কদলীর রূপ! গুণ! স্বাদ!

শহীদুল্লাহ শরীফ
Published : 24 Dec 2014, 07:17 PM
Updated : 24 Dec 2014, 07:17 PM

কদলী মানে কলা। খাবার কলা, শিল্পকলা নয়। কলার এক দেহে  অনেক রূপ! অনেক গুণ! অনেক স্বাদ। কলা যে চেনে, সে কেনে। যেই পায়, সেই খায়। কলার "এত গুণ- এত গুণ- এত গুণ যে" বলে শেষ করা যাবে না। তবে, কদলীবৃক্ষ বা কলাগাছ দেখতে যত সুন্দর হোক মানুষ কদলীবৃক্ষ বা কলাগাছ বা 'কলাগাছের মতো' বলা হলেও তা যাকে বলা হয় তার কাছে তা বকা হিসেবে অপছন্দনীয়। আবার কাউকে কাঁচকলা দেখাতে সাবধান,  দয়া করে শত্রু ছাড়া অন্য কাউকে কাঁচকলা দেখানো ঠিক হবে না।

যে যাই বলুক না কেন কলা বা কলা গাছের কিছু ফেলনা নয়। সব কাজে লাগে। আবার এটাও যেন মনে রাখি, মানুষের চলার পথে কলার ছোবলা ফেলা খুবই গর্হিত কাজ। তার মানে কলা আমাদের জীবনে একটি অদত দরকারি জিনিস বটে।
কদলীর কত রূপ!
কদলির রূপের কথাই ধরুন, কাঁচা কলার সবুজ রঙ চোখ জুড়ায়। তাই বলে কাঁচকলা কিন্তু কাচ এর তৈরি কোনো জিনিস নয়। এটি এক প্রকার গাছে তৈরি সবজি বা ফল। শিশুকে একথা বললে, ও বিভ্রান্ত হবে। একি বলে একই জিনিসকে সবজিও বলা হচ্ছে, আবার ফলও বলা হচ্ছে। আসলে কনফিউজিং হলেও সত্য। সাধারণত পাকা কলার রং হলুদ। তবে এতেও ব্যতিক্রম আছে। নেপালী পাকা কলাও সবুজ হয়। বাংলাদেশেও সবুজ পাকা কলার জাত আছে। কলা যখন কাঁচা হয় তখন সবজি। সেটা সবুজ বা সবজ হোক আর না হোক। যখন পাকা হয় তা হলুদ হোক, সবুজ হোক, লাল হোক, সিঁদুরে হোক, তখন তা ফল।

জাতপাতের দিক দিয়ে নানান কিছিম বা জাতের কলা পাওয়া যায়।

কদলীর স্বাদ

কাঁচকলা, কলারমোচা, থোড়সুস্বাদু তরকারি ভত্তা সবজি নানাভাবে খাওয়া হয়। এগুলোর একেটার একে রকম স্বাদ। বাঙালি মাত্রই কাঁচা কলা নানান স্বাদের ও ব্যবহারের কথা জানেন। ভর্তা, ঝোল, ভাজা, ডালনা, কোপতা, বড়া, চপ নানা প্রকারে কাঁচা কলা খায় বাঙালিরা। কাঁচাকলার খোসা পর্যন্ত ভেজে খায়। (বাঙালি নাছোড়বান্দা নয়কি।)
পাকা কলা মিষ্টি স্বাদের একটি ফল। এটি বেশ সুস্বাদু। তবে তা নানান জাতের কলার নানান রকম স্বাদ।

কদলীর পুষ্টি ও অন্যান্য গুণাবলি

কলা শরীরে শক্তি যোগায় এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। কলা খুবই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার:

প্রতি ১০০ গ্রাম পরিমাণ কলায় আছে১১৬ ক্যালোরি, ক্যালসিয়াম ৮৫মি.গ্রা., আয়রন ০.৬মি.গ্রা. , অল্প ভিটামিনসি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ৮মি.গ্রা., ফসফরাস ৫০মি.গ্রা.,পানি ৭০.১%, প্রোটিন ১.২%, ফ্যাট/চর্বি ০.৩%, খনিজ লবণ ০.৮%, আঁশ ০.৪%,শর্করা ৭.২%।

কাঁচা ও পাকায় গুণের ক্ষেত্রে ভিন্নতা রয়েছে:

কাঁচা কদলি বা কাঁচকলার পুষ্টি ও অন্যান্য গুণাবলি

আয়ুর্বেদি মতে, কাঁচাকলা শরীর ঠাণ্ডা রাখে। বল বৃদ্ধি করে। রোগীকে কাঁচা কলার ঝোল খেতে দেয়া হয়।

এছাড়াও কাঁচাকলা কফ নাশক, অম্লপিত্ত দাহ, ক্ষয় ও বায়ুনাশক। কাঁচাকলায় আয়রন বেশি থাকায় শরীরে রক্ত বাড়ায়। শক্তি বৃদ্ধি করে। যাদের পেটের অসুখতারা কাঁচাকলা ভর্তা বা ঝোল খেতে পারে। যাদের পাকস্থলী বা অগ্ন্যাশয়ে আলসার আছে, তারা কাঁচাকলা সেদ্ধ বা ভর্তা খেতে পারেন। কাঁচাকলা সেদ্ধ টক দইয়েরসঙ্গে চটকে খেলে আমাশয় ও রক্ত আমাশয় ভালো হয়। এই কলা মেয়েদের অ্যানিমিয়াদ্রুত পূরণ করতে পারে।

কলার মোচা ও ভে

তরের থোড়ও উপকারী। আয়ুর্বেদ মতে, কলার মোচা সেদ্ধ করেকাশ, পেঁয়াজ, লবণ ও সরষে তেল দিয়ে ভর্তা করে খেলে শরীর ঠাণ্ডা থাকে। এটামধুর, কষায়, হজমে গুরুপাক, ডায়াবেটিস, বায়ু, পিত্ততেও কলার মোচা খুবইউপকারী। যাদের নাক দিয়ে রক্ত পড়ে, তারা কলার মোচা ভর্তা বা ডালনা খেলেউপকার পাবে।

কলা গাছ ছুলে ফেললে ভেতরে মোটা গোলাকার দণ্ড পাওয়া যায়। একে বলে থোড়।শহুরে লোকেরা থোড় খেতে জানে খুব কম। গাঁয়ের লোকেরা কলার কাঁদি কাটার সময়গাছ কেটে ফেলে খোসা ফেলে থোড় বের করে বাড়িতে নিয়ে আসে।

তারপর রান্না করে খায়। চিকন চিকন করে কেটে তেলে ভেজে ভাতের সাথে খায়। এইথোড় রুচি বাড়ায়, ক্ষুধা বৃদ্ধি করে, বীর্য বাড়ায়, ডায়াবেটিস কমায়। মেয়েদেরশ্বেত ও রক্তপ্রদর রোগ ভালো হয়।

হেকিম ও কবিরাজদের পরামর্শ মোতাবেক থোড় শুকিয়ে গুঁড়ো করে এবং থোড় বেটেরস করে চিনি ও মধু মিশিয়ে খেলে নানাবিধ রোগ মুক্ত হওয়া যায়। কলাগাছের মূল ওশেকড়ও উপকারী। হেকিম ও বৈদ্যদের পরামর্শ মতে খেলে বহু রোগ সারে।

পাকা কদলি বা পাকা কলার পুষ্টিগুণ

কলায় প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরী আছে। তাই মাত্র একটি কলা খেলেই অনেক সময় পর্যন্ত সেটা শরীরে শক্তি যোগায়।

অতিরিক্ত জ্বর কিংবা হঠাৎ ওজন কমে গেলে শরীর দূর্বল হয়ে যায়। এসময়ে কলা খেলে শরীরে শক্তির সঞ্চার হবে এবং তাড়াতাড়ি দূর্বলতা কেটে যাবে।

কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম আছে। তাই হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য কলা একটি উপকারী ফল।

কলাঅ্যান্টাসিডের মত কাজ করে। অর্থাৎ কলা হজমে সহায়তা করে এবং পেট ফাঁপাসমস্যা সমাধান করে। এছাড়াও কলা পাকস্থলীতে ক্ষতিকর ব্যাকটে

রিয়ার বৃদ্ধিরোধ করতে সহায়তা করে।

কলায় প্রচুর আয়রন আছে যা রক্তেহিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে। ফলে যারা রক্ত শূন্যতায় ভুগছেন তাদেরজন্য কলা খুবই উপকারী একটি ফল।

যারানিয়মিত বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা প্রতিদিন একটি করে কলাখান ভরা পেটে। কলা বুক জ্বালা পোড়া কমায় এবং পাকস্থলীতে ক্ষতিকর এসিড হতেদেয় না।

প্রায় দুই মিনিট ধরে কলার খোসা দাঁতের উপর ঘষলে এটিদাঁতের উপরে থাকা ময়লা ও দাগ দূর করে দাঁতকে সাদা করে তুলবে। মিনারেলেভরপুর কলার খোসা দাঁতকে সাদা ঝকঝকে করে তুলতে পারে।

ডায়রিয়া হ

লে শরীরে পানি শূন্যতা হয়ে যায় এবং শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পটাশিয়াম বেরহয়ে যায়। এসময়ে কলা খেলে শরীরের পটাশিয়ামের অভাব দূর হবে এবং হার্টেরস্বাভাবিক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

কলায় ফ্যাটি এসিডের চেইন আছে যা ত্বকের কোষের জন্য ভালো এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।এছাড়াও এই ফ্যাটি এসিড চেইন পুষ্টি গ্রহণ করতেও সাহায্য করে।

কলা মন ভালো করে দেয়। কলায় ট্রাইপটোফ্যান আছে যা সেরোটনিনে রূপান্তরিত হয়ে মন ভালো করে দিতে সাহায্য করে।

কলায় প্রচুর পটাশিয়াম থাকে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ভালো। স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্যেও কলা উপকারী।

ধূমপানছাড়তে হলে বেশি করে কলা খান। কারণ কলায় উপস্থিত ভিটামিন বি৬, বি১২, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম শরীর থেকে নিকোটিনের প্রভাব দূর করতে সাহায্য করে।

কদলির গুণ, কলা গাছের গুণ বলে শেষ করা গেল না। তাই কলার ভেলার ছবিটা দিয়েই শেষ করছি।