জঙ্গিবাদ: পাকিস্তানকে দেখে সতর্ক হওয়া উচিত

শফিকুল ইসলাম(শফিক)
Published : 14 May 2015, 06:23 AM
Updated : 14 May 2015, 06:23 AM

আজ পাকিস্তানের করাচিতে একটি বাসে উঠে গুলি চালিয়ে ৪৩ জনকে হত্যা করেছে বন্দুকধারীরা।গত ডিসেম্বরে পেশোয়ারে জঙ্গি হামলায় ১৩২ জন শিশু সহ ১৪১ জনের মৃত্যু বিশ্ববাসী ভুলে যাওয়ার আগেই হয়তো পাকিস্তানিরা ভুলে গেছে। কারণ এমন কোন দিন নাই , এমন কোন সপ্তাহ নাই যেদিন পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ জঙ্গি হামলার শিকার হয় না। এতো বেশি হামলার ঘটনা ঘটছে কোনটা ছেড়ে কোনটা মনে রাখবেন। South Asia Terrorism Portal এর তথ্যমতে ২০০৩ সাল থেকে ২০১৫ সালের মে মাস পর্যন্ত পাকিস্তানে এ ধরণের ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা ৫৭৫৩২ জন।

পাকিস্তানের আজকের এই অবস্থা একদিনে সৃষ্টি হয়নি।তিল তিল করে গড়ে ওঠা জঙ্গি সংগঠন আজ অনেকের মতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের অস্তিত্বের জন্য হুমকি।আর এই উত্থানের পেছনে সে দেশটির সাধারণ মানুষ নয়, শাসক ও ক্ষমতাসীন এবং ক্ষমতার বলয়ের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের স্বার্থ বরাবর জড়িত ছিল। ক্ষমতার স্বার্থে তারা ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে বার বার ব্যবহার করেছে – একবার এ পক্ষ, আরেকবার আরেক পক্ষ।শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানকে পরিণত হয়েছে এক জঙ্গিবাদী রাষ্ট্রে। পাকিস্তানকে জঙ্গি রাষ্ট্র বানানোর দায়দায়িত্ব যদি কারো উপর বর্তায়, তারা হলো – সে দেশের শাসকশ্রেণী এবং ক্ষমতার মোহে অন্ধ রাজনীতিকরা।জাতিগত সংঘাত, ধর্মীয় মত বিরোধ এরকম আরো কিছু কারণও অবশ্য আছে।

বাংলাদেশে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ভেদাভেদ নাই বললেই চলে।বাংলাদেশের শাসকশ্রেণী, ক্ষমতাসীন এবং ক্ষমতা বলয়ের সঙ্গে সম্পৃক্তরা ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে নিজ রাজনীতি, ক্ষমতায় যাওয়া না যাওয়া এবং নির্বাচনী স্বার্থে ব্যবহার করেছে দীর্ঘকাল।বাংলাদেশের স্থপতি ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করেছেন। কিন্তু সেনাশাসক জেনারেল জিয়া ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে রাজনীতি করার সুযোগ দেন।ধর্মভিত্তিক দলগুলো সামরিক শাসকদের ব্যবহার করেছে নিজেদের স্বার্থে।আর সামরিক শাসকরা তাদের ব্যবহার করেছেন কখনো দল গঠন, আবার কখনো দল ভারী করার জন্য। ধর্মকে ব্যবহারের অন্যতম উদাহরণ স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদ। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে নেওয়া হয়েছে যুগৎপথ আন্দোলনে কিন্তু জামায়াতসহ অন্য দল গুলো যতটা না স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহন করেছিল তার চেয়ে বেশি ব্যস্ত ছিল নিজের দলের শক্তি বৃদ্ধিতে। আজকের বিবাদমান রাজনীতির অন্যতম প্রভাবক এই ধর্মভিত্তিক দলগুলো।

এরশাদের পতনের পর আওয়ামীলীগ , বিএনপি জামাতসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে ব্যবহার করেছে কখনো আন্দোলনের শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য আবার কখনো ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ভোটের হিসেব -নিকেষে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগের তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আনদোলনের শরিক ছিল জামায়াত । ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমাতায় আসলেও যুদ্ধাপ্রাধীদের বিচারের কোন উদ্যোগ নেয়নি।২০০৬ সালে আওয়ামীলীগ একটি ধর্মভিত্তিক দলের সাথে চুক্তিও করে।

ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিএনপি ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াতের সাথে জোট করে। বিএনপির হাত ধরে জামায়াতের মন্ত্রিত্ব পায় এবং তাদের সাংগাঠনিক ক্ষমতাকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশের মানুষ জঙ্গিবাদের ভয়াল রূপ প্রতক্ষ্য করে চার দলীয় জোট সরকারের আমলে। যদিও সরকার সব মিডিয়ার সৃষ্টি বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিল।

নব্য ধর্মভিত্তিক দল হিসেবে আবির্ভাব হয় হেফাজতের যারা দেশের সংবিধান , মৌলিক আদর্শের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছে।রাজনৈতিক দলগুলো হেফাজত তোষণের প্রতিযোগিতা শুরু করে। হেফাজতের ৫ মের সমাবেশে কেউ মিনারেল ওয়াটার সরবরাহ করলে , আরেকজন ডাবের পানি নিয়ে হাজির হয়। ক্ষমাতসীন আওয়ামীলীগ সেদিন হেফাজতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও কোন অজানা কারণে হেফাজত আজ প্রায় আওয়ামী সমর্থক।

ফিরে আসি পাকিস্তানের জঙ্গিবাদ পরিস্থিতে। আজকের পাকিস্তানের ত্রাস পাকিস্তানি তালেবান ২০০৭ সালে আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের পূর্বে ৩৭ টি দল উপদলে বিভক্ত ছিল। ২০০৭ সালের পরের পরিসখ্যানের দিকে চোখ বুলালে আমরা দেখতে পাই ২০০৬ সালে যখন জঙ্গিবাদের শিকারের সংখ্যা ১৪৭১ জন ২০০৭ সালে তা এক লাফে ৩৫০৮ জনে দাঁড়ায়।জঙ্গিদের সম্মিলিত শক্তি কত বিপর্যয় ডেকে নিয়ে আসতে পারে তার উদাহরণ বর্তমান পাকিস্তান।বাংলাদেশে গত কয়েক মাসে বেশ কয়েক জন ভিন্নমতাবলম্বী একই কায়দায় হত্যা কান্ডের শিকার হয়েছেন। আনসারুল্লাহ বাংলা ৭, আনসারুল্লাহ বাংলা ৮, আল কায়েদা ইত্যাদি নামে অনেকেই এসব হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেছে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী এসব ঘটনার কোন কূল কিনারা করতে পারছেনা। প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা প্রমাণ করে ওরা কত শক্তিশালী এবং ওদের লক্ষ্য কত নিঁখুত। এসব ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ভেবে অনেকে এড়িয়ে যেতে চাইছে।ব্লগার রাজিব হত্যায় সমবেদনা জানানোয় ভোটের বাক্সে টান পড়েছে ভেবে লেখক অভিজিত হত্যায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের অন্য মন্ত্রিরা প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া দেখানোর প্রয়োজন বোধ করেন নি।প্রধানমন্ত্রী পুত্র তো বলেই দিয়েছেন ওনাদের সরকার নাস্তিকতা নয় ধর্ম নিরপেক্ষতা চায়। কিন্তু যেদিন ৭+৮+আলঅকায়েদা + অন্যান্য জঙ্গি শক্তি =১ হবে সেদিন রাষ্ট্র, নিরাপত্তা বাহিনী, স্কুলের শিক্ষার্থী, আইনজীবী , রাজনীতিবিদ কেউ রক্ষা পাবেনা। ক্ষুদ্র স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে জঙ্গিবাদ কে প্রতিহত করার এখনই সময়।

সূত্র লিঙ্কঃ-
১। http://www.satp.org/satporgtp/countries/Pakistan/database/casualties.htm
২।http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article967308.bdnews
৩।http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article967144.bdnews
৪।http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article931281.bdnews
৫।http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article946953.bdnews
৬।http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article883281.bdnews
৭।http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article967595.bdnews
৮।http://bangla.bdnews24.com/world/article897200.bdnews
৯।http://m.bdnews24.com/bn/detail/home/967694