যতই বাড়ে ততই মারে! যতই মারে ততই বাড়ে!

শাহরিয়ান আহমেদ
Published : 7 Feb 2012, 04:36 PM
Updated : 7 Feb 2012, 04:36 PM

অল্প পানি, চোরা বালি এবং গর্তের মধ্যে পার্থক্য কী বলেন তো? এদের মধ্যে একটা মিল ছাড়া বাকি সবই পার্থক্য। আর যে মিলটা আছে তাও আবার বিশেষ একটা বৈশিষ্ট, যেটা সাধারনত কারও মাথায় না অসারই কথা।

যাইহোক, আপনাদের কয়েকটা গল্প বলি।
বৃষ্টিতে বাড়ির উঠানে অল্প পানি জমেছিল। টলটলে সচ্ছ সেই পানির পাশে বসে ছোট্ট একটি বাচ্চা খেলা করছিল। খেলতে খেলতে হঠাত্‍ একটি খেলনা পানিতে পড়ে গেল। সে দৌড়ে গিয়ে খেলনাটি পানি থেকে উঠাল এবং দুই হাত দিয়ে ঘোলা হয়ে যাওয়া পানি ঠিক করতে চেষ্টা করতে লাগলো। অনেকক্ষণ চেষ্টার পরও পানি ঠিক হচ্ছিল না বরং ও যতই চেষ্টা করে ততই ঘোলা হয়। ছোট্ট শিশুটি সফল হতে পরলো না। কারন, সে ভুল পথে ঘোলা পানি ঠিক করতে চেয়েছিল।

সেদিন ডিসকভারিতে একটা প্রোগ্রাম দেখছিলাম। একটা লোক সাগরের পারে চোরা বলিতে আটক পড়েছিল। বেরিয়ে আসতে অনেক চেষ্টা করেও কোনও লাভ হয়নি বরং যতই চেষ্টা করেছে ততই ভেতরে ঢুকেছে। শেষমেষ উদ্ধার কর্মীরা এসে তাকে টেনে তুলেছে। আগের ঘটনটির মত এখানেও ভুল চেষ্টার কারনে সফলতা আসেনি। উল্টা জান যাওয়ার উপায় হয়েছিল।

আমাকে ছোটবেলায় আমার এক বন্ধু একটি প্রশ্ন করেছিল, বলতো দোস্ত কোন জিনিস কাটলে বাড়ে? প্রশ্নটা শুনে আমি..!! অনেক চেষ্টা করেও উত্তর বের করতে পারিনি। পড়ে জেনেছিলাম উত্তরটা হল, গর্ত। যতই কাটিবে ততই বাড়িবে।

ভারতের ইদানিং আচরণ দেখলে মনে হয় তারা আমেরিকা হয়ে গেছে। আর মাঝে মাঝে ওর ভয়ংকর আগ্রাসী চেহারাটা এতটাই কুত্সিত হয় যে ভাবতেই আতংক ভর করে। ভাবি এখনি এই অবস্থা আর সুপার পাওয়ার হলে যে কী হবে তা কেবল ‍আল্লাহতালা ই জানেন। নেপাল, ভুটান, বার্মা, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান পর্যন্ত তারা সরাসরি নাক গলতে চেষ্টা করছে। দু:খের বিষয় হল বাংলাদেশ ভারতের অনেক বড় বন্ধু দেশ। অথচ দিন দিন যেন তারা আমাদের প্রতি আরও বেশি আক্রমণাত্তক হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আজ পর্যন্ত ভারতের মাটিতে ওদের সাথে পূর্ণাঙ্গ একটি সিরিজ খেলার সুযোগ পায়নি। আমাদের সাথে খেলে নষ্ট করার মত সময় তাদের খেলওয়ারদের নেই। আহ! হতাশা আর দীর্ঘশাস ছাড়া আর কিই বা করার আছে। বিপিএল এ কোনও খেলওয়ারকে খেলার অনুমুতী পর্যন্ত দিল না। আমাদের টিভি চ্যানেল আজও ওদের দেশে চলে না অথচ বাংলাদেশ মানেই ইন্ডিয়া। সিনেমা মানে বলীউড ও ভারতীয় বাংলা। হায়রে আমার দেশের মানুষ।

সীমান্তে প্রতিদিন চলে ওদের বর্বরতা। আর মাঝে মধ্যেই বর্বরতার সমাপ্তি। মৃত্যু।
সীমান্তে প্রতিনিয়ত চলা নির্বিচারে হত্যাকান্ডের মধ্যে কিন্তু ধাক্কা দিয়েছিল ফেলানি। প্রথমে ধরে নিয়ে ধর্ষণ, তারপর গুলি করে হত্যা। এরপর, কাটাতারে লাশ ঝুলানোর মত ভয়াবহ দু:সাহস দেখানো।

ফেলানির এই নৃ:শংস হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বিএসএফ আমাদের বুঝিয়েছে তারা আসলে পশুর চেয়েও নিচ। আর আমরা প্রমাণ করেই যাচ্ছি, আমরা রক্ত মাংস ছাড়া, অধম, অক্ষম, নির্লজ্জ, বেহায়া। এছাড়া আর কী বলব নিজেদেরকে? এতবড় দু:সাহস! এতবড় বুকের পাটা ওদের ওরা আমার বোনকে, আমার মেয়েকে ধর্ষণ করল, তারপর হত্যা করে কাটাতারে ঝুলায়। কে মানবে এই অত্যাচার , কে সইবে এই জুলুম ? আপনি মানবেন, আপনার বোনকে ধর্ষণের পর হত্যা করে যদি সেই লাশ আপনার বাড়ির দেয়ালে ঝুলন হয়?
ভারতে বা আমেরিকাতে যে জঙ্গি হামলাগুলা হয়, কেন হয়? মানুষের মনের ভিতর জমে থাক ভয়ংকর ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে সেখানে। যারা এই কাজগুলতে জড়িত তারা হয় সরাসরি নিপীড়িত, না হয় নিপীড়িতদের আত্মীয় পরিজন অথবা অন্যের বেদনায় সমবেদিত কেউ।

ফেলানির বাবা যদি কোনদিন কোনও জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেয় অথবা যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করা হয় তাতে অবাক হবার কিছু থাকবে না। হতে পারে সেটা কোনও বামপন্থী জঙ্গি সংগঠন অথবা কোনও ইসলামী জঙ্গি সংগঠন। এরকম মানুষগুলো ভারত বিদ্দেশী হলে অবাক হওয়ার কী আছে? ভারতের মাটিতে কোনো ভয়াবহ কাজ করতে তারা কুন্ঠিত বোধ করবে এরকম নাও পারে।

জঙ্গি দমনের নামেই হোক আর যে নামেই হোক ভারতের এই নিপীড়ন, হত্যা বন্ধ না হলে তারা কোনদিনই এর সুফল পাবেনা। আপনি আমাকে মেরে ফেলবেন আর আমার সন্তান প্রতিশোধ নিতে চাইবেনা তা কী করে ভাবেন! একেকটি ফেলানির লাশ থেকে জন্ম নেবে শত শত ভারত বিদ্দেশী যারা তাদের শান্তিকে হারাম করার জন্য জান দিতে প্রস্তুত থাকবে। ভারতকে হুমকি দিচ্ছি না, বাস্তব কথা বলছি, সত্য কথা বলছি। এই যে এত বড় বড় জঙ্গি দলগুলো, এরা কোথায় পায় এত যোদ্ধা? ভারত নিজেই তৈরি করে নিজেদের বিপদ।

ভারতের পণ্ডিতের কি চিন্তা করে তা আমি জানিনা, হয়ত তারা সব বুঝেই এসব করে। হয়ত টুকটাক জঙ্গি সমস্যা তৈরি করে তা থেকে ফায়দা লুটার মতলব। ভারতের বোঝা উচিত ঘোলা পানিকে নাড়লে কেবল ঘোলাই হবে। বাংলাদেশকে তাদের বন্ধু বানাতে পারলে তাদের উপকার উপকার হওয়া ছাড়া ক্ষতির কিছু নাই। নির্যাতনের পরিণাম কখনোই ভাল হয় না। কখনো হয়েছে বলেও শুনিনি। সমস্যাটা ঘোলা পানির মত, যত নাড়বে ঘোলা ততই বাড়বে। মানুষ মেরে এই সমস্যা সমাধান করা যাবেন। যতই মারবে সমস্যা ততই বাড়বে।