কিশোররা কেন বিপথগামী হচ্ছে?

শাহাদাত হোসাইন স্বাধীন
Published : 31 Jan 2018, 04:10 AM
Updated : 31 Jan 2018, 04:10 AM

স্কুল-কলেজ পড়ুয়া কিশোরদের দলে টেনে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করছে কিছু কথিত বড় ভাইরা। শুধু কি রাজনীতি! মাদক সেবন, মাদক ব্যবসা, জমি দখল, এমনকি খুনের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে এই কিশোররা! যার সর্বশেষ বলি চট্টগ্রামের কলেজিয়েট স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র আদনান ইসফার। এসব কিশোর গ্যাং রীতিমত জনমনে আতংক ছড়াচ্ছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের মতে, শহরে এই ধরনের প্রায় শতাধিক গ্যাং রয়েছে। শুধু চট্টগ্রাম নয়, বরং সারা দেশে নিয়ন্ত্রণহীন এই কিশোর অপরাধ।

ময়মনসিংহ শহরে ২০১৬ সালে সহপাঠিদের হাতে প্রাণ হারায় চার কিশোর – মুকতাসিম বিল্লাহ,তৌহিদুল ইসলাম তরু, লিয়ন, তন্ময়। পরের বছর ঢাকার উত্তরার কিশোর আদনান নিহত হয় গ্যাং কালচারের দলাদলিতে। সে রেশ কাটতে না কাটতেই এ বছরের ১৬ জানুয়ারি বলি হয় আরেক আদনান। চট্টগ্রামের মহসিন কলেজ মাঠে খেলায় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ড, বলছে কোতায়ালী থানা পুলিশ। পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ৫ জন আসামিকে গ্রেতার করে যাদের প্রায় প্রত্যেকের বয়স ১৮'র নিচে।

কেন দিন দিন এই কিশোর অপরাধ বেড়ে চলেছে? বিশেষজ্ঞরা এজন্য পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়কে দায়ি করছেন। পরিবার কাঠামোর দ্রুত পরিবর্তন, শহর ও বস্তির ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ এবং সমাজজীবনে বিরাজমান নৈরাজ্য ও হতাশা কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির প্রধান কারণ। অপসংস্কৃতির বাঁধ ভাঙা জোয়ার এজন্য অনেকাংশে দায়ি। একুশ শতকের প্রযুক্তির ছোয়াঁয় আমাদের পারিবারিক কাঠামো ভেঙ্গে গেছে। ছোট পরিবার থেকে অণু-পরিবারে প্রবেশ করছি আমরা। বাবা থাকেন ব্যবসা নিয়ে, মা থাকেন চাকরি নিয়ে। টাকার পিছনে ছুটতে গিয়ে আমরো নিজেদের ছেলে-মেয়েদের পর্যাপ্ত সময় দিচ্ছি না। পারিবারিক কাঠামোগুলো এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে ছেলে-মেয়েরা বন্ধু হিসেবে, সঙ্গী হিসেবে বাবা-মা, দাদা-দাদী বা কাজিনদের কাউকেই পাশে পাচ্ছে না। তাই তাদের একাকীত্ব ঢাকতে বিপদজনক লোকের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে।

তাই কিশোরদের সুষ্ঠ সুন্দর ও সামাজিক বিকাশ নিশ্চিত করতে বাবা-মা কে সন্তানেদের বেশি বেশি সময় দিতে হবে। পাশাপাশি পরিবার থেকে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা দিতে হবে। সন্তানদের চারপাশটাকে তাদের অনুকূল করে গড়ে তুলতে হবে। একজন মানুষ একা একা বড় হতে পারে না। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ১৩-১৪ বছরের মত বালাই আর নেই। পরিবারের উচিত হবে সবাই মিলে ভাল জায়গা ঘুরতে নিয়ে যাওয়া, সদস্যদের হাতে ভাল বই তুলে দেয়া, ভাল মুভি দেখা। সামাজিকভাবে পর্যাপ্ত খেলাধূলার সুযোগ ও সুষ্ঠু সংস্কৃতির চর্চা সুযোগ করে দেয়া। তাতেই কিশোররা  জীবনকে সুন্দর স্বপ্ন দিয়ে গুছিয়ে নিতে পারবে।

কিশোরদের সুষ্ঠু মনন বিকাশে স্কুল শিক্ষকদের ভূমিকাও অপরিসীম। শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি নৈতিক, সুষ্ঠ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজে শিক্ষার্থীর কাজে উদ্বুদ্ধ করা। শিক্ষক-অভিভাবক-শিক্ষার্থী তিন পক্ষীয় একটি সম্পর্ক গড়ে তোলা। তাতেই সোনার বাংলা সোনার মানুষ পাবে। সাথে সাথে কিশোরদের যারা রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে তাদের ও আইনের আওতায় আনা উচিত। কিশোরদের হাতে যারা অস্ত্র, মাদক তুলে দিচ্ছে তাদেরও ধরা উচিত।

লেখক: শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।