ব্লগ কী জানিনা, ব্লগার হত্যা করি

শফিকুল ইসলাম(শফিক)
Published : 1 April 2015, 12:28 PM
Updated : 1 April 2015, 12:28 PM

একটি সদ্য প্রতিষ্ঠিত হাফেজিয়া মাদ্রাসার কার্যকরী কমিটির সাধারন সম্পাদক আলাপচারিতার এক পর্যায়ে হতাশ হয়ে বলেন, তাঁর মাদ্রাসা থেকে গত দুই ব্যাচে যে কয়েকজন ছাত্রকে পাগড়ি দেওয়া হয়েছে তাদের কেউই আজ এই লাইনে নেই। কেউ চা বিক্রি করে, কেউ বা ব্যবসা করছে। তিনি একটি মসজিদ কমিটিরও সাধারন সম্পাদক। তাঁকে বলি তিনি যে মসজিদের দায়িত্বে আছেন সেখানে এদের কাউকে নিয়োগ দিলেই পারেন। তখন তিনি তাদের বাংলা, কোরআন তাফসির এবং হাদিস বয়ানের দূর্বলতার কথা উল্লেখ করেন। আমি বললাম আপনি যেহেতু বুঝতে পারছেন ওদের কী শেখালে ওরা ভালো জায়গায় নিয়োগ পাবে ওদের সেভাবে গড়ে তুলতে পারেন। আরবির পাশাপাশি ইংরেজি ও বাংলা শেখার ব্যবস্থা করলে এই অবস্থা থেকে তারা মুক্তি পেতে পারে। উনি সেটা করেছেন এবং মাদ্রাসাটি আগের তুলনায় ভালো চলছে।

মুখস্থ নির্ভর হাফেজিয়া মাদ্রাসার ৯৮% শিক্ষার্থী নিম্নবিত্ত অথবা এতিম। আধুনিক শিক্ষার ব্যয় নির্বাহ করতে না পারা, জাগতিক দুঃখ দুর্দশার তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে পরকালের অফুরন্ত সুখের আশায় তারা আধুনিক সুযোগ সুবিধাহীন এই শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি আগ্রহী হয়। যেখানে সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। কোন সার্বজনীন পাঠ্যসূচী নেই।

বিজ্ঞান লেখক অভিজিত রায়ের হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই প্রকাশ্য দিবালোকে খুন করা হয়েছে ব্লগার ওয়াশিকুর বাবুকে। এই হত্যাকান্ড বেশি আলোচিত হয় খুন করে পালিয়ে যাওয়ার সময় হাতেনাতে ধরাপড়া দুই মাদ্রাসা ছাত্র আরিফুল ও জিকরুল্লার স্বীকারোক্তির কারণে।কাকে , কেন খুন করা হচ্ছে তার কিছুই জানা ছিলনা তাদের। এমনকি যাকে হত্যা করা হলো, তিনি কোথায় কী লিখেছেন তাও জানতেন না। ছবি হাতে দিয়ে এবং বাসার ঠিকানা বলে দিয়ে বলা হয়েছে ধর্মের অবমাননা করেছেে একে মেরে ফেলতে হবে। আর তারা মেরে ফেলল।

হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারীদের বয়স ২০ এর কোঠায়। তথ্যের অবাধ প্রবাহের এই যুগে তারা না জেনে, না বুঝে একজনকে মেরে ফেলল। যেখানে ৫ বছরের একটি ছোট শিশুও গুগল নামক তথ্য ভাণ্ডারের কথা জানে তারা কেন জানেনা? আজ আইনের চোখে তারা খুনি, খুন করার কারণে তাদের মনে কোন অনুশোচনা নেই। এরা কি বিখ্যাত ইংরেজি কবিতা Elegy Written in a Country Churchyard এর সেই হতভাগ্য গ্রাম্য যুবাদের একুশ শতকের প্রতিনিধি। তারা হয়ত কোন আধাত্নিক গুরুর ভাবশিষ্য যার কথা শুধু শুনতে হয় , মানতে হয় কোন প্রশ্ন করা যায় না। আমরা কি পর্দার অন্তরালে থাকা সেই ভাবগুরুদের কাছে জানতে পারব না কেনো তারা এদেরকে হত্যার মন্ত্রে দীক্ষিত করে মাঠে নামিয়ে দিয়েছেন। খুব জানতে মন চায় তারা কি তাদের সন্তানদেরও এভাবে অস্ত্র হাতে মাঠে নামিয়ে দেন? নাকি ভারত, সৌদি আরব অথবা মিশর থেকে ইসলামের উপর উচ্চতর ডিগ্রীর জন্য পাঠান যাতে ডিগ্রী নেওয়ার পর একটা ওয়াজ মাহফিল থেকে ৫ লাখ টাকা আয় করতে পারেন। আজ এদের কথা ভেবে খারাপ লাগে। দারিদ্র কে পুঁজি করে ডান, বাম, ক্ষমতাসীন, ক্ষমতায় আসতে আগ্রহী, ধার্মিক, অধার্মিক সবাই ব্যবসা করে। অবশ্য রাজীব হত্যায় অভিযুক্তরা সবাই খরুচে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।

নাস্তিকদের ইসলামের শত্রু আখ্যা দিচ্ছেন মানলাম। তারা ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলে। যখন ইসরাইল ফিলিস্তানে হামলা করে অথবা আমেরিকা ইরাক বা আফগানিস্তানে হামলা করে তারা ইসলাম ও মুসলমানের শত্রু। কিন্তু যখন সৌদি আরব ইয়েমেনে হামলা করে অথবা পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশে ইসলামী শাসন কায়েমের স্বপ্নে বিভোর ধর্মীয় গোষ্ঠী কর্তৃক মসজিদে হামলা হয় তখন কে কার শত্রু? ইসলামের চার খলিফার অনেকেই কিন্তু মুসলিম আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছেন। তাই ইসলামের যাত্রার শুরু থেকে আজ অবধি শুধু বিধর্মীদের দ্বারাই ইসলাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় না ।তাই আত্ম-সমালোচনার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার মানবীয় পদ্ধতি নিয়ে ভাবার সময় হয়েছে।

আজ মুক্তমনা না নাস্তিক এই বিতর্ক ব্লগ সংশ্লিষ্টদের মাঝে। অনলাইন ঘুরে খাঁটি নাস্তিকদের দেখা খুব কম পেয়েছি। যারা স্রষ্টার অস্তিত্ব যৌক্তিকভাবে অস্বীকার করেছে।বিভিন্ন ধরনের নাস্তিকে ভরপুর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। আছেন মুসলিম নাস্তিক যারা শুধু হিন্দু ধর্মকে গালি দেয়। আছেন হিন্দু নাস্তিক যারা ইসলাম ধর্মকে গালি দেয়। আরেক প্রকার নাস্তিক আছেন যারা সব ধর্মকে সমান তালে গালি দেয় । আস্তিকরাও কম যান না । নাস্তিকদের মা-বোন কে যতভাবে গালি দেয়া যায় একটাও বাদ রাখে না। এরা কেউ গালি দিয়ে ধর্ম রক্ষা করতে চায় আবার কেউ গালি দিয়ে ধর্ম ধ্বংশ করতে চায়। নাস্তিকরা যদি বিশ্বাস করেন স্রষ্টা নেই তবে কার পিছনে ছুটছেন? কাকে গালি দিচ্ছেন? যা চলছে এর নাম সামাজিক অবক্ষয়। এদের কারণে অভিজিত রায়দের প্রতিভার পূর্ণবিকাশ দেখতে পায় না সমাজ ।

হয়ত ভাবছেন আমি কে? আমি "বিজ্ঞান চাই, বিজ্ঞানবাদীতা নয়" মতবাদের আদর্শবাহী মুক্তমনা যে বিশ্বাস করে যে কথা বললে মানুষ রাগ করবে সে কথা না বলে চলুন বাদাম চিবানোর গল্পের উপর মুক্তভাবে মত প্রকাশ করি।

তথ্যসূত্রঃ
১ ।http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article946953.bdnews
২।http://epaper.prothom-alo.com/view/dhaka/2015-03-31/1