হ্যাপিদের মিডিয়ায় যৌনকথন, এ/ভি ক্লিপস, সমাজে ধর্ষণ-হত্যার মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক

শহীদুল্লাহ শরীফ
Published : 20 Dec 2014, 05:49 PM
Updated : 20 Dec 2014, 05:49 PM

কিছু মিডিয়ার মাধমে হ্যাপিদের সমাজে অবৈধ যৌনতার পিচ্ছিল গল্প-কথার ছড়াছড়ি, অডিও-ভিডিও ক্লিপস, ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ড ইত্যাদির মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক থাকতে পারে। কিন্তু সমাজের এসব বিষয় দেখার কি কেউ নেই?
মিডিয়ার শিরোনাম দেখুন:
'আমরা হাসবেন্ড-ওয়াইফের মতো ছিলাম',

হ্যাপি রুবেলের শেষ ফোনালাপ,

তবুও রুবেলকে দেখতে চান হ্যাপি,

'মাইয়্যাদের লইয়া আছি',

'তোমাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করব না',

রুবেলকে ছাড়া কিছুই বুঝি না : হ্যাপি।

কিছু মিডিয়া প্রতিবেদনের নামে এরকম শিরোনামে লিখে যাচ্ছে।এগুলো কি সংবাদ না সংবাদ-পণ্য? পর্ণো-সংবাদ? এসব মিডিয়া হ্যাপি ও রুবেল বিষয়ক নিউজটিক পেয়ে হামলে পড়েছে।

কিছু দিন আগে আরেক তারকা প্রভাকে নিয়ে মিডিয়ায় এরকম রগরগে নিউজ, ইউটিউবে ভিডিও ক্লিপ, কত অসামাজিকতার আলাপ আলোচনা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিল। যার জন্য রাস্তাঘাটে গাড়িতে চলতেও বিব্রত বোধ করতাম। এমন রিরংসা রঞ্জিত আলোচনা শুনতে হয়, সমাজের আলোচিত হয় যার প্রভাব যে সমাজে কত মন্দ তা বলাই বাহুল্য।কিন্তু কে থামাবে মিডিয়াকে?

সেই প্রভাকে এখন দেখি মিডিয়ায় অভিনয় করছে। শোনা যাচ্ছে সিনেমায় নায়িকা হবে। তাকে নিয়ে মিডিয়া তারকার তাজ পরাচ্ছে। এতে কী প্রমাণিত হয়, আমাদের সমাজে এসব বিবাহবহির্ভূত অবাধ যৌনাচার করলেও সমস্যা হয় না। আবার প্রতিষ্ঠা পাওয়া যায়। এগুলো কোনো ব্যাপার না।

সবাই এখন প্রভাকে দেখিয়ে বলে, দেখো সেই মেয়ে। ইউটিউবের ভিডিও ক্লিপে দেখা সেই মেয়ে। যাকে সবাই দোষের কিছু নয়।কেউ কেউ বলে, প্রভা ওসব কিছু করেও যদি আবার তারকা-নায়িকা হতে পারে হ্যাপী ও অন্যরা নয় কেন? তার মানে প্রেমের নামে এসব অবাধ যৌনাচার করা ও তা দেখানো বা বলা এগুলো সমাজ-জীবনে স্বাভাবিক ঘটনা। নাটকে ঘটনা দেখার মতো। গল্পের ঘটনা শোনার মতো। এভাবে সমাজের অবাধ যৌনাচার উৎসাহিত হচ্ছে। সমাজবিজ্ঞানীরা এসব দেখেও না দেখার ভান করছেন। তথ্যমন্ত্রণালয় বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সমাজবিজ্ঞানী কারোর কিছুই করার নেই? একটার পর একটা প্রভা ও হ্যাপী তাদের অবাধ যৌনাচারের ঘটনা দেখাবে সমাজকে?  একটার পর একটা প্রভা ও হ্যাপী তাদের অবাধ যৌনাচারের ঘটনা গল্পের মতো শুনিয়ে যাবে সমাজে?

মিডিয়াগুলো হ্যাপির পাশ থেকে রেকর্ডকৃত ফোনালাপ প্রচার করছে। আর হ্যাপির কাছ থেকে নিয়ে তার ফটোসশনের ছবি ছেপে যাচ্ছে। সম্প্রতি দেখলাম, তাকে মিডিয়ায় এনে সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রচার করছে। এর একটি অনুষ্ঠানে নামই যার "অন্ধকারের গল্প" সেখান থেকে অন্ধকার ছাড়া আলোর আশা করি কীভাবে। মধ্যরাত থেকে গভীর রাত চলে "অন্ধকারের গল্প", শোনে দেশের শ্রোতা। এসব দেখার কি কেউ নেই?

অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে হাজারো পুরুষ যৌন প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। ফাঁদে পা দেওয়া-পুরুষদের জিম্মি করে তাঁদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে অপরাধী চক্র। এরকম ঘটনা ঘটছে দেশে বিদেশে সর্বত্র। কারণ, অপরাধীদের নেই কোন দেশ, নেই কোন লিংগ (?), ধর্ম, বর্ণ কিংবা গোত্র। তারা সক্রিয় সর্বত্র । কাজেই শুধু পুরুষ নয়, মহিলারাও সাবধান।
সম্প্রতি বিবিসি বাংলা অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ফিলিপাইনে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে পুরুষদের যৌনতার ফাঁদে ফেলে অর্থ কামানোর এই ব্যবসাটি প্রকট আকার ধারণ করেছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ওয়েবক্যামে চ্যাট করার জন্য ভুয়া ছবির সঙ্গে মেয়েদেরকৃত্রিম কণ্ঠ ব্যবহার করে কৌশলে পুরুষদের প্রলুব্ধ করছে অপরাধীরা। এরপর পুরুষেরা খেলামেলা আলোচনায় জড়িয়ে পড়েন। এই চ্যাট ধারণ করে তা ফাঁস করার হুমকি দিয়ে পুরুষদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে অপরাধীরা। অপরাধ চক্রের দাবি করা অর্থ না দিতে পেরে অনেক পুরুষ আত্মহত্যাও করছেন বলে জানা যায়। ফিলিপাইনে ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ায় দেশটির রাজধানী ম্যানিলার অনেক বস্তি ও গলিতেও এ অপরাধমূলকব্যবসা ছড়িয়ে পড়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশি তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।

বাংলাদেশেও কয়েক বছর ধরে ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়ে গেছে। এটা অবশ্যই একটি ইতিবাচক ঘটনা। কিন্তু অপরাধীরা চক্র একে অন্যায় কাজে ব্যবহার করছে। অল্পবয়সী তরুণ ও বিচারবুদ্ধিতে অপরিপক্করা প্রতারণায় পড়ে নাজেহাল হচ্ছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশি তৎপরতা বাড়ানো প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, দেশে-বিদেশে সর্বত্র এসব চক্রের টার্গেট সবসময় নামীদামী তারকা, ব্যবসায়ী ইত্যাদি। কারণ, নামীদামী ব্যক্তিরা মান-সম্মানের ভয়ে সর্বস্ব টাকা কড়ি দিতে সবার আগে রাজি হয়ে যান।

কিছু নীতিহীন মিডিয়াও এদের খবর পেলে বিচারের আগে রা্য় দিয়ে এদের মানসম্মান সমাজে ধুলোয় লুটিয়ে দেয়। আরও আছে, থানা-পুলিশ, হামলা মামলা- যে বিষয়ে সবাই শত শত বছর ধরেই মিথের মতো ভালোই জানেন, একবার যদি কেউ এরকম বিপদে জড়ায় সে টের পাবে হাড়ে হাড়ে কী রকম অর্থের কারবার আর নিঃস্ব হতে হয়। ফলে অদেখা ডিজিটাল বন্ধু, বন্ধুত্ব, ঘনিষ্ঠতার ব্যাপারে সাবধান।

সম্প্রতি একটি ঘটনা তো দেশজুড়ে আলোড়ন সিৃষ্টি করেছে। এটি প্রতারণা কিনা তা পরে স্পষ্ট হবে। তবে এটিও যে সামাজিক যোগাযোগ ও টেলিফোনের মাধ্যমে সংঘটিত একটি ঘটনা যা নিয়মিত প্রকাশিত ফোনালাপও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রচার থেকে এটা স্পষ্ট। বলছিলাম, হ্যাপি ও রুবেল বিষয়ক কিছু মিডিয়ার প্রতিবেদনের নামে সংবাদ-পণ্য বিকিকিনি সম্পর্কে। এসব মিডিয়া এই নিউজটিকে পেয়ে হামলে পড়েছে। তারা হ্যাপির পাশ থেকে রেকর্ডকৃত ফোনালাপ প্রচার করছেন। আর হ্যাপির কাছ থেকে নিয়ে তার ফটোসশনের ছবি ছেপে যাচ্ছে। সম্প্রতি দেখলাম, তাকে মিডিয়ায় এনে সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রচার করছে। এমনকি প্রচারের আগে আগ্রহ সৃষ্টির জন্য প্রেসরিলিজ ধরনের নিউজও হচ্ছে। মোটামুটি মেয়েটি এখন এর মাধ্যমে লাইম লাইটে এসেছে, কিছু ক্রাইম ও বিনোদন সাংবাদিকও পেয়েছে একটা গরম টপিক। কিন্তু একটি বিচারাধীন বিষয়ে রুবেলের জিডির আসামী (যদিও মিডিয়াতে এটি তেমন প্রচারিত হচ্ছে না) ও নির্যােতনের কিরুদ্ধে বাদী (হ্যাপী) কি এভাবে ঘটনা সম্পর্কে ঢালাও বাইরে মিডিয়াতে বলে যেতে পারে? যদিও এটা আইনের ব্যাপার।

কিন্তু হ্যাপি ও রুবেলের ফোনালাপ প্রকাশ হয়ে সবার কাছে ঢালাও যাচ্ছে এটা আরেকটি প্রনিধানযোগ্য বিষয়, যা বিশেষ কিছু পত্রিকা প্রকাশ করছে। কিছু ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াও ফোনের কথা প্রচার করেছে। পত্রিকার কাটতির জন্য, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার টিআরপি-র জন্য এই জাতীয় ফোনালাপ প্রকাশ না করাই ভালো। কারণ, পত্রিকাগুলো শিশুরাও পড়ছে। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া শিশুরাও শোনে। শুধু পাঠক-শ্রোতা-দর্শককে সচেতন হওয়ার কথা বললে হবে না, পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় দায়িত্ব পালনকারী সাংবাদিক ও সংশ্লিষ্টদেরও সচেতন হতে হবে। তাদের কান্ডজ্ঞানের পরিচয় দিতে হবে। এসব ঘটনার সাথে জড়িয়ে করা নিউজের ভিকটিমকে রায়ের আগে সমাজে অপরাধী, দুশ্চরিত্র বানিয়ে ফেলার ক্ষেত্রে কি মিডিয়া নেতিবাচক ভূমিকা পালন করছে না? আশার কথা হ্যাপি ও রুবেলের এই কেলেঙ্কারির সংবাদ ও প্রতিবেদন প্রচারে অধিকাংশ পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ইতিবাচক দায়িত্ব পালন করছে। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। আশা করি অন্যরাও এরকম ইতিবাচক দায়িত্ব পালন করবেন।

যেসব পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এসব ক্ষেত্রে নেতিবাচক মানহানিকর ভূমিকা পালন করে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে ফলাও করে প্রচার করা প্রয়োজন। আশা করি, দায়িত্বশীল মন্ত্রণালয় তথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সঠিক কাজটি করবেন, সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার সুরক্ষা করবেন ও মানুষকে প্রতারণা ও মানহানি থেকে রক্ষা করবেন।