আসুন, আমরা সবাই কিউবি কিনি!!!

মোঃ শফিউল আলম চৌধূরী
Published : 3 July 2020, 05:33 AM
Updated : 20 July 2011, 10:34 AM

গত মার্চ মাসের ৩১ তারিখ আমি কিউবির একটি প্রিপেইড প্লান কিনি। প্রথমেই চমক! মডেম ১০০০ টাকা আর ১ গিগা ৪০০ টাকায়। তাও আবার ৫১২ কেবিপিএস স্পিড।

যদিও আমি অন্য একটি কানেকশন ব্যবহার করি, তারপরও এটি নিলাম শুধু মাত্র অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য।

যাই হোক, কিনে খুব খুশি মন বাড়ি ফিরলাম, বাড়ি এসেই আবার চমক, ৫১২ কেবিপিএস মানে ৬৪ কিলো বাইট পার সেকেন্ড স্পিড। প্রথম থেকেই ৬৪-৭০ পাচ্ছিলাম। চলল এই ভাবে পুরা একটা মাস। এক মাস চলার পর আবার রিচার্জ। এর মধ্যেই ঘটে গেল তৃতীয়ত চমক। পেলাম ডাবল স্পিড।

ডাবল স্পিড ঘোষনা করার আগেই ব্লগে পড়লাম কয়েক জন নাকি আগে থেকেই পাচ্ছেন। আমার চলছিল কোন রকম, কখনও ৪০, কখনও ৭০।

এর পরের চমক খাইলাম যখন পত্রিকায় দেখলাম তাদের স্পিড ডাবল হয়ে গেছে। ঝাঁপিয়ে পড়লাম মডেম নিয়ে, যা আছে কপালে। কিন্তু বিধি বাম! স্পিড আর ২০ এর উপরেই উঠে না। সারা দিন এই অবস্থায় কাটার পর ফোন করলাম তাদের কাস্টমার কেয়ারে, বলল ২৪ ঘন্টার মধ্যে সব ওকে হয়ে যাবে। কই ২৪ ঘন্টা ৭২ ঘন্টা চলে যায় ২০ এর উপর আর উঠে না।

সেই মাসটা প্রায় যখন শেষ, আর আমার মডেম কানেক্ট হয় না। কানেক্ট হলেও স্পিড ২ কিলোবাইটের উপরে যায় না। আবার ফোন করলাম তাদের কাস্টমার কেয়ারে।

শুরু হল প্যাচাল, আপনি কি জেনুইন উইন্ডোজ ব্যবহার করেন? আপনার এন্টিভাইরাস কি? ইত্যাদি ইত্যাদি। মাস শেষ হলেও নতুন কার্ড রিচার্জের সাহস পেলাম না। ফোন করতে থাকলাম জুন মাসের ৮ তারিখ থেকে শুরু করে এই মাসের ৪ তারিখ পর্যন্ত। ২দিন পর পর কল করি, আর ওরা বলে ২ দিনের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার যাবে।

কই বাবা ইঞ্জিনিয়ার! চলতে থাকল ফোন করা। কোন সাড়া নাই।

জুলাই মাসের ৪/৫ তারিখে ফোন করা হলে তখন বলল যে তাদের টেকনিক্যাল কিছু প্রবলেম ছিল, সেটা ঠিক করেছে, এখন কার্ড রিচার্জ করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। তাদের কথা বিশ্বাস করে কার্ড রিচার্জ করলাম। করে দেখি একই অবস্থা। মাত্র একবার কানেক্ট করতে পারলাম। তার পর কানেক্ট হয়েই কেটে যায়।

এর পর জুলাই মাসের ১০ তারিখে ফোন করলে বলে আমাকে নাকি কয়বার ফোন করেও তারা পায় নাই। বলে ভূল নম্বর। অবাক হয়ে গেলাম। কারন আমি আমার হোস্টিং এর ব্যবসা চালাই এই ফোন নম্বর দিয়েই, এবং আমার সব কাস্টমার আমাকে সব সময়ই পাচ্ছে।

আমি বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করলাম। বললাম যে, আপনি শিওর তো যে আমার নম্বরে কয়েকবার ফোন করলেও ভূল নম্বর বলেছে। সে বলল সে নাকি শিওর। আমি তাকে বললাম ঠিক আছে আমি এখন আপনাকে আমার নম্বর দিব না, কিন্তু চ্যালেঞ্জ যে দুই দিনের মধ্যে আমাকে আমার ফোন নম্বরে ফোন দিবে। সে হেসে বলল, স্যার বলেন এটা কি করে সম্ভব? আমি ফোনটি আমার এক বন্ধু ধরিয়ে দিয়ে বললাম গালি দিতে। ভাই কি বলব, যা মুখে আসছে তাই বলছে, এবং বলা শেষ হলে রেখে দিলাম।

ভাই পঞ্চম চমক অপেক্ষা করছিল, ফোন রাখার মাত্র ২২ মিনিটের মাথায় আমাকে কিউবি কাস্টমার কেয়ার থেকে ফোন করা হল! বলল যে আমার বাসায় পরের দিন একজন ইঞ্জিনিয়ার যাবে। আমি তাকে প্রশ্ন করলাম যে এখন আপনার ফোন নম্বর কোথায় পেলেন? কোন উত্তর নেই। ফোন কিছু পরে বলল যে, স্যার আমাদের একটু সমস্যার কারণে আপনার সাথে আমরা যোগাযোগ করতে পারিনি।

যাই হোক, ১১ তারিখ ইঞ্জিনিয়ার আসলো। এসে কিছু সময় কাটিয়ে বলে যে আমার নাকি পাসওয়ার্ড ভুলছিল। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম তাহলে ঐ সময় কানেক্ট হলই বা কি করে, আর রিচার্জই বা করলাম কি করে? বলে মাঝে মাঝে ভূল করে এটা হয়ে যায়।

চিন্তা করেন কত বড় সিকিউরিটি প্রবলেম!

যাই হোক, সে প্রায় ২ ঘন্টা চেষ্টা করে একবার কানেক্ট করতে পারল, এর পর সে আর ডিসকানেক্ট করে দেখাতে নারাজ। সে বলল এখন থেকে সব ঠিক চলবে। বলেই সে চলে যেতে উদ্যত হল। তাকে রেখে কয়েকবার কানেক্টের ট্রাই করলাম। ১০-১২ বার চেষ্টা করে মাত্র একবার পারলাম। তাও স্পিড ২-৫ এর উপরে যায় না।

আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে আমি যদি ডিভাইস ফিরিয়ে দিতে চাই তহলে সময় কত দিন আছে আর কি ভাবে ফিরিয়ে দিব। সে বলল, সময় নাকি কেনার দিন থেকে ৬ মাস। এই কথা অবশ্য কেনার দিনই শুনেছিলাম। তো আমি তার কাছে প্রসিডিউর শুনতে চাইলে সে বলল কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিতে। কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে শুনি কাহিনি উল্টা। ১৪ দিনে নাকি মানি ব্যাক হয়, এর পর না।

ইঞ্জিনিয়ারকে ধরিয়ে দিলাম, তারা কি যেন ফুসুর ফুসুর করে, ইঞ্জিনিয়ার বলল, আমাকে বলল সে এই বিষয়ে কিছুই জানে না।

বলেই ইঞ্জিনিয়ার চলে গেল। বিকাল থেকে আর কানেক্ট হয় না।

আবার কল করলাম কলসেন্টারে, এখন আমার ফোন পেলেই কিছু সময় কথা বলে কেটে দেয়।

একবার একজন বলল, একবার ইঞ্জিনিয়ার গেলে নাকি ৬ মাসের মধ্যে আর যাবে না। এটাই নাকি নিয়ম।

সুতরাং সবাইকে আমি মন থেকে সাজেস্ট করব কিউবি কেনার জন্য!!!