মাইক্রোবাসে গণধর্ষণ: সাহসী বোনটিকে অভিনন্দন

শফিকুল ইসলাম(শফিক)
Published : 25 May 2015, 04:48 AM
Updated : 25 May 2015, 04:48 AM


খুব খারাপ লাগছিল। মানুষ কিভাবে এতো নীচে নামতে পারে ভেবে কূল পাচ্ছিলাম না। অনেকে ঘটনাটি নিয়ে লিখেছে। দ্রোহ, সহানুভূতি, বঞ্চনার ইতিহাস, সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ভরপুর ব্লগ ও অনলাইনে প্রকাশিত লেখগুলো পড়ছিলাম। অনেক কিছু লিখতে ইচ্ছে হচ্ছিল কিন্তু লেখনীর ক্রম হ্রাসমান শক্তির কথা ভেবে কিছুই লিখিনি। জাহেদ ভাইয়ের একটি লেখায় 'কী হবে লিখে?' বলে মন্তব্য করে তীব্র হতাশা প্রকাশ করেছিলাম। কিন্তু বিডিনিউজ২৪ এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন আমার মাঝে লেখার তীব্র আকাঙ্খা সৃষ্টি করে। ধর্ষণের শিকার বোনটি মানসিক ও শারীরিকভাবে হতাশ কিন্তু ধর্ষকের শাস্তির দাবিতে লড়ে যেতে চায়। চোখের কোণে জল এসে যায়।অভিনন্দন বোনটিকে!!!

বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলীর বরাত দিয়ে বিডিনিউজ জানায়, "সে সাহসী নারী, নিজের দুর্দশা কাটিয়ে উঠতে পারছে। অপরাধীদের শনাক্ত করার কাজেও সহযোগিতা করছে।" হ্যাঁ , আমরা একেই সাহস বলব। সাহস বলব তাঁর মানসিকতাকে। তাঁর এই ঘুরে দঁড়ানোর প্রত্যয় এই মুহূর্তে খুব দরকার। যখন আমার দেশের বোনেরা, মায়েরা একের পর এক বর্বর আচরণের শিকার হচ্ছে, তখন তাঁঁর এই মানসিকতা অনেক কে শক্তি জোগাবে।

রাস্তার মোড়ে দাঁড়ানো বখাটে ছেলে 'সুন্দরী' বলার কারণে যে বোনটি আত্মহত্যা করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়াবে এই বোনটির বিমূর্ত প্রতিরূপ। বলবে,"দেখোনা, কত বিপর্যয়ের মাঝেও আমি যুদ্ধ করতে চাচ্ছি? আর তুমি?" তখন আবেগী মেয়েটি চোখের জল মুছে আপন শক্তিতে বখাটে প্রতিরোধের দীক্ষা নেবে।

একজন বখাটে পাঁচজন মেয়ের পথ আগলে রাখার কারণে ক্লাশে ২০ মিনিট দেরি করে ঢোকার অপরাধে শাস্তি পাওয়া মেয়েটি আপন শক্তির সন্ধান পাবে। জীবনের নির্মম বাস্তবতাকে ঠেলে দাঁড়ানো বোনটি তার কাছে দেখা দিবে শক্তির আধার হিসেবে। ১ অনুপাত ৫ নয় ১ অনুপাত ১ এ বিশ্বাসী হয়ে উঠবে মেয়েটি।

পহেলা বৈশাখে যৌন হয়রানির শিকার হওয়া সেই মা -বোনদের হয়তো সেদিনের তিক্ত অভিজ্ঞতা ভুলে যেতে সাহায্য করবে। প্রশাসনের অভিযোগ না পাওয়ার অজুহাতে পানি ঢেলে দিয়ে কেউ এসে বলবে আমি সেই নারী যে পহেলা বৈশাখে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে।ওটা কোন দুষ্টুমি ছিল না ।অপরাধীদের বিচার চাই।

প্রচন্ড সাহসী যে মেয়েটির মনে সেদিনের ঘটনায় একটু হলেও কম্পন হয়েছিল সেও তাঁর সব ভয় দূর করে প্রচন্ড সাহসে উদ্দীপ্ত হবে। নব উদ্দমে ছুটে যাবে অফিসে, শাহবাগের প্রতিবাদ মঞ্চে।

এভাবে হয়তো তার জীবনীশক্তি সঞ্চারিত হবে প্রত্যেক বাঙালি নারীর মাঝে। তাঁকে দেখে অনেকে বাঁচতে শিখবে, অনেকে দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পাবে। এই ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নামা প্রত্যেক মানুষ তাঁদের আন্দোলনের সার্থকতা খুঁজে পাবে, একটি জীবনে বেঁচে থাকার প্রেরণা সৃষ্টি করার স্বস্তি নিয়ে তাঁরা ঘরে ফিরতে পারবে।

বোনটির সাহস অনেক ফলপ্রসূ হবে আমাদের আজকের ব্যক্তি জীবনে, জাতীয় জীবনে। লাখো কণ্ঠের যে প্রতিবাদ প্রতিবাদ আজ বাংলার আকাশে ধবনিত হচ্ছে তার চেয়ে শক্তিশালী হবে ঐ মানসিক বিপর্যস্ত বোনটির কণ্ঠ। তাঁর কণ্ঠে প্রকম্পিত হবে ধর্ষকদের পতিত হৃদয়, ক্ষমতাসীনদের শক্ত ভিত ।

অনেক বেশি আবেগ ভর করেছে । কী লিখব, কী অভিধায় সম্বোধন করব তাঁকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না, কী বিশেষণ তাঁর জন্য উপযুক্ত তা খুঁজতে গলদ্ঘর্ম হয়েছি। এই সংক্ষিপ্ত লেখায় তার সাহসের গুরুত্ব হয়তো ফুটিয়ে তুলতে পারিনি। হতে পারে আবেগ, ভাবের সীমাবদ্ধতা অথবা শব্দ ভান্ডারের অপ্রতুলতা। কিন্তু এতোটুকু বলতে পারি ভালোবাসার এতটুকু ঘাটতি ছিল না। যতক্ষণ লিখেছি, যখন ভাবি বোনটির সাহসী সত্তার একটা প্রতিচ্ছবি মনের মাঝে ভেসে ওঠে।আদিবাসী বলে যারা বোনটি আলাদা করতে চায় এটা তাদের মানসিক সীমাবদ্ধতা।

আবারো অভিনন্দন জানাবো বোনটিকে 'আমার জীবনের সব শেষ হয়ে গেছে' বলে গতানুগতিক কান্নায় আকাশ -বাতাস ভারী না করার জন্য। সব ঝেড়ে ফেলে নতুন করে তোমার সাহসী পথচলা আরো দৃপ্ত ও বেগবান হোক। অভিনন্দন! অভিনন্দন!! অভিনন্দন!!!