আমি বাংলাদেশের সিনেমা দেখেছি। ওপার বাংলার সিনেমা দেখেছি। বোম্বাই সিনেমাও দেখেছি। অনেক বিপ্লবী পরিচালক দেখেছি। শেষ বিচারে তাদেরকে বিপ্লবী মনে না হয়ে ব্যাবসাদারই মনে হয়েছে । এরা আর্টের নামে পরকীয়া- বহুগামিতা দেখায় , ধর্মকে নির্মমভাবে স্পর্শ করে নিজেদের প্রগতিশীল প্রমাণ করার চেষ্টা করে । কিন্তু আমাদের সমাজ মননে গেড়ে বসা সবথেকে বড় জঞ্জাল কে ছুঁয়ে দেখার সাহস দেখাতে পারে না ।
একটা উদাহরন দেই। হিন্দি-বাংলা সিনেমার একটা কমন সাবজেক্ট হল হিন্দু-মুসলিম ছেলে-মেয়ের প্রেম-বিবাহ। এখানে পরিচালক নিজেকে মানবতাবাদি, উদার, ধর্মীয় গোঁড়ামি থেকে মুক্ত প্রমাণ করতে সচেষ্ট থাকেন। আসলে কিন্তু তিনি কমন ম্যানই । ঢাকাই সিনেমায় এটা এভাবে দেখানো হয়। নায়ক মুসলিম, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নায়িকার থেকে প্রভাবশালী পরিবারের, নায়িকা হিন্দু এবং গরিব পরিবারের হলে আরও ভাল। এবার আপনি কলকাত্তাইয়া বা বোম্বাই সিনেমায় যান। ঠিক রিভার্স । নায়ক হিন্দু, নায়িকা মুসলিম। আমি আজ পর্যন্ত এর ব্যাতিক্রম দেখিনি। আমি মনে করি এটা সচেতনভাবেই করা হয় । কারণ এর বীজ আমাদের মনের গভীরতম প্রদেশে লুকিয়ে রাখি। কক্ষনো বের করে দেখার সাহস পাই না। এই সমাজে (শুধু এই উপমহাদেশ নয় আমি বিশ্বাস করি সমগ্র পৃথিবীতেই) নারীকে পুরুষের থেকে নীচে স্থান দেয়া হয়। তাই মুসলিম প্রধান বাংলাদেশ কখনও হিন্দু নায়কের সাথে মুসলিম নায়িকার প্রেম দেখাতে পারে না আর হিন্দু ভারত পারে না মুসলিম নায়কের সাথে হিন্দু নায়িকার প্রেম দেখতে। কারণ মানুষ এভাবে দেখতে চায় না। ভারতে লাভ জিহাদ নামে যে প্রচারণা চলছে তার মূলে কিন্তু আছে হিন্দু মেয়েদের মুসলিম যুবকদের প্রতি আকর্ষণ। যদি উল্টোটা হয়, মানে মুসলিম মেয়ে আর হিন্দু ছেলে তবে এদের আপত্তি নাই।
এ বাবদে আমি ঈশ্বরকে দোষ দিতে চাই না । বরং এই সমাজে যারা ঈশ্বরের মত মর্যাদা পান তারা কী করেন? না তারাও শেষ বিচারে এর থেকে বের হতে পারেন না। আমি মহাত্মা গান্ধীর কথা বলছি । মতিলাল নেহেরুর মেয়ে ( জহরলাল নেহেরুর বোন) বিজয়লক্ষী পণ্ডিত ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন এক বাংলাদেশি মুসলিম যুবককে। যুবক যথেষ্ট যোগ্য। লন্ডনের এক বিখ্যাত পত্রিকা সম্পাদনা করেন। মতিলাল তাকে দেশে এনে কংগ্রেসের পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব দেন। সেই সূত্রেই নেহেরু গৃহে প্রবেশ এবং বিজয়লক্ষির দর্শন। প্রেম এবং পালিয়ে বিয়ে। তাদের ২ জন কন্যা সন্তান হয়। কিন্তু মতিলাল পরিবার বুঝেছিলেন এই বিয়ে তাদের পরিবারের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সর্বনাশ করে ছাড়বে। উপায় না দেখে তারা গান্ধিজির শরণাপন্ন হলেন। গান্ধিজিও তাঁর সারা জীবনের সাধনা ধর্মনিরপেক্ষতাকে কিছুক্ষণের জন্য একপাশে সরিয়ে রাখলেন। এই দুই প্রেমিক- প্রেমিকাকে আলাদা করতে বিশেষ ভূমিকা রাখলেন। সবকিছু দূর থেকে নির্লিপ্ত চোখে দেখলেন মৌলানা আবুল কালাম আজাদ। তিনি গান্ধিজির প্রধান তিন শিষ্যর একজন আবার জহরলালেরও বিশেষ বন্ধু। তাতে কি! তিনিও তো শেষ বিচারে একজন মুসলিমই। তাই ভাল না লাগলেও তাকে চুপ থাকতেই হয়েছিল।
(সূত্রঃ ইন্ডিয়া উইন্স ফ্রিডম)
সুকান্ত কুমার সাহা বলেছেনঃ
আবার ধরুন-
একজন পার্সিয়ান ধনী ও বিজ্ঞ ব্যক্তি, দার্জিলিং-এ পরিবার নিয়ে বেড়াতে থাকা অবস্থায় তৎকালীন আমলে একজন মার্জিত শিক্ষিত ব্যরিস্টারকে তার বাড়ীতে নিমন্ত্রণ করলেন। উদ্দেশ্য তার সাথে কিছু ভাল সময় কাটানো! সেই সূত্রে কায়দে আজম জিন্নাহ সাহেবের সেই বন্ধুস্থানীয় পার্সিয়ান ভদ্রলোকের বাড়ীর অন্দর মহলে প্রবেশ! কিন্তু ৪২ বছর বয়স্ক ব্যরিস্টার সাহেব সেই সুযোগটাকে কাজে লাগালেন, সেই পার্সি পরিবারের নাবালিকা মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেললেন, গোপনে প্রেমপত্র লিখতে থাকলেন। তারপর যখন সেটা ধরা পরে গেলো, জিন্নাহ সাহেব কিন্তু একটুও লজ্জা পেলেন না? গোপনে সেই নাবালিকার সাথে প্রেমপত্র আদান -প্রদান চালিয়ে গেলেন। যেদিন, সেই মেয়ে অফিসিয়ালী সাবালিকা হলেন সেইদিনই সেই মেয়েকে জিন্নাহ সাহেব বাড়ী থেকে ভাগিয়ে এনে ধর্মান্তর করে বিয়ে করলেন। এতে করে কোন সমস্যা জিন্নাহ সাহেব দেখলেন না। কিন্তু যখনই তার মেয়ে একজন পার্সি ধর্মালম্বী একটা ছেলেকে বিয়ে করলেন, ওমনি জিন্নাহ সাহেব মনে খুব ব্যথা পেলেন। সারাজীবন আর মেয়ের মুখ দেখলেন না! একেই বলে সম্ভবত মানবতা! কী বলেন?
লেখায় এই বিষয়টাও উল্লেখ থাকলে সেটা আরও বেশী শ্রুতিমধুর হতো বলেই এই বাঙালের বিশ্বাস! 😛
এবার যেই
শাহরিয়ার কবির রাসেল বলেছেনঃ
দাদা, জিন্নাহ অসাম্প্রদায়িক এই অদ্ভুত দাবী কি আমি কোথাও করেছি!
সুকান্ত কুমার সাহা বলেছেনঃ
না, আমি বলছিলাম কী, এটা উল্লেখ থাকলে লেখাটা শ্রুতিমধুর হতো আরকি!
অপু আর সাকিবের’টা লিখলে সেটা আরও পোক্ত হতো বলেই বিশ্বাস!
শাহরিয়ার কবির রাসেল বলেছেনঃ
আমি মনে করি আমার লেখাতে আমি পরিষ্কার বলতে পেরেছি যা বলতে চাই । নারী পুরুষ সমতা যে একটা buzzword এটাই আমার মূল বক্তব্য। কারো সাম্প্রদায়িক সেন্টিমেন্টকে আঘাত দেয়া আমার উদ্দেশ্য নয় ।
সুকান্ত কুমার সাহা বলেছেনঃ
লেখার প্রথম প্যাঁরাটা ঠিকই ছিল কিন্তু শেষে এসে সেদিকেই গেছে!
শাহরিয়ার কবির রাসেল বলেছেনঃ
আমি ইচ্ছা করেই জহরলাল ফ্যামিসির পরের কাহিনীতে যাইনি । এখন মনে হচ্ছে যাওয়া দরকার ছিল । আমি জহরলাল লেডি মাউন্টব্যাটেনের প্রেম কাহিনীতে যেতে চাই না । এখনও জীবিত আছেন সোনিয়া গান্ধী , রাজীবের স্তী । কই এখানে তো সমস্যা হল না ! কারণ রাজিব পুরুষ আর সোনিয়া মেয়ে । তাই ভারতবাসীর কোন সমস্যা হল না । তাই না ? দাদা সাম্প্রদায়িকরা নামক লেজ এখানে খুঁজার দরকার নাই । নিজের পিছনে তাকান । আপনার আজকের লেখায় ইনিয়ে বিনিয়ে তো অনেক কথা বলেছেন ।
সুকান্ত কুমার সাহা বলেছেনঃ
শুরু করলে সবদিকেই যেতে হবে! নেহেরুকে নিয়ে চলুক না লেখাটা, সমস্যা কী? তবে সেটা লারকানার জমিদার বাড়ী হয়ে ভুট্টো পর্যন্ত কিন্তু যেতে হবে? চাই তো জাঞ্জুয়া স্টোরিও আসুক না?
সুকান্ত কুমার সাহা বলেছেনঃ
বাই দা বাই, আমি কমেন্ট করি পোষ্ট টু পোষ্ট। লেখক কে, কী তার সাথে আমার সম্পর্ক সেটা খেয়াল রাখি না! আসুন না আমার সেই পোষ্টে?
শাহরিয়ার কবির রাসেল বলেছেনঃ
“কেউ সে বিয়ে চায়নি। কেউ না। মহাত্মা গান্ধীও এতে সুখি হননি। আমার পিতা এই বিয়ের বিরোধিতা করেছিলেন, এ কথা সত্য নয়। তিনি খুব আগ্রহ দেখাননি। আমার মনে হয় যে, সব পিতার মেয়ে একটাই তারা চান মেয়ের বিয়ে একটু দেরিতে হোক। যাই হোক, আমার প্রেমিক ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ছিলেন। তিনি একজন পার্সি। এটা কেউ সহ্য করতে পারেনিÑ গোটা ভারত আমাদের বিরুদ্ধে ছিল। তারা মহাত্মার কাছে, আমার পিতার কাছে লিখেছে। অপমান করেছে। হত্যার হুমকি দিয়েছে। প্রতিদিন ডাকপিয়ন আসতো বিরাট একটা বস্তা নিয়ে এবং মেঝের ওপর চিঠির স্তূপটা রাখতো। আমরা চিঠি পড়াও বাদ দিয়েছিলাম। আমার কিছু বন্ধুকে সেগুলো পড়ে আমাদের জানাতে বললাম, ‘একজন তোমাকে টুকরো টুকরো করে কাটতে চেয়েছে। একজন তার স্ত্রী থাকার পরও তোমাকে বিয়ে করতে চেয়েছে কারণ সে হিন্দু।’ একপর্যায়ে মহাত্মা গান্ধী এই বিতর্কে অংশ নিলেনÑ তার পত্রিকায় এ ব্যাপারে একটা নিবন্ধ দেখেছিলাম। তাতে তিনি লোকজনের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন তাকে শান্তিতে থাকতে দেয়ার জন্য এবং সংকীর্ণ মানসিকতা পরিহার করার জন্য। এসবের মধ্যে আমি ফিরোজ গান্ধীকে বিয়ে করলাম। আমার মাথায় একবার কিছু ঢুকলে দুনিয়ার কেউই তা আর বদলাতে পারবে না।“
আশা করি আপনার পুত্র রাজীব গান্ধী একজন ইতালীয় মেয়েকে বিয়ে করার কারণে সে ধরনের কিছু ঘটেনি?
“সময় বদলেছে। আমাকে যে ক্রোধ অতিক্রম করতে হয়েছে ওদের তা হয়নি। “
—— ইন্দিরা গান্ধীর জীবনী থেকে নেয়া
ইন্দিরা গান্ধী যে সময় বদলের কথা বলছিলেন সেটা ভুল ছিল । সময় কিছুই বদলায়নি । মিসেস গান্ধী আসলে ভারতবাসীর মানসিকতা বুঝতে পারেন নি বা বুঝতে চান নি ।