সরকারি চাকরির আবেদনে ‘অলজবস’ পোর্টাল এবং ধন্যবাদ টেলিটক

শাদনান মাহমুদ নির্ঝর
Published : 6 Nov 2021, 05:45 PM
Updated : 6 Nov 2021, 05:45 PM

এ দেশে সদ্য স্নাতক অথবা স্নাতকোত্তর এমন ছেলেমেয়ে খুব কম খুঁজে পাবেন যারা সরকারি চাকরির জন্য কোনো চেষ্টা করছে না। হালের ট্রেন্ড বিসিএস তো আছেই, এর বাইরে আছে সরকারি-আধা সরকারি অথবা স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির চেষ্টা।

স্থায়িত্ব, সুযোগ, নতুন বেতন স্কেল, সামাজিক মর্যাদা সব কিছুর মিশেলে দিনকে দিন সরকারি চাকরি হয়ে যাচ্ছে পরম প্রার্থিত ব্যাপার। যদিও সরকারি চাকরির একদম প্রথম যে ধাপ, সেটাই সম্ভবত সবচেয়ে বিরক্তিকর বিষয়; সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করা।

যে কোনো প্রতিষ্ঠানের যে কোনো পদেই আবেদন করতে যান তার জন্য বিশাল এক ফরম পূরণ করতে হবে। সেই ফরমে প্রার্থীর, তার বাবা-মায়ের নাম ছাড়াও এত এত তথ্য দিতে হবে। এরপর ছবি, সিগনেচার আপলোড করতে হবে; সে বড় এক ঝামেলা।

বাসায় যদি কম্পিউটারের ব্যবস্থা না থাকে, তবে মোবাইল থেকেও ফরম পূরণ করা যায়। কিন্ত তাতে পাক্কা ৩০ মিনিট সময় নষ্ট হবে। আর কোনো দোকান থেকে ফরম পূরণ করতে গেলে তো ১০০ টাকার নিচে কথাই নেই। তো কেউ যদি ৫টা চাকরির অ্যাপ্লিকেশন করেন তাহলে শুধু ফরম পূরণের জন্যই ৫০০ টাকা চলে যাবে; চাকরির আবেদনের টাকা তো বাদই দিলাম।

আবার আরেক সমস্যাও আছে; অনেকে কম্পিউটারে টাইপের সময় ভুল করে থাকেন।  সে ভুল খালি চোখে ধরা পরে না। এরপর সমস্যা হয় পরীক্ষা দিতে গিয়ে অ্যাডমিট কার্ড প্রিন্টের সময়। অনেকে এসএসসি ফলাফলের জায়গায় এইচএসসি ফলাফল বসিয়ে রাখেন। অনেকে আবার বর্তমান ঠিকানার জায়গায় বসান স্থায়ী ঠিকানা। এসব ভুল অহরহ।

এই ভুল থেকে বাঁচার জন্য চমৎকার একটি পোর্টাল বানিয়েছে টেলিটক। এই পোর্টাল ব্যবহার করলে এসব সমস্যা থেকে একদম চিরতরে মুক্তি পেয়ে যাবেন যে কেউ। ধরা যাক, আপনি বিসিএসের আবেদন করতে গেলেন। বিসিএস আবেদন ফরমের লিংকে লেখা থাকবে, "আপনি কি টেলিটক জবস পোর্টালে নিবন্ধিত? তাহলে আপনার ইউজার আইডি দিন।"

এরপর আপনি আপনার ১০ অক্ষরের ইউজার আইডি দিয়ে সাবমিট বাটনে চাপ দিলেই বিসিএসের আবেদন ফরমে আপনার সব ইনফরমেশন অটো আপলোড হয়ে যাবে; আপনার আর কিছুই লিখতে হবে না। এরপর সাবমিট অ্যাপ্লিকেশন বাটনে চাপ দিলেই আপনার অ্যাপ্লিকেশন সম্পন্ন।

পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আমার সময় লেগেছে ৩০ সেকেন্ডের মত। যেহেতু আমার কোনো ইনফরমেশন নতুন করে দেয়া লাগেনি, তাই ভুল হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও ছিল না।

কীভাবে কী করবেন?

প্রথম বার হাতে ১০ মিনিট সময় নিয়ে একটু কষ্ট করতে হবে। প্রথমে যেতে হবে এই লিংকে – https://alljobs.teletalk.com.bd/en/jobseeker/registration/

ই-মেইল এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে নতুন অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করতে হবে। আপনার ই-মেইল অ্যাড্রেসে ছয় অক্ষরের একটা ওটিপি যাবে। তা দিয়ে আপনার ই-মেইল অ্যাড্রেস ভেরিফাই করে নিতে হবে।

এরপর রেজিস্টার্ড ই-মেইল আর পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করলেই আপনার নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব ইনফরমেশন চাইবে।  এক এক করে সব দিয়ে সেভ বাটনে ক্লিক করে বের হয়ে আসতে হবে।

এরপর ছবি এবং সিগনেচার আপলোড দিতে বলবে, সেগুলো আপলোড দিয়ে সেভ করতে হবে।

সেভ করার পর পেজের বাম পাশে একটা অপশন মিলবে  'প্রিমিয়াম মেম্বার' নামে।

ওই বাটনে ক্লিক করলে বলা হবে, যে কোনো টেলিটক নম্বর থেকে ২০ টাকা পে করার জন্য। ২০ টাকা পে করার পর একজন ব্যবহারকারী আজীবনের জন্য পোর্টালে প্রিমিয়াম মেম্বার হিসেবে নিবন্ধিত হয়ে যাবেন। নিবন্ধিত গ্রাহক হিসেবে ব্যবহারকারীর মোবাইল নম্বরে একটি ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড চলে যাবে।

এটুকু করতে পারলেই কাজ শেষ। এরপর থেকে যে কোনো সরকারি চাকরির আবেদন করতে গেলে  সেখানে যদি  'আর ইউ এ প্রিমিয়াম মেম্বার অফ অলজবস?' লেখা দেখতে পান তবে  'ইয়েস' নির্বাচন করলে ইউজার আইডি দেয়ার ঘর মিলবে। সেখানে ইউজার আইডি দেয়া মাত্রই চাকরির আবেদন ফরমের সব ঘর অটোমেটিক পূরণ হয়ে যাবে।

নতুন এই পোর্টালে নিবন্ধনের পর শুধু এই সুবিধাই পাওয়া যাবে না, বরং সমস্ত সরকারি চাকরির তথ্য একই ওয়েবসাইটে এক ক্লিকেই পাওয়া যাবে।

যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য কাছাকাছি রকম ওয়েব পোর্টাল ছিল, কিন্ত অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদনের জন্য বারবার নতুন করে ফর্ম পূরণ করা ছিল কষ্টসাধ্য।

এমন উদ্যোগ একদিকে যেমন সরকারি চাকরি প্রার্থীদের সময় সাশ্রয় করবে; তার চেয়েও বড় কথা, অর্থের সাশ্রয় হবে। তাছাড়া আবেদনের সময় অসতর্কতাজনিত ভুলও কমে আসবে বহুগুণে।

কিছুটা দেরীতে হলেও চমৎকার এই উদ্যোগের জন্য টেলিটক একটা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্যতম দাবিদার।