লেখাপড়া বনাম সাংস্কৃতিক চর্চা

শাফী আব্দুল্লাহ
Published : 4 Nov 2012, 05:22 PM
Updated : 4 Nov 2012, 05:22 PM

ছোটবেলা থেকেই শুনে, জেনে এবং দেখে এসেছি কুষ্টিয়ার মানুষ সংস্কৃতিমনা। যে মাটি লালন –মীর মশাররফ- রবি ঠাকুরের ভালবাসায় সিক্ত, অসংখ্য গায়ক, অভিনেতা, কবি, বিতার্কিক, খেলোয়াড়ের প্রসূতি – সে মাটিতে জন্মে আমি গর্বিত। নানা কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে কুষ্টিয়ার মানুষ বলে আলাদা মর্যাদা পেয়েছি। আসলেই- সার্থক জনম মাগো তোমায় ভালবেসে।

বলতেই হয় – বড় দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আজ লিখতে বসেছি। একটা সময়ে শুক্রবার ছিল সপ্তাহের সবচেয়ে আনন্দের দিন। স্কুল নেই- সকালে আর্ট স্কুলে রঙ নিয়ে যাচ্ছেতাই ধরণের কিছু একটা এঁকে দিন শুরু হতো। গাছের রঙ হতো লাল, মানুষের ডান হাতের চেয়ে বাম হাত বড় হয়ে যেত কোনোদিন। কোনো কোনো দিন রাস্তার চেয়ে নদী হয়ে যেত ছোট, আবার কোনোদিন জামা-কাপড়ে রঙ লাগিয়ে, পেন্সিল হারিয়ে আম্মুর বকুনি কপালে জুটতো।

আর্ট স্কুল শেষ করে পারসোনাল হেলিকপ্টারে (বাইসাইকেল) চড়ে চলে যেতাম শিশু একাডেমী। ওখানে বসতো বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়ার আসর। দারুন কিছু মজার বই আর সেই সাথে কখনো মানচিত্র খেলা, কখনোবা বিতর্ক, আবৃত্তি, অভিনয়, গল্প বলা, বক্তৃতা বা গানের আসর হতো। আর সাথে চলতো জম্পেশ আড্ডা।

আর আজ ছেলেমেয়েদের সারা সপ্তাহব্যাপী লেখাপড়ার মহাযজ্ঞ শেষে শুক্রবারে শুরু হয় কোচিং এর মডেল টেস্ট নামক মহাভারত। সকালে বাংলা, তারপরেই গণিত, পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, অর্থনীতি….!!!! অনেকে অবশ্য আর্ট স্কুলে যায়। তবে তাদের হাতে থাকে স্কুলের সিলেবাস। তারা সারা মাস জুড়ে তিনটে আম আর দুটো কলায় এঁকে যায়। তাদের গাছের পাতা সবুজ নয়- বিবর্ণ, তাদের নদীর জলে আর বুক ডোবেনা। তাদের আকাশে পাখি ওড়েনা, তাদের আঁকানো মানুষগুলোর মাথা থাকে, কিন্তু হৃদয় থাকেনা। আর গল্পের বই! সেটি তো কবেই জাদুঘরে গিয়েছে গো বাবুমশাই। টেক্সটবুক, টেক্সটবুক, টেক্সটবুক, টেক্সটবুক………..

এটাই কি হওয়া উচিত ছিল? লেখাপড়া আর সাংস্কৃতিক চর্চা আজ যেন প্রতিপক্ষ। সপ্তাহে একটা দিন কি আমরা তাদের জন্য রাখতে পারিনা? যেদিন তাদের যা খুশি তাই করবে। গান গাইবে, ছবি আঁকবে, গল্প বলবে। অভিভাবকদের কাছে অনুরোধ ছেলেমেয়েদেরকে সপ্তাহে একটি দিন অন্তত তাদের মত বাঁচতে দিন। নইলে যে আমাদের এই স্বপ্নের শহর আর কোনো স্বপ্নবাজ তরুন-তরুণীর পদচারনায় মুখরিত হবেনা। সমগ্র দেশেই আজ একই অবস্থা। দয়া করে জেগে উঠুন। আর কতদিন আমরা লেখাপড়া বনাম সাংস্কৃতিক চর্চার এই সর্বনাশী খেলার দর্শক হয়ে থাকবো?