অটিস্টিক, শারীরিক-মানসিক দূর্বল শিশুদের প্রতি ভালোবাসা

শফিকুল ইসলাম(শফিক)
Published : 3 April 2015, 03:50 PM
Updated : 3 April 2015, 03:50 PM

দু'দিন আগে বিশ্ব অটিজম দিবস পালিত হলো। প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের অটিজম সচেতনায় নিরলস কাজ বাংলাদেশ তথা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই দিনটি পালনকে তাৎপর্যপূর্ণ করার ক্ষেত্রে প্রসংশনীয় ভূমিকা পালন করছে। দিবস উদযাপন অনেক সময় আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ থাকে। সাড়ম্বরে নারী দিবস পালন নারী নির্যাতন রোধে কতটুকু ভূমিকা রাখছে তা প্রশ্নসাপেক্ষ?

দুই কি তিন বছর আগের কথা । ব্যাটারি চালিত অটো রিকশায় চড়ে বাসায় ফিরছিলাম।একটি আড়াই বছরের বাচ্চার অনর্গল কথায় বিরক্ত বাবা মা এক পর্যায়ে ওকে থামানোর জন্য কড়া ভাষায় শাসিয়ে দিল। বাচ্চাটি তবুও চুপ করলো না। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতে লাগলাম ওর কথা । চোখের কোণে জল এসে গেল।

একমাত্র ভাতিজা দেড় মাস বয়সে খিঁচুনি রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু শয্যায়। মধ্যবিত্ত পরিবারের সর্বস্ব ত্যাগ করে হলেও সুস্থ করে তোলার আকুতি। চিকিৎসকরা ওর বাবা মাকে আশ্বস্ত করছেন আবার আমাকে বলছেন আমরা চেষ্টা করছি। জীবন মরণের সন্ধিক্ষণ থেকে সে ফিরে আসল। কিন্তু ডাক্তাররা জানালেন শিশুটির যেকোন এক দিকের কর্মক্ষমতা হারাবে। যখন আড়াই বছরের বাচ্চার কথায় বাবা মা অতিষ্ঠ সাড়ে তিন বছরের আমার ভাতিজা ঠিকভাবে হাঁটতে পারেনা, কথা বলতে পারেনা। ডাক্তার , থেরাপি , পথ্য আরো কত প্রাণান্ত চেষ্টা । অবশেষে সে ধীরে ধীরে সেরে উঠছে। সমাজের চোখে ল্যাংড়া , পাগল হয়ে।

একজন শারীরিক বা মানসিক ভাবে অসুস্থ বাচ্চার পিতা-মাতার চোখের জল খুব কাছ থেকে দেখেছি। শত সমস্যা কে হাসি মুখে মেনে নিয়ে বাচ্চাকে সুস্থ করে তোলার যে সাধনা তারা করেন তা্র কাছে তথাকথিত সংসার ত্যাগী সন্যাসীদের সাধনা সমুদ্রের এক ফোঁটা জলবিন্দু। সবাই যখন রহিম বাদশার মায়ের ছেলেকে পাগল বলে ডাকে তখন মা দিনে হাজার বার ডাকার চেষ্টা করে মোহাম্মদ আব্দুর রহিম বাদশা নামে। পারলে আরো উপাধি , উপনাম জড়িয়ে তাকে মহামান্বিত করার চেষ্টা করে। আমরা যখন মুখ দিয়ে লালা পড়া মানব সন্তান কে দেখে ঘৃণার স্বরে বলি 'এই আপনার ছেলেকে নিজের কাছে রাখেন'। মা তার আদরের সন্তানের লালা মিশ্রিত মুখে চুমুর পরশ বুলিয়ে দেন।

অটিজম দিবস চলে যাওয়ার পর অটিজমের গান হয়তো অনেকের কাছে বিরক্তিকর ঠেকবে। আসুন শুধু একদিনের জন্য নয় প্রতিদিনের জন্য সচেতন হই। অটিজম বা শারীরিক অক্ষম শিশুদের ভাল না বাসতে পারি অত্যন্ত ওর মা-বাবার সামনে এমন আচরণ না করি যা ওঁনাদের চোখের জল বাড়িয়ে দেয়। প্রতিজ্ঞা করি পাগল, ল্যাংড়া , কানা শব্দগুলোর তাচ্ছিল্যপূর্ণ ব্যবহার না করার জন্য।

রেজওয়ান মোর্শেদ ভাইয়ের অটিজম বিষয়ক একটি সুন্দর লেখা- বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস, আমাদের করণীয়

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস, আমাদের করণীয়
বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস, আমাদের করণীয়

মাননীয় প্রধানন্ত্রীর একটি কথা দিয়ে শেষ করব," ও হাঁটছে, ওকে হাঁটতে দাও।" অটিস্টিক শিশুদের এই পথচলা যেন আর দশটা স্বাভাবিক শিশুদের মত সবার কাছে আনন্দদায়ক হয় ।