কমান্ডার, কোম্পানি কমান্ডার, সাব-ইনস্পেক্টর, ডেপুটি কমান্ডার, অফিশিয়েটিং কোম্পানি কমান্ডার (ইনস্পেক্টর) প্রমুখ রয়েছেন।

ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী থেকে গতকাল ফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, 'ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আমার মেয়ের হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে, তা জেনে একটু সান্ত্বনা পেলাম। কিন্তু মেয়ের খুনের ঘটনায় আমি মানসিক ও আর্থিকভাবে ভেঙে পড়েছি।'

বাড়িতে ঝগড়া করে আত্মীয়ের বাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ায় গিয়েছিলেন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার চাপাতলা গ্রামের মিরাজুল ইসলাম (২৫)। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ফতেপুর ক্যাম্পের সদস্যরা এই খবর পেয়ে ১৭ মে তাঁকে সেখান থেকে আটক করে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই যুবকের লাশ হস্তান্তর করা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের কাছে।

বিজিবি কর্মকর্তারা বলেছেন, বিএসএফের ক্যাম্পে আটক করে নির্যাতন করার পর মিরাজুলের মৃত্যু হয়েছে। এ ব্যাপারে তাঁরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন, ভারতের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।

ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তের কুসুমপুর বিজিবি কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার মোস্তফা কামাল জানান, গতকাল সকালে তাঁরা খবর পান, নদীয়া জেলার ফতেপুর বিএসএফের ক্যাম্পে মিরাজুল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে। এই খবর পেয়ে তাঁরা লাশ ফেরত দেওয়ার দাবি জানান। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার সময় পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে মিরাজুলের লাশ ফেরত দেওয়া হয়। পতাকা বৈঠকের সময় ভারতের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ফতেপুর কোম্পানি কমান্ডার ধরম প্রকাশ, আর বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন তিনি (মোস্তফা কামাল)। তিনি জানান, নির্যাতনের পর মৃত্যু হওয়ায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করে এ জাতীয় ঘটনা আর ঘটবে না বলে জানানো হয়। তিনি আরও জানান, মিরাজুল ইসলামের লাশ রাতেই মহেশপুর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মহেশপুর থানার এসআই আবদুল আজিজ জানান, বিজিবি লাশ তাঁদের কাছে হস্তান্তর করেছেন। ভারতে লাশের ময়নাতদন্ত হওয়ায় তাঁরা নতুন করে ময়নাতদন্ত করছেন না। থানায় একটি সাধারণ ডায়েরির (জিডি) পর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করবেন।

খবর সূত্রঃ- প্রথম-আলো।

আমি আওয়ামী লীগ পন্থী নই বা বি.এন.পি পন্থী নই। আমার শুধু প্রশ্ন একটাই আওয়ামী লীগ সরকার আসলেই কেন ভারতের হাতে নিরীহ বাংলাদেশিদের মারা যেতে হয়?