বাংলাদেশ ও পাকিস্তান: শেষ তুলনা

শহীদুল্লাহ শরীফ
Published : 17 Dec 2014, 06:38 AM
Updated : 17 Dec 2014, 06:38 AM

[ আজকের বাংলাদেশ ও পাকিস্তান একটি ইতিবাচক অন্যটি নেতিবাচক দৃষ্টান্ত-দেশ। এই তুলনামূলক পোস্টের জন্য আগাম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আশা করি এটাই শেষ তুলনা-পোস্ট। ]

ডেটলাইন ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪, যখন বাংলাদেশে চলছে বিজয়-উৎসব, তখন পাকিদের দেশে চলছে পরাজয়ের ধারা রক্তের মচ্ছব। একজন মানুষ হিসেবে এতে খুশি হওয়া যায় না। তবে, এটা তাদের নিয়তি, ক্রিয়েটেড বাই দেয়ার ঔন। মানুষ, সমাজ, দেশ ও জাতি সবাই তার কৃতকর্মের ফল ভোগ করে। তাই, দেখুন, কী নির্মম সত্য, প্রতিতুলনা। দেখুন, দুটো জাতির অর্জিত সুফল আর কুফল। এখানে বাংলাদেশে চলছে শহীদ বেদিতে ফুলের ডালা দেওয়ার পালা, বিজয়-উৎসব, পাকিদের দেশে চলছে রক্তের হোলিখেলা, পরাজয়ের মচ্ছব। আবার বলি, এটাই যার যার কর্মফল বা নিয়তি, ক্রিয়েটেড বাই দেয়ার ঔন।

ইসলামের নামে পাকিরা এমনি করেই আমাদের উপর অন্যায় যুদ্ধ ছাপিয়ে দিয়ে পশুর মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। যে ধর্মের দোহাই দিয়ে পাকিস্তানের জন্ম, যার জন্য বাংলাদেশকে নানাভাবে শোষণ করেছিল পাকিস্তানি রাষ্ট্রের কুশীলবরা, সেই ধর্মের ভূত এখনো চেপে আছে পাকিস্তানের ঘাড়ে। ধর্মের কারণেই আজ মঙ্গলবার দেশটিতে ঝরে গেল শতাধিক শিশুর প্রাণ। হায় পাকিস্তান! হায়রে ধর্ম!

এই তালেবান আর মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে গণহত্যা চালানো রাজাকার-আলবদরের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় কি? এরা এমনই, এদের পরিচয়, এরা হানাদার, জঙ্গি, তালেবান, ধম্মাদ্ধ এরা পাকিস্তানি —- এরা কোন নির্দিষ্ট দেশ বা জাতির শত্রু নয় বরং সমগ্র মানব জাতির শত্রু। ওদের এবং ওদের দোসরদেরকে সকলের ঘৃণা করা উচিত । তাই, একাত্তরের রাজাকার-আলবদরের উত্তরসুরী তালেবানদের প্রতি অন্তর থেকে ধিক্কার জানাই।

ধর্মের বাড়াবাড়িতে পাকিস্তান আজও জ্বলছে, আরও কত দিন জ্বলবে কে জানে? খালি হচ্ছে হাজারো মায়ের কোল। কবে এর শেষ আমরা জানি না। তবে পাকিস্তান এই পরিস্থিতি থেকে তখনই বের হতে পারবে, যখন পাকিস্তানের সব রাজনৈতিক দল অসাম্পদ্রায়িক চেতানায় এক হয়ে কাজ করতে পারবে।

বাংলাদেশ যতটুকু পেরেছে, তা এখন পাকিস্তানের জন্য উদাহরণ হতে পারে।তাই পাকিস্তানের উচিত বাংলাদেশ রোলমডেল ধরে নতুন করে শুরু করা, রাজনৈতিকভাবে এগিয়ে যাওয়া।

পাকিস্তান থেকে যেন আমরাও শিক্ষা নিই। যেন মনে রাখি পাকিস্তান একটি নেতিবাচক দৃষ্টান্ত-দেশ। ওরা যা করছে তার অধিকাংশ খারাপ, সেগুলো যেন আমরাও বর্জন করি। আমরা যেন ধর্মনিরপেক্ষ ও সম্প্রীতির দেশ হিসেবেই নিজের টিকিয়ে রাখি।

এমনকি আজকের বাংলাদেশ ও পাকিস্তান যে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দৃষ্টান্ত-দেশের তুলনা করলাম এটাই হোক শেষ তুলনা। আমরা এমনই এগিয়ে যাবো আর ওরা এমনই পিছনে পড়বে যে আর যেন এই তুলনার অপমানজনক পোস্ট লিখতে না হয়।

ছবিতে দেখুন এক দিকে বাংলাদেশ আরেক দিকে পাকিস্তান।

আমরা বাঙালি জাতি, রক্ত দিয়ে জিনেছি বাংলা। ছিনিয়ে এনেছি স্বাধীনতা হানাদার এইসব পাকিস্তানি থেকে, অর্জন করেছি বিজয়। ওদেরকে দিয়েছি চির পরাজয়। তাই, ৪৩তম বিজয়ের উৎসব চলছে বাংলাদেশে। আর হানাদার পাকিরা প্রতিটি পদে পদে পরাজয়ের কাজ করেছে। পরিণামে তাদের দেশে থামছে না পরাজয়ের ধারা রক্তের হোলি খেলা। কী নিষ্ঠুর নিয়তি ওদের জন্য। যার যা পাওনা। অবশ্য আমি তাদের রক্তে খুশি নই। উল্লসিতও নই। কারণ, সেখানে যারা প্রাণ হারাল তারা শিশু, কিশোর, সর্বোপরি মানুষ। একটি শিক্ষাঙ্গনে শতাধিক শিশু, কিশোর নিহত হল, কী নির্মমতা! এটা পাকিদের দেশেই সম্ভব।

আমরা মানুষ বীর বাঙালি। আমরা দেশপ্রেমে, মানবিকতায় সেরা জাতিদের অন্যতম। আমরা দেশের প্রয়োজনের অস্ত্র হাতে তুলে নিতে পারি। যেমন একাত্তরে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র হাতে দেশমাতাকে রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়েছি শত্রু-পাকিদের বিরুদ্ধে, তাদের দোসর রাজাকার আলবদরদের বিরুদ্ধে। কিন্তু আমরা অস্ত্রবাজ নই, আমরা সব রকম সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। আমরা আমাদের দেশ ও জাতি যারা উপহার দিয়েছে বুকের রক্ত ঢেলে পাকিদের তাড়িয়ে দিয়েছে, একটি নষ্ট জাতির সাথে মনুষত্বহীনতার অংশীদার হওয়া থেকে আমাদের রক্ষা করেছে সেই মুক্তিযোদ্ধাদের আজ বিজয় দিবসে পাকিদের রক্তাক্ত প্রতিদিনের ব্যর্থ জীবনযাপনের অন্যতম দিনে আরও বেশি করে শ্রদ্ধা জানাই।

আমাদের দেশের শহীদ ও যারা বেঁচে আছেন দেশের যুদ্ধ করেছেন তাঁরা ঐতিহাসিকভাবে সঠিক কাজটি করেছিলেন। যাাঁরা পাকিদের সাথে হাত মিলিয়েছিল সেই কোলাবরেটরদের জানাই ঐতিহাসিক ঘৃণা। তারা শাস্তি পাক। তারা নিপাত যাক। যত দিন বেঁেচে আছে দেখুক তাদের পাকিস্তানিদের অবস্থা। আমরা দেখতে চাই বিজয়ের উৎসব। বিজয়ের দিনে, আমরা গর্বিত হৃদয়ে স্মরণ করতে চাই আমাদের বীরদের।

আমাদের দেশে এ-বছর আমি লক্ষ্য করেছি শহরে আমার পাড়ায় তরুণরা তাদের ক্লাবের ব্যানারে এবারও বিজয় দিবসের উৎসবের নানান আয়োজন করেছে। যেমন, ছোট ছোট কাগজের পতাকাকে রশি/সূতোয় লাগিয়ে গলির সড়ক রাঙিয়ে তুলেছে ১৬ই ডিসেম্বরের আগের রাতে। পাড়ার শিশু থেকে তরুণ সবার জন্য নানান খেলার আয়োজন ও পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছে।


একটি শিক্ষাঙ্গনের বিজয় দিবস উদযাপনের সাথে আমার আংশিক সক্রিয়ভাবে এবং আংশিক দর্শকের কাতারে দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষণের সুযোগ ঘটেছে। এটি একটি প্রাইভেট স্কুল। স্কুলটি শিশুদের মাধ্যমে শিশুকেন্দ্রিক পন্থায় বিজয় দিবস ও বার্ষিক সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পালন করেছে। শিশুদেরকে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল ধারায় প্রতিভা বিকাশের যে সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে তা প্রশংসনীয়; এমনকি অনুসরণীয়ও হতে পারে। সবচেয়ে ভালো লেগেছে, স্কুল কর্তৃপক্ষ শিশুকেন্দ্রিক পন্থায় বিজয় দিবস ও বার্ষিক সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পালন করতে গিয়ে শিক্ষকগণ যথার্থই সহায়কের ভূমিকা পালন করেছেন এবং শিশুদেরকে তাদের মতো করে কাজ করতে দিয়ে আমার দৃষ্টিতে একটি ভালো দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন।

আমাদের বিজয় দিবস ও জাতীয় দিবসগুলোতে পাড়া-মহল্লায় ও শিক্ষাঙ্গনে সর্বত্র সৃষ্টি হোক সৃজনশীলতার অনুশীলন, শিশু-কিশোর-তরুণদের সম্ভাবনা ও প্রতিভা বিকশিত হোক নানান আয়োজনে। তাতে শহীদদের জীবনদান সার্থক হবে তাদের আত্মা শান্তি পাবে।