মুক্তচিন্তার অপর নাম দালালিপনা

শাহমুন নাকীব ফারাবী
Published : 11 Oct 2015, 07:59 PM
Updated : 11 Oct 2015, 07:59 PM

সময়টা ২০০৩ কিংবা ২০০৪ সাল হবে। বয়সে বড় হলেও আমাদের সঙ্গে বাশির নামের এক বড় ভাই খেলাধুলা করতেন। তিনি অন্য সবার থেকে একটু বেশিই দুষ্টু এবং চঞ্চল ছিলেন। কথিত আছে, "একজন মৃত ব্যক্তির কানে গিয়ে বাশির ভাইয়ের নাম বললেও সেও হেসে উঠতে বাধ্য"। মিঠাপুকুর উপজেলা থেকে অদূরবর্তি জীবনপুর নামক গ্রামে তার দাদাবাড়ি। একদিন দাদাবাড়িতে গিয়ে একটি মন্দিরের মূর্তি ভেঙ্গে ফেললেন।যদিও সেটা ইচ্ছাকৃত ছিল না। বাশির ভাই বলেছিলেন, মূর্তিটির হাত আগেই পিঁপড়া অর্ধেক নষ্ট করে ফেলেছে!খেলতে গিয়ে বল মন্দিরে ঢুকলে আমি সেটা আনতে যাই। আর সেসময় হাতের কোনা লেগে মূর্তিটি ভেঙ্গে যায়।

কিন্তু সেই মূর্তি ভাঙ্গা নিয়ে কি লঙ্কা কাণ্ডটাই না ঘটল!  সুশীল সমাজের লোকজন এটা নিয়ে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া শুরু করলেন। কেউ বা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আভাস দিচ্ছিলেন। এমনকি প্রগতিশীল দাবিদার একদল দালাল তখনও তার সাথে জামায়াত শিবিরের গন্ধ খুঁজেতেছিলেন।বলা যায় তিল কে তাল করে, সে পর্যন্ত ১২ হাজার টাকা জরিমানা নিয়ে তারা শান্ত হলেন।

১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতে বাবরি মসজিদ ধ্বংস পরবর্তি সময়ে, বাংলাদেশেও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। সেই দাঙ্গার রেশ আজও তসলিমা নাসরিনের লেখায় পাওয়া যায়।সেখানে ইসলাম পন্থিদের উগ্রবাদী বলে,জঙ্গি আরও কতোকি বলে যে গুষ্ঠি উদ্ধার করেছেন, তার ইয়াত্তা নেই। নঈম নিজামরা সেই ৯২ এর দাঙ্গার রক্তের চিৎকার নাকি আজও শুনতে পান।

ভারতে ২০১৩ সালে আফজাল গুরুর ফাঁসি নিয়ে মুক্তমনারা আজও উল্লাস প্রকাশ করতে দ্বিধা করেন না। কিন্তু ভারতের মুসলিম নির্যাতন নিয়ে কলম ধরতে গেলেই তাদের মুক্তমনের চিন্তাগুলো যেন সাহারা মরুভূমিতে গায়েব হয়ে যায়। সেখানে আর তারা প্রতিবাদ করতে পারেন না।

চলতি বছরের জুন মাসে, ভারতের মুজাফফর নগরে রিয়াজ নামক এক মুসলিম যুবকের উপর হামলা করে, উগ্রবাদী ধর্মীয় গোষ্ঠি বজরং দলের সদস্যরা।তারা ক্ষমতাসীন দল বিজিপিরই অঙ্গসংগঠন। কয়েকদিন আগে, ঘরে গরুর গোশত রাখার অপরাধে আখলাক নামে এক মুসলিমকে হত্যা করা হল। গতকাল দুই মুসলিম যুবককে গরু জবাইয়ের মিথ্যে অভিযোগে গনধোলাই প্রদান করে,হিন্দু উগ্রবাদীরা।কিন্তু আমাদের মুক্তচিন্তার মানুষদের সেগুলো চোখেই পড়ে না।তসলিমা নাসরিন আর নঈম নিজামরা এক্ষেত্রে বোবা কালা। তারা মুসলিমদের রক্তের চিৎকার শুনতে পান না।

এটা মুক্তচিন্তা নয়। প্রকৃত মুক্তচিন্তার উদাহারণ একমাত্র ইসলামেই খুঁজে পাওয়া যায়। মক্কায় ইসলাম বিজয়ের পর, মুসলিমরা আলেকজানন্দ্রিয়া দখল করে নেয়।মুসলিমদের পক্ষ থেকে আমর ইবনুল আস (রাঃ) কে আলেকজান্দ্রিয়ার শাসক নিযুক্ত হয়। সেদেশে অমুসলিমরা জিজিয়া কর দিয়ে থাকতে পারতো। এবং তারা স্বাধীন ভাবে নিজেদের ধর্ম পালন করতে পারতো।একদিন এক দু্ষ্কৃতিকারী খৃষ্ঠানদের গির্জায় ঠুকে,যীশুর মূর্তির নাক ভেঙ্গে ফেলে।তখন গির্জার ফাদাররা হযরতে আমরের কাছে,বিচার চাইতে আসে।সেই সাথে তারা দাবি করে,তোমরা আমাদের প্রভূর মূর্তির নাক ভেঙ্গেছো, আমরাও তোমাদের রাসূল মুহাম্মাদ (সঃ) এর মূর্তি বানিয়ে নাক ভেঙ্গে ফেলবো।হযরত আমর তাদের এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন।তাদের কে বললেন,এর বদলে যদি আমার নাক কাটতে দেই তবে কি তোমরা সন্তুষ্ট হবে? পাদ্রীরা সেই প্রস্তাবেই সম্মতি প্রদান করেছিল।

দেখে যাও, আমার ইসলাম কতোটা মুক্তচিন্তার অধিকারি। তাগুদের দালালি করে, মুক্তচিন্তার কথা বলে, ভারতের কয়েকদিনের অতিথি কিংবা আমেরকিার অতিথি অথবা জার্মানির নাগরিক হওয়া গেলেও, তোমাদের আপ্যায়নের জন্য আল্লাহপাকের সাতটি জাহান্নাম অপেক্ষা করছে। আর প্রকৃত মুক্তচিন্তাবিদদের আপ্যায়নের জন্য আল্লাহ প্রস্তূত করেছেন, আটটি জান্নাত।