৯৯৯ এবং আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশ

শাদনান মাহমুদ নির্ঝর
Published : 26 Jan 2018, 01:39 AM
Updated : 26 Jan 2018, 01:39 AM

কিছুদিন আগের কথা, পেপার পড়তে বসছি। দেখি বিশাল এক বিজ্ঞাপন দেয়া হইছে যে আমাদের ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি লাইন চালু করা হয়েছে। নাম্বার হচ্ছে '৯৯৯'। আমি দেখে হালকা ধাক্কার মত খেলাম। সারা জীবন ইংরেজী মুভিতে দেখে আসছি কারো কোন ঝামেলা হইলেই তারা ৯১১ এ কল করে, এরপর পুলিশ দৌড়ায় চলে আসে। আমাদের দেশে জিডি মামলা করলেই পুলিশ আসে না, আর কল করলে নাকি পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স চলে আসবে! মনে মনে হাসলাম। মা সামনে ছিল, তাকে  বললাম, কাহিনী দ্যাখো, পুরান পাগলরা ভাত পায় না, নতুন পাগল আসছে!

এবার একটা অদ্ভুত কাহিনী বলি…। আমাদের বাসার ঠিক সামনে দুই দিন পর পর বিশাল মিলাদ-মাহফিল টাইপ অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠান কেমন হয় একটু বর্ণনা দেই। আমার বাসার দিকে মুখ করে দুইটা ইয়া বড় বড় মাইক লাগানো হয় সেই ওয়াজ মাহফিল পুরোটা সারা এলাকা শোনানোর জন্য। এইভাবে এক কিলোমিটার রেডিয়াসে ওনারা মাইক লাগান। দুপুরে নামাজ শেষ করার পর ওনারা শুরু করেন অদ্ভুত টাইপ একটা অনুষ্ঠান। সেদিন শুনলাম, 'দেখেছি প্রথম বার, ওই চোখে প্রেমের জোয়ার' গানের সুরে একজন চিৎকার করে গাচ্ছে 'এইটাই আমার ইসলাম, ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দিব এর নাম'। যাই হোক এই ধরনের 'ইসলামী সংগীত' নামে হেড়ে গলায় গান চলতে থাকে দুপুর থেকে। সন্ধ্যার পরে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান, সেই অনুষ্ঠানে নানা জন নানান রকম কথা বলে, গান গায়। এই পুরা প্রোগ্রাম শেষ হয় রাত দুইটা থেকে তিনটার মধ্যে। আমি বাজি ধরে বলতে পারি, এই সময়ে আমার বাসার আশেপাশে কেউ ঘুমায় না। ওই আওয়াজে ঘুমানো সম্ভব না। আমার নিজের সাইনাসের ব্যথা, ব্যথা উঠলে সেই শব্দের চেয়ে মনে হয় মরে যাওয়া সোজা। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর আমরা এই সমস্যা টানতেছি।

আজকে কেন যেন মনে হইল ৯৯৯ এ কল করি একটু, জানি সমাধান হওয়ার প্রশ্নই আসে না তবুও দেখি। কল দিলাম – খুব সুন্দর ভয়েসের কোন এক আপু কল পিক করল। সুন্দর করে বলল, আপনাকে স্বাগতম, স্যার কীভাবে আপনাকে হেল্প করতে পারি? আমি ততক্ষনে কথার স্টাইল শুনেই মুগ্ধ। আমি ভাবছিলাম খ্যানখ্যান টাইপ গলার কেউ ফোন ধরে বলবে, কিচ্ছে? এ তো উল্টো! বললাম – ম্যাডাম, একটা সমস্যা আমার এখানে, মেজর কোন সমস্যা না, কিন্ত অনেক দিন ধরে ফেস করছি। উনি বললেন, স্যার, প্লিজ বলেন। বললাম যে আমাদের এখানে এত বেশি শব্দ যে দরজা-জানালা আটকে রাখতে হয়। এরপরেও ঘরে বসা যাচ্ছে না। কতদিন আর এভাবে সহ্য করব? উনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, স্যার প্রতিদিন হয়? আমি বললাম, না প্রতিদিন না, কিন্ত সপ্তাহে এক বার হবেই। উনি বললেন, স্যার, এরিয়াটা বলেন। আমি নাম-ঠিকানা সবই দিলাম। উনি বললেন, ওকে স্যার, আমরা এখনই দেখছি, ভালো থাকবেন।

আমি শিওর ছিলাম, কিছুই হবে না। আজকেও রাত জাগতে হবে, আজকেও সব সহ্য করতে হবে। আমাকে অবাক করে দিয়ে ঠিক ১২.২০ মিনিটে সব অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেল। যেই প্রোগ্রাম তিনটা চারটার আগে কোনদিন শেষ হয় না সেইটা কোন কারণ ছাড়াই চলতে চলতে ১২.২০ মিনিটে অফ! আমি খুব ভালো করে জানি ওনারা সত্যি সত্যিই দেখেছেন ব্যাপারটা।

বাংলাদেশ স্মার্ট হয়ে যাচ্ছে, যে দেশে একটা কলেই বড় কোন সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায় সেই দেশ তো স্মার্টই। স্মার্ট দেশের প্রতি অপার ভালোবাসা, ৯৯৯ এর মত সেবার বুদ্ধি যাদের মাথার ফসল তাদের জন্য ভালোবাসা…।