১ ও ২ টাকার নোটের উপযোগিতা এবং মাননীয় অর্থমন্ত্রীর ধারণাগত অভাব

শহীদুল্লাহ শরীফ
Published : 18 Jan 2015, 07:59 PM
Updated : 18 Jan 2015, 07:59 PM

মাননীয় অর্থমন্ত্রীর ধারণাগত অভাব পূরণে কী করা উচিত? এ বিষয়ে পাঠকের কাছ থেকে উদ্ভাবনী ও কার্যকর প্রস্তাব করতে পারেন আপনিও। যেমন-

  • ১ ও ২ টাকার নোটের উপযোগিতা সম্পর্কে মাননীয় অর্থমন্ত্রীর ধারণাগত অভাব পূরণে প্রথমে তাঁকে গলির মোড়ের টঙে, চা দোকানে, পান দোকানে বসে টানা ৭ দিন-রাত পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া উচিত প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে।
  • মাননীয় অর্থমন্ত্রীর বাসায় কিছু ১/২ টাকা দামের চকোলেট উপহার হিসেবে দিয়ে আসা যেতে পারে। উপহারের সাথে এর প্রতিটির দামের ক্যাশ মেমোটাও দিয়ে আসা যেতে পারে।
  • মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে ৬ টাকা দামের খেলনা, ৭ দামের বাঁশি, ৯ টাকা দামের  একটা চিপসের প্যাকেট উপহার হিসেবে দিয়ে আসা যেতে পারে। উপহারের সাথে এর প্রতিটির দামের ক্যাশ মেমোটাও দিয়ে আসা যেতে পারে। ইত্যাদি।

এরকম কিছু উদ্ভাবনী কাজ থেকে তিনি নিশ্চয় ১ ও ২ টাকার নোটের উপযোগিতা ও চাহিদা সম্পর্কে একটা সম্মক ধারণা পাবেন।

এবার আসা যাক পটভূমি বর্ণনায়।

বর্তমানে পাঁচ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত সবই ব্যাংক নোট। আর এক ও দুই টাকা সরকারি নোট। অর্থ মন্ত্রণালয় এক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সচিবালয়ে আজ (১৮/০/২০১৫) অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের জানান, পাঁচ টাকাকে সরকারি নোট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পুরোনো এক ও দুই টাকার নোটগুলো বাজার থেকে তুলে নিয়ে ধ্বংস করা হবে। অর্থমন্ত্রী আরও জানান, এগুলো ধ্বংস করতে ৩০০ কোটি টাকার মতো ব্যয় হবে।

উপস্থিত সাংবাদিকগণ জানতে চান, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে সরকারের কী লাভ হবে?

এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, সরকারের চেয়ে বেশি লাভ হবে মানুষের। অপ্রয়োজনীয় (ইউজলেস) টাকা নিয়ে মানুষকে ঘুরতে হয়।

কিন্তু আমাদের দেশের সর্বত্র সমাজে প্রচলিত প্রাত্যহিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে এক /দুই টাকার এখনও উপযোগতিা আছে বলেই আমরা জানি। তাই একজন সাংবাদিক মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, এক টাকা দিয়ে যে চকলেট পাওয়া যায়, তাহলে কি সেটি পাওয়া যাবে না?

এমন প্রশ্নের উত্তর দেন মাননীয় অর্থমন্ত্রীর পাল্টা প্রশ্ন 'এক টাকা-দুই টাকা দিয়ে চকলেট পাওয়া যায় নাকি?'

মাননীয় অর্থমন্ত্রীর এই প্রশ্ন থেকে তাঁর দেশজুড়ে সামাজিকভাবে প্রচলিত প্রাত্যহিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে এক /দুই টাকার এখনও যে উপযোগতিা রয়েছে সে সম্পর্কে ধারণার / জ্ঞানের অভাবটাই নির্মমভাবে ফুটে উঠেছে। কী সমাজ-অর্থনীতি বিচ্ছিন্ন তিনি তা তাঁর কথায় প্রকাশিত হল, যা খুবই বেদনাদায়ক।

আমি পুনরুক্তি করছি, ১/২ টাকার নোট তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তটি মাননীয় অর্থমন্ত্রীর সামাজিক-অর্থনৈতিক ধারণার / জ্ঞানের অভাবেরই নামান্তর।

এমতাবস্থায় আপনারাই বলুন, সামাজিক-অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মাননীয় অর্থমন্ত্রীর ধারণাগত অভাব পূরণে কী করা উচিত?

মাননীয় অর্থমন্ত্রীর উচিত বিষয়টি সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করা ও এ সম্পর্কে একটা জরিপ চালানো। একটা ভুল করে অর্থের অনর্থ করাও মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাট ঘটানো ঠিক হবে না।

ফলোআপ: আজকের (১৯/০১/২০১৫) একটি টিভি চ্যানেলের (একাত্তর টিভি) স্ক্রল থেকে জানা গেল, মাননীয় অর্থমন্ত্রী তাঁর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। অতি অল্প সময়ে তিনি উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন যে সমাজে মানুষের প্রাত্যহিক জীবন যাপনে ১ ও ২ টাকার নোটের উপযোগিতা ও চাহিদা রয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ।

ভুল থেকে শিক্ষা ও করণীয়

মাননীয় অর্থমন্ত্রীর ১ ও ২ টাকার নোটের উপযোগিতা সম্পর্কে ধারণাগত অভাব / তথা ভুল থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি।

১. এটি একটি ঘটনা যাতে মন্ত্রীমহোদয়ের সমাজ বিচ্ছিন্নতা ও জনসম্পৃক্ততার অভাব দেখা যায়। এটা অন্য মন্ত্রী ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যেও থাকতে পারে। দীর্ঘ দিন ক্ষমতা ভোগ ও মোসাহেব পরিবেষ্টিত এবং অতি আত্মপ্রত্যয়ের কারণে এটি ঘটতে পারে। তাই মন্ত্রী ও নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত ও নির্ধারিত মেয়াদে সমাজে জনসম্পৃক্ত হওয়া নিশ্চিত করার জন্য একটি স্ট্রাটেজিক প্ল্যান করা উচিত।

২. …

মন্ত্রী ও নীতিনির্ধারকদের সমাজে জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিত করার জন্য আরও অপশন প্রয়োজন। আরও কী কী করা যেতে পারে এ ব্যাপারে একটি কর্মশালা বা গোল টেবিল বৈঠক করা উচিত।