আমার সম্প্রদায়, আমি মানুষ।

শাহরিয়ার আরিফ
Published : 5 May 2014, 07:21 AM
Updated : 5 May 2014, 07:21 AM

আমি নিজে জন্মসূত্রে একজন মুসলিম, বিবেক-বুদ্ধি জাগ্রত হওয়ার পর ধর্ম নিয়ে যতটুকু আলোচনা-সমালোচনা শোনার সুজোগ পেয়েছি তার সর্বোচ্চ কাজে লাগিয়েছি বলে আমার বিশ্বাষ। শুধু ইসলাম ধর্মের কথা শুনেছি তা নয়, সুজোগ পেলেই হিন্দু আর খ্রিষ্টান ধর্মের কিছু জানার চেষ্টা করেছি। যাহোক, আমি একজন মুসলিম, ইসলাম ধর্মের প্রতি আমার বিশ্বাষ শতভাগ নিষ্কন্টক, কিন্তু আমি অন্যান্য সকল ধর্মকে শ্রদ্ধা করি, এমন কি একজন নাস্তিককেও তার অবিশ্বাষের জন্য ঘৃণা করিনা। আমি ইসলাম ধর্মাবলম্বী হিসাবে মহানবী হযরত মুহম্মদ (সঃ) এর বিদায় হজ্বের ভাষনটি মনে রাখতে চাই। আমি আমার ধর্ম পালন করবো, যদি অন্য কেউ ভিন্ন বিশ্বাষ নিয়ে থাকতে চাই তাহলে তাকে কোন ভাবেই অপমান করে বা আঘাত করে আমার ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করবোনা, তবে হ্যা গঠনমূলক আলোচনা-সমালোচনার মাধ্যমে মানুষ পৃথিবীতে বিভিন্ন জটিল ও কঠিন বিষয়ের সমাধান করতে পেরেছে, তাই ধর্ম নিয়েও গঠনমূলক আলোচনা-সমালোচনাকে ব্যাপকভাবে সমর্থন করি। আমি তালেবান বা এই ধরনের বিপথগ্রস্থ মানুষ বা সংগঠনকে যেমন ঘৃণা করি তেমনি, ইজরাইল, আফ্রিকা, মায়ানমার এবং ভারতের মুসলমানদের প্রতি অত্যাচারকেও চরম ভাবে অনৈতিক এবং প্রত্যাঘাতযোগ্য বলে মনে করি। সারা বিশ্বে প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী হলেও বিশ্বের শক্তিশালি ইল্কেট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াগুলো খ্রিষ্টান, ইহুদি, বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত, সঙ্গত কারনে ঘটনাগুলোকে টেকনিক্যালি ম্যানুপুলেট করা হয়।

কোথাও যদি কোন সন্ত্রাসি কার্যক্রম ঘটে, আর তা যদি কোন নামধারি মুসলমান দ্বারা ঘটানো হয় তাহলে সেটাকে বলা হয় জঙ্গীহামলা, দোষটা হয় পৃথিবীর সকল ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের। আর যদি ঐ ঘটনাটা অন্য যে কোন ধর্মাবলম্বীর দ্বারা ঘটানো হয় তাহলে বলা হয় সেটা সন্ত্রাসি কর্মকান্ড। কখোনো বিবেচনা করা হয়না যে লোকটা সন্ত্রাসি কার্যক্রম ঘটালো সে কি আসলে কোন বিশেষ ধর্মের প্রচার, প্রসার বা লক্ষ হাসিল করার জন্য এই সন্ত্রাসি কর্মকান্ড ঘটিয়েছে, নাকি লোকটা নিছক একজন সন্ত্রাসী। কোন বিচার বিবেচনা ছাড়াই শুধুমাত্র একজন নামধারী মুসলমানের জন্য কেবলমাত্র একটা সন্ত্রাসী ঘটনাকে জঙ্গীহামলা বলা হয়, দ্বায়ী করা হয় পৃথিবীর সকল মুসলমানদের। অথচ অন্য ধর্মাবলম্বীর ক্ষেত্রে তা বিবেচিত হয় শুধুমাত্র একটি সন্ত্রাসী কর্মকান্ড হিসাবে।

এখন আসি যারা জঙ্গী তাদের সাথে ইসলামের কতটুকু সম্পর্ক আছে? তারা কতটা ইসলামিক সে প্রসঙ্গে। ইসলাম ধর্ম কোন প্রকার অন্যায়কে সাপোর্ট করেনা। কোন মানুষকে জোরপূর্বক ইসলাম গ্রহন করতেও বাধ্য করেনা। আল্লাহতাআলা পবিত্র কুরআনের মধ্যে স্পষ্ট করে বলেছেন হেদায়েত করার মালিক আল্লাহ নিজে কোন মানুষ অন্য কোন মানুষকে হেদায়েত করতে পারেনা। আল্লাহ মানুষকে বলেছেন অমুসলিমদের কাছে ইসলামের বাণী পৌছে দেওয়ার জন্য গ্রহন করা নাকরা তার নিজেস্ব ব্যাপার। তাহলে যে সকল মানুষ জোর করে কারও উপর কোন কিছু চাপিয়ে দিতে চাই তাকে ইসলাম সমর্থন করে না। তাহলে জঙ্গীপনাকেও ইসলাম কোন ভাবেই সমর্থন করে না। আর এই কারনে জঙ্গী বা তালেবান বা এইধরনের কোন সঙ্গঠনের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক থাকতে পারেনা। অনেকে হয়ত এখন বলবেন ইসলামে তো জিহাদের কথা বলা হয়েছে। হ্যা ইসলামে জিহাদের কথা বলা হয়েছে কিন্তু সেই জিহাদের সাথে জঙ্গীপনার কোন মিল নেই। ইসলামে জিহাদের কথা বলা হয়েছে, জিহাদ দুই ধরনের প্রথম জিহাদ হচ্ছে নিজের ভেতরে যে সয়তান বাস করে, যে সয়তান মানুষকে ভুল পথে প্রবাহিত করতে সদা-সর্বদা সচেষ্ট থাকে তার বিরুদ্ধে জিহাদ করে নিজেকে পাপমুক্ত রাথা, সকল অপকর্ম থেকে নিজেকে বিরত রাখা। আর এই জিহাদই হলো অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় জিহাদ হলো যারা ইসলাম ধর্মের প্রতি আঘাত করবে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ। লক্ষ করবেন এখানে বলা হচ্ছে যখন কেউ ইসলামের প্রতি আঘাত করবে তখন তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। কোন ভাবেই ইসলাম অন্যায় ভাবে কারো বিরুদ্ধে কিছু করাকে সমর্থন করেনা। যখন কেউ অন্যায় ভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু করবে তখন তাকে প্রতিহত করার জন্য বলা হয়েছে। সুতরাং যারা জঙ্গী তাদের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক থাকতে পারেনা।

যদিও জঙ্গীদের সাথে ইসলামের কোন সস্পর্ক নেই তারপরও তর্কের খাতিরে, আলোচনার স্বার্থে ধরে নিলাম তারা মুসলিম। এখন তাদের অপকর্মকে যে ভাবে মিডিয়াতে হাইলাটস করা হয় অন্যান্য ধর্মের লোকেরা যখন মুসলমানদের প্রতি অমানবিক অত্যাচার করে তখন মিডিয়া যেমন দেখেও না দেখার ভান করে, অসাম্প্রদায়িক নামধারী লোকগুলোও মুখে কুলুপ এ্যটে থাকে। মায়ানমারে যখন হাজার হাজর মুসলমানদের কে পুড়িয়ে মারা হলো শুধু মুসলমান হওয়ার কারনে, তখন উন্নত দেশগুলোর সভ্যশ্রেণীর উচ্চকক্ষে অধিষ্ঠিত লোকগুলো অংসান সুচি কে নোবেল দিতে এবং সে সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে ব্যস্ত। শুধুমাত্র মুসলমান হওয়ার কারনে মায়ানমারের হাজার-হাজার মুসলমানদের পুড়িয়ে মারা হোল। মুসলিম নারীদের ধর্ষন করে পুড়িয়ে মারা হলো, তখন মানবতা বাদী ব্যক্তি থেকে সংগঠন পুর্যন্ত, নারীবাদী ব্যক্তি থেকে সংগঠন পুযর্ন্ত অষ্টপ্রহর নিরবতা পালন করলো। আর মিডিয়ার কথা কি বলবো। একটা থার্ডক্লাস নিউজের মত করে প্রচার করলো। আর আমাদের বিশ্ব শান্তি রক্ষার চরম পর্যায়ের সংগঠন "জাতীসংঘ" তার কথা বললেই কি আর না বললেই কি! আফ্রিকার একটা দেশে যখর প্রকাশ্যে মুসলিম নিধনের জন্য আইন পাশ করে মুসলমানদের হত্যা করা হোল তখন বিশ্বমানবতা প্রশান্তিতে নিদ্রাযাপন করছিল। বর্তমান সময়ের অত্যন্ত মুখোরচোক একটি আলোচ্য বিষয় ভারতের নির্বাচন, এই নির্বাচনে কোন একটি দল জিতবে সে যেই হোক তা নিয়ে আমার কোন মাথাব্যাথা নেই, থাকার কোনা বিশেষ কারনও নেই। গত কযেকদিন আগে কোন একজন ভারতীয় নেতা যে কিনা বলে বসলো বাংলাদেশের খুলনা খেকে সিলেট পুর্যন্ত জমি ভারতকে ছেড়ে দিতে হবে কারন ভারতে মুসলমানরা থাকে তাদের জন্য জায়গা দরকার, কি আজব কথা ! ভাবতেই অবাক লাগে একজন সুস্থ মানুষ এধরনের কথা কেমনে বলে। যাহোক আমাদের এই অঞ্চলের রাজনীতিবিদগন যে দ্বায়িত্বহীন, অবিবেচকের মত কথা বলে তা আগে থেকেই জানা থাকার কারনে খুব বেশী হতাশ হতে হয়নি। কিন্তু আজ (এপ্রিল ২২, ২০১৪) "কালের কন্ঠ" পত্রিকায় 'হিন্দুদের এলাকা থেকে মুসলমানদের তাড়ান"-প্রবীন তোগাদিয়া, প্রেসিডেন্ট : বিশ্ব হিন্দু পরিষদ' শিরোনামে একটি খবর পড়লাম তখন মনে হলো আমরা এই একবিংশ শতাব্দিতে এসে কি করতে যাচ্ছি ? ভাবতে অবাক লাগে টাকা দিয়ে একজন আরেকজনের কাছ থেকে একটা বাড়ী কিনেছেন, সেটা নাকি করা যাবেনা! কারন ক্রেতা মুসলমান আর বিক্রেতা হিন্দু। আমি জানিনা কতগুলো আন্তর্জাতিক মিডিয়া এই ধরনের কু-সাম্প্রদায়িক অনৈতিক আচরনের জন্য এই সকল দোষী মানুষগুলোকে দ্বায়ী করবে?

আসলে এই ধরনের বিষয়বস্তু নিয়ে লিখতে চাইলে যদি ৭০ বছর বাচি, তাহলে ৭০ বছর ধরে লেখা যাবে, কিন্তু সমস্যা নিয়ে কথা বেশি না বলে সমাধান নিয়ে আলোচনা করলেই ভালো হবে। তাই শুধু একটা প্রত্যাশা করেই শেষ করতে চাই, আর সেটা হোল প্রত্যেকটা মানুষ যদি পাশের মানুষটাকে মানুষ হিসাবে সন্মান করতে পারে তাহলেই পৃথিবীর সকল পরিবর্তন ইতিবাচক ভাবে মোড় নেবে। মানুষ একটা মানব সম্প্রদায় গড়ে তুলতে পারবে।

শাহরিয়ার আরিফ
বিশেষ কেউ নই।