মুসলিম সমাজের বিভক্তি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড

এস. এম. মাহবুব হোসেন
Published : 3 Dec 2017, 11:28 AM
Updated : 3 Dec 2017, 11:28 AM

মুসলিম সন্ত্রাসী সংগঠন আইএস সমস্ত পৃথিবীর মানুষের আরামের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। মুসলিমরা আজ মসজিদে বোমা মেরে মানুষ মারছে, মন্দির ও গীর্জায় বোমা মেরে মানুষ মারছে। টুইনটাওয়ার, রেল স্টেশন, বাস স্টেশনে বোমা মেরে মানুষ মারছে। সারা পৃথিবীজুড়ে মুসলিমরা আজ সন্ত্রাসী হিসাবে পরিচিত। অথচ ইসলাম শান্তির ধর্ম! ইসলামে মানুষ আর মানতার কল্যাণ নিহিত রয়েছে।

কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলেও সত্য যে, এই ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা কেবলমাত্র ব্যক্তি স্বার্থে বহুদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আবার প্রত্যেকটা দলের ভিতরে রয়েছে বহু শাখা-প্রশাখা। এদের মধ্য জামায়াতে ইসলাম, আটরশি, আহমেদ শফি, দেওয়ানবাগী, রাজারবাগী, চরমোনাই, ওলিপুরি ও ফুলতলির দল অন্যতম। এদের একদলের মতের সাথে অন্যদলের মতের মিল কখনো হয়না।

একদল বলে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা ফরজ, আবার অন্য দল বলে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা হারাম। একদল বলে নবী নূরের তৈরি, আবার অন্যদল বলে নবী মাঠির তৈরি। একদল বলে দাঁড়াইয়া কিয়াম করা ফরজ, আবার অন্যদল বলে দাঁড়াইয়া কিয়াম হারাম। একদল বলে আদম সেজদাহ জায়েজ, আবার অন্যদল বলে নাজায়েজ। আর এসব মতানৈকের কারণে কখনো কখনো তারা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে।

যেমন কিছুদিন আগে, সুনামগঞ্জের ছাতকে নারায়ে রিসালাতের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে শিশু ও মহিলাসহ তিনজনের প্রাণহানি ঘটে। ওরা প্রত্যেক দলেই পবিত্র কোরআনের রেফারেন্স দিয়ে নিজেদের হক (সত্য) বলে দাবি করার পাশাপাশি অন্যদলগুলোকে বাতিল (মিথ্যা) বলে প্রচার করছে। প্রত্যেকটি দলেই একই বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেও রেফারেন্স দিচ্ছে পবিত্র কোরআনের। অথচ পবিত্র কোরআনে একটি বাক্যের সাংঘর্ষিক অন্য কোন বাক্য নেই। এর মানে হল: পবিত্র কোরআনে একটি কথার বিরোধী অন্য কোন কথা নেই। তাহলে একই বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেও সবাই নিজেকে হক (সত্য) বলে দাবি করে কিভাবে? আসলে ওরা পবিত্র কোরআনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে পথভ্রষ্ট করছে।

হাদিসে বলা হয়েছে, তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করোনা। কিন্তু তারপরও নিজেদের দলের আধিপত্য বিস্তারের জন্য তারা একে অন্যের সাথে মারামারি করছে।

ওরা ধর্মের জন্য নয়, বরং নিজের জন্যই ওরা ধর্মকে ব্যবহার করছে। নিজেদের দলের লোকসংখ্যা বাড়াতে মিথ্যা কাহিনী বলে বেড়াচ্ছে। ওদের মূল টার্গেট হল, দেশের বোকা ও মূর্খলোকেরা। এসব পীরপূজারী লোকেরা, মিথ্যা কথা বলায়ও খুব পটু।

উদাহরণ স্বরুপ ডাঃ জাকির নায়েকের কথা বলছি; আবার কেউ মনে করবেন না যে, আমি ডাঃ জাকির নায়েকের অনুসারি বা ভক্ত। আপনারা যারা ডাঃ জাকির নায়েকের লেকচার শুনেছেন তাদেরকে বলবো, ডাঃ জাকির নায়েক সম্পর্কে ওলিপুরির লেখা বই বা ওয়াজ শুনেন। তাহলেই আপনারা প্রমাণ পেয়ে যাবেন যে, ওলিপুরি কত বড় একটা মিথ্যাবাদী। আর কিভাবে বোকা ও মূর্খ লোকদের ধোকা দেয় সে। এদের মত লোকদের কারণেই মানুষ আজ মূল ইসলাম থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। আর এদের বহুদলে বিভক্তি ও একে অন্যের সাথে মারামরি ও খুন খারাপির সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে ইসলামের শত্রুরা।

কাজেই এইসব কাণ্ডজ্ঞানহীন লোকদের ভুয়া কথাবার্তায় লাগামটানা বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব। ইসলামী যেকোন বিষয়ে ফতোয়া দেয়ার দায়িত্ব শুধুমাত্র ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে দিতে হবে। প্রত্যেকটা ইসলামী দলের কর্মকান্ড সরকারি নজরদারিতে রাখতে হবে। অন্যথায় আমরা ধর্মীয় সন্ত্রাসীর তালিকায় পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে যাবো।