এই তো আমার দেশ!

শাহরিয়ার কবির রাসেল
Published : 12 March 2018, 04:41 AM
Updated : 12 March 2018, 04:41 AM

সৈয়দ মুজতবা আলীর প্রবাস জীবনের ভৃত্য-বন্ধু আব্দুর রহমান। লেখক যখন কষ্টকর আফগান জীবনের কথা তাঁকে স্বরণ করিয়ে দিলেন, সে ব্যথাতুর নয়নে তাকালো। তারপর আস্তে আস্তে বলল, ইনহাস্ত ওয়াতরম। মানে, এইতো আমার দেশ!

সেদিন প্রথম আলোতে সাবেক আফগান ফুটবল অধিনায়কের কন্ঠে একই অভিমান মাখা সুর শুনলাম। জোহির আমিরি বললেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত বলবেন না। আফগানিস্তান সুন্দর দেশ। সোনা পোড়ালে তবে খাঁটি হয়। মানুষও। কি কঠিন সংগ্রামী জীবন আফগানদের! তবুও কি দারুণ ভালোবাসা দেশের জন্য। কোন অভিযোগ নেই। রুক্ষ পার্বত্য ভূমি এদের চোখে স্বর্গের নন্দনকাননের থেকেও মোহময়। সাদা বরফে ঢেকে থাকা পাহাড় চূড়ার দিকে তাকিয়ে ওরা বুক ভরে শ্বাস নেয় আর খাইবার পাসের মতই কঠিন জীবনে সানন্দে আবগাহণ করে। দেশের প্রতি কোন অভিযোগ নেই। সবটুকু আবেগ আর ভালবাসা দিয়ে রুক্ষ মাটিকে জড়িয়ে ধরে থাকে।

ইয়াসির আরাফাতকে একবার এক সাংবাদিক দেখা করে বলেছিলেন, আমি এখানে এসেছি ফিলিস্তিনের হৃদয়ে হাত রাখতে। আরাফাত তার হাত টেনে নিয়ে নিজের বুকে রেখে বলেছিলেন, ওটা এখানে। এখানে হাত রাখ।

কিছুদিন আগে আরো একটা খবর পড়লাম। আমাদের দেশের শতকরা ৮৫ জন ছেলে-মেয়ে দেশে থাকতে চায় না। তাদের কথায়, এই পোড়ার দেশে কোন ভবিষ্যৎ নেই। এমন হতাশ, এমন পলায়নপর ছেলেমেয়ে, এরাই আমাদের আগামী! এরা সবাই তো প্রবাসী হতে পারবে না। বিতৃষ্ণ মনে এখানেই কিছু একটা করবে। এদের দিয়ে ভালো কিছু কি হবে?

অথচ পরাধীন ভারতবর্ষের স্বাধীনতার অগ্রসৈনিক ছিলেন এই বাঙালিদেরই পূর্বপুরুষেরা! তারা দেশ থেকে পালিয়ে যায়নি। একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামের দিনগুলোতে তারা নিজের রক্তে এদেশের মাটিকে স্নান করিয়েছে। কি আশায় তারা এত ত্যাগ স্বীকার করল? শহীদ রুমিও তো এদের মতই মেধাবী তরুণ ছিল। নিশ্চিত বিদেশে পড়াশুনার সুযোগকে  অগ্রাহ্য করে সে যুদ্ধে গেল। সে লজ্জা আর ভয় নিয়ে ভেবেছিল, দেশকে এই বিপদে ফেলে রেখে বিদেশে পড়াশুনা করতে গেলে সারাজীবন দেশের কাছে ছোট হয়ে থাকতে হবে। এক রুমী শুধু নয়, প্রতিটি মানুষ তখন আবেগে আলোড়িত হয়েছিল। সেই নয় মাসে কত ঘটনা, কত কষ্ট, এরই মাঝে রচিত হয় কালজয়ী সব দেশপ্রমের গান, যার তুলনা পরের এতগুলো বছরেও আর পাওয়া গেল না।

বিশ্বাসই হয় না এইসব ছেলে-মেয়েরা রুমীদের উত্তর প্রজন্ম! সেই একই তো মানুষ আমরা, কিন্তু এত বদলে যাই কি করে? নাকি মহত্তম অনুভূতিগুলো সব সময় প্রকাশিত হয় না। দাঁত হারালে যেমন দাঁতের মূল্য বোঝা যায়, তেমনি মানুষেরও কি দেশটা হারিয়ে গেলে বা হারানোর অবস্থা তৈরি হলেই শুধু বুকের মধ্যে একশ প্রদীপ জ্বলে ওঠে?