চলার পথটা কি এমনই থাকবে?

শাহিন বাবু
Published : 14 Nov 2015, 06:14 PM
Updated : 14 Nov 2015, 06:14 PM

সেই ছোট বেলাকার কথা । তখন মায়ের সাথে বছরে একবার নানা আর দাদা বাড়িয়ে বছর শেষে বেড়াতে যাওয়াটা ছিলো রুটিন ওয়ার্কের মতো । হালকা শীতের আমেজের মধ্য দিয়ে অনেক বড় আয়োজন ছিলো সেটি। বাষির্ক পরীক্ষা শেষে চলতো প্রস্তুতি।মা থাকবো বাপের বাড়ি পুরো ১৫ থেকে ২০ দিন. ঘুরতো ফিরতো আত্মিয় স্বজনদের বাড়ি। আমরা ৭ দিনেই ছুটি শেষ করে ফিরতাম। কোন বোন ছিলোনা আমাদের ৪ ভাই। আমি তৃতীয়। আমার ছোটটা মায়ের সাথেই থাকতো।

সেই ছোট বেলাকার কথা এজন্য বলছি যে, সে সব দিগুলো জীবনকে আর ছুতে না পারলেও সৃতিতে জীবনের শেষ দিন পযর্ন্ত অম্লান হয়েই থাকবে।

গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গেলে চোখে পড়তো বেশ পরিমানে কাঁচা,আধা পাকা বাড়িঘর। পথ ঘাটও ছিলো কাঁচা। বিদ্যুৎ সব খানে তখনও পৌঁছেঁনি। রাতে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক আর জানালার ফাঁক দিয়ে চোখ বাইরে গেলে চোখে পড়তো জোনাকি পোকা। ভালো লাগার একটা বিষয় ছিলো। গ্রামের বাড়িতে শীতের সকাল, আসলে সেটা সকাল ছিলো না কোন কালেই। ফজরের আজানের পরই উঠে পড়তো পুরো বাড়ি। শীতের পিঠে বানানোর সেটাও ছিলো এক মস্ত বড় আয়োজন। কাঁচা ঘুম ভাঙ্গিয়ে ডাক পড়তো বিছানা ছাড়ার। বাড়ির বিশাল উঠোনে আগুন জ্বালিয়ে নানা পদের পিঠের সমাহার! রান্না ঘরে এতো মানুষের জায়গা না কুলোনোয় উঠোনটাই বেছে নিতো বড়রা।

দিনভর আনন্দে কাটতো আমাদের। পুকুরে গোসল- মাছ ধরা। মামাদের সাথে পাখি শিকারে যাওয়া – সব ছিলো অনেক মজার। বাজারে গেলে মিষ্টির দোকানে কখোনো মামাদের বিল দিতে দেখিনি। সবাই মামা ছিলো আত্মীয়তায়। সেকারনে কেউ বিল নিতো না।

জীবনে ছন্দ পতন এসেছে  অনেক বার । নানা দাদা বড়ি আগের মতো আর যাওয়া হয়না। অনেক বছর পর গেলেও তেমন একটা আবেদন অনুভব করেছি। তবে দৃশ্যপট আর আগের মতো নেই। যেখানে পুরো গ্রাম জুড়ে বিশ্ব বিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্র খুঁজে পাওয়া দুস্কর ছিলো সেখানে এখোন ঘরে ঘরে বিশ্ব বিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র। কাঁচা প্রতিটি পথ পিচ ঢালা। গ্রামে বিদ্যুতের সংযোগ । কম্পিউটার, ল্যাপটপ হাতে হাতে। অনেক খুজেঁও একটা ঝিঁ ঝিঁ পোকার দেখা মিল্লো না। জোনাকি সে তো শুধু কবিতার খাতায়।

অনেক কিছুই বল্লে ভূল হবে- সব কিছুই বদলে গেছে। এলাকার চিত্র যেমন অনেকটা অচেনা- মানুষ গুলোও তাই।…

মানুষের মাঝে অনেক সচেতনতা দেখতে পাওয়া গেছে। শিক্ষিত পরিবার গুলো যেমন অনেক দুর এগিয়ে গেছে তেমনি অশিক্ষিত নিম্ন আয়ের মানুষ গুলোও যেন ঘুর দাড়িঁয়েছে। তাদের অর্থনৈতিক অবস্থাও আমুল পরিবর্তন ঘটেছে।

তবে এতো কিছুর মাঝেও একটা শ্রেনীর এখানো আয়ের পথ-মূল জীবিকা রাজনীতি। এরা এসব নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছেন। রাজনীতির নামে দেশ সেবার নামে- সমাজ সেবার নামে বিপরিত চিন্তার মানুষকে কষ্ট দিচ্ছেন-অনেকটা অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে চলেছেন। দূরের কাছের আত্মীয়-অনাত্মীয় এই শ্রেনীর মানুষের কাছে সবাই সমান। বিকল্প কোন আয়ের মাধ্যম নেই। বাংলাদেশের গ্রামীন জনপদের এই রাজনীতিকদের ভালো যোগাযোগ থানা পুলিশ আর সরকারী স্যারদের সাথে। না পরিবার থেকে না সমাজ ব্যবস্থায় কেউ প্রশ্ন করার সাহস পায়- প্রকৃত তাদের জীবন চলে কোন উপার্জনে।

সাধারন মানুষ রাতদিন এক করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আর তার বিপরিতে একটা শ্রেনী হাতের উপর হাত আর পায়ের উপর পা ফেলে দিব্বি এলাকা শাসন করছেন। বতর্মান প্রেক্ষাপটে অনেকে বলবেন- সব করছে আওয়ামীলীগের লোকজন! কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। এরা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, তথাকথিত জামাত, জাতীয় পাটি ডান বাম সব মিলেমিশে একাকার। এখানে তাদের একটা ভালো সমঝোতা দেখতে পাওয়া যায়। ক্ষমতায় যেই থাকুক কোন এলাকায় কার প্রভাব বেশী সেটাই ধর্তব্য বিষয়।

আমাদের জাতীয় নেতৃবৃন্দকে বিষয়টি একবার অনুসন্ধান করে দেখা দরকার। আসলে জেলা থানা পর্যায়ে নেতারা কমর্হীন হয়ে থাকলে রাজনীতির মুল অগ্রগতি বাধা গ্রস্থ হয়। দেশের কল্যানে কাজের সুযোগ তৈরি করে দিতে গ্রামীন জনপদগুলোতে রাজনীতির সাথে জড়িয়ে থাকা যারা  বেকার তাদেরও উন্নত এবং গঠনমুলক সম্মানিত জীবন তৈরি করে দেয়া সরকারের দায়িত্ব।

নাকি সব কিছু দিনের পর দিন এমনই থাকবে? দেশের সাধারন মানুষ এগিয়ে যাবে । আর রাজনীতির সাথে জড়িয়ে থাকারা ধিকৃত হবে, হবে প্রতিনিয়ত অবহেলিত। চলার পথটা কি এমনই থাকবে?